Alapon

প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ...

প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ,

আপনার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ‘আমার আছে জল’ দিয়ে। তখন আমি ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি।পুরো গল্প ভালোভাবে না বুঝলেও ‘দিলশাদের’ মৃত্যুর পর চোখের জল আর ভেতরে রয়নি তখন। আমার বড় ভাইদের কল্যানে বাসায় বইয়ের বহর ভালোই ছিলো। সেখান থেকেই এরপর হাতে এলো ‘এলেবেলে প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড’। কি আশ্চর্য্য! আবার চোখের জল সীমানা ছাড়ালো। তবে এবার দম ফাটানো হাসিতে। 

এই জল চক্র থেকে আমি আমার এই মধ্য বয়সে
(আসলে একুশ) এসেও বের হতে পারলাম না। দু’দিন আগে প্রথম আলোতে আপনার ‘বাংলাদেশ নাইট’ নামে একটা লিখা পুন:মুদ্রিত হলো। লেখাটি পড়তে পড়তে যথারীতি নয়নে বরষা এলো। আমার হাজবেন্ড তার পেশাগত খটমট লেখাগুলোর বাইরে কিছু পড়তে চায় না। আমার পীড়াপীড়িতে এই লেখাটা পড়লো। এবং কাঁদলো। 

প্রিয় লেখক। আপনার কাছ থেকেই জেনেছি খুব পরিচিত জোছনার রয়েছে কত অপরিচিত অপার সৌন্দর্য্য, বৃষ্টি-বিলাস আর কদম ফুলের আবেদনের কথা। এই কদমই হয়ে গেলো আমার সবচেয়ে প্রিয় ফুল। বিয়ের পর পতিদেবকে প্রতি বর্ষায় ব..র..ষা’র প্র.থ..ম… ক..দ..ম.. ফুল আনতে বাধ্য করতাম। এখন অবশ্য পীড়াপীড়ি ছাড়াই উনি শত কদম হেঁটে হলেও কদম নিয়ে আসছেন প্রতি বর্ষায়। বউ প্রীতিতে নাকি কদম প্রীতিতে কে জানে!

আজকাল আমার বছর দশেকর মেয়েটা ‘পিপলী বেগম’, ‘টগর এন্ড জেরী’ এমন সব গল্প গুলো জোরে জোরে পড়ে মোবাইলে রেকর্ড করে আবার শুনে। দেখে আমি অভিভূত হয়ে যাই। ছ’বছরের ছেলেটা যখন হাত পা নাড়িয়ে আপনার নাটকের সংলাপ ছাড়ে-‘থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিব। ইতমধ্যে কিন্তু দাঁত ফেলা শুরু হয়ে গেছে।’ তখন কিন্তু একদমই মনে হয়না যে সে বাজে কিছু বলছে। হালের বহুল প্রচারিত ডোরেমন কিংবা মটু-পাটলু বদলে ওরা যখন আপনার দুই দুয়ারির ‘এলিয়েন’ রিয়াজকে দেখতে বসে যায় তখন কেমন লাগে বলুন তো!। আপনি নিশ্চয়ই এই সব দেখছেন।

হ্যাঁ। আপনার যাদুকরী সম্মোহনী লিখা এবং মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখার মত নাটক কিংবা সিনেমার দর্শক কিন্তু এখনো বাড়ছে। মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। তাই আপনার হারিয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই দেখছিনা।

প্রিয় গল্পের যাদুকর। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। ভালো থাকুক আপনার সৃষ্ট সব চরিত্র গুলো, আপনার ভালোবাসার মানুষ গুলো।

ইতি 
আমি
‘আমি’ কেউ না……

পঠিত : ১১২৫ বার

মন্তব্য: ০