Alapon

জনপ্রিয়তাই কি কাল হয়ে দাঁড়ালো মাশরাফির!

একজন ক্রিকেটার ও ভালো মানুষ হিসেবে দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় এক নাম মাশরাফি বিন মোর্তজা। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে বিতর্কের উর্ধ্বে থাকা এই মানুষটিকে। দেশের জন্য নিবেদিত হয়ে সব উজাড় করে পারফর্ম করা, দক্ষতার সাথে দলকে নেতৃত্ব দেয়া, অন্যান্য সেলিব্রেটি ক্রিকেটারদের ন্যায় বিতর্কিত কোনো বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডে অংশ না নেয়া, এসবই তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো মাশরাফি কি পারবে তার এই বিতর্কহীন জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে? যদিও মাশরাফি অন্যদের থেকে আলাদা। এরপরও তাকে নিয়ে হঠাৎ করেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের একজন মন্ত্রীর আজকের এক বক্তব্য থেকেই এই আশঙ্কার সৃষ্টি। খবরে প্রকাশ, নড়াইল থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন মাশরাফি বিন মোর্তজা। এই খবরটি দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। মঙ্গলবার (২৯ মে) একনেক সভা পরবর্তী ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান সরকারের এই পরিকল্পনামন্ত্রী।

তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এটা স্পষ্ট করে বলেননি যে মাশরাফি কোন দল বা কোন মার্কা থেকে নির্বাচনে দাঁড়াবেন। সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রী কৌশল নিয়ে বলেন, ‘কোন দল থেকে তা তো বলিনি, আপনারাও কোনো দল ধরে নেবেন না।’ কিন্তু তথ্যটা যেহেতু সরকারের একজন মন্ত্রী দিয়েছেন, সেহেতু এটা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায় যে, নির্বাচনে দাঁড়ালে মাশরাফি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নৌকা মার্কার পক্ষেই দাঁড়াবেন।

যদিও মাশরাফির মুখ থেকে এ সম্পর্কে কোনো বক্তব্য এখনো জানা যায়নি। তার কাছ থেকে বক্তব্য পেলেই মূলত নিশ্চিত হওয়া যাবে তিনি সত্যিই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কিনা বা কোন দলের পক্ষ থেকে অংশ নিচ্ছেন। তবে এতটুকু খবরেই তোলপাড় শুরু হয়েছে মাশরাফির ভক্তকুলের মধ্যে। ভক্তরা কোনোভাবেই চাচ্ছে না তাদের স্বপ্নের মানুষটি রাজনীতিতে এসে নিজেকে বিতর্কিত করুক।

ক্রিকেটপ্রেমীরা বলছেন, মাশরাফি কোনো দলের সম্পদ নয়। সে বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। তার ভক্তদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থক যেমন আছে, তেমনি সমানভাবেই আছে বিএনপির সমর্থকও। ভক্তের তালিকায় আছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকগোষ্ঠীও। আমরা চাইনা তিনি কোনো দলের পক্ষে রাজনীতিতে নেমে অন্য দলগুলোর সমর্থকদের মনে আঘাত দিবেন। এমনটা করলে তিনি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবেও নিজেকে জাহির করবেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সেলিব্রেটি ক্রিকেটারদের রাজনীতিতে আসা নতুন কিছু নয়। অনেক দেশেই ক্রিকেটার বা ফুটবলাররা পরবর্তীতে রাজনীতিতে এসেছেন। মাশরাফির বেলায়ও তেমন কিছু হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে সকল দল ও মতের লোকেদের কাছে জনপ্রিয় একজন ক্রিকেটার হিসেবে রাজনীতিতে তার ভেবে পা দেয়া উচিত। ক্ষমতাসীনরা তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চায়। কিংবা তার জনপ্রিয়তা ছিনতাই করতে চায়। মাশরাফি যদি সেটা হতে দেন তাহলে তিনি বিতর্কিত হবেন।

কেউ কেউ বলছেন, অন্যান্য দেশের রাজনীতির তুলনায় বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক ভিন্ন। বর্তমানে এদেশের রাজনীতি অনেকটাই কলুষিত। যে জন্য এ দেশে ভালো মানুষ রাজনীতিতে আসতে চায় না। বিশেষ করে বর্তমানে যারা সরকারে আছে তারা একটা বিতর্কিত নামসর্বস্ব নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। আন্তর্জাতিকভাবে বর্তমান সরকারকে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের স্বীকৃতিও দেয়া হয়েছে।

জার্মান একটি খ্যাতিমান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক সমীক্ষামতে বিশ্বে নতুন করে ৫টি দেশ স্বৈরতন্ত্রে প্রবেশ করেছে। যার একটি বাংলাদেশ। গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে স্বৈরতান্ত্রিকতার স্বীকৃতি পাওয়া একটি দলের পক্ষে মাশরাফি বিন মোর্তজার মত বিতর্কহীন তুমুল জনপ্রিয় একজন ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে চরম বোকামী। এমন সিদ্ধান্ত কেবল তাকে বিতর্কিতই করবে।

পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ও তুমুল জনপ্রিয় একজন ক্রিকেটার হলেন ইমরান খান। তিনি এখন পুরোদস্তুর একজন রাজনীতিবিদ। তবে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে বিতর্কের তৈরি করেননি। নিজেই আলাদা দল প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে কারনে তার জনপ্রিয়তা এখনো বিন্দুমাত্র কমেনি, বরং বেড়েছে। মাশরাফির ভক্তরাও চান তিনি যদি রাজনীতিতে আসতেই চান তাহলে প্রয়োজনে নতুন দল প্রতিষ্ঠা করেই আসুন। নয়তো রাজনীতিতে আসারই দরকার নেই।

এর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান এমপির ছেলে এবং রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোয়ন প্রত্যাশী রাশেক রহমানের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন আরেক জনপ্রিয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এনিয়ে তখন ভক্তদের চরম সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

এদিকে মাশরাফিকে নিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠলে বিকেলে এসে নিজের বক্তব্য পাল্টে ফেলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদক এ সম্পর্কে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি দলের পক্ষ থেকে বা কোনো বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে কিছুই বলিনি। তাঁরা নির্বাচন করবে কি না, আমি জানি না। মানুষের মুখে অনেক দিন থেকেই শুনে আসছি মাশরাফি নির্বাচন করবে। সে জন্যই মাশরাফির একজন ভক্ত হিসেবে আমি বলেছি, ও যদি নির্বাচন করে, তাহলে সবাই যেন তাকে ভোট দেন।’

আওয়ামী লীগ থেকে মাশরাফির মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে সেই প্রতিবেদককে পরিকল্পনামন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘আমি মনোনয়ন দেওয়ার কে? আমি তো কেউ না।’ মাশরাফি নির্বাচন করবেন, এমন কোনো নিশ্চিত তথ্যও তাঁর কাছে নেই, ‘মাশরাফি নির্বাচন করবে কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো খবর আসলেই আমার কাছে নেই। আমিও আপনাদের মতোই লোকমুখে শুনেছি ও নির্বাচন করবে। মাশরাফির সঙ্গে আমার যোগাযোগই নেই। তাঁর মতামত না নিয়ে আমি কীভাবে বলি মাশরাফি নির্বাচন করবে? এটা বলার আমি কেউ না।’

তাহলে নিশ্চিত না হয়ে বা মাশরাফির সঙ্গে কথা না বলে তিনি কেনো এমন বিতর্কের ঝড় তুলে দিলেন? এমন প্রশ্ন রাখছেন ক্রিকেট প্রেমীরা। এ বিতর্কের সমাপ্তি টানতে পারেন এখন কেবল মাশরাফিই। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া এখন আসলে কিছুই করার নেই। তার ভক্তরাও তাকিয়ে আছে তার দিকে।  মাশরাফি কি তার জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখতে পারবেন? নাকি আওয়ামী লীগের অপরাজনীতির বলি হয়ে সব হারাবেন? এসব জানতে ভক্তদের ন্যায় আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ অ্যানালাইসিস বিডি

পঠিত : ১১৬২ বার

মন্তব্য: ০