Alapon

বিড়ম্বিত

কালোমেঘে পুরো আকাশ ঢেকে গেছে। গ্রীস্মের এই দুপুর হয়েগেছে আষাঢ়ের কালো সন্ধা। বিদুৎ চমকাচ্ছে, দুনিয়া কাপানো বজর্পাতে শব্দ। বাতাসে রাস্তার সব ধূলা উড়তে শুরু করেছে। ধূলগুল মনেহয় বড়ো আনন্দে আছে। ধূলার কারণে আমার নাক-চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাথায় হাত দেওয়া যাচ্ছে না। ধূল পড়ে মাথার চুল কট বেধে গেছে। ধূলোর রং ধারন করেছে মাথার চুল, হাতের লোম, ছোট ছোট মোচ, চোখের পিশি। হাটতে খুব কষ্ট হচ্ছে যদি একটা বসার জায়গা পেতাম। কখন বৃষ্টি শুরু হয় তার তো আর ঠিক নেই। বৃষ্টি চেয়ে উড়ন্ত ধূলা বেশ বিরক্তিকর। কালোমেঘের আঁধারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। কোন একটা ঘর বা দোকান খুজব কিন্তু ধূলার কারণে তো সামনে ঠিক মতো চাইতেই পারছি না।চোখ ডলতে ডলতে হাটতাছি।

অনেকক্ষণ হাটার পর দেখলাম একটা  ছোট ঘর ঠিক ঘর না দোকান হবে। কিন্তু দোকানটা খোলা নাকি বন্ধ তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। দোকানটা বন্ধ কিন্তু ভিতরে লোক আছে। ভিতর থেকে বন্ধ করা। এখানেই ভালো জবে ভিতরে যেহেতু লোক আছে তাহলে থাকার জায়গায়ও হবে। বৃষ্টি শুরু হলে তো আর হাটা যাবে না। আমি দরজায় আস্তে ধাক্কা মেরেছি। ভিতর থেকে কে জানো বললো "কে ওখানে'? আমি বললাম 'চিনবেন না দরজাটা একটু খুলুন কথা আছে'। 'এই সময় কে আসলো আবার, সারাদিন কাম করলাম এখন এই ঠান্ডা আবহাওয়া একটু ঘুমাবো' এসব বলতে বলতে লোকটা দরজা খুললো। এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলো। লোকটা বললো 'বৃষ্টি পরে আগে ভিতরে ডুকুন পরে কথা বলছি'। আমি ভিতরে ডুকলাম। বেশ ভালেই। একটা কামারের দোকান। একপাশে কাজ করেন আরেক পাশে থাকে। ঘরে কোণে একটা ছোট চুলা। হয়তো ওখানেই রান্না করেন। একটা ছোট দোকান ঘরে এক ব্যক্তি এত কাজ করে তবুও ঘরটা বেশ পরিষ্কার। বিছানাটা একেবারে পরিপাটি। ঘরের ভিতরে অনেকগুল ঠাকুরের ছবি। লোকটা বৃদ্ধ। একেনারে যে তা কিন্তু না। আমি ভাবতাছি এরকম একজন লোক কিভাবে এত সুন্দর করে ঘরটাকে সাজিয়ে রাখে? আমি বিস্মিত হলাম। লোকটা সিগারেটে টান দিতে দিতে বললো-
'কি চাই ভাই'?
'ভাই আমার বাড়ি অনেক দূরে, বৃষ্টিতে ছাতাও নাই। আর এই ঝড়-বৃষ্টি মধ্যে হাটতেও খুব ভয় করছে। আর যেভাবে বর্জপাত হচ্ছে তাতে হাটাও বোধহয় ঠিক হবে না'।
'তো আমি কি করতে পারি'?
'যদি বৃষ্টির সময়টা আপনার এখানে থাকতে দিতেন'
'ওহ্ তাই। থাকতে দিব না কেন বৃষ্টিতে আটকে গেছেন। অবশ্যই থাকবেন। আসুন খাটের উপর বসেন'।

আমি আবারও বিস্মিত হলাম। লোকটা আমাকে চিনে-জানে না, আমার পরিচয় জানে না এমনকি আমরা নামটা পর্যন্ত জানে না। সে আমারে আশ্রয় দিল। সত্যি পৃথিবীতে এখনও মানুষ রূপের আসল মানুষ এখনও আছে। কিন্তু আমাদের সমাজে এসব মানুষদপর আমরা কোন মূল্য দেই না। কেননা তাঁরা সমাজের নিম্ন শ্রেণির মানুষ। সমাজে তাদের কথার বা কাজের কোন মূল্য দেওয়া হয় না। তাদের মানুষ রূপেও চিনেনা। তাদের চিনে কামলা রূপে। আসলে তারাই যে মানুষ। তাদের জন্যই যে আমাদের সমাজ বেঁচে আছে তা আমরা মানতে চাই না। তাদের মন যে কতোটা কোমল তা আমরা বুঝতে চেষ্টা করি না। আমরা চিনি অর্থ। তাই মানুষ রূপের অমানুষদের বসাই ক্ষমতার আসনে। তাদের বসাই বিচারপতির আসনে। আসলে ঐ কামলা শ্রেণির লোকেরাই যে প্রকৃত মানুষ সেটাই আমরা বুঝি না বুঝতে চেষ্টাও করি না। এটাই আমাদের ব্যর্থতা।

আমি খাটের উপরে বসলাম। লোকটাও বসলো। লোকটা বসতে বসতে আরেকটা সিগারেট ধরালো। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলো-
'আচ্ছা আপনার নাম কি'?
'আমার নাম অপু, আপনার নাম কি'?
'আমার নাম বিড়ম্ভ'
'বিরম্ভ? এটা আবার কেমন নাম'?
'আমার পুরা নাম বিড়ম্বিত, প্রকৃত নাম শ্রী নান্টু দাশ'।
'বিড়ম্বিত অর্থ তো দুঃখপ্রাপ্ত, এটা নাম হয় কিভাবে'?
'আমি দুঃখপ্রাপ্ত তাই আমার নাম বিড়ম্বিত। এ নামটা হওয়ার যোগ্যতা আমার আছে। ছোট বেলায় যখন হোটেলে কাজ করতাম তখন এক স্কুল মাস্টার আমার নাম দিয়েছিল বিড়ম্বিত। আমি দঃখপ্রাপ্ত ছিলাম তাই'।
'কিন্তু আপনাকে দেখে তো বেশ সুখি মনে হচ্ছে'
'ভাই কষ্ট তো শরিরে না, কষ্ট তো মনে। মনের কষ্ট কখনও দেখা যায় না'।
'ছোট বেলা থেকে কি সুখের দেখা মেলেনি'?
'মিলেছিল ক্ষণিকের জন্য। যখন প্রেমে পরেছিলাম তখন নিজেকে সুখি মনে হতো। আবার যখন প্রেম হারালাম জীবনের মেঘটা আবার এসে জীবনকে আঁধার করলো। এরপর একবার সুখ পেয়েছিাম যখন মেয়েটা জন্মাইছিল। কিন্তু আমার নিয়তি এমনই যে সে সুখও কপালে সইলো না। বড় হওয়ার পর দেখলাম মেয়েটা আমার বোবা। ছোট বেলায় কে বুঝেছে যে মেয়েটা এমন হবে। ঠাকুর যে কি করে আমাকে নিয়ে আমি নিজেই বুঝি না'।
'ছেটবেলা থেকেই দুঃখি কেন আপনি? মায়ের একটু ভালোবাসাও কি কপালে জুটে নায়'?
'আচ্ছা তাহলে আমার ছোট বেলার জীবন থেকেই আপনাকে বলা শুরু করি। কষ্টের কথা বললে নাকি কষ্ট কমে'।

আমি যখন ছোট এই ধরুন ৫-৬ বছর বয়স হবে। আমাবস্যার এক রাতে বাবা-মা আর বড় ভাইটা কালা জড়ে মারা গেল। আমি সেদিনও কাঁদতে পারিনি কিন্তু দুঃখ পেয়েছি। বড় ভাই আমাকে খুব ভালোবাসতো। গঞ্জে গেলেই আমার জন্য বাতাসা নিয়ে আসতো। প্রায় প্রতিদিনই আনতো। আমা য় পিঠে উঠিয়ে চার হাত-পায় হাটতো আর আমি বলতাম 'দৌড়া ঘোরা জোড়ে দৌড়া'।  আমি কখনও হাত দিয়ে ভাত খেতাম না। ভাই আমাকে ভাত খাইয়ে দিত। তখন আমি মক্তবে পড়তে যেতাম সবার চেয়ে ভালো ছাত্র ছিলাম। ভাইয়া সবার কাছে 'বলতো তোমরা দেখ আমার ভাই একদিন অনেক বড় শিক্ষিত হবে। গ্রামে গাড়ি নিয়ে ডুকবে আমার ভাই। তখন ও আমাকে দু'টা হালের বলদ কিনে দিবে, জমি কিনে দিব, ও শহরে চাকরি করবো আর আমি অনেক বড়ো চাষি হবো। 

কিন্তু নিয়তি কতই নিষ্ঠুর। আজ আমি কোথায় আর আমার ভাইয়া কোথায়। কোথায় আমার ভাইয়ার স্বপ্ন। সে স্বপ্ন আজ মাটির সাথে মিশে গেছে।

এরপর আমার আর মক্তবে যাওয়া হয়নি। কিছুদিন মামা বাড়ি ছিলাম। হঠাত্ মামি একদিন বললো 'আর কত বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো? এবার একটু কাজ করে খা। বাপ-মা মরে তো ভুত হয়েছে। আর তোরে শয়তান বানিয়ে রেখেগেছে আমার কাঁধে।আর বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না'। এরপর মামা বাড়ি থেকে চলে এসেছে। যোগ দিয়েছি একটা চায়ের দোকানে। ওখানে সারা দিন কাজ করতাম। কোন টাকা দিত না শুধু খাওয়াতো আর থাকতে দিত। প্রচুর কাজ করাতো। কষ্ট হলেও করতে হতো পেটের দায়। মামা একবার নিতে আসছিল। চোখের জল মুছতে মুছতে বলেছিল 'চল বাপ তোর কাজ করতে হবে না তুই আমার ঘরে কাজ না করে খাবি। আর সারাদিন ঘুরে বেড়াবি'। আমি যাইনি মামা আমাকে খুব ভালোবাসে আমি জানতাম কিন্তু মামার অবিরাম ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যেত মামির এক ফোটা ঘৃণায়। মামা আমাকে প্রতিদিন এসে দেখে যায়। আমার সারা দিনের কষ্ট মুছে যেত রিতার একটু মুচকি হাসি দেখলেই। 

রিতা দোকানের মালিকের একমাত্র মেয়ে। আমার বয়সিই। খুব ভালো বন্ধু ছিল আমার রিতা। রিতার বাবা-মা কেউ সহ্য করতে পারতো না আমার সাথে রিতার মেলামেশা। রিতাকে একদিন প্রচুর মেরেছিল ওর বাপ আমার সাথে মেশার কারণে। রিতা তখন ১০ম শ্রণিতে পড়ে। স্কুল ছুটির পর ও আমার সাথে নৌকায় ঘুরছিল বিলে। কে যেন দেখে ওর বাপের কাছে নালিশ করছিল। সেদিন রাতেই আমরা দু'জন প্রথম রাতে দেখা করছিলাম।  ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করলো। আমি ওরে ভালোবাসতাম এটাই জানতাম, কিন্তু ও যে আমাকে ভালোবাসতো তা জানতাম। আমি ওরে বললাম 'এখন যা দিনে কথা বলব নদীর ঘাটে বসে'।ও চলে গেল সেদিন রাতে আমার আর ঘুম হলো না। এরপর থেকে ওর সাথে নদীর ঘাটে প্রতিদিন কথা হতো। কাজ ফাকি দিয়ে ওর সাথে কথা বলতে যেতাম। এভাবে চলতে থাকে তিনটি বছর। আর এই তিনটি বছরই ছিল আমার সুখের, শান্তির দিন। হাসির দিন, আনন্দের দিন। কিন্তু এ আনন্দও আমার কপালে আর সইলো না। এর মধ্যে সারা গ্রামে ছড়িয়ে পরে আমাদের  ভালোবাসার কথা। ওর বাপ ঠিক করছে ওর বিয়া দিব। ছেলে খোজা শুরু করে দিয়েছে।

এরপরও আমরা দেখা করতাম। রিতা প্রতিদিন আমাকে বলতো 'চলো না আমরা পালিয়ে যাই। অনেক দূরে চলে যাবো যেখানে আমাদের কেও খুজে পাবে না। সেখানে আমরা একটা সুন্দর ঘর করব। সুন্দর একটা সংসার হবে আমাদের। আমাদের একটা সন্তান থাকবে। চলো না পালিয়ে যাই'। আমি কিছু বলতাম না। আমি ভাবতাম আমি ওকে নিয়ে কি খাওয়াবো কোথায় রাখব। আর কোথায় যে চলে যাবো সে টাকাও তো আমার কাছে নাই। ভালোবাসার মানুষকে কিভাবে কষ্টে রাখব আমি। আমি তো ওর অভাবের কষ্ট সহ্য করতে পারবো না। আবার নামলো তিন বছর আগের দিনগুলর মতো কষ্ট। এ কষ্ট সেসব কষ্টের চেয়েও কষ্টের। 

পাশের এলাকার একটা ছেলের সাথে রিতার বিয়ে ঠিক হলো। ছেলে শিক্ষিত, ঢাকায় বড়ো চাকরি করে। টাকা পয়শাও আছে। আমি ওর বিয়ের কথা খুব সহজেই মেনে নিলাম। রিতা ওখানে খুব সুখে থাকবে। অনেক ভালো থাকবে। ওকে অভাবের কষ্ট সহ্য করতে হবে না। ভগবান যা করে ভালোর জন্যই করে। 

বিয়ের আগের রতে রিতা আমার ঘরে এলো। এসেই জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। আমি নিজেকে শক্ত করলাম
 চোখের জল তো আর আটকে রাখা যায় না। সে আপন ইচ্ছায়ই গড়িয়ে পরতে লাগলো। আমি চোখের জল মুছে রাগ্নিত গলায় বললাম 'এখান থেকে চলে যা। কাল তোর বিয়ে'। ও দাড়িয়ে রইলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো  'তুই কি আমাকে ভালোবাসিস না'? আমি নিচের দিক চেয়ে বললাম না। আমি না বলার কারণ ছিল ও যাতে আমার উপর রাগ করে বিয়েটা করে ফেলে। আমি না বলার সাথে সাথে রিতা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। আমি দরজা বন্ধ করে বসে আছি। কাঁদে চাইনি তবুও কাঁদছি। কেন যানি মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা করেছে আপন ইচ্ছায় মরবো না। এ জীবনে কতোটা দুঃখ আছে দেখব। দেখতেই জবে আমাকে। 

সেরাতে আর ঘুম হলো না। সারা রাত বসে বসে কাটিয়ে দিয়েছি। সকাল হয়ে গেছে, মসজিদে আজান হচ্ছে, পাখিরা ডাকতে শুরু করছে, চারদিক ফর্সা হতে শুরু করছে, পূর্ব আকাশে সূর্য উঠেছে। আজ আমার পায়রাটা কেমন যেন ভিন্ন গলায় ডাকছে। কিছুক্ষণ পর পর আমার সামনে এসে দাড়িয়ে ভিন্ন এক সুরে ডাকছে। আবার উড়ে যাচ্ছে। আবার ফিরে আসছে। মনেহলো ও আমাকে কিছু বোঝাতে চাচ্ছে কিন্তু আমি বুঝতেছি না। 

আমি মুখ-টুক ধুয়ে খেতে বসলাম। আজ আর কাজে যাবো না। আজ তো রিতার বিয়ে। আমাকে ছেড়ে চলে যাবে চির দিনের জন্য। হঠাত্ বাসু এসে বললো বিরম্ব ভাই একটু রিতা দিদিগো বাড়ি চলো কাজ আছে। ভাত খেতে হবে না দ্রুত চলো। আমি খাবার রেখে চলে গেলাম। ওদের বাড়ির সামনে যেতে শুনলাম কান্নার শব্দ। কে যেন চিৎকার করে কাঁদছে। গলাটা রিতার মায়ের মতো। বাড়ির ভিতরেও অনেক মানিষ। কি হয়েছে তখনও বুঝে উঠে পারলাম। হঠাত্ রিতার মায়ের কান্নার সাথে আওয়াজ আসলো ' আমার রিতা চলে গেল, আমার মা চলে গেল'। আমি দৌড়ে বাড়ির ভিতরে গেলাম। আমি কাঁদতে পারছি না। শুধু কপোল গড়িয়ে চোখের জল পরছে। কান্না তো সেই কবেই ভুলে গেছি। আমার সামনে রিতার লাশ। বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে। আমি কিছু বলতে পারলাম না কিছু করতে পারলাম। চোখের জল মিছতে মুছতে ওদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলাম। বেশি কষ্ট হচ্ছে আমি মরতে পারলাম না। রিতার লাশ কবর দেওয়ার আগে আমি গ্রাম ছেড়ে চলে আসলাম।সবকিছু ছেড়েছি ছাড়তে পারিনি মায়া। আর আমায় ছাড়েনি দুঃখ। 

লোকটার কথা শুনে আমি চুপ করে রইলাম। কি বলবো? বলার মতো ভাষা আমার নেই। আবার প্রশ্ন করতে শুরু করলাম। 
'তো সব তো শেষ। এখন তো আর সেরকম ভাবে দুঃখ থাকার কথা না'।
'যেহেতু আমি বিড়ম্ব, সেহেতু দুঃখ তো আমার থাকবেই'।
'এখন কি বিয়ে করেছেন'
'করেছিলাম। নিজের ইচ্ছায় না মামার ইচ্ছায়'।
'আপনার মামা এখনও বেঁচে আছে'?
'না, কিছুদিন আগে মারা গেছেন'!
'ওহ্'
'মামা আমার হাত ধরে চোখের জল ফেলে অনুরধ করেছিল বিয়ে করার জন্য, তাই করেছিলাম'।
'তো আবার দুঃখ কিসে? ছেলে-সন্তান নিয়ে তো মনে হয় ভালোই আছেন'।
লোকটা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো
'হ্যা ভাই ভালোই আছি'।
'আপনার সন্তান কয়টি'?
'একটি ছেলে'।
'ছেলেটি কোন ক্লাশে পড়ে'?
'পড়া-লেখা করে না'।
'পড়া-লেখা করেনা মানে'?
'ছেলেটা প্রতিবন্ধী'
আমি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। তারপরও একটা প্রশ্ন করলাম।
'আপনার ছেলে কোথায়'?
'একটা ঘর আছে কিছু দূর সামনে গেলেই। ওখানে থাকে।
'ওখানে কার কাছে থাকে? ওর মায়ের কাছে'?
'না ওর মা নেই। ও হওয়ার এক বছর পর ওর মা মারা যায়। তারপর থেকে ঐ ঘরটায় ও থাকে শুধু ও থাকে না, ওর সাথে ওর আরো সঙ্গি আছে। একটা চারজন মেয়ে ওদের দেখা শুনা করে। আমি যা কামাই করি সব টাকা ওখানেই খরচ করি।'

বৃষ্টি থেমে গেছে। সন্ধা নেমেছে, সন্ধা তারাটা টিপ টিপ করে জ্বলছে, পাখিদের ডাক থেমে গেছে, আকাশের বুকে অপরূপা চাঁদ উঠেছে। কিন্তু বিড়ম্বর দুঃখ রয়েই গেছে। তার বুকে সুখ জাগেনি। শুধু আঁধার নেমেছে তার বুকে। ♦

পঠিত : ১৮৯৫ বার

মন্তব্য: ০