Alapon

এইচ.এস.সি পরীক্ষায় যারা খারাপ ফলাফল করেছ

আমি কখনোই গোল্ডেন এ প্লাস, কিম্বা মিনিমাম এ প্লাস পাওয়ার মতো ছাত্র ছিলাম না। আমি বিলো এভারেজ স্টুডেন্ট। একাডেমিক পারফর্মেন্সের সাথে আমার কখনো ভালোবাসা গড়ে ওঠে নি। এসএসসি, কিম্বা এইচএসসি কোনটাতেই আমার এ প্লাস আসে নি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সেমিস্টার পরীক্ষাতেও না। তবু বেঁচে আছি। এখনো পর্যন্ত আল্লাহ না খাইয়ে রাখেন নি। আলহামদুলিল্লাহ। আমার আব্বু আম্মু এ প্লাস না পাওয়াতে আমাদের কখনো মানসিকভাবে টর্চার করেন নি। 

প্রতিবছরই এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট হওয়ার পর পত্রিকা কিম্বা অনলাইনের পাতায় কিছু বেদনাদায়ক নিউজ চোখে পড়ে। এ প্লাস না পাওয়াতে ছাত্র কিম্বা ছাত্রীর আত্মহননের খবর থাকে সেখানে। সেসব পড়তে গেলে চোখে কান্না চলে আসে! জীবনের থেকে কি এ প্লাস বড়? আব্বু আম্মু কি এ প্লাস না পাওয়াতে কষ্ট পান বেশি, নাকি সন্তানের আত্মহত্যার পর? এসব রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে জীবনকে কেন এতটা তুচ্ছ জ্ঞান করা হয়?

আমাদের অদ্ভুত এক সমাজ তৈরি হয়েছে। যে রেজাল্ট খারাপ করে তাকে আসলেই বন্ধু আর আন্টিদের মহলে অসম্মানের শিকার হতে হয়। এ প্লাস পাওয়া বন্ধুটির সামনে মাথা হেট করে চলাটা যে কতটা যন্ত্রণার- যার অভিজ্ঞতা হয়েছে সে-ই বুঝেছে। কিছুকিছু অতি-আবেগীর কাছে হয়তো এমন অপমানকর অনুভূতির শিকার হওয়ার চাইতেও আত্মহত্যাকে সহজ মনে হয়েছে। প্রায় প্রতিটা বছর ঘটে চলা এসব ঘটনার সাথেও যেন আমাদের স্বার্থান্বেষী সমাজ যেন ধীরেধীরে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে।

সেসব প্রিয় ভাইয়া-আপুরা, যারা এ প্লাস পাও নি, ইভেন যারা ফেইল করছো- মনে রেখো এখনো সবকিছু শেষ হয়ে যায় নি। আসলে মৃত্যুর আগে কোনকিছুই একেবারে শেষ হয়ে যায় না। নিজের অন্তরে আশাকে বাঁচিয়ে রেখো। আশাটুকু অবলম্বন করে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখলেও দেখবে- খুব সুন্দর কিছু হচ্ছে, পৃথিবী খুব ভালো কিছু পাচ্ছে তোমার জীবন থেকে।

সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভালো একজন মানুষ হওয়া, মননশীল হওয়া, ন্যায়পরায়ণ হওয়া, দয়ালু হওয়া। এসবের বড্ড অভাব আজকের পৃথিবীতে। খুব ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবে এসব গুণাবলি অর্জন করার জন্য প্রতিনিয়ত যে সংগ্রাম- তার জন্য কিন্তু তোমার এই পাবলিক পরীক্ষাগুলোর সার্টিফিকেট মোটেও কাজে আসছে না। ভালো মানুষ হয়ে ওঠো। অন্তত এতটুকু চেষ্টা করো। দেখবে এই চেষ্টাও একসময় তোমার জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভ্যালুর সংযোজন করবে।

পরীক্ষায় ভালো করতে পারাটা এক ধরণের স্কীল, কিন্তু জীবনে প্রয়োজনীয় একমাত্র স্কীল নয়। ভবিষ্যতে এই স্কীলে ভালো করার চেষ্টা করতে পারো। আর সাথে সাথে যেসব কাজ তুমি ছোটবেলা থেকেই করতে পছন্দ করো, যেসব স্কীল তোমার ভেতরে আছে- সেসবে আরো বেশি পটু হয়ে ওঠো। নিজের স্বপ্নকে ভালোবাসো। প্লীজ, পরীক্ষা খারাপ হওয়াতে যেন নিজের প্যাশনকে গলা টিপে হত্যা না করে বসো। দেখো, তুমি পারবে, তুমিই পারবো। 

কবি রুমী হয়তো তোমাদের কথা ভেবেই বলেছিলেন-
"পথটা তোমার। এপথে তুমি পথ চলো একা। হয়তো মাঝেমধ্যে কেউ তোমার যাত্রাপথের সঙ্গী হবে, কিন্তু তোমার পথ কেউ হেটে দেবে না।" 
এ কথা মাথায় রেখো। তোমার জীবন তোমাকেই গড়তে হবে। আর জীবন গড়ার অনেকগুলো পথ। তুমি তোমার সবচাইতে পছন্দের পথটাই বেছে নাও।

অনেক অনেক ভালোবাসা নিয়ো।
ইতি,
তোমাদের ফেল্টুস বড় ভাইয়া

পঠিত : ১০৪২ বার

মন্তব্য: ০