Alapon

জাতীয়তাবাদী চেতনার আদ্যোপান্ত...

বেশ কয়েকমাস আগে টিভিতে এক বুদ্ধিজীবির(!) টক-শো দেখছিলাম। বিভিন্ন ইশ্যুতে তিনি সুকৌশলে ধর্মকে আঘাত করছিলেন। উপস্থাপক তাই এক সময় জিজ্ঞেস করেই ফেললেন, “আপনি আগে বাঙ্গালী না মুসলিম?”
সেই বুদ্ধিজীবি জবাব দিলেন, “আমি আগে মুসলমান বললে তো ঐ পাকিস্তানেই ফিরে যেতে হচ্ছে। আমার ধর্ম আমি যে কোনো সময় পরিবর্তন করতে পারি। আমার এথনিসিটি (জাতীয়তা) আমি কখনো পরিবর্তন করতে পারি না।”

‘আপনি আগে বাঙ্গালী না মুসলিম?’- এ কথা বলে এর আগেও এদেশের প্রগতিশীলরা নিরীহ মুসলিমদের বিপাকে ফেলেছে। আচ্ছা! যদি বলি, “আমি আগে বাঙ্গালী, পরে মুসলিম”- কথাটার মানে কী? কথাটার অর্থ, আমি সবকিছুর ওপরে আমার জাতীয়তাকে স্থান দিচ্ছি। যে আল্লাহ আমাকে বাঙ্গালী করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর চেয়ে বাঙ্গালীয়ানাকে বেশি মর্যাদাবান করছি। 
একই সাথে কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, ন্যায়-অন্যায় সবকিছু আমি নৈতিকতা দিয়ে মাপব না, ধর্ম দিয়েও মাপব না, মাপব জাতীয়তাবাদের ফিল্টারে। কোনো ‘জাতীয় উৎসব’-এ যদি আমার ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু এসে যায়, আমি সেখানে তাও যাব। আগে দেশ, পরে ধর্ম। আমার দেশ সেরা দেশ। আমরাই সেরা জাতি। যদি কোনো দেশ আমাদের বিপক্ষে যায়, আমরা যদি তাদের সাথে ভুল করেও থাকি, তাও আমরাই ঠিক।

আমি জানি, অনেকেই এভাবে ভাবেন। তাদের আমি একটা প্রশ্ন করি। আপনার জাতীয়তার ওপর আপনার হাত ছিল না। কিন্তু ধর্ম আপনি বেছে নিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা(যদি তাঁকে বিশ্বাস করে থাকেন) আপনাকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন বাঙ্গালী হিসেবে, তাই আপনি বাঙ্গালী।

আচ্ছা! তিনি যদি আপনাকে একজন পাকিস্তানি হিসেবে পাঠাতেন? তখন নিঃসন্দেহে আপনার নৈতিকতাবোধ পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ থেকে উৎসারিত হতো। তাহলে, আপনি কি তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকতেন না বিপক্ষে থাকতেন? লাল-সবুজের পতাকা দেখলে হয়তো আপনার চেহারা ঘৃণায় কুঁচকে যেত। আপনি কি চাঁদ-তারা খচিত পতাকার সামনে গলা ছেড়ে ‘পাক সার জমিন’ গাইতেন? যারা আমাদের মা-বোনকে ধর্ষণ করেছে, ভাইদের হত্যা করেছে, তাদেরকে কি আপনাদের একজন বলে পরিচয় দিতে পারতেন? 
১৬-ই ডিসেম্বর আসলেই কি আপনি ‘লজ্জাজনক পরাজয়’-এর কথা স্মরণ করে চোখ-মুখ কালো করে বসে থাকতেন?

পঠিত : ১২৫৯ বার

মন্তব্য: ০