Alapon

সম্পর্ক উন্নয়নেও প্রয়োজন প্রাকটিস!

ছোটবেলা থেকেই আমার ক্রিকেট পছন্দ; খেলতামও। খেলাধুলার মধ্যে এই একটি খেলাই পারি। বাকি আর কিছুই এই অধমের সাধ্যির মধ্যে ছিল না। ফুটবল দেখলেই গায়ে জ্বর আসতো...

ক্রিকেট পারতাম বলে ওটা নিয়ে সারাক্ষণ পড়েছিলাম। যার সুবাদে একসময় দলের দ্বাদশ খেলোয়াড় থেকে ওপেনিং ব্যাটসমান হয়ে খেলেছি।

যারা ক্রিকেট খেলে তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো ফেভারিট শট থাকে। আমার ছিল; কাভার ড্রাইভ। কাভার ড্রাইভ খেলে যে শান্তি পেতাম, ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েও সে শান্তি পেতাম না...

হঠাৎই রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে আমি প্রাকটিসে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। প্রায় দেড় মাস প্রাকটিসে যাই নি। হঠাৎ একদিন টিম ম্যানেজার কল দিয়ে বললেন- গুরুত্বপূর্ণ গেম আছে! কোনো অজুহাত শুনব না এবং গোস্তাকিও মাফও করব না।

উল্লেখ্য, এর আগে ম্যানেজার সাহেব গেম-এর কথা বললেই বলতাম, ‘গোস্তাকি মাফ হয়, জনাব! প্রয়োজনে গর্দান দিতে রাজি আছি কিন্তু এই গেম-টা খেলতে পারব না’!

গোস্তাকি যখন মাফ হল না- তখন খেলতে চলে গেলাম। টসে হেরে ব্যাটিং। ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে যথারীতি নেমে গেলাম। প্রথম দুই ওভারের মধ্যে ৭ বল খেলে মাত্র ২ রান নিজের নামের সাথে সংযুক্ত করতে পেরেছি। তৃতীয়তম ওভারের প্রথম বলটা অফ ষ্ট্যাস্পের খানিকটা বাহিরে হাফ ভলি ছিল, কাভার ড্রাইভ করার চেষ্টা করলাম ! কিন্তু ওমা, বলের সাথে ব্যাটের কোনো প্রেম নিবেদন এবং মিলন কোনোটাই হল না।পরের বলটাও ঠিক একই লেন্থের ছিল এবং ফলাফলও একই রকম হল; বল উইকেট কিপারের হাতে।

তৃতীয় বলটা আবারও একই লেন্থের ছিল কিন্তু বলটি ছিল আউট
সুইংগার। ব্যাট চালালাম বল সরাসরি সেকেন্ড স্লিপে চলে গেল; কট আউট হয়ে বাতাসে ব্যাট চালাতে চালাতে সহ-খেলোয়াড়দের দিকে যখন যাচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল- এই লেন্থেরই কত শত বল আমি কাভার ড্রাইভ করে বাউন্ডারি মেরেছি। আবার নিজের শট দেখেও অনেকবার মুগ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু আজ এই বলেই আমি আউট!

আউট হয়ে যখন পিছনে চুপচাপ বসে আছি তখন ম্যানেজার সাহেব বললেন- হতাশ হচ্ছিস কেনো! খেলা সহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফল হওয়ার জন্য চাই প্রাকটিস এবং পর্যালোচনা।

পরিচিত বিবাহিত ভাইদের মুখে যখন সংসার এবং বউ নিয়ে হতাশা আর নিরাষার কথা শুনি ঠিক তখনই ম্যানেজার সাহেবের সেই কথাগুলো আমার কানে বেজে ওঠে! জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রাকটিস দরকার। সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যও প্রাকটিস দরকার।

বিবাহের প্রথম বছর বউয়ের ‘কই গো’ ডাক শুনলেই মনে হয় যেন ঝরনার পানির মত অপরূপ মুগ্ধকর কোনো কিছু! দ্বিতীয় বছর এই ‘কই গো’ শব্দটাকে মনে হবে ময়ূরের ডাকের মত; কিছুটা কর্কশ কিছুটা প্রেমময়! আর তৃতীয় বছর ‘কই গো’ শব্দটাকে শুনলে মনে হবে বৈশাখের উত্তপ্ত দুপুরে আমার কানের কাছে কাক ‘কা...কা....কা...’ করছে।

এমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, সম্পর্ক উন্নয়নে আপনার বা আপনাদের মাঝে প্রাকটিস নেই। জীবনের প্রতিটা সম্পর্কই একটা করে খেলার মত। খেলায় উন্নতি করতে খেলোয়াড়দের যেমন প্রতিদিনই প্রাকটিস করতে হয় তেমনি সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সু-সম্পর্ক ধরে রাখতেও প্রাকটিসের দরকার হয়।

প্রাকটিস ছাড়া যেমন পার্ফেক্টলি কাভার ড্রাইভ মারা সম্ভব হয় না, তেমনি প্রাকটিস ছাড়া বউয়ের সাথে পার্ফেক্টলি সংসারও করা সম্ভব হয় না। অতএব, প্রাকটিসের কোনো বিকল্প নেই!

পঠিত : ৯৩৭ বার

মন্তব্য: ০