Alapon

সাইফুদ্দীন কুতযঃ তাতারীদের বিরোদ্ধে লড়াকু এক সেনাপতি

মুল বিষয়ে প্রবেশের পূর্বে একটি প্রশ্ন করেই শুরু করি।
প্রশ্ন হল যেদিন তাতারী বাহিনী উত্তর থেকে দক্ষিন পর্যন্ত গোটা ফিলিস্তিন জ্বালিয়ে দিয়েছিল, এমনকি ফিলিস্তিনের সর্বশেষ শহর গাজা ধ্বংস করে দিয়েছিল, সেদিন এসকল মুসলিম কোথায় ছিল? এখন তারা কিভাবে আইনে জালুত যুদ্ধের জন্য উজ্জীবিত হল?
এই প্রশ্নের উত্তর খুবই সোজা।

আর তা হল, ন্বেতৃত্ব। যোগ্য ন্বেতৃত্ব।

আইনে জালুত উপত্যকায় অবস্থিত মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ। এই উপত্যকায় অবস্থানকালে ফিলিস্থিনের অসংখ্য বাসিন্দা মুসলিম বাহিনীর সাথে এসে মিলিত হয়। কারণ তারা নিশ্চিত হয়েছিল শীগ্রই চিরশত্রু পাষণ্ড তাতারীদের বিরুদ্ধে বিরাট যুদ্ধ সংগঠিত হতে যাচ্ছে।

তাতারীদের আগমণঃ

দাম্ভিকতা ও অহঙ্কারে ভরা তাতারী সৈন্যবাহিনী কাতবুগার নেতৃত্বে আইনে জালুতে আগমন করে। অন্যায়, হত্যা, জ্বালাও পোড়াও ও জুলুমে তারা ছিল জগদ্বিখ্যাত। তারা নিজেদের বড় মনে করত এবং ঔদ্বত্ত্য প্রদর্শন করতো। সৈন্যবাহিনী বিসানের পশ্চিমাঞ্চল হয়ে আইনে জালুতের দক্ষিন অভিমুখে রওনা হয়। সেখানে মুসলিম সেনানীরা কাতারবদ্ধ হয়ে ছিল এবং দৃঢ় প্রত্যয় মনোভাব নিয়ে তাতারী বাহিনীর অপেক্ষায় ছিল। 
 
এখানে উল্লেখ্য যে, ‘আইনে জালুত’ একটি ইতিহাসখ্যাত বিশাল সমতল ভূমি। ইহা উত্তরের বিসান ও দক্ষিনের নাবলুস শহরের মধ্যখানে অবস্থিত। বর্তমানে যা জেনিন শিবিরের অতি নিকটে অবস্থিত। 

মুসলিমদের যোগ্য নেতৃত্বের অভাবঃ
ফিলিস্তিনে ইসলাম ও দ্বীনের জন্য নিবেদিত প্রান অসংখ্য মুসলিম ছিল। তবে যোগ্য ন্বেতৃত্বের অভাব তাদেরকে কাপুরুষ বানিয়ে রেখেছিল। এ সকল সরলমনা মুসলিম ফিলিস্তিনে বসে নির্বাক হয়ে তাদের নেতাদের দেখেছে। যারা তাতারীদের মত বর্বরদের সাথে জোট বেঁধেছে। তাদের ঘর-বাড়ি, দুরগ-প্রাচীর সব খুলে দিয়েছে এবং তাদের জন্য রাস্তায় বাগিচা বিছিয়ে দিয়েছে। এ সকল সরলমনা মুসলমানরা যোগ্য ন্বেতৃত্বের অভাবে ভুগছিল।

সাইফুদ্দীন কুতয এর যোগ্য নেতৃত্বঃ


যখন সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ ও মুসলিম বাহিনী এগিয়ে এলো, যারা নাসের ইউসুফ আইয়ুবির মত তাতারীদের আগমন বার্তা শুনে পলায়ন করেনি, তাদের দেখে এই সকল সরলমনা মুসলিমের অন্তরে সাহস ফিরে এলো। তারা আবেগে আপ্লুত হল। তদের মধ্যে দ্বীনি মর্যাদাবোধ জাগ্রত হল। ফলে আত্মবিসর্জন ও জিহাদ তাদের জন্য খুব সহজ হল। এই সকল সাধারন মানুষকে সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ যুদ্ধ্বের আনুষঙ্গিক কাজে নিয়োজিত করলেন। যেমনঃ অস্ত্র বহন, খাদ্য সরবরাহ ইত্যাদি। 

ফিলিস্তিনবাসী ছাড়াও বিভিন্ন জনপদ থেকে অগনিত কৃষক, নারী, শিশুরাও এসে তাদের সাথে মিলিত হল। ফলে আইনে জালুতের চতুর্দিকে বিপুল সঙ্কখ মানুষের সমাবেশ ঘটে। তারা আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে আইনে জালুতের আকাশ বাতাশ মুখরিত করে তোলে। 
এই ঘটনা ঘটে ২৪শে রমজান ৬৫৮ হিজরিতে। যা আইনে জালুতের যুদ্ধের পূর্বের দিন সংঘটিত হয়।

সারেমুদ্দীন আইবেক এর আগমণঃ
এমন সময় সিরিয়া থেকে এক লোক দ্রুত গতিতে এসে সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ ও অন্যান্য আমিরের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। লোকটি নিজেকে ‘সারেমুদ্দীন আইবেকের’ দূত হিসাবে পরিচয় দেন।

‘সারেমুদ্দীন আইবেক’ ছিলেন সেসব মুসলিমদের একজন, যাদেরকে হালাকু খান সিরিয়া আক্রমনের সময় বন্দী করেন। পরবর্তীতে তিনি তাতারীদের বশ্যতা স্বীকার করেন এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যদিও তার দূত সংবাদ প্রদান করেন যে, সারেমুদ্দীন আইবেক মুসলমানদের উপকার সাধনের প্রতিশ্রুতি করেছেন।

সারেমুদ্দীন তার দূত মারফৎ তাতারীদের সম্পর্কে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুসলিম বাহিনীকে অবহিত করেন যা পরবর্তীতে মুসলিম বাহিনীর অনেক কাজে লেগেছিল। দূতের তথ্যের মধ্যে ছিল – 

১। তাতারী বাহিনী তাদের স্বাভাবিক শক্তি নিয়ে আগমন করেনি। সুতরাং আপনাদের ভয়ের কোন কারণ নেই। এই তথ্যটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কিছু মুসলিম সৈন্যের মনে তাতারীদের অতীতের নিসৃঙ্খলতার কথা স্বরনে ছিল। এতে তারা কিছুটা বিচলিত ছিল। কিন্তু এ তথ্য তাদের মনে অনেকটা প্রানের সঞ্চার করে।  

২। তাতারীদের ডান দিক বাম দিকের চেয়ে শক্তিশালী হবে। তাই মুসলমানদের উচিত বামদিককে অধিক শক্তিশালী করা।
এরকম আরো অনেক তথ্য ছিল। যদিও মুসলিম বাহিনী পুরোপুরিভাবে এই তথ্যের উপর নির্ভরশীল ছিল না। তারা তাদের সামরিক দূরদর্শিতায় এটাই করেছে যে, তারা এ তথ্যে সতর্কতা অবলম্বন করেছে এবং তথ্যের আলোকে উপকৃত হয়েছে।

যুদ্ধ শুরুর পূর্ব মুহুর্তঃ

এভাবেই ২৪শে রমজানের দিনটির সমাপ্তি ঘটে। এই রাতটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাত। অনুরুপভাবে এটি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাত। কারণ এটি যুদ্ধের পূর্ব রাত। 

এই রাতে সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ এর অনুভূতি হয়ত বিশিষ্ট সাহাবা হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ এর মতই ছিল। খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ বলতেন ‘বাসর রাত কিংবা যে রাতে আমাকে সন্তান ভুমিস্ট হবার সংবাদ দেয়া হয়, তা আমার নিকট সেই কনকনে শীতের রাতের চেয়ে অধিক প্রিয় নয়; যে রাতে আমি মুজাহিদের সঙ্গে আল্লাহ্‌র শত্রুদের উপর ঝাপিয়ে পড়ি।‘ প্রকৃত মুজাহিদ ব্যতিত এই স্বাদ অন্য কেও উপলব্ধি করতে পারেনা।

এভাবেই ফজরের নামাজের সময় হল। মুসলমানরা মনোযোগ দিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। তারা কাতার বিন্যাস করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন। পূর্ব আকাশে সূর্য উদিত হবার সাথে সাথে মুসলমানরা দূর থেকে তাতারীদের দেখতে পেল। বর্বর তাতারী বাহিনী উত্তর দিক থেকে আইনে জালুত ময়দানের খুব কাছে চলে এসেছে। ময়দানে তখন একজন মুসলমান সৈন্য ছিল না। তারা সকলেই বিভিন্ন টিলা ঝোপের আড়ালে অবস্থান করছিল।

চুড়ান্ত যুদ্ধঃ
তাতারী বাহিনী যখন অগ্রসর হচ্ছিল তখন সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ এর ইশারায় মুসলমানদের অগ্রগামী দল পরিকল্পনা অনুযায়ী রুকুনুদ্দীন বাইবার্সের নেতৃত্বে ময়দানে নেমে আসে। যাতে মনে হয় এটিই মুসলমানদের পূর্ণ দল। 
মুসলিম সৈন্যরা টিলার উপর থেকে আইনে জালুতের ময়দানে ধীরে ধীরে নামতে থাকে। তারা একবারে না নেমে অদ্ভুত পদ্ধতিতে  ধাপে ধাপে নামতে থাকে।



মুসলমানদের প্রথম দল লাল সাদা রঙয়ের চমৎকার পোশাক গায়ে মাঠে অবতরণ করে। তাদের পোশাক, বর্ম, তলোয়ার, ঘোড়া সবই ছিল দৃষ্টিনন্দন। তারা দৃঢ় পায়ে অভিনব পদ্ধতিতে অবতরণ করে। এরা ছিল মুসলিম বাহিনীর প্রথম দল।

সারেমুদ্দীন আইবেকের ভাষায়ঃ ‘এই প্রথমবার তাতারী বাহিনীর সেনাপতি কাতবুগা মুসলিম বাহিনীর বীরত্ব দেখল। সে সারা জীবন মুসলমানদেরকে দেখেছে দুর্গের ভিতর আত্মগোপন করতে, নতুবা পালিয়ে যেতে নতুবা তাতারীদের তলোয়ারের নিচে বলি হতে। কিন্তু এবারে মুসলমানদের বীরত্ব ও বাহ্যিক সৌন্দর্‍্য দেখে কাতবুগা ভীত সন্তস্ত্র হল।‘

যদিও মুসলিম বাহিনীর প্রথম দলটি ছিল তাতারী বাহিনীর তুলনায় খুবই ছোট। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ তার প্রধান দলটিকে টিলার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিল।

মুসলিম বাহিনীর প্রথম দল মাঠে নামার পর মমলুক মুসলিম ব্যান্ড দল মাঠে নামে। তারা জোরে জোরে তবলা বাজাতে থাকে ও শিঙ্গায় ফু দিতে থাকে। মমলুক বাহিনীর এসব সাংকেতিক ধ্বনি তাতারীদের খুব অপরিচিত ছিল। যেমন ডানে যাওয়া, বামে যাওয়া, ফিরে আসা, অগ্রসর হওয়া ইত্যাদি। এই সব আওয়াজের মাধ্যমে সাইফুদ্দীন কুতয অতি সহজে দূর থেকে সৈন্য বাহিনী পরিচালনা করতে পারছিলেন। আর সৈন্যরাও এই সকল আওয়াজে তাদের মনোভাব চাঙ্গা থাকে এবং তারা বুজতে পারে যে সেনাপতি তাদের সাথেই আছেন।

তাতারী সেনাপতি কাতবুগা মুসলিম অগ্রগামী দল প্রত্যক্ষ করল। কিন্তু টিলার আড়ালে যে প্রধান সৈন্য দল লুকিয়ে আছে তা সামান্যও অনুধাবন করতে ব্যর্থ হল। তাই সে মুসলমানদের তাদের তুলনায় খুবই সামান্য মনে করল। আর তাই সে এই ছোট্ট বাহিনীকে প্রথমবারেই ধ্বংস করার জন্য তার সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো। সাইফুদ্দীন কুতয রহঃও এটাই চেয়েছিলেন। তাতারীরা যখন এগিয়ে এলো তখন রুকুনুদ্দীন বাইবার্স মুসলিম বাহিনীকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার নির্দেশ দিলেন।

তারা বীর বিক্রমে তাতারী বাহিনীর সম্মুখে এগিয়ে গেলো। ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীর আল্লাহু আকবর তাকবীরে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠলো। ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হল। মুসলিম বাহিনীর হাতে তাতারীরা একের পর এক ধরাশায়ী হতে লাগলো। ময়দানে রক্তের বন্য বয়ে যেতে লাগলো। তাতারীদের প্রাচীর ভেঙ্গে মুসলমান সৈন্যরা তাদের মধ্যে ঢুকে পড়ল। বিশাল তাতারী বাহিনীর সাথে মুসলিম সৈন্যদের ব্যপক যুদ্ধ চলছে। দেখে মনে হচ্ছে কখনও মুসলিমরা বিজয়ের দিকে যাচ্ছে আবার কখনও তাতারীরা বিজয়ী হচ্ছে। 

দূর থেকে সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ ময়দানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এইবার দ্বিতীয় পরিকল্পনা প্রয়োগের সময় ঘনিয়ে এলো। দ্বিতীয় পরিকল্পনা ছিল তাতারী বাহিনীকে আইনে জালুত ময়দানের মাঝখানে নিয়ে আসা। কারণ কোনভাবে ওদেরকে ময়দানের মাঝখানে নিয়ে আসতে পারলে চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলা খুব সহজ হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাতারীদের সামনে পরাজয়ভাব প্রকাশ করতে হবে এবং এটি এমনভাবে করতে হবে যাতে ভারসাম্য রক্ষা হয় নতুবা পুরো দল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। 

সাইফুদ্দীন কুতয এর পারদর্শীতাঃ
মুসলিম বাহিনী ছিল খুবই পারদর্শী এবং এই দলের সাথে ছিল আল্লাহ্‌র সহযোগিতা। এই একই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে উনিশ হিজরিতে বিখ্যাত সাহাবী কাকা ইবনে আম্র তামীমী রাঃ পারস্য বাহিনীকে বিধ্বস্ত করেছিল। আইনে জালুতের যুদ্ধে সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ মুসলমানদের সেই পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। রুকুনুদ্দীন বাইবার্স ধীরে ধীরে পিছ পা হতে থাকেন। তিনি এক কদম পিছ পা হন আর তাতারীরা এক পা অগ্রসর হয়। মুসলমানরা অতি উত্তমভাবে পরাজয়ভাব গ্রহন করে।

অন্যদিকে তাতারী সেনাপ্রধান কাতবুগা মুসলমানদের এই পরাজয়ভাবে লোলুপ দৃষ্টি প্রসারিত করে। সে মুসলমানদের ধ্বংসের জন্য ময়দানে প্রবেশ করে। এইভাবে পুরো তাতারী বাহিনী মাঠের মাঝখানে চলে আসে। আত্মরক্ষার জন্য কোন বাহিনীই তাদের আর মাঠের বাইরে ছিলনা। এভাবে মুসলিম বাহিনীর দ্বিতীয় পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন হয়। এবার সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ তবলার বাজনায় তৃতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। 

টিলার পেছন থেকে মুসলিম বাহিনীর প্রধান দলটি যুদ্ধের ময়দানে নেমে এলো। কয়েক মিনিটের মধ্যে তাতারীদেরকে মুসলিম বাহিনী চতুরদিক থেকে ঘিরে ফেললো। এইবার কাতবুগা বুঝতে পারলো মুসলিম বাহিনীর পরিকল্পনা। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন একমাত্র পথ হয় মরতে হবে নতুবা মারতে হবে। আর কোন বিকল্প নেই। তাতারীরা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে প্রাণপণে লড়তে লাগল। ডান দিকের তাতারী বাহিনী ছিলো অধিক শক্তিশালী। ফলে তারা মুসলমানদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে মুসলমানদেরকে দুর্বল করে দিতে লাগল। একের পর এক শহীদ হতে লাগল মুসলমানরা। 

সাইফুদ্দীন কুতয স্বয়ং যুদ্ধের ময়দানেঃ
সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। ময়দানের ভয়াবহতা অনুধাবন করে এবার তিনি নিজেই যুদ্ধের ময়দানে অবতরন করলেন। তিনি সৈন্য বাহিনীর সামনে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমান করেন যে, আল্লাহ্‌র পথে মৃত্যুই আমাদের একমাত্র লক্ষ ও উদ্দেশ্য। সৈন্যবাহিনীও সাইফুদ্দীন কুতযকে তাদের মাঝে দেখতে পেয়ে হুশ ফিরে পায়। তাদের সেনাপতিও তাদের মতই লড়ছেন। তাই করনীয় একতাই। ইসলামকে বাচাতে হবে। 

সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ আশ্চর্যভাবে লড়ে যাচ্ছেন। জনৈক তাতারী সৈন্য সাইফুদ্দীন কুতযকে লক্ষ করে তীর নিক্ষেপ করে। তীরটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার ঘোড়ার গায়ে লাগে। ফলে তিনি ঘোড়া থেকে পড়ে যান। এবার তিনি ঘোড়া ছাড়াই লড়াই চালিয়ে যান। 

আল্লাহ্‌র রহমতে ধীরে ধীরে মুসলমানদের জয়ের পাল্লা ভারী হতে থাকে। তাতারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। জামালুদ্দীন আকুশ শামসী নামক জনৈক দক্ষ যোদ্ধা তাতারীদের দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভেদ করে সেনাপতি তাচবুগার কাছে চলে আসেন। এরপর সর্বশক্তি দিয়ে কাতবুগার গর্দানে তলোয়ার চালান। সঙ্গে সঙ্গে অহঙ্কারী কাতবুগার মস্তক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তাতারী বাহিনীর যাবতীয় পরিকল্পনা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। পিছু হটতে থাকে তাতারী বাহিনী। আর মুসলমানরা তাদের পালানোর পথ বন্ধ করে তাদেরকে ধরাশায়ী করতে থাকে। 

আল্লাহর সাহায্যঃ
সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ সৈন্যদেরকে আরো অনুপ্রাণিত করতে থাকেন। তিনি আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করেন – হে আল্লাহ্‌! তোমার বান্দা কুতযকে তাতারীদের বিরুদ্ধে সাহায্য করো। আল্লাহু আকবর।  

বান্দা যখন আল্লাহ্‌র কাছে কাকুতি মিনতি করে কিছু চায় আল্লাহ্‌ কি তাকে ফিরাতে পারেন? পৃথিবীর রাজা যখন বিনয়ী হন, তখন আসমান জমিনের রাজাও তার প্রতি রহম করেন। সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ দোয়া শেষ না হতেই তাতারী শক্তি সম্পূর্ণরুপে দুর্বল হয়ে পড়ে। অপরাজেয়, অহংকারী, বর্বর তাতারীদের পতাকা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। চল্লিশ বছরের অধিক সময় ধরে মুসলমানরা এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলো। 

সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ ভালো ও আরামদায়ক সময়ে মিশরের ক্ষমতায় আসেননি বরং পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। কিন্তু তিনি আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছিলেন। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন। তাই তার সফলতা ছিল অবশ্যম্ভাবী। 

আজও যদি মুসলমানরা সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ এর মতো কাজ করে তবে তারাও সফল হবে। সময় পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘ বছর বা যুগের প্রয়োজন হয় না। সাইফুদ্দীন কুতয রহঃ সিংহাসন আরোহণের মাত্র দশ মাস পর আইনে জালুত যুদ্ধ সংগঠিত হয়। 

নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌তায়ালা তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। 
আমি সাহায্য করব রসূলগণকে ও মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে। --সূরা আল-মু’মিন, আয়াত-৫১

তথ্যসূত্রঃ
তাতারীদের ইতিহাস; ডঃ রাগেব সারজানী; অনুবাদঃ মাওলানা আবদুল আলীম;

পঠিত : ১৯২২ বার

মন্তব্য: ০