Alapon

বিয়ের কষ্ট

রাত প্রায় ১২.১৫। যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার দিয়ে হোন্ডায় ব্যস্ত আমি। ভাবছি জীবন কেন এত কষ্টের হয়? আহা জীবন! বাসায় উঠতে লিফটের মধ্যেও একই চিন্তা মাথায় তখনও ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছুতেই মাথা থেকে নামাতে পারছি না চিন্তাটা। 

গিয়েছিলাম এক মামাতো ভাইয়ের বাসায়। ইফতারের দাওয়াত ছিল। কিন্তু অন্য আরেকটা প্রোগ্রামের কারনে মামাতো ভাইয়ের বাসায় গিয়েছি রাত প্রায় ১০.১৫ দিকে। উদ্দেশ্য কিছু ভাইবোনদের সাথে দেখা। একটু ভাললাগা আর একটা বিশেষ উদ্দেশ্য তো আছেই…

সম্পর্কে আমার ভাই সাথে ফ্রেন্ডও বলা যায়। বিয়ে হয়েছে প্রায় একবছর আগে। বউয়ের প্রতি ভালবাসা ভাইয়ের মোবাইলে তাকালেই বোঝা যায়। হিজাবে আঁকা কিশোর একটা মেয়ের ছবি শোভা পাচ্ছে মোবাইল স্কিনে। যেন প্রচ্ছন্ন ভালবাসার ইংগিত। 

মনে নেই শান্তির ছিটেফোঁটাও। কষ্টে বুকটা ঝাঝরা হয়ে যাচ্ছে। কেন হবে এমন? কি  দোষ আমার? আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি...। ওকে শেষ (!)করে ফেলেছে ওর খালা। অস্ফুট কিন্তু স্বাভাবিক স্বরে প্রিয় ভাইটি। কথার ভাষা শুনে হৃদয়ের ভাষা বুজতে বাকি থাকার কথা নয় ।



২-৩ মাস ধরে কথা হয়না প্রিয় স্ত্রীর সাথে। তার কাছেও ফোন দেয়না। কি আজব! নিজের বিবাহিতা স্ত্রী আমার কাছে ফোন দেয় না। আমি যে তার কাছে ফোন দিব তার উপায়ও নাই। এটা কি মেনে নেওয়া যায়? অদ্ভুদ পৃথিবীর মেয়েরা! মেয়েরা আসলেই এমন হয় নাকি  . . . আর ভাবতে চাই না। 

অফিস থেকে আসলে, একগ্লাশ ঠান্ডা পানি দিয়ে মাথায় হাত রেখে বলবে খুব কষ্ট করেছো আজ। এখন একটু বিশ্রাম নাও। স্ত্রীর মিষ্টি হাসিতে ভুলে যাবে দিনের সকল গ্লানি। খুনসুটি অার বিধাতার রহমের অবারিত দরজায় বসবাস হবে দুজনের।  দুজন মিলে রচনা করবে ভালবাসার বাসার নীল সমুদ্র।

কিন্তু . . . না। ভাইটির জীবনে এখন এমন মধুভরা সময় যাচ্ছে না। সারাক্ষন বুকে জমাট বাধা কষ্ট নিয়ে বাসা আর অফিস। কেউ আর ঠান্ডা পানি এগিয়ে দেয় না। চোখের ইশারায় কষ্ট মুছে যায় না ভাইটির।  জীবন নৌকায় যে বড্ড একা তিনি। তবে কি বিয়েটাই ভূল ছিল? নাকি আল্লাহর পরিক্ষা?

চিন্তা করা যায়! নিজের বিবাহিতা স্ত্রী ফেসবুক থেকে কি করে ব্লক করে স্বামীকে? কদিন আগেই মাত্র চোখে ভালবাসার গোলাপ ফুটতো। আর এখন? আমার ফেসবুক থেকে যখন সে ভাবির ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকতেছিল… চোখে অন্য এক আবেগ আর অসহায়ত্ব দেখেছি। সত্যি বড় করুনার আর নির্দয় সে মুখভাষা। অথচ ভাবীর ছবি তখনও ভাইয়ের স্কিনে জলজল করছে। হয়তো হৃদয়েও দুরুদুরু ক্ষীন আওয়াজ বইছিল তখনও। ওহ! জীবন কত কষ্টের!

আচ্ছা ভাবীটা কি জানে? ভাই তার জন্য একটা ভালবাসার নিল পদ্ম কিনে রেখেছে। কত কষ্টের ভাবী থেকে দূরে থাকা? বিয়ের পর এই দূরে থাকা, যোগাযোগ না হওয়া কতোটা অসহ্যের? কত নিঘুম রাত কাটে প্রিয় স্ত্রীর জন্য? বিধাতার দরবারে কত চোখের পানি ঝরেছে? আহ! জীবন। 

মানুষ কত অসহায়(!) কেউ বিয়ে করার জন্য পাগল। ভাবে... বিয়ে মানে জীবনের নতুন জয়গান। বিয়ে মানে এক চিলতে শুভ্র ভালবাসা। আবার বিয়ের পরে ভাইয়ের মত যারা কষ্টে আছে, তাদের অবস্থা কয়জনে বোঝে? বিয়ে মানে এই ভাইদের কাছে একটা বিষফোঁড়া। যেন একটা বাঘের ঘাড় মটকানো কামড়। কেউ কি বুঝতে চায় সামনে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে? শুকরিয়া আল্লাহ আমায় অনেক ভাল রেখেছে।  আলহামদুলিল্লাহ।

রাত ১২.০০ দিকে যখন ভাইটি থেকে বিদায় নেই। কোন সান্তনার বানী শুনাতে পারেনি। কোন আশা তাকে দেখাতে পারিনি। শুধু বলেছি, আল্লাহর কাছে বল। তিনি নিশ্চই সকল সমস্যা সমাধানে সক্ষম। তবে নিকট অতীতের একটা প্রেরনা আছে। আমার এক বন্ধুর এমন সমস্যার পরে ভাবিটি আবার ফিরে এসেছে। অন্ধকারের মাঝে একটুখানি আলোর ঝলকানি! সেটাই যেন হয়. . .

ফিরে আসুক ভাবিটি। ফিরে আসুক আশার স্বপ্নের জাল বোনা সংসারটি। আলোয় ভরে উঠুক জীবন সংসার। হাসি ফুটুক প্রিয় ভাইটির মুখে। পৃথিবীর সকল পবিত্র জুটিগুলো ফিরে পাক ভালবাসার নীড়। পবিত্র কোরানে শিখিয়ে দেওয়া দোয়াই হোক সবার দোয়া, “রব্বানা হাবলানা মিন আঝওয়াজিনা ওয়া জুররি-ইয়্যাতিনা কুররতা আইউনিউ ওয়াজ'আলনা লিল মুত্তাক্বিনা ইমামা।”  অর্থ: হে আমার প্রভু! স্ত্রী ও সন্তাদের দ্বারা আমার চোখ শীতল কর। আমাকে পরহেজগারদের আদর্শ কর।

সে প্রত্যাশায় . . .  অনাগত জীবন।

পঠিত : ২৮৭২ বার

মন্তব্য: ০