Alapon

“আমার দেহ আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব”

Part----- 02


এ দেশের নারীবাদীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় স্লোগান দিয়ে লেখাটা শুরু করেছিলাম, “আমার দেহ আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব”- এটা দিয়েই শেষ করি।

 এ স্লোগানটা মোটেও আমাদের দেশের নারীবাদীদের নিজস্ব আবিষ্কার না। পুরোটাই ওয়েস্টার্ন ফেমিনিস্টদের থেকে ধার করা। আমাদের সময়ে এমন একজন পপুলার ফেমিনিস্ট হচ্ছেন Jessica Valenti। তিনি তার বই ‘The Purity Myth’- এ দাবী করেছেন মেয়েরা আসলে পুরুষদের মতই। তাদের উচিত পুরুষদের মতই অবাধ যৌনতার জীবন-যাপন করা। দেহটা তোমার, জীবনটাও তোমার। কেন আরেকজনের কথা শুনবে? আকাশ থেকে ঈশ্বর কাকে কী বলেছেন তা নিয়ে তোমার মাথা-ব্যাথা থাকবে কেন?
.
খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারেন বলে উনার মতো অনেক ফেমিনিস্টের বক্তব্যকেই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তরুণরা লুফে নিয়েছে। পাড়ি দিয়েছে যৌনতার সমুদ্রে। কিন্তু এর ফলাফল কী হয়েছিল? শুধু যে এটা তাদের সমাজ কাঠামোকে ভেঙ্গে ফেলেছে তা নয়, এটা তাদের মানসিকতাকেও ভেঙ্গে ফেলেছে। সেটা নিয়ে মজার একটা গল্প বলে শেষ করি।
.
মেয়েটার নাম অলিভা। সে ফেমিনিস্টদের আকিদায় বিশ্বাসী। বিশ্বাসী দেহ-স্বাধীনতায়। মেডিকেলে পড়া অবস্থায় এক ছেলের সাথে পরিচয়। ঘনিষ্ঠ হতেও সময় লাগল না। বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাত কাটানোর পর দেখল আর বনিবনা হচ্ছে না। সাথে সাথে ব্রেক-আপ। সমস্যা হচ্ছে, মন থেকে কিছুতেই বয়ফ্রেন্ডের স্মৃতিকে সে মুছে ফেলতে পারছে না। ইচ্ছামত মদ খাচ্ছে, বমি করছে। কোনো ফায়দা নেই। অবস্থা বেগতিক দেখে অলিভা স্মরণাপনন্ন হয় Dr. Grossman এর কাছে। যিনি পরবর্তীতে তার বই ‘Unprotected’- এ অলিভার এ ঘটনা বর্ণনা করেন।
.
অলিভা ডাক্তারের কাছে এসে জানায় নিজের জীবনের গল্প। সে স্বাধীনচেতা মেয়ে। এক ছেলের কাছেই সারাজীবন পড়ে থাকতে হবে এরকম খ্যাত চিন্তায় সে বিশ্বাস করে না। কিন্তু কেন যেন মন থেকে তার বয়ফ্রেন্ডের স্মৃতি সে মুছতে পারছে না। ওদিকে, ছেলেটা দিব্যি ঠিকমত ক্লাস করছে, ল্যাব করছে। কিন্তু ওকে ক্লাসে দেখলেই অলিভার মরণ! কিছুতেই আর অন্যদিকে মন দিতে পারে না সে।
একটা মেয়ের কাছে সম্পর্ক মানে কেবল দেহ-সর্বস্বতা নয়। ছোটখাট কিছু ব্যাপার, যেমনঃ সেন্স অফ হিউমার, মমতা, একটু আলাদা কেয়ার করা; এসবকিছু অধিকাংশ মেয়ের কাছে দেহের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বেশি ভালো লাগার বিষয়। অন্যদিকে অধিকাংশ ছেলেদের কাছে নারী-পুরুষ রিলেশন মানেই যৌনতা। উদ্যম যৌনতার চেয়ে তার সঙ্গিনী যে উষ্ণ আলিঙ্গন বেশি পছন্দ করে এটা তার মাথায় ধরে না। আল্লাহ তা‘আলা নারী-পুরুষকে এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। এখানে লজ্জার কিছু নেই। বরং, পার্থক্যটা মেনে নেয়ার মাঝেই আছে কল্যাণ।
.
সমস্যা হচ্ছে, ফেমিনিস্টরা এ পার্থক্যকে মেনে নিতে পারে না। মেনে নিতে চায় না। যার কারণে নিজেদের সত্তার কাছেই একসময় আটকে পড়ে। কেউ স্বীকার করে, আর কেউ করে না। পার্থক্য শুধু এতোটুকুই। Dr. Grossman অলিভাকে কী চিকিৎসা দিয়েছিলেন জানা যায়নি। তবে যা বলেছিলেন তাতে যেন গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের আক্ষেপই ভেসে উঠেছে- ‘এর আত্মা কোথায়?’। 

Dr. Grossman অলিভাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন-
“do they tell you how to protect your body from herpes and pregnancy, but they don’t tell you what it does to your heart?” [Unprotected, Page: 3]



পঠিত : ১৪০৬ বার

মন্তব্য: ০