Alapon

বিশ্বায়ন কি, এর ইতিহাস, কারণ, বিকাশ, প্রভাব ও ফলাফল

বিশ্বায়ন বলতে কি বোঝায়: 
বিশ্বায়নকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। বিশ্বায়ণ হল বিশ্ব অথনৈতিক ব্যবস্থা। বাণিজ্যকে বাধাহীনভাবে বিশ্বব্যাপী পরিচালনা করার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালাই হলো বিশ্বায়ন।আবার বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় সাড়া বিশ্বে পণ্য ও পুজির অবাধ প্রবাহ।বিশ্বায়ণ হল সাড়া বিশ্বকে এক কেন্দ্র থেকে শাসন করার নতুন অথনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কৌশল। বিশ্বায়ণ হল দুবল রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ন্ত্রনের জন্য ধনী রাষ্ট্রগুলোর অথনৈতিক ধারণা। বিশ্বায়ণ হল উপনিবেশের নব্য রূপ।

বিশ্বায়নধারণা তৈরির ইতিহাস:
বিশ্বায়ণের ধারণাটি অনেক পুরাতন। বিশ্বায়নের সময়কালকে বিবেচনা করে এর ইতিহাসকে তিনটি স্তরে একে ভাগ করা যায়।

১ম স্তর :(বিশ্বায়নের প্রাথমিক যুগ :১২০০-১৮৫০)
এটাকে উপনিবেশিক যুগও বলা হয়। এ সময় ইউরোপের দেশগুলো উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকা আবিষ্কার করে ও সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করে। ইউরোপ থেকে আফ্রিকা ও এশিয়ার আসার পথ আবিষ্কার হয় এবং এখানেও তারা কৌশলে উপনিবেশ স্থাপন করে। এসময় থেকেই বানিজ্যের বিকাশ ঘটে ও অবাধ বানিজ্যের ধারণা সৃষ্টি হয়।এ স্তরেভূমি দখল নিয়ে লড়াই হত । এ স্তর থেকেই বিশ্বায়ন শুরু হয়।
২য় স্তর:(বহুজাতিক কোম্পানীর যুগ: ১৮৫০-১৯১৫)
এ যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে। আর নতুন নতুন ব্যবসা আবিষ্কার হয়। এ যুগে এসে পুজিবাদের ধারণার উদ্ভাবন হয়। ভূমি দখলের চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পদ ও অথ বৃদ্ধির ধারণা আসে। বানিজ্যের আধিপত্য নিয়ে লড়াই হত এ স্তরে। এ স্তরে এসে বিশ্বায়নের ভিক্তি তৈরি করে।
৩য় স্তর: (আধুনিক বিশ্বায়নের যুগ: ১৯৪৫-বতমান)

এ স্তরে বিশ্বায়ন প্রতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। ১ম ও ২য় স্তরে সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত যুদ্ধে লিপ্ত থাকলেও ৩য় স্তরে তারা একত্রিত হয়ে বিশ্বায়নের জন্য কাজ করে। এ স্তরে এসে তারা পৃথিবীকে ধনী-গরিব, পুজিবাদী-সমাজতন্ত্র, উন্নত-অনুন্নত, শিল্প নিভর-কৃষি নিভর দেশে বিভক্ত করে। এ স্তরে এসে তারা ভূমির নিয়ন্ত্রন ছেড়ে বানিজ্যকে নিয়ন্ত্রন করে। অথ দিয়ে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রন করে। এ স্তর হচ্ছে বিশ্বায়নের চূড়ান্ত স্তর।

বিশ্বায়নের কারণ:
বিশ্বায়নের একটা ঐতিহাসিক কারণ আছে। সমাজকে সমান্তবাদ থেকে পুজিবাদে প্রবেশ করতে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক অবদান আছে। মূলত পুজিবাদীরা তাদের পুজির বিস্তারের জন্য বিশ্বায়নকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। তারা বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে; এসব পণ্য বিক্রি করার জন্য অবাধ যোগাযোগ, অবাধ বানিজ্য ও অবাধ স্বাধীনতার প্রয়োজন ছিল আর এসব প্রয়োজন পূরণ করতে পুজিবাদীরাই বিশ্বায়নের ধারনা দেয়। বিশ্বায়নের ফলে পুজিবাদীরা তাদের পুজি বৃদ্ধি করার সুযোগ পেয়েছে। বিশ্বায়ন দিয়ে তারা নব্য উপনিবেশ তৈরি করতে পেরেছে। বিশ্বায়নের নাম দিয়ে পুজিবাদীরা বিশ্ব রাজনীতি, অথনীতি ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রন করা বৈধতা পেয়েছে। সামরিক শক্তিকে ব্যবহার না করে বিশ্বায়নকে ব্যবহার করে এখন সাড়া বিশ্বকে এককেন্দ্র থেকে শাসন করা হচ্ছে। আর এসব উদ্দেশ্য থেকে পুজিবাদীদের স্বাথ রক্ষার জন্য বিশ্বায়ন আসে।

বিশ্বায়নের বিকাশ:
উনবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বায়নের বিকাশ লাভ করে। বতমানের বিশ্বায়নের বিকাশে সবচেয়ে বেশি অবদান হল বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির। অনেক পরিসংখ্যান, গবেষণা ও সমীক্ষাতে দেখা গেছে বতমান বিশ্বায়ন বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি নিভর।

আরও একটা কারণ হল সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো ১ম ও ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পর একত্রে বিশ্বায়ন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে। এসব দেশগুলোর বুদ্ধিজীবী, গবেষক, সমাজবিজ্ঞানী, তাত্ত্বিকরা গবেষণা করে বিভিন্ন ধরণের তত্ত্ব ও ধারণা বের করে। আর এসব দেশগুলো সুপরিকল্পিতভাবে ধীরে ধীরে কৌশলে এসব তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
অথনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বৈধ শোষণ ও কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যৌথভাবে এসব সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বে তৈরি হয় তাদের শোষণের হাতিয়ার স্বরূপ একের পর এক তাদের তাবেদারি প্রতিষ্ঠার ও সংগঠন। এসব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো বিশ্বায়ন বিকাশে গুরুত্বপূণ ভূমিকা রেখেছে।

১৯৪৪ সালে বিশ্ব ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৯৪৫ সালে গঠন করে জাতিসংঘ ও আই.এম.এফ, ১৯৪৬ সালে গঠিত হয় General Agreement on Tariffs and Trade (GATT) যার উপর ভিক্তি করে ১৯৯৫ সালে গড়ে ওঠে বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা, এভাবেই প্রয়োজনের ভিক্তিতে গড়ে ওঠে একের পর এক তাবেদারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন তা বিশ্বায়নকে বিকাশিত করতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।
বিশ্বায়নকে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের স্বাথে ব্যবহার করতে পেরেছে তার অন্যতম কারণ মিডিয়া। প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, চলচ্চিত্র,বই, ম্যাগাজিন সহ সকল মিডিয়াতে বিশ্বায়নকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে।

বিশ্বায়নের ধারণা যারা দিয়েছে তারাই এক সময় সাড়া পৃথিবী শাসন করছে। তাই গরীব ও দুবল দেশগুলোতে তাদের সংস্কৃতি, আচার, আচরণ, রীতি-নীতি, পোশাক, ফ্যাশন, স্টাইল, ভাষার প্রভাব রয়েছে। আর এসবে মাধ্যমে সাড়া বিশ্বে বিশ্বায়ন প্রতিষ্ঠা সহজ হয়েছে।

বিশ্বায়নের প্রভাব:
বিশ্বায়নকে প্রথম দিকে এমনভাবে প্রচার করা হয় যদি তা প্রতিষ্ঠা করা হয় তবে গরীব দেশগুলোই বেশি লাভবান হবে। তবে কখনই গরীব দেশগুলো বিশ্বায়নের মাধ্যমে লাভবান হয়নি। এতে লাভবান হয়েছে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো আর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গরীব দেশগুলো।

১.বিশ্বায়নের নাম দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ চলছে। শান্তি রক্ষার নামে বিভিন্ন দেশে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে বিভিন্ন দেশের সাবভৌমত্ব ধ্বংস করছে। নিরাপত্তার নামে লুটপাঠ চালাচ্ছে। শান্তি আলোচনার নামে তারা দ্বন্দ্বকে উস্কে দিচ্ছে। শত্রু দ্বারা শত্রু ধ্বংস্ব করছে। আর এসব অপকমের বৈধতার জন্য বিশ্বায়নকে ব্যবহার করছে। তারাই জঙ্গিদের তৈরি করছে। আবার বিশ্বায়নের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনে জঙ্গিদের সুবিধা দিচ্ছে। জঙ্গিদের মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতিকে অস্তিথিশীল করে অন্য দেশে হস্তক্ষেপের বৈধ উপায় পেয়ে যাচ্ছে। আর সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো এ থেকে নিজের মত সুবিধা নিচ্ছে।

২.বিশ্বায়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য অবাধ বানিজ্য ও চলাচলকিন্তু এটা শুধু ধনী রাষ্ট্রের জন্য। তবে ধারণার ১ম দিকে সবার সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কখনই তা পালন করা হয় নাই। মানুষকে বিশেষ করে ৩য় বিশ্বের দেশগুলোর মানুষের জন্য ভিসার জন্য কঠিন নিয়ম মানতে হয়। কিন্তু বলা হয়েছিল বিশ্বায়নের ফলে মানুষ অবাধে এক দেশে থেকে অন্য দেশে যেতে পারবে। উন্নত দেশের পণ্য আমাদের দেশে আসে অবাধভাবে ও শুল্কমুক্ত ভাবে কিন্তু গরীব দেশের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রনের নামে চলে হয়রানি। মান নিশ্চিত করেই কেবল ধনী দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। আবার সব পণ্যের শুল্কমুক্ত সুযোগ দেওয়া হয় না। আবার এসব শুল্কমুক্ত পেতে হলে তাদের সাথে করতে হয় দেশ ও জনগন বিরোধী নানা চুক্তি, মেনে নিতে হয় অনেক শত। তাদের হাতে তুলে দিতে হয় দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও তাদের পছন্দের বিনিয়োগের সেক্টরগুলো। আর তারা বিশ্বায়নের নামে নিজেদের স্বাথে অল্প কিছু ব্যক্তি দ্বারা একটা দেশকে নিয়ন্ত্রন করে।

৩.বিশ্বায়নের ধারণাটা পুজিবাদী ও ধনী শাসকশ্রেনীর তাই তারা বিশ্বায়নের সকল সুবিধা ভোগ করে ধনী দেশগুলো নিজেদের অথনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে একসাথে কাজ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জি-২০, নিরাপত্তা পরিষদ, ন্যাটো প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন প্রমান করে ধনী রাষ্ট্রগুলো তাদের সুবিধার জন্য বিশ্বায়নকে ব্যবহার করে। এসব দেশের মধ্যে বানিজ্যিক ও রাজনৈতিক সম্পক খুবই ভাল, এসব দেশের মধ্যে ভিসা ছাড়াই তারা চলাচল করতে পারে। এক অপরের বিপদে এগিয়ে আসে। এসব রাষ্ট্রগুলো একসাথে কাজ করে। আর সকল অসুবিধা ভোগ করতে হয় গরীর ও অনুন্নত দেশগুলোকে। ধনী রাষ্ট্রগুলো চরমভাবে বৈষম্য করে গরীব রাষ্ট্রগুলোকে। এসব রাষ্ট্রগুলো থেকে তারা শ্রমিক নিয়ে দাসের মত ব্যবহার করে। তাদের প্রাপ্ত মজুরি দেওয়া হয় না। নিচু পযায়ের সকল কাজের জন্য বৈধভাবে শ্রমিকের যোগান দিতে তারা বিশ্বায়নকে ব্যবহার করে।

৪.অস্ত্র ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে, সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভাঙ্গতে, ইসলামকে ধ্বংস ও বিভক্তি করতে তাদেরই হাত ধরে জন্ম দেয় মৌলবাদী সশস্ত্র জঙ্গিরা কিন্তু এর ভুক্তোভুগি তারা নয়। গরীব উন্নয়নশীল মুসলমান দেশগুলোই এর শিকার হচ্ছে। আবার সমস্যা সমাধানের নাম দিয়ে এসব দেশে সরকার ও জঙ্গিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব টিকিয়ে রাখছে আর তারা ৩য় পক্ষ হয়ে দুই পক্ষ থেকে সুবিধা নিচ্ছে। সরকারকে বলছে জঙ্গিদের ধংস্ব করতে আবার জঙ্গিদের বলছে সরকারকে ধংস্ব করতে আর সাম্রাজ্যবাদী এসব দেশ দুই পক্ষকেই ধংস্ব করে রাষ্ট্রকে বেসরকারি খাতে নিয়ে যেতে চাইছে। জঙ্গিদের লুটপাটের অবৈধ অথের স্বীকৃতি দিয়ে সভ্য রাষ্ট্রের নামদারী এসব রাষ্ট্রগুলো প্রমান করে তারা বিশ্বায়নের নামে সন্ত্রাসীদের লালন করছে। কারণ লুটের অথ দিয়ে তারা অস্ত্র কিনতেছে আর বতমান বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তি আমেরিকার হাতে গুগল কিংবা ইউটিউবের সেন্টাল সাভার আমেরিকা নিয়ন্ত্রন করছে, ইন্টারনেট নেটওয়াকও তাদের হাতে কিন্তু দেখা যাচ্ছে জঙ্গিরা এর অপব্যবহার করছে তখন কিছু তারা বলছে না শুধু তাদের স্বাথে আঘাত পড়লেই তারা তাদের দমন করছে। দমন বলতে সেই দমন যে তোমরা আমেরিকা বাদ দিয়ে সকল রাষ্ট্রে তোমাদের সন্ত্রাসী কাযক্রম চালিয়ে যাও। আমাদের ক্ষতি করলে তোমাদের বিপদ তাই আমাদের কথা মত কাজ কর আমাদের সাথে লাগতে এসো না।

বিশ্বায়নের ফলাফল:
বিশ্বায়ন ফলাফল বোঝার জন্য আমরা ম্যাক্সিকান চিন্তাবিদ ফুয়েন্তেসের দেওয়া কিছুতথ্যদেখব যা দেখলে আমাদের কাছে বিশ্বায়ন পরিষ্কার হবে বিশ্বায়নের ফলাফল তা কেমন। নিম্নে তা দেওয়া হল: 
উন্নয়নশীল দেশগুলোর মৌলিক শিক্ষা-চাহিদা পূরণের জন্য ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারই যথেষ্ট, অন্যদিকে কেবল আমেরিকাতেই সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় প্রসাধন সামগ্রীর পেছনে। এটাকী করেমেনে নেওয়া সম্ভব? এতে প্রমানিত হয় বিশ্বায়ন গরীব রাষ্ট্রগুলোর জন্য কখনই আশীবাদ নয়।

আজকের পৃথিবীতে, গরিব দেশগুলোর খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং পানি সমস্যা সমাধানের জন্যে তেরো বিলিয়ন মার্কিন ডলারই যথেষ্ট। অন্যদিকে কেবল ইউরোপে সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় আইসক্রিমের পেছনে। এও কি গ্রহণযোগ্য? এত সব তথ্য দেখলে ধনী রাষ্ট্রগুলোর উপর ঘৃনা সৃষ্টি হয়। ইউনেস্কোর সাবেক মহাপরিচালক ফেদেরিকো মাইয়র এবং বিশ্বব্যাংকের (সাবেক) পরিচালক জেমস উলফেনসনের বলেছিলেন, ‘এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব, যে পৃথিবী অস্ত্রের পেছনে বছরে আনুমানিক ৮০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারে সে কি-না প্রতিটি শিশুকে স্কুলে শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার জোগাড় করতে পারে না।’ 
বিশ্বব্যাপী সামরিক খাতে ব্যয়ের মাত্র এক শতাংশ অর্থ দিয়ে পৃথিবীর প্রত্যেক শিশুকে ব্লাকবোর্ডের সামনে দাঁড় করানো সম্ভব।

বিশ্বায়নের ফলে বৈষম্য বাড়ছে, ক্ষুধা ও দারিদ্রতা বাড়ছে, পরিবেশ ধংস্ব হচ্ছে, সমাজে বিভেদ হানাহানি বাড়ছে, সামাজিক রাজনৈতিক ও অথনৈতিক সমস্যা বাড়ছে। তারা বৈষম্য তৈরি করে রেখেছে আবার বৈষম্য কমানো কথা বলছে। এক গবেষনায় দেখা যায় পশ্চিমা দেখগুলো একবার টয়লেট ব্যবহার করে যে পরিমান পানি ব্যবহার করে সেই মানে পানি দিয়ে আফ্রিকার একটা পরিবার একদিন বেচে থাকে।
আর তারা কল-কারখানা স্থাপন করে, পরিবেশ ধংস্ব করে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, পানি দূষণ করে, বায়ু দূষণ করে আর পরিবেশ রক্ষার জন্য তারা উন্নয়নশীল দেশে সভা সেমিনার করে। পরিবেশ ও স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর জাহাজ, তামাক শিল্পগুলো উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশে স্থাপন করে। কিন্তু এ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক উন্নত রাষ্ট্রগুলো। তারা ক্ষতিকর শিল্পগুলো তাদের দেশে স্থাপন না করে ৩য় বিশ্বের এসব রাষ্ট্রে স্থাপন করছে। এ থেকে উন্নত দেশ সুবিধা পাচ্ছে আর ৩য় বিশ্বের দেশগুলো সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। বিশ্বায়নের ফলে এটা মূলত হয়েছে।

৮৭ জন ব্যক্তির সম্পদ ৩য় বিশ্বের ৩৫০ কোটি মানুষের সম্পদের সমান। ইউনিলিভার, মাইক্রোসট, এ্যাপেল, গুগেল, ইনটেল, সনি, স্যামসাং, অ্যাডোবি, অ্যামাজন, ক্যানন, কোকাকোলা, আইবিএম, নাইকি, নাইকন, নিশান, নকিয়া, পেপসি, রিবক, ভোডাফোনসহ আর অনেক কোম্পানি এদের একটা কোম্পানির বাষিক আয় দিয়ে আফ্রিকার ৫টি দেশের বাষিক বাজেটের সমান। বিশ্বায়নের ফলাফল এটাই।

বিশ্বায়নের ফলে সাড়া বিশ্বে বিজ্ঞান ওতথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে, চিকিৎসাক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটেছে, মানুষ আদিম যুগ থেকে আধুনিক যুগে প্রবেশ করেছে, উন্নতমানের জীবনের স্বপ্ন দেখতে পেরেছে, উন্নত যোগাযোগ মাধ্যমের যোগাযোগ করতে পারছে। বিশ্বায়নের ফলে মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমন করতে পারছে। তার ও তার দেশের পাথক্যটা বুঝতে পারছে। বিশ্বায়নের ফলে মানুষের মাঝে উন্নতির ছোয়া এসেছে।
পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বায়ন এমন একটা বিষয় যা দ্বারা অনেক সমস্যা যেমন তৈরি করা যায় তেমন বিশ্বে যে সমস্যা আছে তার সমাধানও করা যায়। যে ধারণা নিয়ে বিশ্বায়নকে প্রদান করা হয়েছিল সে ধারণা যদি প্রতিষ্ঠিত হয় তবে সবাই এর সুফল পাবে। বতমানে উন্নত দেশগুলো যে সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে ও উন্নয়নশীল দেশগুলো যে সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে তা সব বিশ্বায়নের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। বিশ্বায়ন সমস্যা তৈরিতে সহায়ক না হয়ে সমাধানে সহায়ক হলে আমরা বিশ্বায়নকে স্বাগত জানাব।

পঠিত : ২০৩৫ বার

মন্তব্য: ০