তারিখঃ ৩ জুন, ২০১৮, ১১:৫৭
স্বর্গের দরবারে জরুরী সভা আজ, নিরূপণ হয়ে যাবে কে হবে ঋতুরাজ
গমগম মজলিসে গ্রীষ্ম আগে আসে দাড়ায় সাড়ম্বরে
মহামান্য অধিপতি যদি দেন অনুমতি, আত্মপক্ষে আত্মকথা বলি সবার তরে
যদিও তপ্ত আমি, রোদের পীঠে ধরায় নামি তবুও দুহাত করি যেই উপুর
বাগানের বৃক্ষরাজি, গৃহস্থের ডালা সাঝি সুমিষ্ট ফলে ফলে হয় ভরপুর
কাঁঠাল,পেয়ারা তরমুজ জাম, পানিতাল লিচু সুমিষ্ট আম
কে পারে আনিতে আর? জিবে জল আনা রসালো ফলসম্ভার ?
নাইওর আগমন জামাইষষ্ঠী উদযাপন যদি রাখেন বিবেচনায়
ঋতুরাজের মুকুটখানা আমারই মাথায় শোভা পায়!
রিমঝিম নিক্বণে সুরেলা বরষা, দাঁড়ায় সম্মুখে হাসিমুখে সহসা
গর্ভবতী মেঘপুঞ্জ আমার সহচর, আমি এলে প্রাণ পায় বিল সরোবর
আসমান থেকে নেমে আসে মিষ্ট জলের ধারা
সে জল পানে উদ্বাহু হয় সবুজ গাছ আর চারা
অঝোর জলবতী ধারায় খাল নদী যৌবনা
খলবলিয়ে উঠে মাছ আর শামুক ব্যাঙের পোনা
আকাশ থেকে হারিয়ে সূর্য কদম হয়ে ফোটে
নৌকায় করে পল্লী বালিকা শাপলা শালুক লোটে
যদিও বৃষ্টি মানে অনাসৃষ্টি দীন হীনে শুধু ভাবে
তবুও জল আর সুরে ধরণীর গান কোন ঋতু গেয়েছে কবে ?
স্নিগ্ধতাবেশে পরক্ষনে শরৎ দাঁড়ায় এসে,
কিছু কথা আমি বলতেই চাই ভরা এই মজলিশে
শিউলী,বেলী দোলনচাঁপা হাসনাহেনা কামিনী
সুঘ্রাণে ভরে যায় সমীরণ মাতোয়ারা দিন রজনী
আমার আকাশে পাল তুলে ভাসে আশ্চর্য মেঘদল
বেগুনী ফুলের কেতন উড়ায় কচুরীপানার দল
জলের ধারে মাটির ঘ্রাণে সাদা কাশফুল দোলে,
নক্ষত্রের ভালোবাসা মেখে জোনাকী প্রদীপ জ্বালে
ভরা জ্যোৎস্নায় প্লাবন ডাকে পূর্ণ ষোড়শী চাঁদ
সেরা ঋতুর পরতে মুকুট শরতের জাগে সাধ!
মুচকি হেসে হেমন্ত এসে দাঁড়ায় সে দরবারে
ধরার ধরণী সোনালী ভূষণে কে আর সাজাতে পারে?
সোনাবীজ বুকে মা মাটি হাসে গোলায় নতুন ধান
পিঠাপুলি নিয়ে নবান্নের ডাকে গ্রামে গ্রামে জাগে প্রাণ
আকাশ জুড়ে এত ঘন নীল, সূর্য ছড়ায় সোনা
ঝাঁক বেঁধে আসে অথিতি পাখি, যায় কি তাদের গোনা ?
গাঁদা মল্লিকার পাপড়ি খোলে শিশিরভেজা ভোরে
ফিরনী, ক্ষীর মলিদা রুটিতে নাইওরী স্বাগতম ঘরে
শস্যোৎসবে বাংলার বুকে হেমন্ত মহীয়ান
আমায় করতে ঋতুরাজ তাই রাখলাম আহবান!
শীত আসে ধীরে সেই সে সভায় গায়ে দিয়ে আলোয়ান
আমার কাছে পরাজিত হয় আছে যত পালোয়ান
উত্তরের হিম হিমেল হাওয়া দরজায় নাড়ে কড়া
সবুজ প্রকৃতি ধূসর চাদরের কুয়াশাতে থাকে মোড়া
দীর্ঘ রাতের শেষে সূর্য মুরগীর মত ও’মে
সরিষা খেতের পথটুকু বেয়ে ধরণীতে আসে নেমে
লাউ, কুমড়ো কপি পালং টমেটো পেয়াজকলি
কোন সে ঋতু উজাড় করে দিয়েছে সবজীডালি
খেজুর রসের পাটালী গুঁড়ে নাড়িকেল মেখে গায়
কত শত পিঠা মৌতাত ছড়ায় বাংলার আঙিনায়!
নদী খাল বিল বাঁওড়ে মেলে শৌল শিং মেনী মাছ
গোলাপ, ক্যামেলিয়া কুরচীর মায়ায় হেসে উঠে ফুলগাছ
এত সমাহার হৃদ্যতা ছড়ায় আর সে কোন ঋতু
ঋতুরাজ উপাধি শীতকে দিতে বাকি থাকে কোন হেতু ?
বসন্ত দহলিজে আসে দীপ্তি লয়ে গায়,
পূর্ণ বিনয় নিয়ে সে দরবারে দাড়ায়
মহামান্য প্রভু তুমি সর্বশক্তিমান
এত রূপ রস এত রঙ সব দয়ার সম্প্রদান
আমি এলে পরে প্রকৃতির মাঝে রংধনু আসে নেমে
উজ্জ্বল ফুল আর পাতারা জাগে মাতাল হাওয়ার প্রেমে
সে হাওয়া লেগে শরীর উঠে জেগে দ্রবীভূত হয় মন
প্রতি প্রাণ ভাবে কে আছে জগতে তাহার আপনজন?
ঝর্নার মত উপচায় ফুল শাখায় নবীন পাতা
কৃষ্ণচূড়া,শিমুল পলাশ আনে প্রেমের বার্তা
সে প্রেম ছড়ায় কোকিলের গানে ভ্রমরের গুঞ্জনে
যুগল জোড়াকে বন্ধনে বেঁধে কাছাকাছি ডেকে আনে
তাহার পরেতে জন্মায় কত নতুন অপত্যপ্রাণ
জগৎ জুড়িয়া ছড়িয়ে যায় প্রেমের জয়গান
মুকুট যে পায় সেই পেয়ে যাক স্রষ্টার বিবেচনা
আমি শুধু কৃতজ্ঞচিত্তে করি তব বন্দনা
দয়াময় প্রভু, ভালোবেসে মোরে দিয়েছো মহান ভার
জগতসম্মুখে উপচে দিতে প্রেমের নওজোয়ার
আগমনে মোর বাড়ে বংশ ছড়াই প্রেমের বাণী
এতেই আমি মহাতুষ্ট অনুভবী সম্মানী !
ছয়টি ঋতুর আরজি শেষে স্রষ্টা মুচকি হেসে
বসন্তকে মুকুট পড়ান বিজয়ী ঘোষণা শেষে
প্রতিটি ঋতুই গুরুত্ববাহী নিজ গুণে স্বতন্ত্র
তবুও জগতবাসী জানুক আজ থেকে ঋতুরাজ বসন্ত!
পঠিত : ৭১৭ বার
মন্তব্য: ০