Alapon

আমরাও কি নিরো হয়ে গেছি?

জ্ঞানীজনদের মুখে শুনেছি: রোম যখন পুড়ছিল রোম সম্রাট নিরো তখন মনের সুখে বসে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলো। আজ আমাদের দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন মহল পর্যন্ত নিরোর মত অবস্থা  হয়ে গেছে।
আজ আমরা সবাই সুবোধটাকে হারিয়ে ফেলেছি। আজ আমরা কোন পথে আছি একটু বিবেচনা করে দেখেছি কি?

একে একে মানবতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে একটু বিবেচনা করেছি কি? আজ দেশের যারা সর্বোচ্চ আসনে বসে আছে তারা কথায় কথায় কি পরিমাণ মিথ্যা কথা বলছে তা কি আমাদের  বিবেচনায় আছে? যে ব্যাপার নিয়ে আজ ২ মাস আগে মীমাংসা হয়ে গেছে সেটা কেনো আজ আবার নতুন করে এলো?  দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শান্তি প্রিয় শিক্ষার্থীরা মার খেলো। তার মানে, মানুষ কি তাদের আস্থার জায়গা হারিয়ে ফেলছে?  উনি না মাদার অফ হিউমানিটি, তাহলে আবার তার গুন্ডাপান্ডারা সাধারণ মানুষের মানবাধিকার কিভাবে হরণ করে?

তার মানে দেশটা কি আস্তে আস্তে সিরিয়ার মত করে ফেলতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা?  আজকে যে দাবি দেশের ৯০% মানুষের সেটা কেন মানা হচ্ছে না বা তার জন্য কেন আইন পাশ করা হচ্ছে না?  প্রধানমন্ত্রী নিজেইতো ঘোষণা দিলেন কোন কোটা থাকবেনা তাহলে আবার কেন সেই ব্যাপার নিয়ে রক্ত ঝরল? তার মানে, এর পেছনে কি অন্য কোন শক্তি কাজ করছে বা অন্য কোথাও থেকে কি এর কলকাঠি নাড়া হচ্ছে? 
আমি সচরাচর টিভি দেখি না। আজ খেলা দেখার জন্য টিভির সামনে গেলাম। আবার যে জায়গায় গেলাম সেখানে বিটিভিতে খেলা চলছিল। আর বিটিভির ব্যাপারে এদেশের মানুষের মুখে একটা জনশ্রুতি আছে সেটা হলো বঙ্গবন্ধু টিভি। তো যাইহোক, খেলার বিরতির সময় দেখলাম বেশিরভাগ মানুষ উঠে গেলো কিন্তু আমি বসে থাকলাম মনে মনে ভাবলাম বাইরে গিয়ে আর কি হবে একটু বসে বসে টিভি দেখি। আগেই বলে রাখি আমার এনালাইসিস করার মত কোন ক্ষমতা নাই বা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কথা বলার মানসিকতাও আমার নাই। তবে যা বাস্তবতা, তাই বলতে চাচ্ছি। তো, খেলার বিরতির দশমিনিট ধরে যে বিজ্ঞাপন তার ৭ মিনিটি দেখলাম সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি গাওয়া হচ্ছে। যেমন : রুপপুর বিদ্যুত প্রকল্প, পদ্মাসেতু, রাজধানীর নির্মানাধীন মেট্রোরেল প্রকল্প ও আন্ডার পাস রাস্তাসহ আরও অনেক কিছু। এটা ভাল, দেশের সরকার উন্নয়ন করছে সেটা সাধারণ মানুষকে দেখানো হচ্ছে কিন্তু আমার কাছে মনে হলো বেপারটা বেশি ঢাকঢোল পেটানোর মত।

ক্ষমতা থাকলে তার ব্যাবহার করতেই পারে এটা তাদের অধিকার।  কিন্তু আমাদের মত সাধারণ জনগনের প্রশ্ন হলো অন্য যায়গায় সেটা হলো এইযে, এতো বিদ্যুত উৎপন্ন করা হবে সেটা কাদের জন্য?  তা কি দেশের মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনার জন্য না আরো বেশি অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য?  যদি এই বিদ্যুতের আলো হয় জনগনকে আলোর দিকে আনার জন্য তাহলে আজ কেন যারা আলোকিত সমাজ গড়তে চাই সেই মেধাবীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য মার খেতে হচ্ছে?  কেনো তাদের  পবিত্র রক্তে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রঙিন হচ্ছে?  জানি, আমার এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ কেউ করবে না।

অবশ্য আমরাও আজ সুবোধ হারিয়ে ফেলেছি তা নাহলে আজ সকালে যখন দেশের পঁচিশ লক্ষ বেকার শিক্ষার্থীর দাবি আদায়ের জন্য মেধাবীরা কিছু ছাত্র নামের কুলাঙ্গারদের হাতে মার খেলো তখন কাউকে দেখলাম না তার প্রতিবাদ করতে এমন কি ঐ সকল নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের জন্য কারো চোখের একফোটা পানিও ঝরতে দেখলাম না। কিন্তু হাজার হাজার মাইল দুরের দেশ তারা খারাপ খেলার কারণে হেরেছে তার জন্য আমাদের মায়া কান্নার শেষ নাই।  এই সস্থা আবেগ আমাদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। তাই আসুন আমাদের এই সস্তা আবেগ বাদ দিয়ে একটু বিবেকবান হই। একটু নিজেদের সুবোধটাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।
সময় থাকতে সোচ্চার হই। এমনিতেই অনেক সময় পার হয়ে গেছে এভাবে আর কতদিন? 
কবি যেমন বলেছিলেন
"কে ধরিবে হাল
  কে তুলিবে পাল।"
তাই আসুন আর দেরি না করে এই পবিত্র মাতৃভূমিকে শকুনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এক এক জন নাবিকের ভূমিকা পালন করি। তা নাহলে, বড্ড বেশি দেরি হয়ে যাবে।

পঠিত : ১৩৪৬ বার

মন্তব্য: ০