Alapon

যাকাত করুণা নয়,গরিবের অধিকার।

যাকাত গরিবের প্রতি কোন করুণা নয় বরং তার অধিকার যা ধনী ব্যক্তিকে অবশ্যই আদায় করতে হবে।       

ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি হলো যাকাত। নামাজ, রোজা ও হজ্জ্বের মতোই যাকাত আদায় করা মুসলমানদের উপর ফরজ করে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা।

যাকাত শব্দের অর্থ পরিচ্ছন্নতা,শুদ্ধি ও বৃদ্ধি।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়ত নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ কুরআনে বর্ণিত আট প্রকারের কোন এক প্রকারের লোককে দান করে নিজের আত্মার পরিশুদ্ধিই যাকাত।এতে সম্পদ হয় হালাল এবং আত্মা হয় পরিশুদ্ধ। 

যাদের উপর যাকাত ফরজ:-
যাকাত ওই সব লোকের ওপর ওয়াজিব হয় যাদের নিকট সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ (৮৫ গ্রাম) বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা (৫৯৫ গ্রাম) রৌপ্য অথবা তৎসমান অর্থ প্রয়োজনের অতিরিক্ত এক বছর যাবৎ রিজার্ভ বা জমা আছে।

যাকাত আদায়:-
যাকাত আদায় করার ব্যাপার আল্লাহ তায়ালা বারবার তাগিদ দিয়েছেন।পবিত্র কোরআনে নামাজের পরেই যাকাতের কথা ইরশাদ করেছেন।
    
তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর।সূরা আল-বাকারা:৪৩     

তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।সূরা নূর:৫৬

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যাকাত আদায় করা আল্লাহর সাহায্য লাভের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।সূরা আ‘রাফ:১৫৬

তোমরা নামাজ আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন।সূরা বাকারা :১১০

যারা যাকাত দিবেনা ও অস্বীকার করবে:-
যাকাত আদায় করতে যারা অস্বীকার করবে তাদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির সংবাদ দিয়েছেন।

আল্লাহ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তারপরও তারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এই কৃপণতাকে নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে। না, এটা তাদের জন্য অত্যন্ত খারাপ। কৃপণতা করে তারা যাকিছু জমাচ্ছে তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি হবে। পৃথিবী ও আকাশের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। আর তোমরা যা কিছু করছো, আল্লাহ তা সবই জানেন। (সূরা আলে ইমরান: ১৮০)

অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন- যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুখবর দাও। একদিন আসবে যখন এ সোনা ও রূপাকে জাহান্নামের আগুণে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তারই সাহায্যে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে- এ সেই সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করেছিলে। নাও, এখন তোমাদের জমা করা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা আত তাওবা: ৩৪-৩৫)

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সূরা তাওবাহ ৬০ নং আয়াতে যাকাতের হকদারদের কথা বলে দিয়েছেন।ফকির,মিসকীন,যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী, ইসলামের দিকে মানুষের মন আকৃষ্ট করার জন্য, ক্রীতদাস,ঋণগ্রস্থ,আল্লাহ রাস্তায় জিহাদকারী ব্যক্তি ও মুসাফির। এই ৮ প্রকার ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কাউকে যাকাত দেওয়া যাবেনা।

শাড়ি ও লুঙ্গি নামে যাকাত দেওয়া:-
বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মুসলিম শাড়ি-লুঙ্গি দিয়ে যাকাত আদায় করে থাকেন। এভাবে যাকাত আদায়ের বিধান ইসলামে নেই।যাকাতের নামে যেসকল শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করা হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় এ সব শাড়ি-লুঙ্গি ব্যবহারের উপযোগীও নয়। অনেক সময় গ্রহীতারা এগুলো নিতে এসে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করে! যা গত কয়েক বছর এমন দৃশ্য দেখা গেছে।ইসলামে এ ধরনের কোনো বিধান নেই। রাসূল (সা.) ও সাহাবাদের সময় এমন ঘটনার কোনো নজীর নেই।যারা যাকাতের নামে এ ধরনের প্রতারণা করে তাদের যাকাত আদায় তো দূরে থাক, উল্টা এই প্রতারণাই হতে পারে কাল কিয়ামতের দিন তার কঠিন শাস্তির কারণ।

ইসলাম সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। একজনের হাতে বিপুল অর্থ-সম্পদ জমা হওয়াকে ইসলাম পছন্দকরে না। ইসলাম চায় ধনী-গরিব সবাই স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করুক।তাই যাকাত আদায় করার মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে দূরত্ব কমে আসে।সুতরাং আল্লাহর হুকুম মেনে প্রকৃত মুমিন হিসেবে জীবন যাপন করাই বুদ্ধিমানের কাজ আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কোরআন ও হাদিসের আলোকে যাকাত আদায় করার তৌফিক দান করুন আমীন।

পঠিত : ৫৪৫ বার

মন্তব্য: ০