Alapon

তুর্কীরা কেন বার বার এরদোয়ানকে চায়? সাদাত পার্টিকে কেন নয়?

আমার বন্ধু শিহাবুজ্জামান কামাল আর্টিকেলের শীরোনাম দেন এই রকম ছন্দ বেঁধে। আমি তখন ভাবতাম, উনি এমন করেন কেন। আজ লিখতে চেয়েই ছন্দের হাতে ধরা খেলাম। কারণ আমার মন বেজায় ভালো। 
এরদোয়ান জিতেছেন। তিনি জেতায় আমার ভালো লাগছে তিনটা কারণেঃ

১- মুসলিম জাতির কিছু ক্ষয় ক্ষতি দেখলে তিনি উপকার করতে পারেন আর না পারেন, বাঘের মত হালুম করে নিজের জানান দেন। এবং জ্বলন্ত অঙ্গারের মত একেকটা শেল মেরে ইসলাম ও মুসলিম বিরোধিদের একটু হলেও সতর্ক করতে চেষ্টা করেন। আমাদের এই মুরুব্বি হারা দুনিয়ায় তার হাত, সে যত নরম তুলতুলে হোক না কেন, মাথার উপর পড়লে, কাঁধের উপর রাখলে আমি বখে যাই। উমার, উমার বলে কেঁদে বুক ভাসাই, আর বলি ও আল্লাহ এই লোকটার মধ্যে আরেকটা উমারের ছাঁয়া এনে দাও।

২- ইসলাম ও মুসলমানদের যারা শত্রু তাদেরকে তিনি একদম দিনের আলোয় দেখতে পান। শত্রুর সাথে বসে তিনি যখন তার্কিশ ভাষায় খেস্তি গান, তা শুনে আমার গ্রামের জরিফ কারিগরের কবিগানের কথা মনে পড়ে।

বিয়ে বাড়িতে গিয়ে কবিতা দিয়ে প্রতিপক্ষকে হারাতে না পারলে বর যাত্রীর বিয়ে দূরে থাক ঘরে বসার অধিকার থাকতোনা।

এরদোয়ান এক নাগাড়ে ঐ সব শিমেলদের সাথে বসে কবিগান গাইতে পারেন। আর তারা খালি এরদোয়ান থামাও, প্লীজ, প্লীজ করতে থাকেন। তিনি যুবরাজদের মত ম্রীয়মান হয়ে নত জানু বা শীর নুয়ানো পছন্দ করেন না। বীর্য বহুল, সাহস রাখা এক ব্যক্তি তিনি। আর মেরুদন্ডের হাড়গুলো যার স্টীল দিতে বাঁধানো এই রকম এক নেতার প্রতিচ্ছবি তার মাঝে দেখি।

৩- তিনি ছিলেন আমার প্রিয় নাজমুদ্দীন আরবাকানের একেবারে হাতেগড়া ছাত্র। আবার আধুনিক তুরস্কে ইসলামাইজেশানের পুরোধা গুলেনের আজ্ঞাবহ ছিলেন।

এই দুইজনের দৃষ্টিভংগীকে আমি পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামি ও মুসলিম লীগের মত দেখি। আরবাকান ভাবতেন তিনি খিলাফাতে ইসলামিয়্যাহ প্রতিষ্ঠা করবেন। তার আলোকে লোক তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। এতে তার গ্রাসরূটে ভালো সমর্থন থাকলেও সরকারি পর্যায়ে তাকে সবাই ভয় পেতো।

মনে রাখা দরকার বর্তমান জগতে যারা খিলাফাতে ইসলামিয়্যাহ বানাতে চায় তারা আন্তর্জাতিক ভাবে যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। আর দেশের অভ্যন্তরে চোর বাটপার, বা অনৈসলামিক জীবনে অভ্যস্ত বড় বড় শক্তির মানুষেরা তাদের বিপরীতে দাঁড়ায়। ফলে দেশের সরকারী সংস্থা, অর্থকরী প্রতিষ্ঠান, কিংবা শিক্ষা ও সংস্কৃতির তল্পীবাহকেরা তাদের ভয় পায়। আরবাকান তাই এদের বিপরীতে দাঁড়ায়ে বারবার পর্যুদস্ত হচ্ছিলেন।

এর বিপরীতে মুসলিম লীগের এপ্রোচ হলো, ওরে খেলাফতে ইসলামিয়্যাহ কি, মুসলমানদের একটা আবাস স্থল আগে বানাও। পরে ইসলামি রাস্ট্র বানায়ো।

একবার মাওলানা মাওদূদী (র) অধ্যাপক আব্দুল গফূর (এক কালীন পাকিস্তানের মন্ত্রী) কে কায়েদে আযমের কাছে জামাআতের দাওয়াত নিয়ে পাঠান। কায়েদে আযম তিন দফা দাওয়াত, ৪ দফা কর্ম সূচী ও উদ্দেশ্য ও লক্ষের কথা শুনে হেসে দেন।

তিনি বলেন, শোন আব্দুল গফুর, হাঁসটা আগে হোক, তখন ডিম দেয়া শুরু করলে ঐ ডিম গুলোকে তুমি সোনার হাঁস বানানোর উপযোগী করিও। আমার সালাম দিয়ে মাওলানাকে বলো, আমাদের কাজ তার কাজের চেয়ে ভিন্ন নয়। আমি একটা দেশ আগে বানায়ে নেই, তারপর এই দেশ চালাতে যে লোক লাগবে তা মাওলানা ছাড়া আর কেও প্রস্তুত করতে পারবেনা। কিন্তু তিনি যেভাবে কাজ করছেন, তাতে সবাই ভয় পাবে, এবং তাকে ঠেকানোর জন্য ব্যস্ত হবে।

সেইদিনে কায়েদের কথা শুনে ইসলামিস্টরা অট্ট হাসি দেন। এবং তার ইসলামি জ্ঞানের যথেষ্ঠ অভাব আছে বলে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন।

গুলেন এই পয়েন্টে কাজ করেন। তিনি জুডীশিয়ারী, মিডীয়া, শিক্ষা, ও সেনা বাহিনীকে মুসলিমদের আওতায় আনার চেষ্টা করেন। এবং তা করতে যেয়ে ইখওয়ান, জামাআত বা আন্দোলনী এপ্রোচকে দূরে ঠেলে দিয়ে কাজ করা শুরু করেন। এই করতে যেয়ে আরবাকানকে তিনি সমালোচনা করেন। পরে ঐ যায়গা গুলো দখল করে নিয়ে আরবাকানের দল থেকে ছুটিয়ে এনে এরদোয়ানদের হাতে তুলে দেন।

গত ৫ বছরে এরদোয়ান চেইঞ্জ হয়েছেন, আরবাকানের দল চেইঞ্জ হয়েছে, গুলেন ও চেইঞ্জ হয়েছেন অনেক। সবাই একটা মিশেলে চলে গেছে এবং ইবলিশের জন্য একটা ভালো যায়গা খালি করা হয়েছে। আল্লাহর কাছে দুয়া করি ইবলিশ ঐ খালি যায়গায় যেন বসার সুযোগ না পায়।

এবার আসি শীরোনামে। আসলে এরদোয়ান সুলতান হবেন তা আমি চাইবোনা। তিনি একজন মুসলিম হয়ে থাকুন। মুহাম্মাদ সালমানের মত মূর্খ সেক্যুলার না হলেও খলিফা তিনি না হন। আমি চাইবো ইউরোপীয়ান সেক্যুলারিজম বলতে যে ডিফাইন তার আক পার্টির সংবিধানে উল্লেখ করেছেন, তার মতই চলুন। সেই সাথে আরবাকানদের যায়গা গুলো তার লোকদিয়ে ভরে ফেলুন, অথবা তার প্রয়োজনীয় যায়গায় আরবাকানদের দিয়ে ভরিয়ে দিন।

সাআদাত পার্টি যে ইসলামের দিকে ডাকছেন, এই নির্বাচনে সাধারণ মুসলমানরা সেই দিকেই লাব্বায়েক বলেছেন। তবে সাআদাত পার্টি চেয়েছিলেন এরদোয়ানকে লাথি মেরে আরেক মারত্মক সেক্যুলারকে বসাতে। জনগণ ঐটা মানেনি। তার জানান দিয়েছে, হুজুর থামুন। এরদোয়ানের কপালে কিন্তু আপনাদের আলোই জ্বলতেছে। কাজেই আপনাদের ইসলামিজম নিলাম, এবং তা এরদোয়ানের মাথায় তাজ বানিয়ে পরিয়ে দিলাম।

আরবাকান (র) এর লোকেরা অভিমান করে যে কুমীর টা আনার জন্য খাল কাটতে ছিলেন, তুরস্কের বীরেরা সেই খাল বালি দিয়ে ভরাট করে দিয়েছে। আর এরদোয়ানকে আদর করে একটা আসনে বসিয়েছে। হতে পারে সেটা সালতানাতের সিংহাসন অথবা ইউরোপীয়ানদের মত রাস্ট্র পরিচালনার শক্ত চেয়ার। মন ভরা দুয়া তার জন্য।

লিখেছেনঃ Dr M Abdus Salam Azadi

পঠিত : ১১০৭ বার

মন্তব্য: ০