Alapon

কোটা বাতিলের মতোই ঝুলে আছে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন

গত ১১ ও ১২ মে— দুই দিনব্যাপী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন শেষ হয় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে নেতা নির্বাচনের জন্য এবার ভোটপ্রক্রিয়াও বাতিল করা হয়। ভোটের মাধমে নেতা নির্বাচনের ফলে গত কয়েকটি কমিটিতে বড় একটি অংশের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ। এরপর কমিটি নির্বাচনের দায়িত্ব চলে যায় গণভবনে। এতে করে ছাত্রলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ক্ষুব্ধ হয়। এবার ছাত্রলীগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক— শীর্ষ এ দুই পদের জন্য ৩২৩ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর আগে কখনও এত বেশি সংখ্যক ছাত্রনেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি, এটি রেকর্ড।

কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হতাশা আর দুঃশ্চিতায় দিন কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আসলে কি হচ্ছে, কে আসবে নতুন নেতৃত্বে তা নিয়ে সবাই শংকিত। তবে বিভিন্ন সূত্রমতে জানা যায়, ঈদের আগে কমিটি ঘোষণা করে এত তরুণের ঈদ উৎসব মাটি করে দিতে চান না শেখ হাসিনা। 

গণভবন সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের মনঃকষ্টের কথা ভেবে ঈদের আগে সংগঠনটির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না। এ উৎসবের আগে কমিটি দেওয়া হলে বেশির ভাগ মনোনয়নপ্রত্যাশীর আনন্দ মাটি হয়ে যাবে— এই চিন্তা করে ঈদ শেষে কমিটি ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্যের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়ে নতুন নেতৃত্বের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দিতে চান।

কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততাসহ রমজান মাসে প্রতিদিনই ইফতার অনুষ্ঠান থাকায় ছাত্রলীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের জন্য গণভবনে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে তাদের সঙ্গে আলাদা করে বসা সম্ভব হচ্ছে না। মূলত এ দুই কারণে গণভবনে আটকে আছে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা।

সূত্রগুলো জানায়, ১১ মে দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ সফল হওয়ায় যে আনন্দের জোয়ার বইছিল সারাদেশে, ওই আনন্দে ভাটা না ফেলতে ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষ হওয়া সত্ত্বেও সেদিন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকে গণভবনে দাওয়াত করে খাওয়াতে চান প্রধানমন্ত্রী। এরপর সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্যের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়ে নতুন নেতৃত্বের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেবেন তিনি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততাসহ প্রতিদিনই ইফতার অনুষ্ঠান থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঈদের পরে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বসে কমিটি ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা। এই ফাঁকে সম্ভাব্য যেসব প্রার্থীকে নেতা বানানোর চিন্তা করে রেখেছেন তাদের বিষয়ে আরও বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় শীর্ষ দুই পদে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ দুই পদে কাদের দায়িত্ব দেবেন তা প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে উনার পছন্দমত চূড়ান্ত করে রেখেছেন। কিন্তু সেটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেরি হওয়ায় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা চরম উৎকন্ঠার মধ্যে আছে।

দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডির কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘খুব শিগগিরই ছাত্রলীগের কমিটি প্রকাশ করতে পারবো। তবে দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘সংগঠনের কমিটি যাতে ভালো হয়— এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিভিন্ন খোঁজখবর সংগ্রহ করছেন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেরি হলেও ছাত্রলীগের ভালো কমিটি আসবে। সবাই প্রশংসা করার মতো কমিটি আসবে।’
ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি কখন হবে তা নিয়ে কিছু বলতে পারবো না।’

ঠিকই তেমনি ভাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদের মতো পবিত্র জায়গায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন কোটা প্রথা বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু দুইমাস গত হলেও এখনো পর্যন্ত প্রজ্ঞাপনই জারি হয় নি। ছাত্ররা বার বার আল্টিমেটাম দিয়ে আশ্বাস পেলেও আসলে সত্যিকার অর্থে কোন সমাধান হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন- প্রধানমন্ত্রীর গ্রীন সিগনাল না পাওয়ায় এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হচ্ছে না। এই যেন ছাত্রলীগের নতুন নেতা নির্বাচনের মতোই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে ঝুলে আছে। 

পঠিত : ১২০৮ বার

মন্তব্য: ০