Alapon

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ ও বর্তমান মুসলিম বিশ্ব

আজ ১৭ রমযান ঐতিহাসিক বদর দিবস। মদীনা থেকে ৮০মাইল দুরে বদর নামক স্থানে সংঘটিত হয়েছিল হক ও বাতিলের মধ্যে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ। কাফেরদের দূধর্ষ ১০০০ সশস্ত্র যোদ্ধার মুকাবিলায় নিরস্ত্র ও দূর্বল ৩১৩ জনের মুসলিম বাহিনী বিজয় অর্জন করেছিল।

এ যুদ্ধ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে:“সেই দুই দলের মধ্যে তোমাদের জন্য অনেক নিদর্শন ছিল, যারা (বদরে) পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। একটি দল আল্লাহর পথে লড়াই করছিল আর অপর দলটি ছিল কাফের। চক্ষুষ্মান লোকেরা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল যে, কাফিরদের দল মুমিনের দল অপেক্ষা দ্বিগুণ, কিন্তু (ফল প্রমাণ করল যে) আল্লাহ যাকে চান তাকেই তাঁর সাহায্যে ও বিজয় দান করেন। বস্তুত দৃষ্টিমান লোকদের জন্য এতে খুবই উপদেশ ও শিক্ষার বস্তু নিহিত রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান : ১৩)

এখানে তিনটি বিষয়ে লোকদের জন্য বিশেষ শিক্ষা নিহিত আছে। প্রথমত এই যে, মুসলমান ও কাফিরগণ যেভাবে পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল তা হতে উভয়ের নৈতিক পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। একদিকে কাফিরদের সৈন্য বাহিনীতে মদের স্রোত বয়ে যাচ্ছিল। লাস্যময়ী নর্তকী ও গায়িকারা সঙ্গে এসেছিল এবং আয়েশ-আরামের লালসা কদর্যভাবে চরিতার্থ করা হচ্ছিল। অপর দিকে মুসলিম বাহিনীতে ছিল পরহেযগারী ও আল্লাহভীতি চূড়ান্ত মানের নৈতিক সংঘম, নামায ও রোযা পালন। ইসলামী অনুশাসন মানা তাদের প্রতিটি কথা ও কাজে আল্লাহর নাম ছিল সবার আগে আল্লাহর নিকট তারা দোয়া করছিল, মনের আকুতি জানাচ্ছিল। এই উভয় বাহিনীকে দেখে এদের মধ্যে কোন দলটি আল্লাহর পথে লড়াই করছিল তা প্রতিটি ব্যক্তি অতি সহজেই বুঝতে পারত।

দ্বিতীয়ত এই যে মুসলিম সৈন্য বাহিনী সংখ্যায় অপ্রতুল এবং সাজ সরঞ্জামহীন হওয়া সত্ত্বেও কাফিরদের বিরাট সংখ্যা বিশিষ্ট উন্নত ধরনের অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে যেভাবে জয়লাভ করেছে, তা হতে এ কথা সুস্পষ্টরুপে প্রমাণিত হয়েছিল যে, তাদের প্রতি আল্লাহর সাহায্যে ও অনুগ্রহ বর্ষিত হয়েছে।

তৃতীয় এই যে, আল্লাহর অপরাজেয় শক্তি সম্পর্কে গাফিল হয়ে যারা নিজেদের লোক সংখ্যার বিপুলতা ও সাজ-সরঞ্জামের প্রাচুর্যের দরুণ অহংকারে ফুলে উঠছিল, তাদের জন্য বদরের ঘটনাটি সত্যিই একটি উপদেশের কষাঘাত ছিল। তারা দেখতে পেল যে, মুষ্টিমেয় দরিদ্র অসহায় প্রবাসী মুহাজির ও মদীনার খেটে কাওয়া মানুষর সমন্বয়ে গঠিত একটি ক্ষুদ্র দলের সাহায্যে কুরাইশদের ন্যায় বিরাট শক্তিশালী, সম্পদশালী ও আরব উপদ্বীপের শ্রেষ্ঠতম গোত্রকে আল্লাহ তায়ালা কিভাবে পরাজিত করে দিতে পারেন।

আল্লাহর একত্ববাদের ভিত্তিতে গঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাফির সম্প্রদায়ের চাপিয়ে দেয়া এ যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং যুদ্ধ। মক্কাসহ দুনিয়ার তাবৎ কুফরী শক্তি মনে করেছি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ভূখা নাঙ্গা হতদারিদ্র অসহায় বাহিনীকে বদরের প্রান্তরে নিমিষেই শেষ করে দেব। ৬২৩ খ্রিষ্টব্দের ফেব্রয়ারি কিংবা মার্চ কুরাইশদের বিরাট এক কাফেলা সিরিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মুসলিম অধিকৃত এলাকার কাছাকাছি এসে পৌছলো। কাফেলাটির সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার আশরাফী মূল্যের ধন-মাল এবং ৩০/৪০ জনের মতো তত্ত্ব¡াবধায়ক ছিল। তাদের ভয় ছিল মদীনার নিকট পৌছলে মুসলমানরা হয়ত তাদের উপরে হামলা করে বসতে পারে। কাফেলার নেতা ছিল আবু সুফিয়ান।

সে এ বিপদ শংকা উপলব্ধি করেই এক ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য মক্কায় পাঠিয়ে দিলো। ঐ লোক মক্কা পৌঁছেই এ বলে শোরগোল শুরু করল যে, তাদের কাফেলাদর উপর মুসলমানরা লুটতরাজ চালাচ্ছে সুতরাং সহয্যের জন্য সবাই ছুটে চলো। কাফেলার সঙ্গে যে ধন-মাল ছিল, তার সাথে বহু লোকের স্বার্থ জড়িত ছিল। ফলে একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হলো। তাই সাহায্যের ডাকে সাড়া দিয়ে কুরাইশদের সমস্ত বড় বড় সর্দারই যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পড়লো। এ ভাবে প্রায় এক হাজার যোদ্ধার এক বিরাট বাহিনী তৈরী হয়ে গেলো এই বাহিনী অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনা ও শান শওকতের সঙ্গে মক্কা থেকে যাত্রা করলো।

এদের হৃদয়ে একমাত্র সংকল্প মুসলমানদের অস্তিত্ব এবার নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে হবে। যেনো প্রতিদিনের এই ঝামেলা চিরতরে মিটে যায়। একদিকে তাদের ধন মাল রক্ষায় আগ্রহ, অন্যদিকে তাওহীদবাদীদের সাথে পুরনো দুশমিন ও বিদ্বেষের তাড়না এই দ্বিবিধ ক্রোধ ও উম্মাদনার সঙ্গে কুরাইশ বাহিনী মদীনা আক্রমনের উদ্দেশ্য যাত্রা করলো।

এদিকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছেও এই পরিস্থিতি সম্পর্কে যথারীতি খবর পৌছাতে লাগলো। তিনি বুঝতে পারলেন, এবার সত্য সত্যই মুসলমানদের সামনে এক কঠিন সংকটকাল উপস্থিত হয়েছে। এবার যদি কুরাইশরা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সফলকাম হয় এবং মুসলমানদের এই নতুন সমাজ-সংগঠনটিকে পরাজিত করতে পারে। তাহলে ইসলামপন্থীদের পক্ষে সামনে এগোনো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। এমনকি এর ফলে ইসলামের আওয়াজ হয়ত চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে। মদীনায়, হিযরতের পর এ যাবত দুটি বছরও অতিক্রান্ত হয়নি।

মুহাজিরগণ তাদের সব কিছুই মক্কায় ফেলে এসেছে এবং এখনো তারা রিক্তহস্ত। আনছারগণ যুদ্ধ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ। অন্যদিকে ইহুদিদের অনেকগুলো গ্রোত্র বিরোধীতার জন্য প্রস্তুত। খোদ মদীনায় মুনাফিক এবং মুশরিকদের অবস্থিতি এক বিরাট সমস্যার রূপ পরিগ্রহ করেছে। এমনি অবস্থায় যদি কুরাইশরা মদীনা আক্রমন করে তাহলে মুসলমানদের এই মুষ্ঠিমের দলটি হয়ত নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। আর হামলা যদি নাও করে বরং আপন শক্তি বলে শুধু কাফেলা মুক্ত করে নিয়ে যায় তবুও মুসলমানরা শক্তি হারিয়ে ফেলবে। মুসলমানদের জব্দ করতে আশপাশের গোত্রগুলোকে কোন বেগ পেতে হবে না। কুরাইশদের ইঙ্গিতে তারা নানাভাবে মুসলমানদের উত্যক্ত করতে শুরু করবে।

এদিকে মদীনার ইহুদী, মুনাফিক ও মুশরিকরাও মাথাতুলে দাঁড়াবে। ফলে মুসলমানদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। এসব কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) সিদ্ধান্ত নিলেন যে, বর্তমানে যতোটুকু শক্তিই সঞ্চয় করা সম্ভব, তা নিয়েই ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং মুসলমানদের আপন বাহুবল দ্বারা টিকে থাকা প্রমাণ করতে হবে। এই সিদ্ধান্তের পর নবী করীম (সা.) মুহাজির ও আনসারগণকে জমায়েত করে তাদের সামনে সমগ্র পরিস্থিতি তুলে ধরে বলবেন, একদিকে মদীনার উত্তর প্রান্তে রয়েছে ব্যবসায়ী কাফেলা আর অন্যদিকে দক্ষিণ দিকে থেকে আসছে কুরাইশদেগর সৈন্য সমস্ত। আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, এর যে কোন একটির উপর তোমরা বিজয় লাভ করবে। বলো তোমরা এর কোনটির মুকাবিলা করতে চাও?”

জবাবে বহু সাহাবী কাফেলার উপর আক্রমন চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করলেন। কিন্তু নবী করীম (স.)-এর দৃষ্টি ছিল সুদুর প্রসারী। তাই তিনি তাঁর প্রশ্নটির পুনরাবৃত্তি করলেন। এরপর মুহাজিরদের ভিতর থেকে মিকদাদ বিন আমর (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! প্রভূ আপনাকে যে দিকে আদেশ করেছেন, সে দিকেই চলুন। আমরা আপনার সঙ্গে আছি। আমরা বনী ইসরাঈলের মতো বলতে চাইনা : হে মূসা যাও তুমি এবং তোমার আল্লাহ গিয়ে লড়াই করো। আমরা এখানে বসে থাকবো।

বিশ্বসেরা সমরবিদ রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনার আনসারদের মতামত গ্রহনের জন্য জানতে চাইলেন, এরপর সাদ বিন মা’আজ (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমরা আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। আপনাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছি এবং আপনি যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা সবই সত্য বলে স্বাক্ষ্য দিয়েছ্ িসর্বপরি আমরা আপনার অনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছি। অতএব আপনি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই কাজে পরিণত করুন। যে মহান সত্ত্বা আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম; আপনি যদি আমাদের সমুদ্রে নিয়েও ঝাঁপ দেন তবুও আমরা আপনার সাথে থাকবো এবং এ ব্যাপারে আমাদের একটি লোকও পিছু হটবে না।

আমরা যে শপথ নিয়েছি যুদ্ধকালে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। নিবেদিত প্রাণের ন্যায় আমরা শত্রুদের মুকাবিলা করবো। কাজেই আল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি আমাদের দ্বারা আল্লাহ এমন জিনিস দেখাবেন যা দেখে আপনার চক্ষু শীতল হয়ে যাবে। অতএব আল্লাহর রহমত ও বরকতের উপর ভরসা করে আপনি আমাদের নিয়ে এগিয়ে চলুন।

এই বক্তৃতায় পর স্থির করা হলো যে, কাফেলার পরিবর্তে সৈন্যদেরই মুকাবিলা করা হবে। কিন্তু এটা কোনো সাধারণ সিদ্ধান্ত ছিল না। কারণ কুরাইশদের তুলনায় মুসলমানদের সংগঠন ছিল খুবই দুর্বল। এর মধ্যে যুদ্ধ করার মতো যোগ্য লোকের সংখ্যা ছিলো তিনশ‘র চেয়ে কিছু বেশী তার মধ্যে ঘোড়া ছিল মাত্র দু তিন জনের কাছে। উট ছিল মাত্র সত্তরটির মতো যুদ্ধের সাজসরঞ্জাম ও ছিলো অপ্রতুল। মাত্র ঘাট ব্যক্তির কাছে ছিল লৌহবর্ম। এ কারণে মাত্র কতিপয় মুসলমান ছাড়া বাদবাকী সবারই মনে ভীতির সঞ্চার হলো, তাদের এ অবস্থা দেখে মনে হতে লাগালো, যেনো জেনে শুনে তারা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে। সূরা আনফালের আয়াতে এই দৃশ্যই ফুটে ওঠেছে।

“হে নবী এই লোক গুলোর তো আপন বাড়ি ঘর থেকে তেমনি বের হওয়া উচিত ছিলো । তোমার প্রভু তোমার সত্য সহকারে তোমাদের গৃহ থেকে বের করে এনেছেন; কিন্তু মুমিনদের একটি দলের কাছে এ ছিলো অত্যন্ত অপছন্দনীয়। তারা সত্য সুস্পষ্ট রুপে প্রতিভাত হওয়ার পরও সে সম্পর্কে তোমার সঙ্গে তর্ক করছিলো। তাদেরকে যেনো দৃশ্যমান মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই সময়ের কথা স্মরণ করো, যখন আল্লাহ তোমাদের ওয়াদা করেছিলেন (আবু সুফিয়ান ও আবু জেহেলের) দুই দলের মধ্যে থেকে কোন একটি তোমাদের করায়ত্ব হবে। আর তোমরা চেয়েছিলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল (অর্থাৎ নিরস্ত্র দলটিকে বশীভূত করতে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল তিনি আপন বিধানের দ্বারা সত্যকে অজেয় কতে রাখবেন এবং কাফিরদের মুলোচ্ছেদ করে দেবেন। যেনো সত্য সত্যেই হয়ে থাকে মিথ্যা মিথ্যাই থেকে যায় অপরাধীদের কাছে এটা যতোই অপছন্দনীয় হোক না কেন।

এ যুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো মুহাজিরদেরকে। এদের প্রতিপক্ষে ছিল আপন ভাই , পুত্র এবং অন্যান্য আত্বীয়- স্বজন। কারো বাপ, কারো চাচা,কারো মামা, কারো ভাই ছিল তার তলোয়ারের লক্ষ্যবস্তু এবং নিজ হাতে তাদের হত্যা করতে হয়েছিল এইসব কলিজার টুকরাকে। এই পরীক্ষায় কেবল তারায় টিকে থাকতে পেরেছিলো যারা সাচ্চা দিলে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছিলো; যে সব সম্বন্ধকে তিনি বজায় রাখতে বলেছেন, তারা শুধু তা-ই বজায় রাখবে আর যেগুলোকে ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন তা যতোই প্রিয় হোকনা কেন তারা ছিন্ন করে ফেলবে।

বস্তুত ঈমানের একটি স্তরে উন্নিত হবার পরই বান্দার জন্যে আল্লাহর সাহায্যে অবতীর্ন হয়ে থাকে, বদর যুদ্ধ তার জলন্ত উদাহরণ। এযুদ্ধে কোরাইশদের ৭০ জন সৈন্য নিহত ও সমান সংখ্যক লোক বন্দি হয়। মুসলমানদের পক্ষে মাত্র ৬ জন আনসার ও ৮ জন মুহাজির শহীদ হন।

মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টি সর্ব প্রথম তুলে ধরতে হয় তা হলো মুসলিম বিশ্বের শাসকরা আজ এক আল্লাহর পরিবর্তে দুনিয়ার কথিত শক্তিধরদের পদলেহন করে ইসলামের আপসহীন অবস্থানকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। তারা মডারেট মুসলিম হতে গিয়ে মদের বোতলেও চুমুক দেয়, নাচের আসরেও যোগদেয়, মাঝে মাঝে উদার মনের পরিচয় দিতে গিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধেও অবস্থান গ্রহন করে কাফের মোশরেকদের বাহবা কুড়ায়। খোদ ইসলামের পবিত্র ভূমির শাসককরা আজ সবচেয়ে ন্যাক্কার জনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

তাদের নৈতিক অধ:পতনই মুসলিম বিশ্বকে বেশি সমস্যায় ফেলেছে। মুসলামানদের হাতে যে সম্পদ আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা দিয়েছেন সে অবস্থায় পৃথিবীর কোনো শয়তানী শক্তির কাছে মাথা নত করার প্রশ্নই আসে না। অন্যদিকে ইসলামের নামে দল-উপদল, বিভিন্ন মতবাদ, মাজহাবসহ ছোট খাটো বিষয় নিয়ে উম্মাহর মধ্যে চরম বিভক্তিতে আমাদের শক্তি দিনদিন দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। আবার ইসলামের নামে একটি গোষ্টিকে মানুষ মারার লাইসেন্স দিয়ে জঙ্গীবাদের প্রসার ঘটানো হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী অন্যায়ভাবে একটি পিপড়া মারাকেও ইসলাম সমর্থন করে না।

ভাববার বিষয় হচ্ছে, আজ যেখানেই অন্যায়ভাবে মানুষ মারা হচ্ছে সেখানেই একটি ইসলামী গোষ্টির দায় স্বীকার করে বার্তা ছড়ানো হচ্ছে। এর পেছনে আসলে কারা নাটের গুরু,  তা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। তারপর সাধারণ মুসলিমদের উপর নেমে আসছে জালিমের অত্যাচার। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয় ।

আজ সারা দুনিয়ার কুফরী, মুশরেকী ও মুনাফিক শক্তি বদর যুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যখন ঐক্যবদ্ধ তখন আমরা দুনিয়ার উচ্ছিষ্ট ভোগের জন্য কাফের মুশরেকদের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছি কে কত বড় দুনিয়া পুজারী হবো। অথচ বদর যুদ্ধের সৈনিকেরা কেউই দুনিয়ার ভোগ বিলাসিতার জন্য নিজেদের জীবনকে আল্লাহর পথে নিবেদন করেননি তারা নিবেদন করেছেন একমাত্র আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসূল স. এর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।

বদর দিবসের শিক্ষা হলো নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও কর্মী বাহিনীর উপর ভরসা না করে সকল অবস্থায় একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করা। সকল অবস্থায় আল্লাহর কাছে দোআ করা। পরিস্থিতি যতো প্রতিকুলেই যাক না কেন আল্লাহর সাহায্যেও উপর আস্থ্শাীল হওয়া এবং কোনো অবস্থাতেই বাতিলের সাথে আপস না করা।

পঠিত : ১২৭৪ বার

মন্তব্য: ০