Alapon

জ্যামের সঙ্গী হোক বই

জ্যামকে আমি উপভোগ করতে চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যে জ্যামের মধ্যে বসে থাকা নিয়ে আমার অনেক প্লান ও থাকে।কারন জ্যামের মধ্যে (pdf) বই পড়া ও লেখালেখি করা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।যেহেতু ঢাকা তে থাকি তাই জ্যামকে আমার ঘরের বৌ এর মত মনে হয়। কিছুদিন আগে শবেবরাতের পরের দিন সকাল ১০ টা কিনবা ১১ টার পর মোহাম্মদপুরে গিয়েছিলাম রামপুরাতে থেকে, সেদিন মোহাম্মদপুর যেতে আমার সময় লেগেছে মাত্র ২৫-৩০ মিনিট। তবে বাইক কিনবা মাক্রোবাসে না লোকালবাসে।সেদিন আমার কাছে খালিখালি মনে হয়েছে,কি যেন পরিপূর্ণ হয়নি।

গত পরশুদিন ঢাকাতে আসবো তাই সকাল ৮ টার পর কুমিল্লা থেকে গাড়িতে উঠলাম। সকালের নাস্তা খেয়ে উঠেনি চিন্তা করলাম ঢাকা গিয়ে একভারে দুপুরের খাওয়াটা সেরে নিবো কিন্তু সেটা আর হয়নি রাতের খাওয়া খেতে হল। সকাল ৮ টা গাড়িতে উঠলাম আর নামলাম রাত ৮ টা। এই হল আমাদের দেশের উন্নয়ন।

এই দীর্ঘ জ্যামের মধ্যে আমি একটা বিষয় খুব মনযোগ সহকারে করেছিলাম।সেটা হল আমি কোথাও যাওয়ার সময় ব্যাগের মধ্যে কিছু বই নিয়ে থাকি।তাই সেদিনও ছোট ভাই থেকে তিনটা বই নিয়ে আসলাম। সমরেশ মজুমদার এর লীলাসুন্দর, সাদাত হোসাইন এর জানালার ওপাশে এবং বার্ট্রান্ড রাসেল এর দি অটোবায়োগ্রাফি অব। কুমিল্লা থেকে যখন আমাদের গাড়িটা একটু সামনে চলতে লাগলো তখন থেকে জ্যামের সেই পরিচিত মুখ টা দেখা গেল।

আমি ব্যাগ থেকে সমরেশ মজুমদার এর "লীলাসুন্দর" বইটা বাহির করে পড়তে শুরু করলাম, বইটাতে দুর্যোধন মিত্র,রামচন্দ্র, কৃষ্ণা, সুন্দর ও লীলার কাহিনী পড়তে পড়তে একসময় দেখি ফুল বইটাই পড়া শেষ হয়ে গিয়েছে। বইটি ছিল ১৬০ পৃষ্টার, বইটি পড়ে আমি দুর্যোধন, লীলা ও সুন্দর এর ভক্ত হয়ে গেলাম।এর মধ্যে অনেক সময় কেটেগেল।

আমাদের গাড়িটা তখন ও দাউদকান্দি ব্রিজে উঠেনি। চারদিকে মানুষের হাহাকার ও শিশুদের কান্না যেন মরুভূমিতে বসবাস করছি,পেটে খুব খিদা অনুভব করলাম।

ব্যাগ থেকে আরেকটা বই বাহির করলাম, সাদাত হোসাইন এর জানালা ওপাশে। বইটিতে ৬টি গল্প রয়েছে,তারমধ্যে প্রেম ও সামাজিক বাস্তবমুখী কাহিনী লেখক খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছে, বইটিতে গল্প গুলোকে লেখক অনেক সুন্দর ভাবে সাজিয়েছেন যদিও লেখকের এটাই আমার আমার প্রথম পড়া বই তবেও অনেক ভালো লেগেছে।

বিকেল ৫টা বাজে, তখনও আমাদের গাড়ি মেঘনা ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে আছে।আমার ঢাকার জীবনে এতো দীর্ঘ সময় জ্যামে কখনো পড়েনি। এমন একটা দেশে বাস করি,যে দেশে কোন নিয়মনীতি মানার দরকার হয়না। বড় বড় টেন্ডারবাজেরা বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাস্তা ও ব্রিজের কাজ করে থেকে এতে মিডিয়া ও মন্ত্রীদের কোন মাথাব্যথা নেই।কারন তাদের তো সমস্যাতে পড়তে হচ্ছে না,যত সমস্যা আমজনতার। ফেনিতে আজ দীর্ঘ দুমাস এমন সমস্যা তে প্রতিদিন পড়তে হচ্ছে আমজনতাদেরকে কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোন উপযোগী প্রদেক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ব্যাগে পড়া দুটা বই রেখে নতুন বার্ট্রান্ড রাসেল এর দি অটোবায়োগ্রাফি অব পড়তে শুরু কলাম। বেশ কিছু পৃষ্ঠা পড়ার পর খুব ক্লান্তি ও ঘুমের অনুভব করলাম।বইটা রেখে জ্যামের মধ্যে ঘুমাতে চেষ্টা করলাম।ঘুম থেকে উঠে দেখলাম রাত ৮টা বাজে তখন আমাদের গাড়িটা সায়দাবাদে।সরকার আর মিডিয়া যদি আরেকটু আন্তরিক হয় তাহলে আমাদের মত আমজনতাদের ১১/১২ ঘণ্টা রাস্তার মধ্যে পড়ে থাকতে হয়না। মিডিয়া বা কি করবে? মিডিয়া তো এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ে ব্যস্ত আর সরকার ব্যস্ত উন্নয়ন নিয়ে।মাঝখানে রাস্তাঘাটে আমজনতা।

পঠিত : ১২৪০ বার

মন্তব্য: ০