Alapon

ইসলামপন্থা এবং তথ্য ও যুক্তির ব্যবহারে সতর্কতা

বিখ্যাত ইংলিশ কবি শেলী ১৮১১ সালে “নাস্তিক্যবাদের প্রয়োজনীয়তা” বা “The Necessity of Atheism” শিরোনামে একটি পুস্তিকা বের করেন । একারণে তাকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে বহিস্কার করা হয় ।

আজকের দিনে আপনি অক্সফোর্ড ইউনিয়নের হলে ডিবেট ডায়াসের পেছনে দাঁড়িয়ে যখন তখন বলতে পারবেন “আল্লাহ, খোদা, ভগবান” কিছুই নাই । আপনাকে কেউ কিছু বলবে না । সবাই মনে করবে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার । কেউ হয়ত পাত্তাও দেবে না। কারণ এটা ওদের নৈমিত্তিক ঘটনা ।

কিন্তু, বুঝাই যাচ্ছে, একটা সময় ছিলো যখন অবস্থা ছিলো পুরো উলটো । হাজার ডলারের প্রশ্ন হলঃ আজকের অক্সফোর্ড আর সেদিনের অক্সফোর্ডের এই পার্থক্য কেন রচিত হল ?

এই প্রশ্নের উত্তরে ৫০০ পৃষ্ঠার বই রচনা করা যাবে, আবার এক কথায়ও এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাবে । সে যুগে ধর্মের নামে যে ভন্ডামী করা হত, এবং সেই ভন্ডামী প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চার্চের পক্ষ থেকে যে নির্যাতন নেমে আসতো তার বিরুদ্ধে একটা লড়াই দাঁড়িয়ে গেল । চার্চ তার অনৈতিক নির্যাতনের পক্ষে ধর্মকে ব্যবহার করতে লাগলো । ধীরে ধীরে মানুষের মনে এই ধারণা জন্মালো যে, ধর্ম হল নিপীড়নের হাতিয়ার, সুতরাং বাঁচতে হলে ধর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও । ব্যাস সংগ্রাম শুরু । ফলাফল ধর্মের পরাজয়, আর নাস্তিক্যবাদের বিজয় ।

অত্যন্ত মজার বিষয় হল, আপনি যখন খ্রীষ্ট ধর্মের (মূলতঃইসলাম) ইতিহাস পড়তে যাবেন, সেখানে দেখতে পাবেন এই খ্রীষ্ট ধর্মকে কেন্দ্র করেই এক সময় সামন্তবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠেছিলো । সেজন্যেই ঈসা (আ) কে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে । কিন্তু পরবর্তিতে এই ধর্মটাই কিভাবে নির্যাতনের হাতিয়ার হয়ে গেল ? আজকের দিনে এই প্রশ্নের পর্যালোচনা খুবই জরুরী । কারণ এর ভিতরে আমাদের ভাল-মন্দের প্রাসঙ্গিকতা আছে ।

ঈসা (আ) এর পর যারা সে ধর্মের হাল ধরেছিলেন তারাই তো পরবর্তিতে ভন্ডামী শুরু করেছিলেন । এই ভন্ডামীতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পরবর্তিতে লোকেরা ধর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো ।

খেয়াল করবেন, ধর্ম খারাপ সে কারণে লোকেরা ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে – তা কিন্তু নয় । ধর্মের প্রতিনিধিত্বকারী লোকেরা ভন্ডামীর আশ্রয় নিয়েছে বলেই মানুষ শুধু ভন্ড লোকেদের নয়, ধর্মকেও ত্যাগ করেছে । আমাদের জন্য অশনী সংকেতটা এখানেই ।

আপনি জানলে আশ্চর্য হবেন, জালিমের বিরুদ্ধে ধর্মের অবদানের কারণে ধর্মের গুরুত্ব স্বীকার করতেন স্বয়ং কাল মার্ক্স ! “ধর্ম মানুষের জন্য মদের মত” এই কথাটি কাল মার্ক্স ধর্মের পক্ষে বলেছিলেন । পরবর্তিতে ধান্দানাজ লোকেরা ওনার কথাটিকে ঘুরিয়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যাবহার করেছে । মার্ক্সের পুরো বক্তব্যটি হলঃ "Religion is the sigh of the oppressed creature, the heart of a heartless world, and the soul of soulless conditions. It is the opium of the people" মার্ক্স এখানে দেখাতে চেয়েছিলেন যে ধর্মের মাধ্যমে মানুষ তার যাপিত জীবনের দুঃখ ভুলে বেচে থাকার শক্তি অর্জন করে । মদ খেলে মানুষ যেরকম সব দুঃখ ভুলে যায় সে রকম ।

গত কয়েক শতাব্দী ধরে মুসলমানরা যে পতনের গহবরে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে তার কারণও এখানে । আমাদের পূর্ববর্তী নেতৃত্বস্থানীয় লোকেরা যে “ভন্ডামী”র আশ্রয় নিয়েছে, তারই ফলাফল আমাদের আজকের এই জিল্লতি ।

আজকের ভারতে এত হিন্দু কেন জানেন ? “এটা তো মুসলমানদের সহনশীলতার উদাহরণ । কয়েক’শ বছরের মুসলিম শাসনে যদি হিন্দুদেরকে জোড় করা হত তাহলে কি এখন আর একটাও হিন্দু থাকত”

আমি জানি, অনেকেই উপরের উত্তরটি দেবেন । ব্যাপারটি আসলে তা নয়, এখানকার মুসলীম শাসকেরা ভারতীয় উপমহাদেশে ঢুকেছিলেন রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে, ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে নয় । মুসলিম শাসনের সুযোগ নিয়ে ইসলাম প্রচার করেছিলেন সুফী ধারার লোকেরা । ইসলামই যদি শাসকদের উদ্দেশ্য হত তাহলে সত্যিই এত হিন্দু দেখা যেত না । ইসলামের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শাসন করা হয়েছিল ভুমধ্যসাগর থেকে শুরু করে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় । এই অঞ্চলে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের লোক কই ?

যখনই ভন্ডামীর আশ্রয় নেয়া হল, তখনই তো জিল্লতির শুরু । সুতরাং আমাদের যারা ইসলামী নেতা আছেন তারা যেন ভন্ডামীর আশ্রয় না নেন, যদি নেন তাহলে বিপদ কিন্তু তখন থেকেই শুরু ।

কিছুদিন আগে এক ইসলামী দলের বড় নেতাকে দেখলাম তার কর্মীদের তিনি একাত্তর প্রশ্নে নয়-ছয় বুঝাচ্ছেন । এগুলো বাস্তবেই বড্ড ভয়ঙ্কর । অবারিত তথ্যের যুগে এগুলো চলে না ।

গত বছরের কথা । পিস টিভিতে মতিউর রহমান মাদানীর বক্তব্য শুনছিলাম । তিনি বললেন আল্লাহর কোন খলিফা নাই । হজরত আদম আলাইহিস সালাম নাকি আল্লাহর খলিফা নন । অবশ্য সূরা বাকারার ত্রিশ নাম্বার আয়াতে সরাসরি একথা বলা নেই যে, 'আমি পৃথিবীতে "আমার" খলিফা বা প্রতিনিধি বানাবো । (إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ) । খলিফা বানাবো -এ কথা আছে ।

আচ্ছা, ধরে নিলাম যে, আল্লাহর খলিফা নেই । তাহলে আদম আলাইহিসসালামকে যখন পৃথিবীতে প্রেরণ করা হল তখন তো দুনিয়াতে শয়তান, হাওয়া (আ) আর আদম আলাইহিসসালাম ছিলেন । এখানে আদম আলাইহিসসালামের নিজেই নিজের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ নেই । কারণ ব্যাক্তি নিজেই যখন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কাজ করেন সেটাকে প্রতিনিধিত্ব বলে না । বাকি থাকল শয়তান আর হাওয়া আলাইহিসসালাম । উনি তাহলে কার প্রতিনিধিত্ব করেছেন ?

সর্বসাকুল্যে যা বলতে চাইঃ মানুষকে যেন কেউ বোকা না ভাবে, গোজামিলের আশ্রয় যেন কেউ না নেন, সবাই যেন ভন্ডামী পরিহার করে চলেন, বিশেষ করে ইসলাম নিয়ে যারা কাজ করেন, কারণ এতে ইসলামের কোন উপকার হয় না । এগুলি কেবলই ধ্বংষের দ্বার উন্মোচন করে ।

পঠিত : ১২৩১ বার

মন্তব্য: ০