Alapon

ধর্ষণকারি বীর আর ধর্ষিতা বেশ্যা।

প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দু একটি ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়।যেখানে ধর্ষিতার নাম,ছবি এবং সকল পরিচয় উল্লেখ থাকে কিন্তু ধর্ষণকারির নাম ছবি পরিচয় কিছুই উল্লেখ থাকে না।তার বিরুদ্ধে মামলা করলে তার ফলা-ফলও জানানো হয় না।ধর্ষণকারি তার এলাকায় মাথায় উঁচু করে হাটেন অপর দিকে ধর্ষিতাকে হাটতে হয় কলঙ্কের বোজা মাথায় নিয়ে।তাকে আমাদের সমাজ গ্রহন করতে চায় না।এ সমাজ তাদের ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে।রাস্তায় তাকে যুবকরা দেখলে খরাপ মন্তব্য করে থাকে।এমনকি মেয়েটার বন্ধুরাও তাকে গ্রহন করতে চায় না।এরকম নিরুপায় অনেক মেয়েই আত্মহত্যাকে বেছে নেয়।কিন্তু যিনি ধর্ষণ করলেন তার বিচার তো হয়ই না আর সমাজও তাকে সেরকম ঘৃণার দৃৃষ্টিতে দেখে না।আর তার বন্ধুদের কথা প হয় না তারা তো তাকে নিয়ে গর্বিত।দেখলে বলে "দোস্ত তোর বীর হওয়ার কৌশলটা একটু শিখাবি"।"দোস্ত পিসটা কিন্তু জটিল ছিল"।আর তার বিয়ে করতেও সমস্যা হয় না মেয়ের পরিবার/ছেলের পরিবার বলে "ছেলেদের এরকম হয় এগুলা কোন ব্যাপার না"।
এই সমাজ নিয়ে ভাবলে একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।লিখতে লিখতে একটা করুণ কাহিনীর গল্প মনে পরে গেল-
আমার এলাকার পাসে নুপুর নামে একটা মেয়ে ছিল।মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর ছিল যা কল্পনারও বাহিরে।তো সে তখন ইন্টার মিডিয়েটে পড়ে।আমি তখন ছোট কিন্তু সবই বুঝি।নুপুরের পরিবারে ছিল তাঁর বাবা-মা,তাঁর দাদি আর সে।তাঁর বাবা ছিল কৃষক।বাবার কৃষি কাজের মাধ্যমেই তাদের সংসার চলতো।যে বছর সে ইন্টার মিডিয়েটে উঠল সে বছর তাঁর ফসল তেমন একটা ভালো হয় নায়।তাঁর বাবা সংসার আর চালাতে পারছিলেন না।তাই নুপুর প্রাইভেট পড়াতে শুরু করলেন।তাদের সংসার ভালোই চলছিল।হঠাৎ একদিন নুপুর কলেজ থেকে বাড়ি ফিরতে ছিল।নুপুর লক্ষ করলো যে তাঁর পিছনে বাইকে কে জানো  তাকে ফলো করছে।সে দ্রুত হেটে বাড়ি পৌছাল।পরের দিন আবার সেই বাইকে করে তাকে ফলো করছিল খুব কাছে থেকে এবং অনেক খরাপ মন্তব্য করতে শুরু করল।
পরের দিন নুপুর কলেজে গিয়ে জানতে পারে যে ছেলেটি তাকে ফলো করছে সেই ছেলেটি হলো ওই এলাকার মেম্বারের ছেলে।এটুকোও জানলো যে তার চরিত্রও তেমন একটা ভালো না।
তৃতীয় দিনের দিন সেই ছেলেটি তালে প্রোপোজ করল কিন্তু নুপুর রাজি হলো না এবং ছেলেটির সাথে একটু খারাপ ব্যবহারও করেছে যেটা ছেলেটির প্রাপ্য ছিল।
প্রায় ৫-৬ দিন পর সেদিন সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি ছিল।নুপুরের বাবা তাকে কলেজ যেতে নিশেধ করলেন তবুও নুপুর কলেজে গেল।সেদিন কলেজে ছাত্র-ছাত্রী কম এসে ছিল।নুপুর কলেজের বারান্দায় দাড়ানো ছিল হঠাৎ মেম্বার সাহেবের ছেলে আর তার সাথে দু'টো ছেলে নুপুরের মুখ বেঁধে তাকে একটি রুমে ডুকালো।
কি আর ধর্ষণ করে ছেড়ে দিল!
নুপুরের বাবা থানায় মামলা করল।কিন্তু কোন লাভ হলো না পুলিশ মেম্বারের ছেলেকে গ্রেফতার করেনি।সে আগের মতোই এলাকায় সুন্দরিদের পিছনে লেগে আছে।
নুপুর!না পারছিল কলেজ যেতে না পারছিল রাস্তায় হাটতে।কলঙ্কের বোজা তিনি আর মাথায় বহন করতে পারছিলেন নাহ্।মানুষের মুখের অপবাদ তিনি সহ্য করতে পারছিলেন না।সমাজ তাঁর দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাতেন।সমাজ তাকে গ্রহন করল না।অবশেষে বেছেনেন আত্মহত্যাকে।ধর্ষণের কিছু দিন পরই নুপুরের সুন্দর দেহে নিজেই আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
মেম্বারের ছেলে এখনও আছে।আগের মতোই আছে।নেই নুপুর আছে শুধু তাঁর স্মৃতি।সেই স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছে তাঁর বাবা-মা।

পঠিত : ১৬০৮ বার

মন্তব্য: ০