Alapon

ঠেকায় পড়েছে হাসিনা, উদ্ধার করেছে ছাত্রলীগ!

প্রথমে আজকের ঘটনার দিকে খেয়াল করি, তারপর একটু চিন্তা করলেই শিরোনামটির মর্মার্থ বুঝতে পারবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূরসহ অন্তত ৬ জন। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

আজ শনিবার পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এ সময় তাদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
অন্য আহতরা হলেন, সংগঠনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, আতাউল্লাহ, সাদ্দাম, মাসুদ ও আব্দুল্লাহ।
 
সংবাদ সম্মেলনে বাধা এবং ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, সংবাদ সম্মেলনে বাধা ও হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল থেকে সকল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং সারাদেশে বিক্ষোভ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।

এবার চলুন একটু ভেবে দেখি কেন আজকের হামলা। যদিও শুরু থেকে ছাত্রলীগ কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরোধীতা করে এসেছে এবং আন্দোলনের বিভিন্ন সময় আন্দোলকারীদের উপর হামলা করেছে। ছাত্রলীগ নেত্রী এশাকে দিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রীর রগকাটার ব্যবস্থাও করেছিলো। প্রশাসন দিয়ে মূল নেতৃত্ববৃন্দকে আটক পর্যন্ত করেছিলো, তবুও আজকের হামলার আলাদা একটা গুরুত্ব রয়েছে।
আর সেটা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাঁচানো।

একটু খেয়াল করলে বুঝবেন- কোটা বাতিল বলে প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বক্তব্যের প্রায় তিন মাস পার হলেও প্রজ্ঞাপন জারির কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হয়নি। শুধু তাই নয় গত পরশুদিন প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে আবার বলেন মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে অন্যান্য কোটা নিয়ে কমিটি হয়েছে। একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখ দিয়ে দুই ধরনের কথা শুনে, চলচাতুরির আশ্রয় নেয়ার অবস্থা দেখে সচেতন মানুষ মাত্রই বুঝতে পারবে যে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিল ঘোষণা করে কত বড় ঠেকায় পড়েছেন। উনি যে ছাত্রদের সাথে প্রতরণা করেছেন তা কোটা আন্দোলনকারীরা বুঝতে পেরে নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল কোটা সংস্কারকারী আন্দোলনকারীরা। 

শেখ হাসিনা কোন উপায়ন্তর না দেখে লেলিয়ে দেয় তার পোষা রক্ষীবাহিনী খ্যাত ছাত্রলীগকে। ছাত্রলীগ হাসিনাকে এহেন পরিস্থিতিতে থেকে উদ্ধার করার নিমিত্তে মরণ কামড় দিয়ে আজ সকালে মাঠে নামে। আর পরিকল্পনা করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী নেতৃত্ববৃন্দকে শেষ করে দেয়ার মাধ্যমে কোটা ইস্যুটিকে শেষ করে দিবেন। আর এতে নেত্রীও রক্ষা পাবে কোটা আন্দোলনও নস্যাৎ হবে। যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ।

কিন্তু মিডিয়া আর শত শত সাধারণ ছাত্রদের সামনে ছাত্রলীগ পুরোপুরি সফল না হলেও আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী নেতাদের অবস্থা আশংকাজনক করে দিতে পেরেছেন। তবে বুঝা যাচ্ছে না এখনো পর্যন্ত এতে হাসিনা কতটুকু রক্ষা পাবে। সারা বাংলার কোটা সংস্কারের পক্ষের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়া সাধারণ ছাত্ররাও কতক্ষণ হাল ধরে রাখতে পারেন এবং ছাত্রলীগ হাসিনাকে কতখানি বাঁচাতে পারে তা দেখার অপেক্ষায়।

তবে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের মেধাবী ছাত্রদের সাথে এমন প্রতারণার আশ্রয় নিবেন এবং ছাত্রদের রক্ত নিয়ে খেলা করবেন, তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিবেন তা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়। এমন নির্মম সত্যও জাতিকে দেখতে হলো।
ছি! লজ্জা।

পঠিত : ১৬৮৩ বার

মন্তব্য: ০