Alapon

মূখের কথা: হতে পারে সফলতার বাহন অথবা শাস্তির কারন

মানুষের জীবনে চলার পথে অপরিহার্য কাজ হচ্ছে কথা বলা। মনের ভাব প্রকাশের সবচেয়ে বড় মাধ্যম কথা। মানুষ যে কাজ টি ই করুক তার দুইটা ফল আছে ভাল হলে পুরস্কার আর মন্দ হলে শাস্তি। তেমনি মন্দ কথা বললে শাস্তি পেতে হবে, ভাল কথা বললে পুরস্কার পাবে।

মানুষের সকল কথাই সংরক্ষণ করা হচ্ছে।এখনকার বিজ্ঞানও বলছে যে, সমস্ত কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে,অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে তা শনাক্ত করা যেতে পারে।  আল কোরআনে সূরা ক্বাফ ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন যার অর্থটা এরকম, “(ক্ষুদ্র) একটি শব্দও সে উচ্চারণ করে না, যা সংরক্ষণ করার জন্য একজন সদা সতর্ক প্রহরী তার পাশে নিয়োজিত থাকে না।” 

কথার সাথে সাথে কথার প্রভাবও সংরক্ষণ করা হয়।কেউ যদি কারো কথায় বা কথার প্রভাবে ভাল কাজ করে তবে যে কথা বলল সে পুরস্কার পাবে আর যদি খারাপ কথায় খারাপ কাজ করে তবে সে শাস্তি পাবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সূরা ইব্রাহীমের ২৪ নং আয়াতে বলেন-"তুমি কি দেখনা আল্লাহ তায়ালা কেমন উপমা বর্ননা করেছেন, ভাল কথা হচ্ছে একটি ভাল গাছের ন্যায়,তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উথিত।"
২৬ নং আয়াতে বলেন-`` এবং মন্দ কথার উদাহরন হল মন্দ গাছের মত।একে মাটির উপর থেকে উপরে নেয়া হয়েছে। এর কোনো স্থিতি নেই।

কথা তিন প্রকার:
    (১) ভাল কথা।এর জন্য রয়েছে পুরস্কার।
    (২)মন্দ কথা।এর জন্য রয়েছে শাস্তি।
    (৩)ভাল ও নয় মন্দ ও নয়।যেমন, ভাত খাব,বাজারে যাব, ইত্যাদি। এধরনের কথা গুলো আমলনামায় থাকবে না।
কারো কথায় কেউ যদি প্রভাবিত নাও হয় তবুও কথার প্রতিদান সে পাবেই।

একটা প্রবাদ আছে, ব্যক্তির কথা জ্ঞানের মাপকাঠি।
কথা বলা দেখেই বুঝা যায় কে জ্ঞানী কে মূর্খ।
জ্ঞানীরা:শুনে বেশী, বুজে বেশী, বলে কম।
মূর্খরা:শুনে কম, বুঝে কম, বলে বেশি।
নিরব থাকাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ।
মূর্খদের সাথে তর্ক না করার ব্যাপারে সূরা ফুরকানের ৬৩ নং আয়াতে এসেছে-"রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্র ভাবে চলাফেরা করে, এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে,তখন তারা বলে, সালাম।"

ভাল কথা মানুষের সম্মান বৃদ্ধি করে।আল কোরআনে সূরা ফাতিরে ১০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-"কেউ সম্মান চাইলে জেনে রাখুন, সমস্ত সম্মান আল্লাহরই জন্য।তারই দিকে আরোহন করে সৎ বাক্য এবং সৎ কর্ম তাকে তুলে নেয়।যারা মন্দ কাজের চক্রান্তে লেগে থাকে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি,তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ হবে।"

মন্দ কথা মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। প্রিয় রসূল সা .বলেছেন :“ ভাষার ফসলেই মানুষকে জাহান্নামে উপুড় করে নিক্ষেপ করবে।”(তিরমিযি )
তিনি আরো বলেছেন : “ মুসলিম সে,যার ভাষা ও কর্ম থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে ।” (সহীহ বুখারি )
প্রিয় নবী সা. আরো বলেছেন : “ মুসলমানের সুন্দর বৈশিষ্ট্যগুলো মধ্যে রয়েছে অর্থহীন কথা কাজ ত্যাগ করা।” (তিরমিযি )

মহান আল্লাহ আল কুরআনে মন্দ কথার ব্যাপারে কী বলেছেন :
১. তোমরা কেউ কারো গীবত ( নিন্দা) করোনা। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে ? ( ৪৯:১২)
২. তোমরা পরস্পরের বদনাম করোনা , বিকৃত উপাধিতে ডেকোনা। (৪৯ : ১১ )
৩. মানুষ মন্দ কথা বলে বেড়াক ,তা আল্লাহ পছন্দ করেননা। (৪: ১৪৮ )
৪. হে ঈমানদারেরা! তোমরা এমন কথা কেন বলো ,যা করোনা। (৬১ :২ )
৫. মিথ্যা কথা বলা থেকে আত্মরক্ষা করো। (২২:৩০)
৬. ধবংস এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে যে, মানুষকে ধিক্কার দেয় এবং মানুষের নিন্দা করে বেড়ায়। ( ১০৪ :১ )

মহানবী সা. মন্দ কথা সম্পর্কে কী বলেন ? হ্যাঁ, তিনি বলেছেন :
১. মুমিন সে নয় ,যে উপহাস করে অভিশাপ দেয় , অশ্লীল ভাষায় কথা বলে এবং যে বাচাল। (তিরমিযি)
২.মিথ্যা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া কবীরা গুনাহ্‌ ।(বুখারি ও মুসলিম)
৩. যার মধ্যে চারটি স্বভাব আছে সে মুনাফিক : আমানত রাখলে খিয়ানত করে ,কথা বললে মিথ্যা বলে ,অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে এবং বিবাদ লাগলে গালাগালা করে। (সহীহ বুখারি)

সর্বদা এই দৃঢ়চিত্ত বিশ্বাস রাখা উচিত যে সে যা কিছু বলে তার জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে এবং ভালো কথার জন্য সে পুরস্কৃত হবে ও মন্দ কথার জন্য শাস্তি পাবে।যদি সামান্য সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা কথাবলি তবে কথার মত একটা সাধারন কাজই হতে পারে আমাদের মুক্তির উপায় অন্যথায় হবে শাস্তির কারন।

"সেরা ব্লগ প্রতিযোগিতা- জুলাই'১৮"


পঠিত : ১৪১১ বার

মন্তব্য: ০