তারিখঃ ২৬ মে, ২০১৮, ১১:৫৬
বই পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
বইঃ সানজাক ই উসমান
লেখকঃ প্রিন্স মুহাম্মদ সজল
প্রকাশনীঃ গার্ডিয়ান
মূল্যঃ ইসলামী বই মেলায় ৪০% ছাড়ে
৩০০/-
১০/১৫ বছর আগে উসমানী খেলাফত এর
ব্যাপারে টুকটাক পড়াশুনা করেছিলাম তবে মনোযোগ আকর্ষণের মত ছিল না। এরদোয়ান এর নেতৃত্বে আধুনিক
তুরস্কের উত্থানের পর মনোযোগ আকর্ষণ করে সবার । দিলিরিস আরতোরুল টিভি সিররিয়াল দিয়েই মূলত
অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস জানার দিকে মনোযোগ ধাবিত হয়। নেটে সার্চ দিয়ে যা পাওয়া যায় কিছুটা পড়ে
ফেলি। এই সময়েই
গার্ডিয়ান প্রকাশনীর হাত ধরে বাজারে হাসে সানজাক ই উসমান।
আমার যা লেখার দক্ষতা আছে তাতে এই
বই এর ব্যাপারে রিভিউ লেখার যোগ্যতা আমার নেই। আমি শুধু যেটুকু করতে পারি সেটা হল বই পাঠ
করার পর আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে।
---à বইটি নিঃসন্দেহে ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল হতে পারে। তবে লেখক ইতিহাসের গ্রন্থসমূহের
প্রচলিত পদ্ধতিতে জাননি। ইতিহাস গ্রন্থগুলো সাধারনত কাটখোট্টা টাপের হয় অপরদিকে ঐতিহাসিক উপন্যাসে
রংচং এর ভিড়ে ইতিহাস হারিয়ে যায় নয়তো বিকৃত হয়ে যাবার উপক্রম হয়। লেখক এখানে ভিন্নপথে
হেঁটেছেন। সাল তারিখ এর উপরে জোর না দিয়ে যা ঘটেছে সেই ঘটনার বর্ননার উপরে জোর দিয়েছেন। ফলে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে
ঠিক যা যা ঘটেছে তার নিখুত ছবি ফুটে উঠেছে। লেখকের শব্দচয়ন আমার নজড় কেড়েছে। শব্দচয়নের কারনেই মনে হয়েছে এটা ইতিহাস
গ্রন্থ নয় এটা এক কালজয়ী ঐতিহাসিক উপন্যাস। ঐতিহাসিক উপন্যাসের মত অতিরিক্ত রঙ চং না এনেও যা যা
ইতিহাসে বিদ্যমান ছিল সেটাকেই রঙিন করে উপস্থাপন করে সত্যি এক অপূর্ব ছবি আঁকতে
সমর্থ হয়েছেন নিঃসন্দেহে। কোন কিশোর থ্রিলার সিরিজ যেভাবে কিশোর বয়সীদের নেশার মত ডুবিয়ে রাখে এই বইটিও
সেভাবে নেশা ধরিয়ে দেবার মত করেই উপস্থাপন করতে পেরেছেন লেখক। লেখকের ভাষায়ঃ
“ইতিহাস হল শব্দের ক্যানভাসে সময়ের ছবি আঁকা। ----- আমি এখানে নতুন ক্যানভাসে নতুন রঙ তুলি ব্যবহার করে ভিন্ন এক ছবি আঁকার
পথে হেঁটেছি”।
আমার দৃষ্টিতে লেখক এখানে ভিন্ন
পথে সেই ছবি আঁকতে পুরোপুরি সফল হয়েছেন।
---à বইটিতে সাতটি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়ে মঙ্গলদের চিত্র তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে মঙ্গলদের
প্রতিরোধে মামলুকদের চিত্র। তৃতীয়, চতুর্থ ও
পঞ্চম অধ্যায়ই মূলত বই এর মূল আলোচিত অধ্যায়। উসমানীদের চিত্র। শেষ দুটি অধ্যায় সংশ্লিষ্ট কিছু পর্যালোচনা।
----à বইটি আমার কাছে মনে হয়েছে একটা মুভি। এটা নিঃসন্দেহে লেখকের কৃতৃত্ব। যে অধ্যায়টাই পড়া শুরু
করেছি মনে হয়েছে মুভি দেখছি। পুরো ছবিটাই মনের মাঝে গেঁথে যাওয়ার মত উপস্থাপনা। আর শুরুতেই মঙ্গলদের পরিচয়
উপস্থাপন যেন এমন মুভির ভিলেন কে পরিচয় করিয়ে দেবার পর আসে নায়কের পরিচয়, নায়কের পার্ট। ঠিক তেমনটাই। সারা দুনিয়া কাঁপানো
মুসলিমদের কেন জঙলী মঙ্গলরা দাসের জাতিতে পরিণত করতে পেরেছিল তার নিখুঁত বিবরণ
ফুটে উঠেছে। চেঙ্গিস খানের অবহেলিত ছোটবেলার জীবন তাকে করেছিল নিষ্ঠুর। তেমনি শারীরিক শক্তি এবং
নিজের ভেতরে থাকা নেতৃত্বের গুনই তাকে তার যাযাবর
বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীর প্রধান বানিয়েছে। সেই সাথেই কিছু অপরিহার্য গুন তার বাহিনীকেও অপ্রতিরোধ্য
শক্তিতে পরিণত করেছিল। যাদের আনুগত্য, শৃঙ্খলা, দক্ষতা আর বিশ্বস্বতা হিটলারের নাজি বাহিনীকেও ছাড়িয়ে গেছিল। কেউ নেতার সাথে মিথ্যে বলতে
পারত না, মিথ্যের শাস্তি একটাই- মৃত্যু। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কেউ
পালালে সেই দল থেকে একজন পালাবে ঐ দলের বাকি সবাইকে জবাই করা হবে। এমন কঠোর আনুগত্য,
শৃঙ্খলা, দক্ষতা আর বিশ্বস্বতাই চেঙ্গিস খানের বাহিনীকে
করেছিল অপরাজেয়। আর এজন্যেই তারা বইয়ে দিয়েছিল
রক্তের সমুদ্র। চার কোটি মানুষের রক্তে
গোসল করে উল্লাস করতে পেরেছিল চেঙ্গিস এর দল।
---à মঙ্গলদের ইয়াজুজ মাজুজ মনে করে ভয়ে কম্পমান মুসলিম বিশ্ব যখন
বিনা প্রতিরোধে খুন হচ্ছিল তখনই মঙ্গলদের সামনে আতংক হিসেবে উপস্থিত হলেন মামলুকরা। সুলতান বাইবার্স এর
নেতৃত্বে মামলুকরা মুসলিমদের মন থেকে ঘুচিয়ে দিয়েছিলেন ইয়াজুজ মাজুজ ভীতি। প্রতিটা অধ্যায়ের বর্ণনাই
এক একটা জীবন্ত ছবি অথবা মুভির মত করেই উপস্থাপণ করেছেন লেখক। সুলতান বাইবার্স এই মঙ্গলদের হাতেই দাস
হিসেবে জীবণ শুরু করেছিলেন। শারীরিক শক্তিতে এরা মঙ্গলদের ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দশ কেজি ওজনের বর্ম, সাড়ে চার কেজি
ওজনের দুটি তলোয়ার, ছয় কেজি ওজনের বর্শা, তীর ধনুক মিলে চল্লিশ কেজি নিয়ে আনায়াসেই এরা ছুটতে পারত এবং এক
ঘোড়ার পিঠ থেকে অন্য ঘোড়ার পিঠে চড়তে পারত
এবং নিখুঁত তীর চালাতে পারত। এদের হাত ধরেই মঙ্গলদের হাতে নিঃশ্বেষ হতে যাওয়া মুসলিম
বিশ্ব আবার ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছিল। সুলতান বাইবার্স মঙ্গলদের
জবাব দিয়েছিলেন ঠিক সেই মঙ্গলদের নিষ্ঠুরতার মাধ্যমেই। এই অধ্যায়ে দেখা যায় নিষ্ঠুর মঙ্গলদের পতনের
দিক।
---à পঠিত : ১২৫৫ বার
মন্তব্য: ০