Alapon

তৈমুর লংঃ যিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জয় করেন অর্ধপৃথিবী

ঠিক মনে নেই তবে সম্ভবত ক্লাস এইট বা ক্লাস নাইনে ইংরেজী একটি প্যাসেজ পড়েছিলাম যুদ্ধে পরাজিত এক ক্ষুধার্ত ব্যক্তি এক গৃহিণীর কাছে ভাত চান । তাকে ভাত দেওয়া হলে তিনি গরম ভাতের  একেবারে মাঝখানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেন। এতে তার আঙ্গুল পুড়ে যায়। এটি দেখে গৃহিণী তাকে তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন, তুমি তো দেখছি তৈমুরের মতই বোকা যে একপাশ থেকে শুরু না করে মাঝখান থেকে শুরু করে। আজ আমরা সেই তৈমুর লং সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।

প্রায় সাতশ বছর আগে একজন মানুষ পুরো পৃথিবীর সম্রাট হওয়ার ইচ্ছা পূষন করেছিল। না লোকটি আলেকজান্ডারের মত যেমন কোন রাজার পুত্র তিনি ছিলেন না তেমনি ছিলেন না চেঙ্গিস খানের মত কোন গোত্র প্রধানের উত্তরাধিকারী। জীবনের প্রথম দিকে এই লোকটির অধিকারে ছিল কিছু গবাদি পশু ও তাদের প্রতিপালনের জন্যে কিছু জমিজামা।

রাজপুত্র কিংবা গোত্র প্রধান না হয়েও এক সময় তিনি পৃথীবির অর্ধেক সেনাদের পরাজিত করেছিলেন। তৈমুর ছিলেন একজন মিলিটারি জিনিয়াস এবং ট্যাক্টিশিয়ান, যা তাকে বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী শাসকে পরিণত করে। তৈমুরের সৈন্যবাহিনী ছিল তখনকার বিশ্বে এক ত্রাসের নাম। তিনি যে  রাজ্য জয় করার ইচ্ছা পোষণ করতেন সেই স্থানেই  ধ্বংসযজ্ঞের প্রলয় তুলে জয় করে নিতেন। তার এই সৈন্যদলের হাতে ১৭ মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়। যা ছিল সেই সময়ের পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা পাঁচ ভাগ। বলা হয়ে থাকে,  হিটলারের আগমনের পূর্বে তৈমুরই ছিল বিশ্বের সবচাইতে বড় ত্রাস।

পরিচয় ও জন্ম

বিশ্ববিজেতা তৈমুর লং-এর জন্ম  কেশ নগরীর স্কারদু নামক শহরে। বর্তমানে এই শহরের  নাম শহর-ই-সবজ মানে সবুজ শহর। উজবেকিস্তানের সমরকন্দ শহরের ৫০ মাইল দক্ষিণে এই শহর-ই-সবজ (Shahrisabz) এর অবস্থান। সেই সময় তা ছিল চাগতাই খানশাহীর (Chagatai Khanate) অন্তর্ভুক্ত। চাগতাই খান নামটি এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের ২য় পুত্রের নাম অনুসারে এসেছে। তৈমুরের পিতার নাম তারাগে। তার পিতা ছিলেন বারলাস উপজাতির একজন ছোট মাপের ভূস্বামী।তার মাতার নাম  ছিল টেকিনা খাতুন (Tekina khatun) । বারলাস হলো তুর্কী-মঙ্গোল উপজাতি, অথবা মূলতঃ মঙ্গোল উপজাতি যাকে পরবর্তিতে টার্কিফাই করা হয়েছিল। ১৩৩৬ সালের ৮ই এপ্রিল, গভীর রাত, শহরের সবাই গভীর ঘুমে বিভোর। কিন্ত স্কারদু’র একজন ভূস্বামীর ঘরে নিভু নিভু আলো চলছে। বাইরে পাইচারী করছে বাড়ির মালিক তারাগে। ভোরের আলোর সাথে সাথে ভূমিষ্ট হল এক পুত্র সন্তানের। তার নাম রাখা হল তৈমুর। চাগতাই ভাষার তৈমুর অর্থ  লৌহ বা লোহা। ইউরোপে তিনি ‘তিমুর’ (Timur) বা ‘তিমুরলেন’ (Timurlane) নামে পরিচিত। আমরা তাকে ডাকি তৈমুর লং বলে।  Gérard Chaliand-এর মতে তৈমুর মুসলমান ছিলেন। তৈমুরের মনে চেঙ্গিস খানের সাম্রাজ্যকে পুণঃপ্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস জাগে।

তৈমুর বিন তারাগাই বারলাস (১৩৩৬ – ফেব্রুয়ারি, ১৪০৫) ১৪শ শতকের একজন তুর্কী-মোঙ্গল সেনাধ্যক্ষ। তিনি পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজ দখলে এনে তিমুরীয় সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৩৭০ থেকে ১৪০৫ সাল পর্যন্ত নেতৃত্বে আসীন ছিল। এছাড়াও তাঁর কারণেই তিমুরীয় রাজবংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই বংশ কোন না কোনভাবে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে নেতৃত্বে আসীন ছিল। তিনি তিমুরে ল্যাংগ্‌ নামেও পরিচিত যার অর্থ খোঁড়া তৈমুর। বাল্যকালে একটি ভেড়া চুরি করতে গিয়ে তিনি আহত হন যার ফলে তাঁর একটি পা অকেজো হয়ে যায়। তাঁর সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল আধুনিক তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত, ইরান থেকে মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ অংশ যার মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজিস্তান, পাকিস্তান, ভারত এমনকি চীনের কাশগর পর্যন্ত। তিনি একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ রচনা করিয়ে যান যার নাম তুজুক ই তৈমুরী।

প্রাথমিক জীবন

তৈমুর তার বাবার মত সুফি মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে তার ধর্মীয় উপদেষ্টা ছিলেন হানাফী মতানুসারী পন্ডিত আবদুল-জব্বার খোয়ারিজমী (  ‘Abdu ‘l-Jabbar Khwarazmi)।
তৈমুর হয়ত তার নামের স্বার্থকতার জন্যে শৈশবে বেশ দুরতন্ত ও সাহসী কিশোর হিসেবে বেড়ে উঠে। সে একটি ছোটঘাট ডাকাত দল গড়ে তুলে। তারা তানা এলাকা ঘুরে ভ্রমনকারীদের ছোট খাট জিনিস যেমন, ভেড়া, ঘোড়াসহ নানা গবাদী পশু লুট করে বেড়াত। ধীরে ধীরে তার বয়স বাড়তে থাকে। সেই সাথে বাড়তে থাকে তার শক্তি ও সাহস। সেই সাথে একটি শক্তিশালী দস্যুবাহিনী গড়ে তুলে। তাদের দাপটে এলাকার অনেকেই আতংকিত হয়ে থাকত।

ধারনা করা হয় একজন মেষপালকের কাছ থেকে মেষ চুরি করার সময় তাকে দু”টি তীরের আঘাত খেতে হয়। একটি ছিল ডান পায়ে অন্যটি ছিল ডান হাতে। তখন তিনি দু’টি আঙ্গুল হারান। তিনি তখন খোড়া হয়ে যান বলে ধারনা করা হয়। তবে অনেকে বলে থাকেন তিনি কোন যুদ্ধে খোঁড়া হন।  কিন্তু ঠিক কীভাবে তিনি খোঁড়া হয়েছিলেন, তা সঠিকভাবে জানা যায়নি।এরপর থেকে তিনি ‘খোঁড়া তৈমুর’ বা ‘তৈমুর-ই-লং’ নামে পরিচিত হন।


মিলিটারী লিডার হিসেবে উত্থান

এক পা খোঁড়া হলে কি হবে খোঁড়া তৈমুর কখনো দমে যান নি। বরং দিন দিন আরো হিংস্র হয়ে উঠেন। এই খোঁড়া পা নিয়েই নিনি কঠোর সমরবিদ্যার প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। এক সময় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অস্ত্র চালনায় পারদর্শী হয়ে উঠেন। তিনি অর্ধ পৃথিবী শাসন করা চেঙ্গিস খানের ইতিহাস দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। তার মনেও দুনিয়া শাসনের লোভ জাগ্রত হয়। ১৩৬০ সালের দিকে তৈমুর মিলিটারী লিডার হিসেবে নিয়োগ পান।

ক্ষমতা গ্রহণ

ঐ সময়ে সমগ্র মধ্য এশিয়া  বিশেষ করে আমু দরিয়া ও স্যার দরিয়া নদী সংলগ্ন অঞ্চলে ক্ষমতার জন্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। বিভিন্ন যাযাবর দল এবং স্থানীয় নেতাদের মধ্যে প্রায়ই যুদ্ধ লেগে থাকতো। অপরদিকে স্থানীয় নেতারা অনেকটা পশ্চিমা মতাদর্শে শাসন করতেন। তারা চেঙ্গিস খান, কুবলাই খানের শাসনব্যবস্থা পরিত্যাগ করেছিলেন। এই কারণে স্থানীয় জনগণ তাদের উপর অসন্তুষ্ট ছিল।১৩৪৬/১৩৪৭ সালের দিকে চাগতাই খান স্থানীয় একজন উপজাতীয় নেতা কাজগানের কাছে পরাজিত ও নিহত হন। কাজগান ক্ষমতা দখল করলেও ১৩৫৮ সালে তিনি গুপ্তঘাতকের হাতে মারা যান।

এবার ক্ষমতা অধিকগ্রহণ করেন তুঘুলক তিমুর। তিনি ১৩৬১ সালের দিকে পুনরায় চাগতাই শাসন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। এসময় তিনি বারলাস অঞ্চলের শাসক হিসেবে ঐ এলাকার স্থানীয় নেতা তৈমুরকে নিয়োগ প্রদান করেন। (এ সময় তার বাবা মারা গেলে তিনি বারালাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।) কিন্ত ক্ষমতা পাবার পর থেকেই তৈমুর তুঘলককে ক্ষমতা থেকে অপসারনের চেষ্টা করতে থাকেন। এক সময় তার সে চেষ্টা ধরা পড়ে যায়। তৈমুর ক্ষমতা হারান।

তৈমুর লং স্বয়ং আমির কাজগানের নাতি আমির হুসেইনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন। তৈমুর আমির হুসেনের বোনকে বিয়ে করেন। তৈমুর ও হুসেন মিলিতভাবে ১৩৬৪ সালে তুঘলক তিমুরের ছেলে আমির খোজাকে পরাস্ত করেন এবং যৌথভাবে শাসন কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। তৈমুর ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তাই স্বভাবতই অল্পতে তুষ্ট ছিল না। ১৩৭০ সালে তৈমুরের স্ত্রী মারা গেলে হুসেনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সুযোগ পেয়ে যায়। হুসেনকে হত্যা করে তৈমুর মধ্য এশিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ করে। শুরু হয় তৈমুরের শাসন আমল।


ক্ষমতা সম্প্রসারণ

তৈমুর ক্ষমতা দখলের কয়েক বছরের মাথায় অনায়াসেই পুরো মধ্য এশিয়ার অধিপতি হয়ে যান। কিন্তু তৈমুর আরও চান। তিনি চেঙ্গিসের মতো পৃথিবী শাসন করতে চান। চেঙ্গিস খানের অধিকৃত মানচিত্র দেখে তৈমুর লং বিশ্ব জয়ের জন্যে উদগ্রিভ হয়ে পড়েন। তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি বিশ্বজয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন।

পশ্চিমে এবং উত্তর-পশ্চিমে তিনি তার অভিযানকে কাস্পিয়ান সাগরের কাছে এবং উরাল ও ভলগা নদীর কাছে নিয়ে যান । দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজধানী পারস্যের প্রায় সব প্রদেশে বাগদাদ, কারবালা ও উত্তর ইরাকের সব রাজ্য জয় করেন।

তিমুরের বিরোধীদের সবচেয়ে শক্তিশালী  ছিল আরেকজন মঙ্গোল শাসক, যিনি চেঙ্গিস খানের বংশধর তোখতামিশ নামে পরিচিত ছিলেন।তোকতামিশ তৈমুরের অভিজানের খবর পেয়ে তৈমুরের কাছে সাহায্যের আবেদন করে। ইতিমধ্যে তোখতামিশ তার শত্রুদের কাছে ক্ষমতা হারায়। তৈমুর রাশিয়া আক্রমণ করে এবং জয় লাভ করে। তৈমুর তোখতামিশের কাছে রাশিয়া পুনরায় হস্তান্তর করে পারস্যের দিকে যাত্রা শুরু করে। তৈমুর পারস্য অভিযান শুরু করে হেরাত শহর দখলের দিয়ে।



হেরাত দখলের পরে তৈমুর তার বাহিনী নিয়ে আরো পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তৈমুরের নিষ্ঠুরতার খবর পারস্যের সব জায়গায় পৌঁছে যায়। তৈমুর তেহরান প্রবেশ করলে তেহরান তৈমুরের কাছে আত্মসমর্পন করে। তৈমুর  ধীরে ধীরে এশিয়া মাইনর, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং ইরাকের কিছু অংশ অধিগ্রন করে। তৈমুর যখন বিশ্ব দখলে ব্যস্ত, তখন  বিভিন্ন অঞ্চলের নেতারা তৈমুরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। তৈমুর কঠোর হস্তে বিদ্রোহ দমনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আফগানিস্তানে বিদ্রোহীদের হত্যা করার পর তিনি একটি মিনার নির্মাণ করেন। মিনারটি নির্মান করা হয় বিদ্রোহীদের মাথা দিয়ে। ইস্পাহান শহরের ৭০ হাজার বিদ্রোহীর মাথার খুলি একটি অপরটির উপরে আর একটি দিয়ে মিনার তৈরি করা হয়।


১৩৮৭ সালে তৈমুরের মিত্র তোকতামিশ মধ্য এশিয়া আক্রমণ করে। তৈমুর নিজের রাজ্য বাচাতে দখল অভিযান ক্ষান্ত দিয়ে নিজ অঞ্চলে ফিরে আসে। তৈমুর বিশাল বাহিনী নিয়ে তোকতামিশের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। তৈমুরের বিশাল বাহিনীর হাতে তোকতামিশ খানের পরাজয় ঘটে । তোকতামিশ পরাজয়ের পরে রাশিয়া ফিরে যায়। তৈমুর চার বছর পরে ১৩৯২ সালে পুনরায় এশিয়ার পশ্চিম দিকে অভিযান পরিচালনা করেন এবং ইরাক দখল করে নেন। মঙ্গলদের গৌরব ‘গোল্ডেন হোর্ড’ বা ‘ইলখানাত‘ তৈমুরের কাছে  পরাজয় বরণ করে। তৈমুরের পূর্বে কেউ ইলখানাত ধ্বংস করতে পারেনি। এর পরে তিনি পুনরায় রাশিয়ার দিকে এগিয়ে যান। তেরেক নদীর তীরে তোকতামিশ খান এবং তৈমুর পুনরায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। তুকতামিশ এবারও তৈমুরের কাছে পরাজিত হন । তৈমুর ১৩৯৫ সালে মস্কো দখল করেন।মস্কো দখলের পরে তৈমুর ভারবর্ষ জয়ের ইচ্ছাপোষণ করেন। ্তিনি সমরখন্দে ফিরে আসেন ভারত অভিযানের প্রস্তুতি নিতে। ইতিমধ্যে তৈমুর ১৩৯৬ সালে ইরাক, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, মেসোপটেমিয়া ও জর্জিয়া দখল করে নেন।

ভারত আক্রমণের ইতিহাস

তৎকালীন ভারতের সম্রাট ফিরোজ শাহের মৃত্যুর পরে ভারতের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা ক্ষমতার দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞ তৈমুর এই সুযোগ গ্রহণ করে।  ১৩৯৮ সালের শেষের দিকে প্রায় ৯০ হাজার সৈন্য নিয়ে তৈমুর লং সিন্ধু নদের তীরে হাজির হন । দূর থেকে এত বিশাল বাহিনী দেখে ভয় পেয়ে যায় ভারতবাসী।

সিন্ধু নদ পাড় হয়েই তৈমুর তার চিরাচরিত রুপে আবির্ভাব হয়।তৈমুর নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা করতে করতে দিল্লীর দিকে অগ্রসর হতে থাকেন।যাত্রা পথে  প্রায় এক লাখ মানুষ হত্যার পরে তিনি দিল্লী গিয়ে পৌঁছান। তখন দিল্লির সুলতান ছিল নাসিরুদ্দিন শাহ তুঘলক। সুলতান নাসিরুদ্দিন শাহ তুঘলক হস্তিবাহিনী নিয়ে তৈমুরকে আক্রমণ করে। তৈমুরের সৈন্যরা আতংকিত হয়ে পড়ে।  চতুর তৈমুর হাজার হাজার উটের পিঠ খড়ের গাদা দিয়ে বোঝাই করলেন। এরপর খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে উটগুলোকে হস্তিবাহিনীর দিকে ছেড়ে দিলেন। সুলতানের হস্তিবাহিনী জ্বলন্ত উটের  আগমনে ভয় পেয়ে যায়। এবার অবস্থা হিতে বিপরীত হয়ে যায়। হাতিগুলো উল্টো ঘুরে সুলতানকেই আক্রমণ করে বসে। এবার সহজেই দিল্লি হস্তগত হয়।  দিল্লী দখলের আনন্দে তৈমুর বাহিনী দিল্লী জুড়ে রক্তের বন্যা বসিয়ে দেয়।

তৈমুর ভারত দখল করলেও তিনি ভারতবর্ষ শাসন করেন নি। ২৫ দিন অবস্থান করার পর অসংখ্য ক্রীতদাস ও অগণিত লুণ্ঠিত সম্পদসহ তিনি দিল্লি ত্যাগ করেন। প্রত্যাবর্তনের  সময় মিরাট বিধ্বস্ত করেন, আগ্রা অধিকার ও জম্মু লুণ্ঠন করেন। তিনি খিজির খানকে মুলতান, লাহোর ও দিপালপুরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে যান। অতঃপর ভয় ও ধ্বংস, দুর্ভিক্ষ ও সড়কের এক ভীতিপ্রদ কাহিনী পিছনে  রেখে তিনি ভারত ত্যাগ করেন।



তৈমুরের ভারত আক্রমণের ফলে এদেশের জনবল ও ধনবলের যে মারাত্মক ক্ষতি হয়, তা পূরণ করতে প্রায় অর্ধশতাব্দী লেগে যায়। হাজার হাজার নিরীহ লোকের জীবন তিনি নষ্ট করেছিলেন ।  নগরের পর নগর ও গ্রামের পর গ্রাম তার অত্যাচারের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল ।


যেসব প্রদেশের ওপর তিনি বিজয়াভিযান পরিচালনা করেছিলেন, সেখানে শাসনব্যবস্থায় অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। গুদামজাত শস্য ও রোপিত শস্যের ব্যাপক ধ্বংসের ফলে দেশে দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং সেই সঙ্গে মহামারী দেখা দেয়। ফলে দেশবাসীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক বাদাউনী বলেন, যারা তৈমুরের অত্যাচার হতে প্রাণে রক্ষা পেয়েছিল, তারা কিছুদিনের মধ্যেই দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর কবলে পড়ে মৃত্যুবরণ করে। দুই মাস ধরে দিল্লি শহরের আকাশে কোনো পাখি উড়েনি। ভারত থেকে বহু মূল্যবান সম্পদ দখল করে সমখন্দে নিয়ে যান।  ভারতে থাকা  অবস্থায় তিনি ইরাক দখলের খবর পান।


ইরাক, তুর্কি ও মিশর অধিগ্রহণ

ভারত থেকে ফিরে ১৩৯৯ সালে এশিয়ার পশ্চিমে মনোযোগ দেন। পুনরায় আজারবাইজান দখল করেন।১৪০০ সালে  সিরিয়া ও মিশরের কিছু অংশ দখল করে নেন। ১৪০১ সালে তৈমুর পুনরায় বাগদাদ আক্রমণ করে এবং অনায়াসে বাগদাদ দখল করে নেন। এবার তৈমুরের নিষ্ঠুরতা আরো বেড়ে গেলো। তার আদেশে বাগদাদের ২০ হাজার বিদ্রোহীর শিরশ্ছেদ করা হয়।

সে সময় অটোমান সাম্রাজ্য  পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য ছিল। তৈমুরের নিষ্ঠুরতার সংবাদে অটোমান সুলতান বায়েজিদ ক্রোধান্বিত হন। বায়োজিদ তৈমুরকে সতর্ক করে বার্তা প্রেরণ করেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন নি সতর্ক বার্তা প্রেরণের মাধ্যমে তিনি তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করে ফেলেছেন।সতর্ক বার্তা পাওয়া মাত্র তৈমুর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি অটোমানদের গৌরব মাটিতে মিশিয়ে দিবেন।

১৪০১ সালে তৈমুর তুরস্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। সুলতান বায়েজিদ তৈমুরের আগমন সংবাদে বিশাল বাহিনী নিয়ে প্রস্তুত হয়ে যান। ১৪০২ সালে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় দুই বাহিনী মুখোমুখি হয়। সেদিন পুরো পৃথিবী তৈমুরের রণকৌশলে মুগ্ধ হয়ে যায়। শক্তিশালী অটোমান সাম্রাজ্য তৈমুরের নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। যুদ্ধে সুলতান বায়েজিদ বন্দী হন। পরবর্তীতে তিনি বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তখন অটোমান সাম্রাজ্য ইউরোপের বহু রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। তৈমুরের অটোমান জয়ের ফলে ফ্রান্স, স্পেন সহ প্রভৃতি রাষ্ট্র তৈমুরের সাথে মিত্রতার সম্পর্ক স্থাপন করে।


তৈমুরের মৃত্যু

তৈমুর লং  বসন্তকালে যুদ্ধ করতে পছন্দ করতেন। কিন্তু স্বভাব বিরুদ্ধ হয়ে চীনে শীতকালীন এক অভিযানে বের হয়ে পথে তিনি মৃত্যু বরন করেন। ১৪০৪ সালের ডিসেম্বরের শীতে তিনি চীনের মিং সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান ও তাদের একজন দূতকে হত্যা করেন। সে সময় থেকেই তিনি অসুস্থতায় ভুগছিলেন এবং চীনের সীমানায় পৌঁছানোর আগেই ১৮ ই ফেব্রুয়ারি ১৪০৫ সালে তিনি মৃত্যু বরন করেন।

তৈমুর লং নিয়ে মিথ

তৈমুর লং কফিনের উপরে লেখা আছেঃ

“আমি যেদিন জাগব, সমগ্র পৃথিবী প্রকম্পিত হবে।” (“When I rise from the dead, the world shall tremble.”)

আর নীচের কথাটি লিখা আছে কফিনের ভেতরে পাওয়া একটি ফলকেঃ

“যে আমার কবর খুলবে, সে আমার চেয়েও ভয়াবহ এক আক্রমণকারীকে লেলিয়ে দিবে।”(“Who ever opens my tomb, shall unleash an invader more terrible than I.)

এই বীর যোদ্ধাকে নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা কাহিনী বা মিথ। এগেুলোর অন্যতম হচ্ছে তার কবর উত্তোলনের কাহিনীটি।যখন কৌতূহলবসে  মৃত্যুর পরে তার  কফিন প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর পর খোলা হয়েছিল তখন বিশ্ববাসী দেখেছে তৈমুর লং এর এই ভবিষ্যৎ বানীর সত্যতা !

১৯৪১ সাল সোভিয়েত সরকার কবর থেকে তার মৃতদেহ তোলার সিদ্ধান্ত নিল।  উদ্দেশ্য দেহাবশেষ থেকে তার সত্যিকারের চেহারার ছবি আঁকা। কোন কঙ্কাল বা দেহাবশেষ থেকে সেই ব্যক্তিটি জীবদ্দশায় দেখতে কেমন ছিল তার চিত্র অংকন করার বিজ্ঞানটি ইতিমধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়নে যথেষ্ট উন্নতি লাড করেছিল। এটা প্রথম করেছিলেন সোভিয়েত প্রত্নতত্ববিদ ও নৃবিজ্ঞানী মিখাইল গেরাসিমভ। তিনি সবমিলিয়ে দুই শত জনেরও বেশি মানুষের দেহাবশেষ থেকে তাদের চেহারা অঙ্কন করেছিলেন। তাই সোভিয়েত শাসক জোসেফ স্তালিন তারই নেতৃত্বে একটি টীম গঠন করেন ।

তবে তারা সবচেয়ে বড় যে সমস্যায় পড়েন তা হল তৈমুরকে কোথায় সমাহিত করা হয়েছে তার কন হদিস পাচ্ছিলেন না। অসংখ্য কবর খুড়ে তৈমুরের সন্ধান না পেয়ে গেরাসিমোভ ও তার দলের হতাশা ক্রমশ বাড়তেই  থাকে। অবশেষে তারা সমখন্দের একটি স্থানে তৈমুরের কবর স্থান বলে চিহ্নিত করে।

যখন সমরখন্দের স্থানীয় মানুষ এই রাশিয়ান পরিকল্পনা সম্পর্কে শুনলেন তারা তো প্রচন্ড ভয় পেয়ে গে‌লেন এবং তৈমুরের কবরের স‌ঙ্গে যে ভয়ঙ্কর অভিশাপ জু‌ড়ে ছিল তার সম্প‌র্কে মিখাইল গেরা‌শিমভ কে সতর্ক কর‌লেন , কিন্তু রাশিয়ান নৃবিজ্ঞানী ও সব অভিশা‌পের কথা কিছুই বিশ্বাস কর‌লেন না।


তারা এক প্রকার নিশ্চিত যে, এটিই হচ্ছে তৈমুরের আসল কবর।নব উদ্যমে তারা কবর খুঁড়তে শুরু করলেন। কিন্তু খোড়াখুঁড়ির পর আগের চাইতেও বেশি হতাশ হলেন নৃবিজ্ঞানীরা।এ কবরটিও শূন্য ! হতাশ গেরাসিমভ এবার গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন । হঠাৎ গেরাসিমোভের মাথায় আসল  – ‘আমরা থেমে গেলাম কেন? আরো গভীরে খুঁড়িনা। দেখিনা, কি আছে সেখানে।’

পরদিন তারা ফিরে গেলেন কফিনে। আবার খুঁড়তে শুরু করলেন। খুঁড়তে খুঁড়তে আরো গভীরে গিয়ে আবিষ্কার করলেন, কিছু একটা আছে ওখানে। এবার অন্তত  হতাশ হতে হল না।  এবার ভারী কয়েকটি পাথরের পাটাতন নজরে পড়ল। তারা লক্ষ্য করলেন  কবরটি বিশেষ কৌশলে নির্মিত। প্রথমে একটি ফাঁকা কবর তারপর আরো গভীরে কিছু আছে। ঐ পাটাতন সরালে কিছু একটা পাওয়া যেতে পারে বলে ধারনা করলেন। ওগুলো সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এরকম সময়ে গেরাসিমোভের কাছে সংবাদ এলো যে, আপনার সাথে তিন বুড়ো দেখা করতে চায়।

কিছুটা বিস্মিত হলেন গেরাসিমোভ বিরক্ত হয়ে ভাবলেন, আবার  কে এলো  এই শেষ সময়ে। সংবাদদাতা জানালেন, এটা খুব জরুরী, আপনাকে তাদের সাথে দেখা করতেই হবে। জরুরি তাগাদা দেওয়ায়  কাজ রেখে বাইরে বেরিয়ে এলেন গেরাসিমোভ। বেরিয়ে এসে দেখলেন তিনজন বৃদ্ধ বসে আছে। দেখে মনে হল তারা যেন  সেই প্রাচীন কালের রূপকথার দেশ থেকে উঠে এসেছে।  আবার তিন বৃদ্ধ দেখতে ছিল একই রকম, যেন মায়ের পেটের তিন ভাই।

তিন বৃদ্ধ রুশ ভাষা জানত না।তারা ফারসী ভাষায় কথা বলতে শুরু করল।একজন অনুবাদক তাদের কথোপকথন অনুবাদ করে দিল। তারা গেরাসিমভকে তৈমুরের মৃত দেহাবশেষ কবর থেকে তুলতে মানা করলেন। জবাবে ওই রুশ নৃ বিজ্ঞানী বললেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী স্বয়ং স্তালিন আমাদের পাঠিয়েছেন। মিশন শেষ না করে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’ ক্ষেপে গিয়ে বৃদ্ধরা বললেন, ‘সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী উপরওয়ালা, স্তালিন নয়। তার কথা না শুনলেও চলবে।’ তিনি তখন জানতে চাইলেন, সামান্য একটা মৃতদেহ তুলতে তাদের অত আপত্তি কিসের। জবাবে তারা বললেন,‘এটি তৈমুর লং-এর মৃতদেহ।

এরপর তারা তাদের কাছে থাকা আরবিতে লেখা অতি প্রাচীন একটি বই দেখালেন। বইয়ের একটি জায়গায় আঙুল দিয়ে দেখিয়ে শান্ত সৌম্য তৃতীয় বৃদ্ধটি বললো,‘এই দেখ, এখানে লেখা

“আমি যেদিন জাগব, সমগ্র পৃথিবী প্রকম্পিত হবে।” (“When I rise from the dead, the world shall tremble.”)

কিন্তু গেরাসিমোভ জানালেন তাদের কথা রাখা তার পক্ষে রাখা সম্ভব নয়।নৃ বিজ্ঞানী তাদের চলে যেতে বলেন।তিন বৃদ্ধ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গেরাসিমোভের দিকে তাকালেন। এরপর ফারসী ভাষায় গালমন্দ করতে শুরু করলেন গেরাসিমোভকে। দ্বিগুন বিরক্তিতে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন গেরাসিমোভ। গালমন্দ করতে করতে চলে গেল তিন বৃদ্ধ। যে উৎফুল্ল মনে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি তা আর রইল না। মেজাজটাই বিগড়ে গেল।

দিনটি ছিল ১৯৪১ সালের ২০শে জুন।কিন্তু কি আশ্চর্য! তৈমুরের সমাধির গায়ে এটি কি লেখা! ফারসি ও আরসি ভাষায় লেখা,

‘আমি যেদিন জাগব, সমগ্র পৃথিবী প্রকম্পিত হবে (“When I rise from the dead, the world shall tremble.”)।

তিন ভাবলেন যত্ত সব কল্প কাহিনী! অবশেষে ১৯৪১ সালের ২২শে জুন সমাধির পাটাতন সরিয়ে ওঠানো হল কফিন। কফিনে শায়িত পাঁচশত বছর আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া, মহাশক্তিধর তৈমুরের নিথর-নীরব দেহ। রা‌শিয়ান নৃবিজ্ঞানী তৈমুরের কবরের ঐতিহাসিক দ্বার খুঁ‌জে পে‌লেন,গভীর আগ্রহ নিয়ে কফিনের ডালা ভাঙলেন গেরাসিমভ এবং  এটা ভেঙে তৈমু‌রের শরী‌রের অংশ ও খু‌লি উদ্ধার কর‌লেন , তখ‌নও চার শতাব্দী প্রাচীন সুগন্ধি তেলর সুবাস পে‌লেন তারা , যা তৈমুর কে কবরস্থ করার সময় ব্যবহার করা হ‌য়ে‌ছিল । মৃতদেহের পাশে ওটা কি পড়ে আছে? ফলকটি হাতে তুলে নিলেন গেরাসিমোভের। সেখানে লেখা,

‘যেই আমার কবর খুলুক না কেন, সে আমার চাইতেও ভয়াবহ এক আগ্রাসীকে পৃথিবীতে ডেকে আনলো (Who ever opens my tomb, shall unleash an invader more terrible than )’

গেরাসিমোভের মন খারাপ হয়ে গেল। তবুও তিনি তৈমুরের দেহাবশেষ নিয়ে গভীর মনযোগের সাথে কাজ চালিয়ে গেলেন। তিনি দেখেন, তৈমুর বেঁটে বলে যে ধারণা প্রচলিত রয়েছে তা সত্য নয়। তিনি ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা যা তার যুগের মানুষদের গড় উচ্চতার চেয়েও বেশি। তবে তার এক পা খোঁড়া।

গেরাসিমোভ তৈমুরের মৃতদেহ নিয়ে কাজ শুরু করলেন। তবে  যেদিন তৈমুরের মৃতদেহ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন সেদিনই জার্মানির হিটলার বাহিনী হামলা চালায় সোভিয়েত ইউনিয়নে।অভিযানের নাম অপারেশন বারবারোসা। গেরাসিমোভ আশ্চর্য হয়ে গেলেন ।যেদিন কফিনের সন্ধান পেলেন তার  তিন দিন পরে -২২ জুন, ১৯৪১ – হিটলার আকস্মিক রাশিয়ায় হামলা চালালেন , এবং অতর্কিত রক্তাক্ত আক্রম‌ণে আনুমানিক ৩০ মিলিয়ন রাশিয়ান জীবন শেষ হ‌য়ে গেল । জার্মানি কে আটকা‌নোর কোনও রাস্তা স্তা‌লি‌নের কা‌ছে ছিল না , মিখাইল গেরা‌শিমভ ও বুঝ‌লেন অনবধানতাবশত তৈমুর লাশ অবারিত ক‌রে তি‌নি এই আক্রমন ডে‌কে এনে‌ছেন উপায়ন্তর না দে‌খে স্তালিন কে একটি বার্তা পাঠানোর করার চেষ্টা কর‌লেন । কফিনের গায়ের লেখাটি মনে পড়ল তার।রাতের বেলায় গেরাসিমোভ ফোন করলেন স্তালিনকে। সব কিছু শুনে কি প্রতিক্রিয়া হলো তার বোঝা গেল না। শুধু বললেন, “আপনি মুখচ্ছবিটি তৈরী করুন”

স্টালিনের আদেশ পেয়ে কাজ শুরু করলেন গেরাসিমোভ।বিশ্ববাসী প্রথমবারের মতো দেখলো লৌহমানব তৈমুরের কঠিন মুখচ্ছবি। এদিকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। বিংশ শতকের ত্রাস হিটলার বাহিনীর কাছে একের পর এক যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছে সোভিয়েত বাহিনী। তখন তৈমুরের দেহ ফের কবরে ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন গেরাসিমোভ। ১৯৪২ সালের ২০শে নভেম্বরে পূর্ণ মর্যাদায় ইসলামী রীতি মেনে তৈমুরের মৃতদেহ পুণরায় দাফন করা হয় গুর-ই-আমির সমাধিতে। কি আশ্চর্য, তার দফনের পরপরই স্তালিনগ্রাদ যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে এলো প্রথম আনন্দ সংবাদ। অপারেশন ইউরেনাস-এ হিটলার বাহিনীকে পরাস্ত করেছে সোভিয়েত বাহিনী !

প্রচলিত এই মিথটি তৈমুরকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায়। কিন্তু মিখাইল গেরা‌শিমভ এর ম‌তো আ্যন‌থ্রোপোল‌জিস্ট ‌যি‌নি প্রথ‌মে অভিশা‌পের কথা বিশ্বাস ক‌রেন নি , তি‌নিও তৈমু‌রের লাশ ফি‌রি‌য়ে দি‌তে বাধ্য হ‌য়ে‌ছি‌লেন !

তথ্য সূত্রঃ
১।https://www.encyclopedia.com/people/history/central-asian-history-biographies/timur
২।https://en.wikipedia.org/wiki/Timur
৩।নানা ব্লগ নিউজ ও ব্লগ পোর্টাল

পঠিত : ১৭৯৮ বার

মন্তব্য: ০