Alapon

একরাম মরে প্রমাণ করলো ‘বন্দুকযুদ্ধ’ কাকে বলে

সম্প্রতি একটি অডিও প্রকাশের পর থেকে দেশজুড়ে আলোচনার সমাগম পড়েছে। সবাই নিহত কাউন্সিলর একরামের মেয়ের "বাবা তুমি কাদছ যে...?" প্রশ্নটি নিয়ে অনেক আবেগি লেখা লিখছেন। অনেকে বলছেন, একরাম ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন না। তাকে ভুলে অথবা ষড়যন্ত্র করে শিকার করা হয়েছে।

এসব কথা বলতে বা লেখালেখি করতে বেশি দেখা যাচ্ছে সাংবাদিকদের। অথচ অবাক করার বিষয় হলো এই সাংবাদিকরাই এক সপ্তাহ আগে পুলিশ-র‌্যাবের পাঠানো স্ক্রিপ্ট কপি করে লিখেছিলেন "কক্সবাজারে বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী কাউন্সিলর নিহত"। 

শুধু একরাম নয় গত প্রায় দুতিন বছর ধরে র‌্যাব-পুলিশের পড়ানো বুলি আওড়িয়ে কোনো ধরনের তথ্য উপাত্য সংগ্রহ না করেই তাদের হাতে নিহত মানুষকে অপরাধী বলে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। কাউকে বলেছেন, নাশকতাকারী কাউকে জামায়াত-শিবির। কাউকে বলেছেন জঙ্গি কাউকে আবার মাদক ব্যবসায়ী।

হ্যা, যারা মারা গেছেন তাদের অনেকেই হয়তো অনেক বড় অপরাধী। কিন্তু অপরাধী হলেও তাকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা কি বৈধ? তার কি আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার নেই? তার কি বিচার চাওয়ার কোনো অধিকারই নেই? কখনো কি গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশাসনকে এই প্রশ্নগুলো করেছিলেন? কখনো জিজ্ঞেস করেছিলেন যে এই অপরাধীকে বিচারের আওতায় না এনে গুলি করে হত্যা করা হলো কেন?

না, আপনারা এ কাজটি করেন নি। বরং পুলিশের দেয়া বানানো তথ্য মতো মানবাধিকার লঙ্ঘণ করে, বিচারের আওতায় আসার কোনো সুযোগ না দিয়ে হত্যা করা একটি মানুষের সাথে আপনারা গণমাধ্যমকর্মীরা আবারো অন্যায় করেছেন। আপনারা মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সকল অধিকার হারানোর পর ওই মানুষের লাশটির সাথেও মানবাধিকার লঙ্ঘণ করে যাচ্ছেন নিয়মিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে তাদের কাজ শেষ করেছে। কিন্তু এর পর তার পরিবারের নিরীহ সদস্যদের বাঁচার অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন আপনারা গণমাধ্যমকর্মীরা। 

এই যে একরামের ঘটনা দিয়েই বলি, এক সপ্তাহ আগে র‌্যাবের দেয়া স্ক্রিপ্ট ফলো করে যে একরামকে মাদক ব্যবসায়ী বলেছেন আজ একটি অডিওর বদৌলতে বলছেন সে নির্দোষ। এক সপ্তাহ আগে যেটাকে বলেছিলেন বন্ধুকযুদ্ধ আজ বলছেন এটা হত্যাকাণ্ড। নিজেদের কোনো যোগ্যতায় আপনারা বের করতে পারেননি সে আসলে মাদক ব্যবসায়ী কিনা অথবা আদো সে বন্দুকযুদ্ধে মরেছে কিনা?। আজ জীবন দিয়ে একটি অডিও রেখে গিয়ে তাকে প্রমাণ করতে হয়েছে বন্দুকযুদ্ধের নামে তাকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। একটু ভেবে দেখুনতো অডিওটা না থাকলে কেমন হতো?

অডিওটি না থাকলে বাবা হারানো একরামের মেয়েগুলোকে সমাজে বড় হতে হতো মাদক ব্যবসায়ীর সন্তান হিসেবে। আজ অডিওর বদৌলতে একরামের অন্তত সতিত্বের প্রমাণ হয়েছে। জনগণ জেনেছে বন্দুকযুদ্ধের নামে কিভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগা রয়ে গেলো সেই পরিবারগুলো যাদের প্রিয়জন মরার সময় অডিও ভিডিও রেখে যেতে পারেনি। অবাককর বিষয় হলো, একরামের অডিওর মাধ্যমে পুরো ক্রসফায়ারের বিষয়টি বিতর্কিত প্রমাণ হলেও সবাই শুধু একরামের পরিবার নিয়ে কথা বলছে। সব বুঝে শুনেও কেউ গত কয়েদিনে কথিত এ বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়া আরো অন্তত ১২৫ জনের পরিবার নিয়ে কিছুই বলছে না। 

অবাক লাগছে এখনো যখন আমাদের রাষ্ট্রের কর্তারা বলছেন একরাম নির্দোষ কিনা সেটা তারা খতিয়ে দেখছেন। নির্দোষ একরামকে হত্যা করা হয়ে থাকলে তারা বিচার করবেন বলেও আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু ওই অডিওতে বন্দুকযুদ্ধ কাকে বলে উদাহারণসহ সংজ্ঞা প্রকাশ হয়েছে। অথচ কেউ প্রশ্ন করছেন না এটা কি আদৌ বন্দুকযুদ্ধ হয়? বাকিরা সবাই যদি অপরাধীও হয়ে থাকে তাদের হত্যার সিস্টেমতো এটাই ছিল। এই সিস্টেম কি কোনো আইনের সিস্টেম হতে পারে?

জানি সাংবাদিকরা জেনে এবং বুঝেও এই প্রশ্ন কোনোদিন করবেন না। শুধু একটু মানুষের বাহ বাহ পাওয়ার আশায় বা একটু পত্রিকা বিক্রি করে খাওয়ার স্বার্থে দুএক কলম মানবতার বানী লিখবেন। একটু বলবেন একরামের পরিবারের পক্ষে। তবে পজেটিভ দিক হলো অন্তত একটা অডিওর উসিলায়তো দুএক কলম লিখছেন নয়লেতো তাও কখনো আপনাদের কলমে আসতো না। এখন অন্তত দুএকটা অডিও-ভিডিওর উসিলা ছাড়া জাতি আপনাদের কাছ থেকে মানবাধিকারের বানী শুনে না, অবশ্য কেউ শুনার আশাও করে না। কারণ আপনারাতো নিজেদের নীতি নৈতিকতা বিক্রি করে দিছেন বহু আগে

পঠিত : ১২৪৭ বার

মন্তব্য: ০