Alapon

প্রথম দেখা

ছোটবেলা থেকেই আমি মামা বাড়ি একটু বেশিই বেরাতাম। আর বেরানোর এই একটা স্থানই আমার ছিল। তাই ছুটি পেলেই মামা বাড়ি আসতাম। এখানে আসার মূল কারণ ছিল এখানে আমার কিছু বন্ধু আছে। যাদের সাথে আমি সারাক্ষণ দুষ্টামি করতে পারতা। ওরা ছিল রফিক, বেল্লাল, ফয়সাল, আর আমি এ চার জন এক সাথে হলে দুষ্টমিতে আর কমতি দিতাম। কিন্তু এমন কিছু করতাম না যেটা কোন মানুষের মনে আঘাত করে। 

তখন শীতকাল। পরিক্ষা শেষ তাই মামা বাড়ি চলে গেলাম। মামা বাড়ি শীতে গেলে প্রায় সব সময়ই ব্যাডমিন্টন খেলতাম। সেদিন খুব আনন্দের সাথে খেলতে ছিলাম। একদিকে খেলায় জিতছি অন্যদিকে মামি খেজুরের রশের শিরনি রান্না করছে। খেলা শেষ হবার পর আমি ঘরে এসে বসলাম।খুব ক্লান্ত লাগছে। এক গ্লাস পানি পান করলাম।আহ্ কি যে শান্তি।এরই মধ্যে নানি যেন কি বললো কে যেন আসবে এরকম কিছু।হ্যা কে যেন কাল আসবে।আমার আবার খুব কৌতুহল সব বিষয়ে।এখন আমার জানতেই হবে কে আসবে?

নানির পিছনে হাটতে শুরু করলাম আর জিগাইতে রইলাম নানি কে আইবে? কও না নানি কে আইবে? নানি আচমকা কইল, তোর ঐ বাসার মামায় আইব। নানিরে আর কিছু জিগাইলাম না। ঐ ঘরের মামা কে তারে আমি চিনিনা। আমি তো জানি অই বাসায় ফয়েজ মামা ছাড়া আর কেউ নেই। তাহলে এই মামাটা আবার কে? এই ১৪ বছরে আমি তারে একবারও দেখিনি? এতো খুব মজার ব্যাপার আমার মামাদের আমি চিনিনা।  মামির কাছে জিগাইতে হবে কে এই মামা। মামির কাছে গিয়া বললাম, মামি ঐ বাসায় আমার কোন মমা আছে?

'হুম আছে',
'নাম কী'?
'শিভলু'
'সে কি ফয়েজ মামার ভাই'?
'হ্যা, ফয়েজ দাদার ছোট ভাই'
'আমি তাকে চিনি না কেন'?
'কেমনে চিনবা, আমিই তো ভালো করে চিনিনা। আমার বিয়ের পরই সে বাড়ি থেকে রাগ করে চলে গেছে'।
'আচ্চা মামি সে কি বিয়ে করেছে'?
'একটা মেয়েও আছে ৯ম শ্রেণিতে পড়ে'।


আহ্!আমি আনন্দে আত্মহারা হয়েগেলাম। মামা আসবেন সে জন্য কিন্তু নয়। এই আনন্দের মূখ্য বিষয় হলো মামার মেয়েও আসবে। কেন যেন মনেহলো একটি মেয়ে আসবে শুনে সেই মেয়েটির প্রেমে পরে গেলাম। নাম জানিনা, কখনও দেখিওনি তাহলে এরকম কেন হয়? সেদিন সারাটা রাত ওরে নিয়া স্বপ্ন দেখিছি। ওরে আমি কখনো দেখিনি কিন্তু মনে মনে ওর ছবি একে নিয়েছি। স্বপ্ন দেখার ফাকে ফাকে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে কখন যে,সকাল হবে। স্বপ্ন গুল একটাও শেষ পর্যন্ত দেখতে পারি না। সকালে ওরে দেখব এই চিন্তাই ঘুম বার বার ভেঙ্গে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আধার কেটে সকাল হয়েগেল। পাখিরা ডাকতে শুরু করল। আঁধার কাটলেও কাটেনি কিয়াশা। কয়াশায় চারদিক সাদা। মনেহচ্ছে পৃথিবী ছেড়ে চলে এসেছি অন্য কোন গ্রেহে। অজানা সেই মেয়েটির খোজে চলে এসেছি। আমি তাড়াতারি ফ্রেশ হলাম। ওরে আগিয়ে নিয়ে আসতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু যেতে পারছি না কেউ যদি কিছু মনে করে। এমন সময় নানি এসে বললো চা খেয়ে খেয়া ঘাটে যেতে। আমি বললাম কেন? কেন মানে কি তোর মামা আসতেছে তা কি তুই জানো না? আমি যেনেও না জানার ভান করলাম। 

চা খেয়ে আনন্দের সাথে দৌড় দিলাম। এর আগের দিন বিকালে খেলার সময় পায়ে ব্যথা পেয়েছিলাম কিন্তু আনন্দের মাজে সে ব্যথা হারিয়েগেছে। দৌড়ে গিয়ে খেয়া ঘাটে দাড়িয়ে রইলাম।কি শীত কুয়াশাও পড়েছে অনেক। কুয়াশায় কিছুই দেখাচ্ছে না। আমার পাশ থেকে মানুষ হেটে যাচ্ছে তাও আমি দেখতে পারছি না। বড়ো গাছগুল দনবের মতো লাগছে। কুয়াশায় আমার চুল ভিজে এমন হয়েছে যে মনেহয় চুল পেকে গেছে। হাতের লোমগুলরও এই একই অবস্থা। নিজেকে খুব বৃদ্ধ লাগছে। নিজেকে বৃদ্ধ ভাবার মধ্যেও একটা আনন্দ আছে। কেননা বৃদ্ধদের সবাই সম্মান করে তাদের মানেও, মানা উচিতও।


নদীর ওপার নাও আছে কিনা তা দেখা যাচ্ছে না।ত্রিশ মিনিট ধরে দাড়িয়ে আছি কিন্তু কারো সারা পাচ্ছি না। কুয়াশা কেটে যেতে লাগলো। রোদ উঠতেছে। শীতকালের এই সময়টা বেশ আনন্দময়। যখন হালকা রোদ উঠে তখন কমষকরা জাস্তে হাতে মাঠে যেতে শুরু। দল বেধে হাটে তারা হাটার সময় অনেক গানও হায়। কেউ আবার খেজুর গাছে রস নামাতে উঠে।

রোদ উঠে গেছে।ওপার থেকে একটা নাও আসছে।এটাই বোধহয় মামারা আসছে।কিন্তু আমি মামাকে চিনি না সেও আমাকে চিনেনা। কিভাবে বুঝবো যে মামারা কোনটায়? 

একটা নাও এসেছে কিন্তু নাও তে তিন দলের মানুষ ছিল।প্রত্যেক দলেই একটি করে মেয়ে।এখানে কে মামা তা চিনতে পারলাম না।তারা ভ্যানে চলে গেল।আমি বসে রইলাম।কিছুখন বসে থেকে বাড়ি ফিরে এলাম।এসে দেখলাম মামারা এসেছেন।মামা আমাকে ডাক দিলেন..তোমার নাম কি?

নিলয়,

তুমি কি হালিমার ছেলে?

হ্যা,কিন্তু আপনি চিনলেন কেমনে?

তোমার চেহারার গঠণ ওর মতো তাই চিনেফেলেছি।

ওহ্,

তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?

১০ম শ্রেণি।আচ্চা আপনার নাম কি শিভলু?

হ্যা,

তাহলে আপনিই আমার শিভলু মামা

হ্যা,

মামার সাথে অনেক সময় ধরে কথা বলতেছি কিন্তু মামার মেয়ে কই?মামা কথা বলতেছে আর আমি শুধু হ্যা সূচক মাথা নাড়াচ্ছি আর মামার মেয়েকে নিয়ে ভাবছি।মামির সাথেও দেখা হলো পরিচয় হলো কিন্তু আমি আমার স্বপ্নের রানিকে খুজে পাচ্ছি না।মামা আর মামির যে রকমের চেহারা তাতে তাদের মেয়ে বোধহয় আমার স্বপ্নের চেয়েও আরো অনেক সুন্দর হবে।দরজার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওকে নিয়ে ভাবছি।আর একা একা মুচকি মুচকি হাসছি। এরই মধ্যে আমার সামনে দিয়ে একটা মেয়ে হেটে গেল। পড়নে গোলাপি রঙ্গের একটি জামা।মেয়েদের পোষাকের নাম আমি জানি না তাই জামাই বললাম।এটাই বোধহয় মামার মেয়ে কিন্তু চেহারাটা দেখতে পেলাম না। বোধহয় না এটাই। কেননা বাড়িতে তো আর মেয়ে মানুষ নাই। এটাই মামার মেয়ে।

পরির মতো উড়ে গেল আমার সামনে দিয়ে।আমি পিছন পিছন হাটতে লাগলাম।ওর চেহারা আমাকে দেখতেই হবে।ও একবারও পিছনে তাকাচ্ছে না।আমিও পিছন পিছন হাটতেছি।ও একটা রুমে ডুকে গেল আমি ডুকবার আগেই দরজা বন্ধ করে দিল।এবারও দেখতে পারলাম না।আমি রুমটার সামনে দাড়িয়ে রইলাম।যখনই বেড় হবে আমি ওর সামনে গিয়া দাড়বো।ত্রিশ মিনিট ধরে দাড়ি আছি।কিন্তু বেড়হচ্ছে না।আমার ধর্য হারিয়ে যাচ্ছে তবুও নিজেকে একটু নিয়নন্ত্রণে রাখলাম।আচমকা আমার সামনে এসে যেন চাঁদটা দাড়িয়েছে।না সরি চাঁদ বললে ভুল হবে চাঁদের চেয়েও অনেক সুন্দর।ওর ঠোঁট দুট যেন কমলা লেবুর কোয়ার মতো।চাদঁটা ওর নকের মতোও সুন্দর না।দেখে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলাম চোখের পলকও বন্ধ হয়ে গেল অচমকা আমি বলে উঠলাম "তুমি হাসিলে জগৎটা হাসিয়ে উঠে"

এই আপনি কি বললেন?

না মানে কিছু না।আপনার নামটা জানতে পারি কি?

হ্যা পারেন,

তোহ্ বলুন,

লিভা

এটা আবার কেমন নাম

নামতো নাম।আচ্ছা আপনার নাম কী?

নিলয়।আপনি খুব সুন্দর!

হইছে তেঁলবাঝি বন্ধ করুন।

আপনি কোন ক্লাশে পড়েন

তা দিয়ে আপনার দরকার কি

এই বলে চলে গেল।মেয়েটা খুব রাগি।রাগি মেয়ে আমার কাছে খুব ভালো লাগে।আমি স্বপ্নে যা ভাবেছি তার চেয়েও আরো অনেকে সুন্দর।

সারাটা দিন ওর পিছন পিছন হেটেছি।ও যদি কোথাও বসে আমি দূর থেকে ভ্যাবলার মতো দাড়ি দাড়িয়ে দেখেছি।ও আমাকে লক্ষ করেছে। কতোক্ষুণ পর পর পিছনে তাকিয়ে একটা হাসি দিচ্ছে।ওর হাসিতে যেন মুক্তা ঝড়ে।ওর দাতগুল শঙ্খের মত সাদা।দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখছি কাছে গিয়ে কথা বলার মত সাহস হচ্ছে না।খুব ইচ্ছে হচ্ছে ওকে নিয়ে বিকালে ঘুরতে যাব।গ্রামের হাট আজ হাটাও দেখিয়ে নিয়ে আসব।কিন্তু পকেটে টাকা আছে মাত্র ২৫ টাকা।এতে তো রেজাউল করিম সাহেবের হাত পাখা হবে।তাও মনে হয় হবে না।হাত পাখার দামও বেড়ে গেছে।যাক ছাদের ভাইর পপকর্ন আছে বাকি খাওয়া যাবে।বিকালে ও একা একা হাটছিল চোখ দেখে বুঝলাম ও মনে হয় ঘুরবার জন্য একটা মানুষ খুজে।কিন্তু মানুষ তো পাবে না।কেননা এ বাড়িতে আমি ছাড়া আর ঘুরবার মানুষ নেই।এ বাড়িতে কোন মেয়েও নেই।আমি ওর কাছে গেলেম।

এই যে, শুনছেন

কী বলেন?

চলেন নাহ্ গ্রামের হাটটা দেখে আসি।

হাট কোথায়?

এই তোহ্ একটু সামনেই।

আচ্চা চলো।

আমরা বাজারের দিক রওনা দিলাম। হালকা বাতাস বইছে। একটু শীত শীতও লাগছে। হাটার সময় খুব সুন্দর লাহছিল ওকে। বাতাসে কিছু চুল উড়ছে, মুখে দৃষ্টি কাড়া হাসি, গুটি গিটিয়ে হাটছে।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।ও আমাকে তুমি বলেছে।আমরা দুজন এক সাথে হাটছি।কিছুক্ষন পর পর ওর দিকে তাকাচ্ছি।মেয়েরা চোখের ভাষা বুঝতে পারে।লিভাও বুঝেছে যে আমি তাকে পছন্দ করি।খুব অল্প সময়ই অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। আমার স্বপ্নের ঘর ওর মনের চোখ দেখে ফেলেছে। কিন্তু মুখ থেকে বের হচ্ছে না আট অক্ষরের সেই ইংরেজি শব্দটি।♦



"সেরা ব্লগ প্রতিযোগিতা জুলাই'১৮"

পঠিত : ১৪৬২ বার

মন্তব্য: ০