Alapon

১৩ জন ওয়াইল্ড বোর আর গুহায় কাটানো ১৭ দিন!

সতের দিনেরও বেশি সময় দিনের আলো দেখেনি ওরা। বেঁচে থাকার আশাটাও হারিয়ে ফেলেছিল ছেলেগুলো। এগারোদিন শুধু নোংরা পানি খেয়ে টিকে ছিল কোনমতে। মায়াতির আটশো ফুট নীচের গুহা থেকে কবে উদ্ধার করা যাবে ওদের, এই প্রশ্নের জবাবটা দুই দিন আগেও ঠিকভাবে দিতে পারেনি উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা।



পুরো থাইল্যান্ডের প্রতিটা মানুষ এই ক’টা দিন সার্বক্ষণিক খবর রেখেছেন ওদের, ফেসবুকের নিউজফিডে একটা সুসংবাদ শোনার আশায় স্ক্রল করে গিয়েছেন, রিমোট হাতে নিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছেন, যাতে টিভি খুললেই এই বারোজন কিশোরের উদ্ধারের সংবাদটা শুনতে পান!

স্রষ্টার কাছে মনেপ্রাণে কিছু চাইলে তিনি নাকি ফেরান না কাউকে। থাইল্যান্ডের এতগুলো মানুষ এই ছেলেগুলোর জন্যে প্রার্থনা করেছে, বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ওদের প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে ওদের খোঁজ নিয়েছে, এত মানুষের চাওয়া স্রষ্টা কি করে অপূর্ণ রাখেন?



ওয়াইল্ড বোর ফুটবল টিমের ১২ জন ফুটবলার আর তাদের কোচ খেলা পরিত্যক্ত হওয়ায় হয়তো ঘোরার জন্যই থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই প্রদেশের থাম লুয়াং গুহায় ঢুকেছিল। কিন্তু হঠাৎ অতিবৃষ্টিতে পানি বেড়ে যাওয়ায় সে গুহার আরও ভেতরে আটকা পড়ে যায় এই ১৩ জন। সঙ্গী ছিল তাদের একটি দুর্বল টর্চ, কিছু পানি আর খাবার। কোচ একাপ্পল নিজে না খেয়ে ঐ বাচ্চাগুলোর জন্যই যা রেখে দেন। একসময় টর্চের ব্যাটারি শেষ হয়ে যায়, শেষ হয়ে যায় সাথে থাকা খাবার আর পানি। সঙ্গী হয় কেবল অস্ফুট নীরবতা আর অন্ধকার। এরই মাঝে ১৩ টি প্রাণ পনের দিন ধরে টিকে ছিল বেঁচে থাকার আশায়।



দেশ–বিদেশ থেকে ডুবুরি দল এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু এতো ঝুঁকিপূর্ণ আর দীর্ঘ গুহায় কোথায় আছে সেই ১৩ জন, জানা নেই কারও। তবুও হতোদ্যম না হয়ে তারা খুঁজে বের করে সেই ১৩ জন বুনো ভাল্লুকদের। যারা এখনো যুদ্ধ করে টিকে আছে গুহার অভ্যন্তরে। ডুবুরিরা অক্সিজেন কম থাকায় সেখানে কীভাবে তাদের রক্ষা করা যায় ভাবতে লাগলো। অনেক বছর আগেই অবসর নিয়ে নেয়া ডুবুরি ও বর্তমান প্রশিক্ষক সামান কুনানও যোগ দিলেন এই ডুবুরি দলের সাথে। কে জানতো এই ১৩ প্রাণকে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হবে সামানকেই। যাদের জন্য অক্সিজেন নিয়ে যাচ্ছিলেন সামান সেই সামানকেই অক্সিজেন স্বল্পতায় প্রাণ হারাতে হলো।



এভাবে প্রাণ দিয়ে যাদের প্রাণ বাঁচানোর দায়, সেই প্রাণগুলো ঝরে যেতে পারে না কোনমতেই। তাই তো ধাপে ধাপে ৪ জন, ২ জন করে উদ্ধার হতে লাগলো কিশোর ফুটবলাররা। রুদ্ধশ্বাস অভিযানের পর সেই ১৩ ওয়াইল্ড বোরের ১৩ জনকেই উদ্ধার করা গেল অন্ধকার সেই গুহা থেকে ১৭ দিন পর।



এই ১৩ জনের গুহায় আটকে পড়ার ঘটনাটি সৃষ্টি করেছে মানবতার নতুন উদাহরণের, গেয়েছে মানবতার জয়গান। দেশ-বিদেশের কোটি কোটি হৃদয় প্রার্থনা করেছে এই ১৩ জনের জন্য। ফিফা আমন্ত্রণ জানিয়ে এই ১৩ জনকে সম্বর্ধনা দেবার কথাও জানিয়েছে। সামান কুনান আর একাপ্পলরা দেখিয়েছেন কীভাবে জীবন ঝুঁকি নিয়ে হলেও একটি প্রাণ বাঁচাতে পারলে নিজের জীবনকে সার্থক করা যায়। এই ১৩ জন ওয়াইল্ড বোর শিখিয়ে গেছে এই যান্ত্রিক পৃথিবীকে- সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই।

পঠিত : ১১৯৩ বার

মন্তব্য: ০