Alapon

“ HSC ফলাফল পরবর্তী হতাশার পিছনে বর্তমান সমাজ ব্যবস্হায়ই দায়ী “

আজ এইচএসসি / আলিম পরীক্ষার ফলাফল বের হয়েছে। সারা দেশে মাত্র ৬৬.৬৪ শতাংশ পাশ করেছে। অর্থাৎ শতে ৩৩.৩৬ শতাংশ ফেল করছে।  A+ পেয়েছে মাত্র ২৯ হাজার ৬৬২ জন। রেজাল্টের অবস্থা খুবই ভয়াবহ।পরীক্ষা পরবর্তী দেশের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী তাদের নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকে। অনেকে ডাক্তার কিংবা ইন্জিনিয়ার কিংবা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন দেখছে। এমন পরিস্থিতিতে ফলাফলের এমন দুর্দশা ছাত্রছাত্রীসহ অভিভাবক মহলে ব্যাপক হতাশর সৃষ্টি করছে।

এক্ষেত্রে অনেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ভালো রেজাল্ট করবে কিংবা খারাপ রেজাল্ট করবে। এর ফলশ্রুতিতে সর্বমহলে আশা কিংবা হতাশার চাপ দেখা দিবে। অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফলে মোবাইল বন্ধ করে রাখা, খাওয়া দাওয়া থেকে বিরত থাকা,কারো সাথে কথা না বলা এরকম নানান ঘটনার অবতারণা ঘটবে। যে তুমি দুই দিন আগেও স্বপ্ন দেখেছিলে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, সেই তুমি আজ মনে মনে ভাবছো আমাকে দিয়ে পড়ালেখা হবেনা, বিদেশ চলে যাওয়া কিংবা ছোটখাটো কোন জবে ডুকে গেলেই ভালো হবে। আবার কিছু কিছু জায়গায়  আত্মহত্যার খবরও শুনতে পাই।

কারন ফলাফল পরবর্তী পরিবার, আত্মীয় অনাত্মীয়, বন্ধুসহ সর্বমহল থেকে হতাশার কথা শুনতে শুনতে   তাকে বিষন্ন করে তুলবে। সে সবদিকে অন্ধকার দেখবে।এমন পরিস্থিতিতে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এটা আসলে অনেকবেশি দুঃখ জনক। সামন্য একটু ফলাফল খারাপে লালিত একটি স্বপ্ন ভেঙ্গে ছুরমার করে দেওয়া কতটা যুক্তিক?

শুধুমাত্র ভালো ফলাফলই কি জীবনের সব। যারা পড়াশুনা করেনা তাদের জীবন চলতেছেনা। তারা কি সুখি হতে পারছেনা? আবার যারা ফলাফল খারাপ করায় কাংক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেনা তাদের জীবন শেষ কিংবা তাদেরকে অযোগ্য বলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? অথচ আমরা দেখি বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম সারির বেশির ভাগই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ুয়া। কই তখনতো নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রথম সারিতে দেখিনা?

যে ভাই / বোনটি আজ ফলাফল খারাপের কারনে পিছিয়ে ছিল, সেই ভাই /বোনটিই দিনশেষে বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম সারিতে আছে। বিসিএস পরীক্ষার কথা  বাদই দিলাম অন্যান্য সরকারি / বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে অনেক ক্ষেত্রেই যোগ্যতাই মূখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় সব ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেনা। আর সবাই যে চাকরি করবে বিষয়টাতো এমন না,অনেকে ব্যবসাও করে। সেক্ষেত্রেতো  ফলাফল কিছুই  না,যোগ্যতাই মূখ্য বিষয়।

হতাশার পিছনে পরিবার ও সমাজব্যবস্হায়ই  দায়ী।

 কারন যে সমাজ কিংবা পরিবার আমাকে সবসময় শিখিয়ে গেছে তোমার জীবনে পরীক্ষার ফলাফলই সব,এর মাধ্যমে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে,ভালো সাবজেক্ট পাবে,ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। এরফলে তুমি সমাজে সম্মানিত  হবে এবং অনেক টাকার মালিক হবে। টাকা দিয়ে বাড়ি গাড়ি কিংবা অনেক সম্পদের মালিক হবে। যে সমাজে মা,বাবা, ভাই,বোন,আত্মীয়,অনাত্মীয়,শুভাকাক্ষী,বড় ভাই,বন্ধু, শিক্ষক সবসময় বলে ফলাফল খারাপ হলে তোমার জীবন শেষ হয়ে যাবে। জীবনে বড় হতে পারবেনা।

ডাক্তার/ইন্জিনিয়ার / ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে তোমার জীবন শেষ। এক্ষেত্রে অন্য কোথাও ভর্তি না হয়ে বিদেশ চলে যাওয়াই ভালো। এরকম একটা ধ্যানধারনা নিয়ে বেড়ে হওয়া ছেলে কিংবা মেয়েটি আজ ফলাফল খারাপে হতাশ না হয়ে যাবে কই। হতাশা তাদেরকে অাষ্ঠেপিষ্ঠে ধরবে এটাই স্বাভাবিক। অাত্মহত্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

এমন পরিস্থিতিতে আমি অবিভাবকদের বলবো আপনার সন্তানদের পাশে দাঁড়ান। তাদেরকে হতাশ না  করে উৎসাহিত করুন। স্বপ্ন বাস্তবায়নে দুজনে বসে নতুন প্লান গ্রহণ করতে সন্তানকে সাহায্য করুন।

আর আমার ছোট ভাইবোনদেরকে বলবো পাগলামি বন্ধ করে ধৈর্য্য ধর। শান্ত হয়ে ভেবে চিন্তে এ মূহুর্তের করনীয় ঠিক করো। নিজের দূর্বলতাগুলো খুঁজে বের কর।লক্ষ্য অর্জনে নতুনভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ কর কিংবা নতুনভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ কর। মনে রাখবে তোমার সক্ষমতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবমুখী লক্ষ্য গ্রহণ করবে, অবাস্তব কোন লক্ষ্য ঠিক করবেনা। সমাজে সবাই যা করবে তোমাকেও তা করতে হবে বিষয়টা এমন নয়। প্রত্যেকের স্বাতন্ত্রিক কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এগুলোকে সামনে রেখে লক্ষ্য ঠিক কর।আশাকরি তোমরা ভালো করবো। ইনশাআল্লাহ।  

ছোট ভাইবোনদেরকে বলবো, গতবছরের চেয়ে এবার রেজাল্ট অনেক খারাপ হয়েছে।  A+ এর সংখ্যা অনেক কম। সবমিলিয়ে ফলাফল গড়ে সবারই খারাপ। সুতরাং   ভর্তিযুদ্ধের ময়দানে তোমরাইতো,বাহির থেকেতো কেউ আসবেনা। তাই, এই মূহুর্তে তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে যারা সামনের পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে এবং হতাশ না হয়ে ভর্তি পরীক্ষার পূর্ব পর্যন্ত ধৈর্য্য ধারনের মাধ্যমে পরিশ্রম করে যাবে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়  ভর্তিচ্ছু ও সাধারন শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা রহিলো।
 “সেরা ব্লগার প্রতিযোগিতায় জুলাই -২০১৮”

পঠিত : ১১৭৮ বার

মন্তব্য: ০