Alapon

রৌদ্রময়ী


১.
        - “তো আম্মু! কেমন লাগলো কাহিনী?
        - “কাহিনী শেষ?”
        - “হ্যাঁ।”
        - “কিন্তু… কিন্তু… মা ওর প্যালেস কই? হ্যাপি এন্ডিং কই?“
        - “এই প্রিন্সেসের প্যালেস নেই মা। তবে সে হ্যাপি ছিল।”
      - “উহ!!! এত কষ্টের মধ্যে কেউ হ্যাপি হয় নাকি? নিশ্চই তুমি পুরাটা জানো না। “
        - “পুরাটাই বলেছি তো।”
        - “পঁচা গল্প।”
        - “কী বললে মারিয়া?”
     - এমন কথা শুনে প্রচন্ড রাগ উঠে গেল মারিয়ার। কতবড় সাহস, ফাতিমার জীবনী সম্পর্কে এমন কথা বলে! “আরেকবার বল দেখি?”

     - মায়ের রাগ দেখে মারিয়ে এক দৌঁড়ে পালালো। অভিমান হচ্ছে মায়ের উপর। সিন্ডারেলের গল্প বলার সময় তো কত বুঝিয়েছিল আম্মু, কষ্ট করলে পুরষ্কার পাওয়া যায়। তাহলে ফাতিমা কেন পেল না? ধূর আম্মু পুরাটা জানেই না!
     
    - এদিকে অনেক কষ্টে নিজেকে সংজত করল রাদিয়া। আসলে তো মারিয়ার দোষ না। প্রতিদিন বানোয়াট সব গল্প শুনে এখন সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য মনে করছে। কল্পনা শক্তির বিকাশে সহায়তা করতে যেয়ে মেয়েকে বাস্তব জ্ঞানহীন,উচ্চভিলাশি বানিয়ে ফেলেছে। আর নৈতিক শিক্ষা তো বাদই!

   - মেয়ের রুমের সামনে উকি দিল রাদিয়া। মারিয়ার হাতে ‘আলাদিন’। হঠাৎ প্রচন্ড ভয় হলো মারিয়ার। ও কী কী শিখেছে এর থেকে? ও কি আলাদিনের মতো চোর হবে, নাকি প্রিন্সেস জেসমিনের মতো চোর বিয়ে করবে? মাথাটা মনে হচ্ছে চক্কর দয়ে উঠল রাদিয়ার। নিজের রুমে গিয়ে কান্নায় ভেংগে পড়ল। 


২.
”অতলভরা পুর্ণিমায় অর্ধরাত্রে চোখে চোখ রেখে হেটেছিল সাগরের বালুবেলায়। বিচের পাশের বিশাল পাথুরে তারার মেলায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল দুজনে।” 

সে রাতে বুড়ো ফুলওয়ালার কাছ থেকে টকটকে লাল গোলাপ কিনে দিয়েছিল হাসান। ডায়েরির ভাজে এখনো গোলাপটি রেখে দিয়েছে সুপ্তি। শুকিয়ে শ্লান হয়ে যাওয়া গোলাপের পাঁপড়ির দিকে তাকালে মনে হয়, তাদের ভালবাসাও দিনে দিনে এমনি করে শুকিয়ে বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে? হাসান কি এখনও তাকে আগেরমত ভালবাসে? নাকি সবকিছুর জন্য তাকে দায়ী মনে করে?

“চোখ ফেটে কান্না আসে সুপ্তির। আজকাল প্রায়ই এমন হয়……………………..“



“জরুরি মিটিং না থাকলে হাসান আজ অফিসে আসত না। আজ সারা দিন তার সুপ্তিকে নিয়ে ঘুরতে ইচ্ছে হচ্ছে। বিয়ের পর সেই প্রথম দিনগুলির মতো করে। কী হাশিখুশি মেয়ে ছিল ওর বউটি। সারাদিন কথার ফুলঝুরিতে চারিদিকে মাতিয়ে রাখত। ”


ছোট বাচ্চাদের সাথে খুবই জমত ওর। বাচ্চা খুব ভালবাসত। কিন্তু এই একটি জিনিসের শুধু অভাব তাদের জীবনে, উচ্ছল বউটি সকল উচ্ছলতায় যেন কালো মেঘ ঢেকে দিলো। 

হাসানের ইচ্ছে করে পৃথিবীর সকল সুখ এনে প্রিয়তমার কাছে রেখে দিতে। আগে বিবাহবার্ষিকী ভুলে গেলে, অভিমানে তুলকালাম কান্ড করত সুপ্তি। আর এখন এই দিন সমাগত হলেই হাসানের আতংক বাড়তে থাকে। কারণ, এ সময় অন্য দিনের চেয়েও যেন বেশি ডিপ্রেসড হয়ে পড়ে সুপ্তি। 

একেকটা বছর যায়, আর সুপ্তির মনে হতে থাকে না-পাওয়ার আরও একটি বছর শেষ হলো। সন্তানহীন আরও বারোটা মাস গেল! দিনে দিনে কেমন ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে সে। কি করা যায় . . . . . . . . . . . . . . .  . . . . .  . . .  . . . . . . . ..  . . . . . . . .


 - - - - -- - হঠাৎ সুপ্তি লাফ দিয়ে উঠে হাসানের মুখ চেপে ধরল, “ছি, কী বলো এসব!”

শোন যে কৃতজ্ঞ হয় আল্লাহ তাকে আরও বাড়িয়ে দেন। আমি চাই এখন থেকে আমরা যা পেয়েছি, তা নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকব। আমাদের সম্পর্কের হেফাজাতের জন্য দোয়া করবো। আমাদের ভাগ্যে আল্লাহ নিশ্চয় উত্তম কিছু দেবেন, সুন্দরতম ধৈর্যের বিনিময়ে। সন্তান নেই তাই কি হয়েছে? দেখ অাল্লাহ আমাদের কি দেন নি? কই অামরা কি সবকিছুর জন্য শুকরিয়া করেছি?


ধারনা করা হয় ১৪০০ সালের দিকে একটি বই এসেছিল পৃথিবীতে। যার সংস্পর্শে এমন সহস্র  রাবেয়া,হাসানদের জন্ম হয়েছিল। এক অনবিল স্মৃুতির মিনার পৃথিবী কাঁপিয়ে দিয়েছেল। সেই বইয়ের বাস্তব কিছু সুগন্ধ নিয়েই তৈরি আজকের “রৌদ্রময়ী“। যার  অলিতে গলিতে আছে হাসনাহেনা, জুঁই, বেলীসহ হাজারো ফুলের নির্যাস। 

আসুন না নিজেকেও সাজিয়ে নিন . . . 

অপুর্ণতার হাপিত্যেস আমাদের সারা জীবনকে ক্ষুধাতুর করেছে। এই আছে তো এই নেই। গাড়ি চাই, বাড়ি চাই, প্যালেস চাই, হিজাবী ক্যাটরিনা কাইফ চাই, চারিদিকে শুধু চাই আর চাই! 

একটু কি হিসাব করে দেখেছি আল্লাহ আমাদের কত কি দিয়েছেন। না পাওয়ার পাল্লার ওজন তো খুবই কম। তবুও আমরা শুকরিয়া আদায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বড্ড কৃপন। 

আধুনিকতার বিশ বাষ্প আমাদেরকে নৈতিকতাহীন সুন্দরের প্রেমিক বানিয়েছে। মিথ্যা অরুচিকর স্বপ্ন নিয়েই বেড়ে উঠছে আমাদের ভবিস্যত প্রজন্ম। আমরাও পরম মমতায় সেই স্বপ্নের জাহাজের পাল তুলে দিচ্ছি। 

ছোট ছোট না পাওয়ার ব্যাথার মাঝে আড়াল করে ফেলি সীমাহীন আল্লাহর রহমত। রাদিয়া-মারিয়া, হাসান-সুপ্তির এমন সব জীবনের ইসলামিক এপ্রোচগুলি নিয়েই তৈরী হয়েছে ১৬৯ পৃষ্ঠার “রৌদ্রময়ী”। কেমন হতে পারে আমাদের প্রত্যাহিক চিন্তা চেতনা? 

দাম্পত্য খুটিনাটি, পরিবার, সমাজ থেকে শুরু করে আমাদের এই যান্ত্রিক আটপৌরে জীবনের নানা অসঙ্গতি, মিথ্যা মোহ আর নাটুকেপনা আবেগের উল্টো পিঠে রৌদ্রময়ীরা আমাদের শুনিয়েছে অদ্ভদ কিছু জীবনের গল্প। অযত্নে আর অবহেলায় যে গল্পগুলি পড়ে ছিলো, সেগুলিকে তারা তুলে এনেছে পরম যত্নে, মমতায়। হৃদয়ছোয়া সেসব গল্প নিয়েই এই বই “রৌদ্রময়ী”। 


চলেন না আমরাও হয়ে উঠি “রৈৗদ্রময়ী”...

ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট: www.swapnerguri.com

পঠিত : ১৬৩১ বার

মন্তব্য: ০