Alapon

যদ্যপি আমার গুরু। একটি পর্যালোচনা

বিকৃতির ঝড়ে হারিয়ে গেছে সত্য ইতিহাস। খুজে পাওয়া যায়না আজ সোনালী সত্য ইতিহাস। সবার আগে বিচার করা হয় কে বাম, কে ডান, কে মুসলিম, কে অমুসলিম। তবেই পড়া হবে তার বই। আর লেখার বিচার করা হবে তার আদর্শ অনুযায়ী। সব ক্ষেত্রে আবার অসত্য নয়, আদর্শের ধারা সব জায়গায় থাকে। ব্যতিক্রমরে মধ্যে অন্যতম আহমদ ছফা। নিজে বাম থাকলেও ইতিহাসের ক্ষেত্রে সত্য ইতিহাস তুলে ধরেছেন বলে আমার বিশ্বাস।

“যদ্যপি আমার গুরু” বইতে তিনি সমকালিন একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরর সাথে তার কথপোকথন আলোচান করেছেন। যেখানে উঠে এসেছে সমকালিন বিভিন্ন প্রেক্ষাপট। উঠে এসেছে বিভিন্ন ব্যক্তির ভাল-মন্দ নানান দিক। 


প্রফেসর রাজ্জাক তিনি ব্যক্তিগতভাবে মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। এমনকি পাকিস্তানের পক্ষে থাকার যথেস্ট কারন তিনি ব্যক্ত করেছেন। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেছিয়েছেন, সাহিত্যের ক্ষেত্রে কিভাবে মুসলিম সাহিত্যকে কবর দেয়া হয়েছে। কিভাবে পশ্চিম বাংলাতে বাংলদেশীদের কে অবজ্ঞা করা হয়েছে তা তিনি দেখিয়েছেন। কলম চালিয়েছেন শক্ত হাতে।

বইটিতে অনেক না জানা কথাই উঠে এসেছে। কবি জসিম উদ্দিনকে কেন স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তাছাড়া রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগেও অনেক কবি সাহিত্যক ছিল, তাদের কথা কেন ইতিহাস বেমালুম ভুলে গেছে , সে প্রসঙ্গেও তিনি আলোকপাত করেছেন। কবি নজরুল নিয়েও তিনি দিয়েছেন অনেক মজার মজার তথ্য। 

শেখ মজিবুর রহামান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাষানি সম্পের্কে তিনি যেসব তথ্য দিয়েছেন তা কেবল অজানাই নয় একপ্রকার বিস্ময়!। এখনগার সময় হলে হয়তো রাজ্জাক সাহেবকে একদম ফাঁসিতে ঝোলানে হতো। সত্যিই আমরা ধারণা অমূলক নয়। 

ভারতের বুদ্ধিজীবি বলতে যাদের বুঝি, তাদের নিয়েও দিয়েছেন অনেক আশ্চার্য তথ্য। তাদের দেশপ্রেম ও জি হুজুর নিয়ে যেসব বলেছেন তা একপ্রকার ইতিহাসের ইতিহাস। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শরৎচন্দ্রসহ অনেক হিন্দু সাহিত্যিকদের জীবনের রমরমা তথ্য দিয়েছেন বইটিতে। যা খোদ ইতিহাসের কাছে অজানা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকালিন শিক্ষকদের ব্যক্তিগত জীবনে নিয়েও তিনি দিয়েছেন নানান রোমাঞ্চকর তথ্য। দিয়েছেন জয়নুল আবেদীন এবং সমসময়ীক কিছু শিল্পীদের অজানা ক্ষত ইতিহাসের ডংকা। জয়নুল আবেদীনকে তিনি শ্রেষ্ঠ শিল্পী বলেছেন, কারন তার ছিল অন্যরকম প্রতিভা। যাকে দেখা না অনুভব কার যায় কিন্তু ছোঁয়া যায়না। 

রাজ্জাক স্যার ব্যাক্তগত জীবনে ছিলেন সাদাসিদে ধরনের। তিনি পড়ুয়াদের খুব ভালবাসতেন। ছিলেন নিজেও বইয়ের পোকা। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ছিল সুন্দর পরিবার। দানের হাতটি তার ছিল অসাধারন । কোন চিন্তা ছাড়াই মানুষকে দিতেন টাকা। শিল্পী সুলতানের সাথে তার ছিল অগাধ সম্পর্ক। 

আহমদ ছফার সাথে প্রফেসর রাজ্জাকের সাথে মুক্তিযুদ্ধেও নানান বিষয়েও আলাপ হয়েছে। বুদ্ধিজীবি মুনির চেীধুরী হত্যা কান্ড নিয়েও তিনি দিয়েছেন একঝাঁক সত্যের কুন্ডলী। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা ছিল বাংলাদেশে। উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের নানান গল্প। নিজ চোখে হত্যা হতে দেখেছে অনেক মানুষকে। 

মোটকথায় আহমদ ছফা রাজ্জাক সাহেবকে নিয়ে লিখেছেন নানান গল্প। যেখনে উঠে এসেছে না-জানা অনেক ইতিহাস। যা পড়লে আধুনিক ইতিহাস অনেকটা অবান্তর মনে হবে। যে কেউ পড়তে পারেন। অবশ্যই না-জানা অনেক ইতিহাস ও গল্প পাবেন। যা আপনারে সামনের সত্য ইতিহাস জানতে সহায়তা করবে। 

মূলত বইটিতে সাহিত্যের রস কাকে বলে তা পাবেন। শুধুই কে লেখা নাকি রসের ঝুড়ি থাকে সাহিত্যে? দেশপ্রেম কাকে বলে জানতে হলে আহমদ ছফাকে পড়তে হবে। কলমের শক্তি কি জিনিস বুঝিয়েছেন তিনি। 

আজ পহেলা জুলাই এই গুনি সহিত্যিকের জন্মদিন। অসত্যের কালো থাবা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসুক সত্য সাহিত্য, সত্য ইতিহাস। নব্য সাহিত্যিকদের জন্য আহমদ ছফ একজন অগ্রপথিক, একজন সত্য ইতিহাস লিপিকার, একজন সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী মানুষ। “শুভ জন্মদিন“।
  

পঠিত : ৯১৫ বার

মন্তব্য: ০