Alapon

ইমহোটেপ...জোসেফ বা নবী ইউসুফ আ. একই ব্যক্তি?

ইমহোটেপ ɪmˈhoʊtɛp নামের অর্থ হল, ”যে শান্তি নিয়ে এসেছে বা শান্তিতে এসেছেন।” ইমহোটেপকে বলা হয় প্রাচীন মিসরের লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। তিনি একইসাথে ছিলেন একজন বিজ্ঞানী, স্থপতি, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, জ্যোতির্বিদ, কবি ও দার্শনিক। ইমহোটেপ মানব ইতিহাসের প্রথম বিজ্ঞানী, স্থপতি ও চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত । শতাব্দী থেকে শতাব্দী পার হয়ে যায় তাকে নিয়ে তৈরি হতে থাকে কল্পকথা। তিনি পরিচিতি লাভ করেন একজন মহান চিকিৎসকরূপে, যার আরোগ্য লাভ করার ছিল বিশেষ ক্ষমতা। প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায় প্যাপিরাস কাগজের উপর ইমহোটেপের বর্ণনা থেকে।



প্যাপিরাসঃ
হোগলাজাতীয় গুল্ম বা ঘাস জাতীয় প্যাপারি থেকে তৈরি প্যাপিরাসরীড বা কাগজ। রীডের অন্তঃসার নিষ্কাশন করে নিয়ে একজাতীয় গাছের কস বা আঠা দিয়ে জোড়া দিয়ে শুনিয়ে নেওয়া হত। যার ফলে একটি মসৃন, দৃঢ় এবং স্থায়ী অবতল পাওয়া যেত। এর মধ্যেই লেখা হত প্রাচীন হায়ারোগ্লাফিক।
প্যাপিরাসরীড নীল নদের উপত্যকায় প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। প্রাচীন মিসরে লেখার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হত প্যাপিরাসরীড।


ঐন্দ্রজালিক বা জাদুকরী চিকিৎসার চেয়ে সাধারণ জখম, ক্ষত, পচন আর অস্ত্রোপচার সব সম্পর্কেই তথ্য দেয়া ছিল ইমহোটেপের লেখা প্যাপিরাসে। প্যাপিরাসে লিখে যাওয়া শত শত মিসরীয় ওষুধ যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে যায় স্থানীয়রা। প্যাপিরাসে বর্ণিত ৪৮টি চিকিৎসা ধরনের মধ্যে ৩০ টি এখনো চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপযুক্ত।
তবে তার সব কাজের কৃতিত্ব ছাপিয়ে উঠে ইতিহাসের প্রথম মানব নির্মিত বিশাল প্রস্তরখণ্ডের সমাধিক্ষেত্র "পিরামিড" নির্মানের মাধ্যমে। মেম্ফিসের নিকটে সাক্কারায় অবস্থিত এই পিরামিড। সাক্কারা হচ্ছে প্রাচীন মিসরের বিখ্যাত রাজধানী মেম্ফিসের একটা সমাধিপুরী। প্রথম পিরামিড স্টেপ পিরামিড নামেও পরিচিত। 


ফারাও জোসেরের (Djoser) জন্যই নির্মাণ করা হয়েছিল মিশরের প্রথম পিরামিড। ইমহোটেপ উভয় পাশ্বে ২১০ ফিট দীর্ঘ আর ২৫ ফিট উঁচু এই পিরামিড নির্মাণ করেছিলেন সাক্কারাতে। জোসার কিন্তু এই পিরামিড নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি। অথবা ইমহোটেপ নিজেও তার নূতনত্ব এ তৃপ্ত হতে পারেনি। তাই ধাপে ধাপে এর উচ্চতা বাড়ান। শেষ পর্যন্ত এর উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ২৫ ফিট থেকে ২০০ ফিটে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে অনেক ক্ষুদ্র স্থাপনা নির্মাণ করেন। স্টেপ পিরামিড শুধু একটা পিরামিডই না, এটা একটা বিশাল সমাধি-কমপ্লেক্সের কেন্দ্রবিন্দু। ধর্মীয় রীতিসম্মত নানা স্থাপনা আর অলঙ্করনে ঘেরা একটা বিশাল চত্বরের মাঝখানে অবস্থিত এই পিরামিড, যার পুরোপুরি না হলেও কিছু অবশেষ এখনো রয়ে গেছে এখনো । পুরো কমপ্লেক্সটা আবার প্রায় সাড়ে চৌত্রিশ ফুট উঁচু চুনাপাথরের দেয়ালে ঘেরা। কমপ্লেক্সের ভেতর আরো আছে সিড়ি, প্ল্যাটফর্ম, টেরাস, মূর্তি, দেয়ালচিত্র, বেদি ইত্যাদি শোভিত বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় আচার ও সৎকার সংশ্লিষ্ট একাধিক মন্দির, একাধিক চত্বর, কমপ্লেক্সের প্রধান প্রবেশমুখ থেকে পিরামিডের একপাশ পর্যন্ত ছাদে ঢাকা আর গাছের গুড়ি বা প্যাপিরাস গাছের কাণ্ডের মত ডিজাইন করা কলামশোভিত বারান্দা। পিরামিডের নীচে আছে ভূগর্ভস্থ এক ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ গোলকধাঁধাময় সুড়ঙ্গপথযুক্ত হলঘর, কক্ষ আর প্রকোষ্ঠের পারলৌকিক-কমপ্লেক্স। এর কিছু অংশ আবার দারুনভাবে সাজানো ছিল। এসবের উদ্দেশ্য একটাই – ফারাও জোসের (Djoser) পরজীবনের সুখস্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা। অনেকে মনে করেন পুরো পিরামিড-কমপ্লেক্সের নকশা বা পরিকল্পনার পিছনে ফারাও (Djoser) এর নিজের পার্থিব রাজ্য বা রাজধানীর একটা আদর্শায়িত মানসচিত্র কাজ করেছে – যাতে করে মৃত্যুর পরেও তিনি এই সমাধি-কমপ্লেক্সের মাধ্যমে সেই আদর্শায়িত মানসচিত্রের মানচিত্রের রাজত্ব সঙ্গে করে পরজগতে নিয়ে যেতে পারেন। পরিবেষ্টিত স্থানের শেষমেশ দৈর্ঘ দাঁড়ায় ১৮০০ ফিট এবং প্রস্থ ৯০০ ফিট। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি নির্মানের ৪৬০০ বছর পরে এখনো এই পিরামিড পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।


পাঁচটা ধাপে উঠে যাওয়া স্টেপ পিরামিড ছিল সেই যুগের নির্মাণশিল্পে একটা মাইলফলক।

ফারাও জোসেরঃ
প্রাচীন মিশরের ওল্ড কিংডমের তৃতীয় রাজবংশের প্রথম ফারাও ছিলেন জোসের(Djoser)। তার রাজত্বকাল শুরু হয় আনুমানিক ২৬৮০ খ্রিষ্টাব্দপূর্বে। ওল্ড কিংডম সময়কালটা মিসরের জন্যও অনেক প্রাচীন। বেশিরভাগ ইতিহাসগ্রন্থ বা লিপি যা রচিত হয় নিউ কিংডম আমলে তখনকার জন্যও ওল্ড কিংডম অনেক প্রাচীন। সে কারণে মিশরের ইতিহাসে ওল্ড কিংডমের রাজাদের পরিচিতি ততটা পাওয়া যায় না। সেই রাজাদের কৃতকর্মের ইতিহাস খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে সেই ওল্ড কিংডমের রাজাদের মধ্যেও জোসেরের (Djoser) নামটা বেশি জ্বলজ্বলে। কারণ জোসেরের সমাধিক্ষেত্র মিশরে এক নতুন যুগের সূচনা করে। পিরামিড যুগ। স্টেপ পিরামিড নামে পরিচিত এই পিরামিড রাজা জোসেরের জন্যে তৈরী করে দিয়েছিলেন তার প্রধান উজির ইমহোটেপ। পৃথিবীতে ইমহোটেপ প্রথম কলামের সাহায্যে দালান মজবুত করার প্রথা প্রবর্তন করেন, এর আগে কখনো কলাম ব্যবহার হত না। প্রথম পিরামিডের ডিজাইনও তিনিই করেন, মিসরের সাক্কারাতে। "ফারাও জোসের এর পিরামিড" নামে পরিচিত সেটা। জোসের ভাগ্যবান ছিলেন ইমহোটেপের মত একজন জ্ঞানী ব্যক্তিকে উজির পেয়ে। মিশরীয় প্রজারা তাকে চিকিৎসা শাস্ত্রের দেবতা বলে গন্য করতেন। মনে করা হয় তিনি ক্ষরা জনিত দুর্বিক্ষের হাত থেকে মিশরবাসিদের রক্ষা করেছিলেন। 
প্রজা দরদী উজির হিসেবে এতটাই খ্যাতি লাভ করেন যে পরবর্তীতে রাজা জোসেরের থেকে মানুষ ইমহোটেপের নাম বেশী স্মরণে রাখে। তিনি হয়ে ওঠেন তৃতীয় রাজবংশের শ্রেষ্ঠ ফারাও (রাজা)।

ইমহোতেপ কিন্তু রাজরক্তের অধিকারী ছিলেন না। খুব সাধারণ লোক থেকে নিজের চেষ্টায়, ফারাও এর সুদৃষ্টিতে পড়ে তিনি পরাক্রমশালী মিশর রাজ্যের উজির হয়ে যান! কী ছিলেন তিনি আগে? উত্তর মিশর এর একটা প্রাচীন লিখনি ( Famine Stele) থেকে আমরা এরকম একটা ঘটনা জানতে পারি, ফারাও জোসের একবার একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন। অদ্ভুত স্বপ্ন। দেখলেন, তিনি দাঁড়িয়ে আছেন নীল নদের তীরে। নদের পানি কমতে কমতে কাদা হয়ে যাচ্ছে। মাছ লাফিয়ে কাদায় উঠে পড়ছে। হঠাৎ নদী থেকে সাতটা মোটা গরু উঠে এলো, পেছনে সাতটা শীর্ণ গরু। এরপর আজব ব্যাপার হলো। ঐ সাতটা শীর্ণ গরু খেয়ে ফেলল সাতটা মোটা গরুকে! ফারাও ভয় পেয়ে গেলেন। নদীর পাড়ে সাতটা শস্যদানা দেখা গেল, সবুজ... এরপর কাদায় মিশে গেল। এরপর ঠিক ওখানেই সাতটা শুকনো শস্য পড়ে রইল।

তখন সেই সপ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ইমহোটেপ। মিসরে নাকি টানা সাত বছর খরা হবে। ইমহোটেপ এর বুদ্ধিতে, প্রচুর ফসল জমিয়ে রাখা হয়, এবং টানা সাত বছরের সে খরার সময় ইমহোটেপের কল্যাণে কোনই সমস্যা হয়নি মিসরের। সেই পিরামিডের পাশেই আরেকটা স্ট্রাকচারে ফসল জমিয়ে গুদামজাত করে রাখেন। এটি ইতিহাসের প্রথম দীর্ঘসময় ধরে শস্য সংরক্ষণ পদ্বতি।
পাঠক ঘটনাটা কি চেনা চেনা লাগছে? লাগার কথা। এটা তো নবী ইউসুফের কাহিনী। প্রথম পিরামিড নির্মাণকারী ইমহোটেপ আর ইউসুফ আসলে একই ব্যক্তি।

নবী ইউসুফ (আ) এর ইমহোটেপ নামের ব্যুৎপত্তিটা অনেকটা এরকম হতে পারে-

ইউসেফ>ইউসেপ>ইওতেপ>ইমোতেপ>ইমহোটেপ।

কোরানে আর বাইবেলে বর্ণিত কাহিনীর মধ্য দিয়ে ইউসুফ (আ) কাহিনীর বর্ণনাঃ
ইহুদী, খ্রিষ্টান আর ইসলাম ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত ইমহোটেপ বা ইউসুফ একজনই। তার নাম বাইবেলে জোসেফ, কুরআন আর তাওরাতে(ইহুদী ধর্মগ্রন্থ) ইউসুফ। নবী ইউসুফ (আ)। ইউসুফ/জোসেফ ছিলেন ১২ ভাই এর একজন, তার বাবা ছিলেন ইয়াকুব/জ্যাকব, যার আরেক নাম ইজরাইল। আক্ষরিক অর্থে তিনি ইজরাইলের ছেলে ও একজন নবী ছিলেন। এই ১২ জনের পরিবার 'বনী - ইসরাইল' নামে খ্যাত হয়।তারা সবাই বাস করতেন মধ্যপ্রাচ্যের কেনানে। একদিন রাতে ইউসুফ/জোসেফ একটি স্বপ্ন দেখলেন। তার পিতা ইয়াকুবের/জ্যাকবের কাছে এসে বললেন, পিতা আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারোটি নক্ষত্র এবং সূর্য ও চাঁদ আমাকে সেজদা করছে। ইয়াকুব বললেন, এই স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের বলবেনা। তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। এই স্বপ বর্ণনা ছিল ইউসুফ বড় হয়ে একজন নবী ও বিখ্যাত মানুষ হবেন। এগারোটি নক্ষত্র ছিল তার এগারো ভাই এবং চাঁদ ও সূর্য ছিল পিতামাতা।
ইউসুফের ভাইয়েরা দেখলো যে, তাদের বাবা ইউসুফকে বেশি আদর করেন। ফলে তাদের মনে হিংসা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তারা সিদ্ধান্ত নিল, ইউসুফ/জোসেফকে সরিয়ে দিবে। ইউসুফকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিল ভাইয়েরা। যথারীতি পরেরদিন পিতার কাছে এসে বললো, আপনি ইউসুফ কে আমাদের সাথে প্রমোদ ভ্রমণে দিন, যাতে সে স্বাধীনভাবে খাওয়াদাওয়া ও খেলাধুলা করতে পারে। ইয়াকুব প্রথমে দিতে চাচ্ছিলেন না কারণ তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন ১০টি বাঘ এসে ইউসুফকে আক্রমণ করলো এবং একটি বাঘ এসে তাকে রক্ষা করলো। তিনি ধারনা করছিলেন এই দশ বাঘ ইউসুফের এই দশ ভাই। তারা ইয়াকুব এর কথা শুনে বললঃ আপনার এ ভয়ভীতি অমূলক। আমাদের দশজনের শক্তিশালী দল তার হেফাজত জন্যে রয়েছি। শেষপর্যন্ত তিনি অনুমতি দিয়ে দিলেন। তবে ইউসুফের সব দায়িত্ব দিলেন জ্যেষ্ঠ ভাই রুবীল বা ইয়াহুদার কাছে। পিতার সামনে থেকে তারা ইউসুফকে কাঁধে তুলে নিল এবং পালাক্রমে সবাই উঠাতে লাগলো। কিছুদূর গিয়ে যখন দেখলো পিতাকে আর দেখা যাচ্ছেনা, তখন ইউসুফ যে ভাইয়ের কাঁধে ছিল, সে তাকে মাটিতে ফেলে দিল। তিনি সাহায্যের জন্য সব ভাইয়ের কাছে গেলেন কিন্তু কেউ সাহায্য করলোনা। তারা বলতে লাগলো 'তুই যে এগারোটি নক্ষত্র এবং চাঁদ, সূর্যকে সেজদা করতে দেখেছিস তাদের ডাক দে। তারাই তোকে সাহায্য করবে।

একপর্যায় তাদের একজন ইউসুফ কে মারার জন্য ছুরি বের করলো এই সময় ইয়াহুদা রুখে দাঁড়াল। অন্য ভাইয়েরা বলল তুমি যদি ইউসুফ কে রক্ষা করতে আসো, তাহলে তোমাকেও হত্যা করবো। ইয়াহুদা দেখলো যে ৯ জনের সাথে সে পারবেনা। তাই সে বলল, তোমরা যদি ইউসুফকে হত্যা না করে পাশের এই কূপে ফেলে দাও সেখানে সে সাপ,বিচ্ছুর কামড়ে মারা যাবে ফলে তোমারা নিজ হাতে হত্যার দোষ থেকে রক্ষা পাবে। আর যদি বেঁচে থাকে তাহলে হয়তো কোনো কাফেলা এই কূপে কাছে আসবে এবং পানির জন্য বালতি ফেলবে। সেখানে তারা ইউসুফকে পেয়ে, সাথে নিয়ে অন্য কোন দেশে পৌছে দিবে। দশভাই ঐক্যমত্য পৌছাল এবং ইউসুফকে কুপে নিক্ষেপ করলো। আর বাবাকে রক্তমাখা শার্ট দেখিয়ে বলল, এই যে জোসেফের জামা ওকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে, আমরা পারিনি কিছু করতে।কথিত আছে ইউসুফ এই কূপে তিন দিন ছিলেন। প্রতিদিন ইয়াহুদা তাকে খাবার এনে দিতেন। এরপর, তিন দিনের সময় একটি কাফেলা এসে পানির জন্য সেই কুপের ভেতর বালতি ফেললেন সেই বালতি করে উঠে এলেন ইউসুফ। এই কাফেলাটি সিরিয়া থেকে মিশর যাচ্ছিল বাণিজ্য করার জন্য। কাফেলার প্রধান ছিলেন মালেক ইবনে দো'বর। এদিকে তৃতীয় দিন খাবার দিতে এসে ইয়াহুদা ইউসুফকে কূপে না পেয়ে ভাইদের কাছে গিয়ে ঘটনা বর্ণনা করলো। অত:পর সব ভাই একত্রে খোঁজাখুঁজি করে কাফেলার কাছে পৌছালো এবং কাফেলার লোকদের কাছ থেকে ইউসুফকে বের করলো। তারা বলল, এই ছেলেটি আমাদের গোলাম। পালিয়ে এখানে এসেছে। তোমরা একে নিজেদের কব্জায় নিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছো। কাফেলার লোকজন চোর সাব্যস্ত হওয়ার ভয়ে ইউসুফকে কেনার কথাবার্তা বলতে লাগলো। শেষপর্যন্ত ইউসুফের ভাইয়েরা ইউসুফকে ২০ দিরহামার বিনিময়ে বিক্রি করে দিল। প্রত্যেক ভাই নিজেদের মধ্যে ২ দিরহাম করে ভাগ করে নিয়েছিল। এরপর থেকে ইউসুফের মিসর জীবন শুরু।

হিব্রু বাইবেল অণুসারে এই ১০ জন ভাইয়ের নাম ছিল,
১-রুবীল বা ইয়াহুদা,
২- সিমোন, 
৩-লেভি, 
৪-জুদাহ, 
৫-ডান, 
৬-নাফতালি, 
৭-গাড, 
৮-আশের, 
৯-ইসশাচার,
১০- জেবুলুন।

ইউসুফ/জোসেফকে কাফেলার লোকেরা তাদের দাস হিসেবে মিসরের বাজারে বিক্রির জন্য উপস্থিত করলো। শেষ পর্যন্ত মিশরের অর্থমন্ত্রী (আজিজে মিশর) কিতফীর কিংবা ইতফীর অথবা পতিফার। ["পতিফে-রা= মিশরীয় দেবতা রা এর উপহার"] ইউসুফের ওজনের সমান স্বর্ণ, মৃগনাভি, রেশমি কাপড়ের বিনিময়ে ইউসুফকে কিনলেন।

কিতফীরের স্ত্রীর নাম ছিল রাঈল কিংবা যুলাইখা। কিরফীর তার স্ত্রীকে ইউসুফকে পুরস্কার হিসেবে পেশ করলেন এবং বললেন,একে থাকার জন্য উত্তম জায়গা দাও এবং সে খুব সুদর্শন এবং বুদ্ধিমান বালক। তার সাথে ক্রীতদাসের মত আচরণ করবেনা। 
যুললাইখা তার কেনানী নাম পরিবর্তন করে মিশরীয় নাম দিলেন "ইমহোটেপ"। 
ইউসুফ/জোসেফ এর কাজে মুগ্ধ হয়ে পতিফার তাকে তার বাড়ির কাজ রক্ষণাবেক্ষণের প্রধান করে দেন।

দেখতে ভয়ানক সুন্দর ছিলেন ইউসুফ/জোসেফ। ধর্মীয় গ্রন্থ মোতাবেক, জোসেফ বা ইউসুফের মতো সুন্দর পুরুষ আর কোন দিন জন্মায়নি, জন্মাবেও না। তো যেটা হবার সেটাই হল, পতিফারের স্ত্রী, বাড়ির কর্ত্রী ইউসুফ/জোসেফের প্রেমে পড়ে গেল।
জোসেফ এতই সুন্দর ছিলেন যে, রাস্তায় বেরুলেই মানুষ হা করে তাকিয়ে থাকত। তার কথা ছড়িয়ে পড়ল চারদিক। সাথে এটাও ছড়িয়ে পড়ল, পতিফারের স্ত্রী যুলাইখা দাসের প্রেমে পড়েছেন।
এই কথা যুলাইখার কানে যাবার পর সে সকল নারীকে দাওয়াত করলো। দাওয়াত করার পর, তাদেরকে আপেল বা লেবু দেয়া হলো, সাথে ছুরি। জুলাইখা বলে দিল, যখন সে কাটতে বলবে তখন যেন কাটে।
সময় হলে জুলাইখা বলল, লেবু কাটতে। ছুরি দিয়ে সবাই লেবু কাটতে লাগল, সেই মুহূর্তে জুলাইখা হাজির করলেন তার দাসকে।
জোসেফকে দেখে সবাই হা করে চেয়ে থাকলো। লেবু যে কাটছিল সেটাই ভুলে গেল। ফলস্বরূপ, তাদের আঙুল কেটে রক্ত পড়তে লাগলো। তাও হা করে তাকিয়ে রইলো। "এ কোন মানুষ না!"
জুলাইখা যেটা প্রমাণ করার সেটা প্রমাণ করে ফেলল। তার প্রেমে পড়াটা যে খুবই স্বাভাবিক, সেটা বুঝিয়ে দিল।
একদিন জোর করে জোসেফকে বিছানায় আনার চেষ্টা করল জুলাইখা, নিজের সকল রূপ দেখিয়ে। কিন্তু জোসেফ কিছু করলেন না, অস্বীকৃতি জানালেন। পালিয়ে যেতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু দরজা তালাবন্ধ ছিল। ইউসুফ দৌড়ে দরজার পৌছাতেই আপনা আপনি তলা খুলে নীচে পড়ে গেল। উভয় দরজায় বাইরে এসে আজিজে মিসর পতিফারকে সামনে দেখতে পেল। স্বামীকে দেখে জুলাইখা স্বর বদলে বলতে শুরু করলেন, "এই দাস আমাকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল!"
শেষ পর্যন্ত ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে কারাগারে প্রেরণ করা হলো জোসেফকে।
ইউসুফের সাথে কারাগারে প্রবেশককারী দুজন কয়েদি একরাতে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলো। তারা ফারাও জোসেরের [Djoser] এর পিতা Khasekhemwy কে খাবারে বিষ দেওয়ার অপরাধী ছিল। 
তাদের একজন, অর্থাৎ, যে Khasekhemwy কে মদ পরিবেশন করত সে বললঃ আমি স্বপ্নে দেখি যে, আঙ্গুর থেকে মদ্য বের করছি। দ্বিতীয় জন অর্থাৎ, বাবুর্চি বললঃ আমি দেখি যে, আমার মাথায় রুটি ভর্তি একটি ঝুড়ি রয়েছে। তা থেকে পাখীরা ঠুকরে খাচ্ছে। 
তাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে দিলেন জোসেফ। সত্যি সত্যি সেটা মিলে গেল, তার ভবিষ্যৎবাণী মাফিক, একজন ছাড়া পেল, পুনরায় ফারাওর মদ পরিবেশকের চাকরি ফিরে পেল। আরেকজন ক্রুশবিদ্ধ হল। পাখিরা তার মগজ ঠুকরে খেল।
এদিকে ফারাও জোসের [Djoser] নিজেও একটা স্বপ্ন দেখলেন নিজের শয়নকক্ষে শুয়ে। দেখলেন, তিনি দাঁড়িয়ে আছেন নীল নদের তীরে। পানি কমতে কমতে কাদা হয়ে যাচ্ছে। মাছ লাফিয়ে কাদায় উঠে পড়ছে। হঠাৎ নদী থেকে সাতটা মোটা গরু উঠে এলো, পেছনে সাতটা শীর্ণ গরু। এরপর আজব ব্যাপার হলো। ঐ সাতটা শীর্ণ গরু খেয়ে ফেলল সাতটা মোটা গরুকে! ফারাও ভয় পেয়ে গেলেন। নদীর পাড়ে সাতটা শস্যদানা দেখা গেল, সবুজ... এরপর কাদায় মিশে গেল। এরপর ঠিক ওখানেই সাতটা শুকনো শস্য পড়ে রইল।
ফারাও এর ঘুম ভেঙ্গে গেল, অস্থির হয়ে গেলেন। তিনি লোক ডাকলেন, জাদুকরদের। কী অর্থ এই স্বপ্নের? কেউ বলতে পারল না। বলল, আরে, এটা দুঃস্বপ্ন। ফারাও এর মদপরিবেশক যখন এই কাহিনী শুনল, তখন তার মনে পড়ে গেল, কয়েক বছর আগে সে যখন জেলে ছিল, তখন তার সাথের কয়েদী, যার নাম জোসেফ, স্বপ্ন শুনে বলে দিয়েছিল যে সে মুক্তি পেয়ে ফারাও এর মদপরিবেশক হবে!
ফারাওকে এটা বলার পর, ফারাও জোসেফ জিজ্ঞেস করতে পাঠালেন।
জেলে জোসেফ বললেন, "সাত বছর অনেক শস্য ফলবে। প্রয়োজনের বেশি। এগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ এরপর সাত বছর চলবে খরা। তখন সেই শস্য ব্যবহার করতে হবে।" [ঠিক যেভাবে ফারাওকে বলে দিয়েছিলেন ইমহোটেপ !]
ফারাও মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি জোসেফকে মুক্ত করে আনতে বললেন। কিন্তু জোসেফ আসতে চাইলেন না। বললেন, তার নামের অপবাদ ঘুচা পর্যন্ত তিনি বেরুবেন না।
ফারাও তখন জোসেফের সম্পর্কিত সকলকে ডাকলেন।যুুলাইখা সহ। সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। এক পর্যায়ে যুলাইখা স্বীকার করে ফেলল, সেই আসলে মিথ্যে অভিযোগ দিয়েছে। এরপর যুলাইখার কী হয়েছিল সেটা কুরআন বাইবেল না বললেও, উপকথা বলে। 
(অনেক পরে ইউসুফ যখন মিশরের বিখ্যাত ব্যক্তি হয়ে উঠলেন তখন তিনি যুলাইখাকে বিয়ে করেন। তার যাদুবলে (?) বৃদ্ধা যুলাইখা পুনরায় যুবতি হয়ে উঠেছিল। তাদের দুজন সন্তানও হয়েছিল। 
১- ইফরায়ীম
২- মানশা।)

যাইহোক, ছাড়া পেলেন জোসেফ। জোসেফ এর গুণে মুগ্ধ হয়ে তাকে বড় দায়িত্ব দিলেন ফারাও। শস্যের দায় দায়িত্ব তার হাতে। ধীরে ধীরে আরো উঁচু পদে উঠতে লাগলেন তিনি। একসময় তিনি হলেন, ফারাও এর অধীনে মিসরের শাসক। ঠিক যেমনটা ছিলেন ইমহোটেপ!
আসলেই ৭ বছর অনেক শস্য ফলল। উদ্ধৃত্ত পুরোটা জমা করলেন জোসেফ। আর এরপর শুরু হল ৭ বছরের খরা। এত ভয়াবাহ খরা যে আশপাশের সব দেশ পর্যন্ত আক্রান্ত হলো।
এমনই একদিন, কেনান থেকে ১০ জন লোক এলো মিসরে। তারা শুনেছে, মিসরে এক দূরদর্শী লোকের কল্যাণে অনেক জমানো ফসল আছে, তারা খরাতে খুবই আক্রান্ত। তারা শস্য ভিক্ষা করতে এসেছে। বুড়ো বাপকে দেশে রেখে।
দরবারে তারা এসে দাঁড়াতেই, জোসেফ এর চোখে পানি চলে এলো। তিনি একা কক্ষে গিয়ে কাঁদলেন। এ যে তারই সেই ১০ ভাই, যারা তাকে মারা যাবার জন্য কুয়াতে ফেলে গিয়েছিল! তারা জানে না যে তাদের ভাই জীবিত।
যার কাছে খাবার ভিক্ষা করতে তারা এসেছে, সেই তার ভাই, মিসরের শাসক!
ইউসুফ তাদের জিজ্ঞাস করলেন, তারা কে? কোথা থেকে এসেছে? 
তারা বলল আমরা কেনানী। খরায় আক্রান্ত হয়ে মিশরে এসেছি শস্যের জন্য। 
ইউসুফ বললেন তোমদের সম্পর্কে বল।
তারা বললঃ আমরা ১২ ভাই, একে একে সবাই নিজেদের পরিচয় দিতে লাগলেন।
ইয়াহুদা, সিমোন, লেভি, জুদাহ, ডান, নাফতালি, গাড, আশের, ইসশাচার, জেবুলুন। আমাদের পিতা ইয়াকুব।

দরবারে ফিরে, তিনি তাদের ভর্তি করে শস্য দিতে বললেন। বিনিময়ে তারা টাকা দিল বটে, এক থলে টাকা।
মিসরে তৎকালীন শস্য বিক্রয় পদ্ধতিঃ
এক ব্যক্তিকে এক উট বোঝাই খাদ্য সশ্য দেওয়া হত। এর ওজন এক ওসক অর্থাৎ ৬০ সা।
যা আমাদের ওজন অনুযায়ী ২১০ সের অর্থাৎ পাঁচ মনের কিছু বেশি।

জোসেফ বললেন, "তোমরা কি সত্যবাদী?"
তারা অবাক হয়ে বলল, "মিথ্যে কেন বলব?!"
ইউসুফ বলল তোমরা বলেছো তোমরা ১২ ভাই কিন্তু এখানে দেখছি ১০ জন। তখন তারা বলল,"আমাদের ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে ইউসুফ/জোসেফকে ছোট বেলায় বাঘে খেয়েছে অন্য জন বেনইয়ামিন/বেঞ্জামিন আমাদের বাবার চোখের মণি তিনি সারাক্ষণ তাকে নিজের কাছে রাখেন।

তখন ইউসুফ বলল, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে পরের বার তোমাদের ছোট ভাইটাকে নিয়ে আসবে। এতে তোমরা এক উট শস্য বেশি পাবে।
ভাইয়েরা রাজি হয়ে গেল। চলেও গেল।
তারা জানলো না, মিসররাজ ইমহোতেপ বা জোসেফ যে একজনকে দিয়ে গোপনে তাদের শস্যের এক বস্তার ভেতরে একটা থলে রেখে দিয়েছেন। সেই থলেটাই যেটাতে ভর্তি করতে তারা টাকা দিয়েছে। পুরো টাকাটাই তাদের অজান্তে তাদের সাথেই দিয়ে দিলেন... তাদের চলে যাবার পথের দিকে চেয়ে রইলেন, তাদের আবার আগমনের প্রতীক্ষায়..
মিসর থেকে নিজের দেশে দিরে এলো ১০ ভাই, সাথে এতগুলো উট বোঝাই শস্য। কিন্তু পরের বার শস্য আনার শর্তটা বাবাকে জানালো তারা, ছোটভাই বেঞ্জামিন (বেন ইয়ামিন) যদি পরের বার সাথে না যায়, তাহলে উজির আর শস্য দেবেন না।
এখানে একটু বলে রাখা দরকার, যদি কারো জানা না থাকে, বাবা জ্যাকবের দুই স্ত্রী ছিল। লিয়া আর র্যাচেল (রাহেলা)। ১০ বড় ভাই আর এক বোন “দিনা” র্যাচেলের গর্ভের না। ছোট দুভাই জোসেফ (ইউসুফ) আর বেঞ্জামিন ছিলেন র্যাচেলের ছেলে, এবং পিতার আদরের। অনেকটা এই আদরের কারণেই হিংসায় মেরে ফেলতে চেষ্টা করে জোসেফকে তার সৎ বড় ভাইয়েরা। আর ভাগ্যের জোরে জোসেফ আজ মিসরের উজির।
তো, ভাইয়েরা বস্তা খুলেই দেখলো, তাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। সবাই খুশি হয়ে গেল। কিন্তু কেন এমনটা করা হল সেটা বুঝলো না। এই টাকা দিয়ে পরে আবার শস্য কেনা যাবে মিসর থেকে।
যখন শস্য ফুরিয়ে এলো, তখন তারা আবার প্রস্তুত হল, মিসর থেকে শস্য কিনতে। এবার বেঞ্জামিনকে সাথে নিতে হবে। কিন্তু বাবা জ্যাকব অস্বীকৃতি জানালেন, তিনি তার ছোট ছেলেকে যেতে দেবেন না। কারণ, জোসেফকে ভাইয়েরা দেখে রাখতে পারে নি, বাঘ খেয়ে ফেলেছিল।
ছেলেদের পীড়াপীড়িতে অবশেষে জ্যাকব রাজি হলেন, তবে কথা দিতে হল, যেকোনো মূল্যে বেঞ্জামিনকে ফেরত আনতে হবে।
শুরু হলো তাদের দীর্ঘ ভ্রমণ।মিসরে পৌঁছালে পরে উজির ইমহোতেপ তাদের সাদরে গ্রহণ করলেন [তারা তো আর জানে না তিনি জোসেফ]।
তাদের সম্মানে একটা ভোজনসভা দিলেন। ভোজনসভায় সবাইকে জোড়ায় জোড়ায় বসতে হবে। ফলে ১১ ভাই এর ১০ জন জোড়ায় জোড়ায় বসল, কিন্তু জোড়া ছাড়া রয়ে গেল বেঞ্জামিন। এটাই চেয়েছিলেন জোসেফ। ফলে জোসেফ আর বেঞ্জামিন বসলেন একসাথে।
এক পর্যায়ে দেখা গেল, বেঞ্জামিনের চোখে পানি। অশ্রুর কারণ জিজ্ঞেস করলেন জোসেফ, উত্তরে বলল বেঞ্জামিন, “আমার এক ভাইকে আমি হারিয়েছি ছোট বেলায়। ও যদি এখানে থাকত, তার পাশেই বসতাম আমি।“
সেদিন রাত্রে, জোসেফ বেঞ্জামিনকে ডেকে নিলেন এক কক্ষে। এরপর বললেন, “আমিই তোমার সেই ভাই। জোসেফ।” কিন্তু, আপাতত ব্যাপারটা গোপন রাখতে বললেন।
পরদিন যখন উটের পিঠে চড়ানো হচ্ছিল শস্যের বস্তা, তখন জোসেফের আদেশে একজন গোপনে রাজার সোনার পাত্র শস্যের থলেতে ঢুকিয়ে রাখল। যখন ভাইয়েরা রওনা দিয়ে দিল, তখনই প্রধান ফটক আটকে দেয়া হলো।
পাহারাদাররা চিৎকার করে উঠলো, “তোমরা চোর!”
হঠাৎ এমন অভিযোগে অবাক হলো ভাইয়েরা। কারণ তারা তো চুরি করেনি। তারা বলল, “আমরা কেবল শস্য নিতে এসেছি।”
তাদের জিজ্ঞেস করা হল, “চোরের শাস্তি কি তোমাদের কেনানি আইনে?”
তারা উত্তর দিল, “যার সম্পদ চুরি করা হয়েছে, তার দাস হয়ে থাকবে চোর। যে ধরা পড়বে তাকে যেন শাস্তির জন্য আটক করা হয়।”
কিন্তু খোঁজার পর তাদের এক বস্তা থেকে আসলেই রাজার সোনার পাত্র খুঁজে পাওয়া গেল। বেঞ্জামিনের থলেতে। তখন অন্য ১০ ভাই বলে উঠল, “এ চুরি করতে পারে, এর ভাইটাও (জোসেফ) চোর ছিল!” তারা জানত না, সেই ভাই এখানেই আছে!
নিয়ম মাফিক, বেঞ্জামিনকে রেখে যেতে হবে। তখন বড় ভাইদের মনে পড়ল, বাবার কাছে কী কথা দিয়ে এসেছিল তারা। তারা অনুরোধ করল, বেঞ্জামিন এর জায়গায় আরেকজনকে রেখে দেয়া হোক। কিন্তু জোসেফ মানলেন না।
সবচেয়ে বড় ভাই ইয়াহুদা তখন রয়ে গেলেন, বাকি ভাইদের পাঠিয়ে দিলেন, বাবাকে খবরটা জানাতে। অন্যদিকে, জোসেফ তার ভাই বেঞ্জামিনকে বলে দিলেন আসলে এটা তারই পরিকল্পনা। নিজের কাছেই তাকে রাখলেন তিনি।
সেই অনেক কাল আগে জ্যাকব ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অন্ধই হয়ে গিয়েছিলেন। আজ আরেক সন্তান হারিয়ে আরও কষ্ট পেলেন।
কী করবে বুঝতে না পেরে, পেটের তাড়নায় আবার এলো ভাইয়েরা মিসরে। এবার রীতিমত ভিক্ষা করল তারা। শস্যের জন্য।
এবার আর পারলেন না জোসেফ নিজেকে ধরে রাখতে। মিসরের ভাষা বাদ দিয়ে তার কেনানি ভাষাতে বলে উঠলেন, “তোমরা তোমাদের ভাই জোসেফ আর বেঞ্জামিনকে কী করতে মনে আছে?”
উজির ইমহোতেপের দিকে তাকিয়ে তারা অবাক হয়ে বলল, “তুমি জোসেফ!”
“হ্যাঁ, আমিই জোসেফ। আর আমার ভাই বেঞ্জামিন এই যে।”
ভাইয়েরা একেবারে ভয়ে যবুথবু হয়ে গেল। এখন কী করবে তাদেরকে জোসেফ? এত পাপের শাস্তি?
কিন্তু জোসেফ তাদের ক্ষমা করে দিলেন। তাদের জড়িয়ে ধরলেন। আনন্দের অশ্রু বিসর্জন করলেন।
এর পরের কাহিনী সংক্ষেপে এমন, জ্যাকব/ইয়াকুবকে মিসরে নিয়ে আসা হল। ইয়াকুবের পরিবার প্রায় ২০০ উট জিনিশপত্র বোঝাই করে মিসরে প্রবেশ করেন। তার পরিবার সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৩ জন পুরুষ এবং মহিলা। মিশরে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রায় ৪ হাজার সৈন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। 
মিসরে পুরো পরিবার আবার একত্রিত হলো। রাজার সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো তাদেরকে। মিসরে বসবাস শুরু করল জ্যাকবের পরিবার, তার ১২ সন্তান। এই ১২ সন্তান পরবর্তীতে হিব্রু বা ইজরায়েলের ১২ গোত্র হয়ে দাঁড়ায়।
১১০ বছর বয়সে মারা যান জোসেফ। মারা যাবার আগে তিনি অনুরোধ করেন, তার লাশ যেন তার পূর্বপুরুষদের সাথে দাফন করা হয়, কোন দিন যদি মিসর থেকে তারা চলে যায়, সাথে নিয়ে যায় লাশ। এজন্য তার কবর মাটিতে না দিয়ে কফিনে মমি করে রেখে দেয়া হয়। 
মৃত্যুর আগে নিজের কবর তিনি কোথায় করে যাবেন সেটা লুকিয়ে রেখেছিলেন, আজ পর্যন্ত কেউ জানে না ইমহোতেপ এর কবর কোথায়।

পাঠক অনেক কষ্টে তথ্যগুলো সংগ্রহ করে এই লেখা।
অবশ্যই আপনার মতামত জানাবেন।
প্রতিটি ছবির সাথে তথ্যসহ ক্যাপশন দেয়া আছে।

তথ্যসূত্রঃ 
মা'আরেফুল কোরান,
বাইবেল,
বই. মিসরের ইতিহাস,
ইংরেজি, বাংলা কয়েকটি ওয়েবসাইট,
Wikipedia.
Youtube.
সর্বোপরি Internet.


পঠিত : ৩০৬২ বার

মন্তব্য: ০