Alapon

ভারতে তুঘলকি মসজিদকে রাণা প্রতাপের কেল্লা বানানোর পাঁয়তারা

দক্ষিণ দিল্লির খিড়কি গ্রামে অবস্থিত চতুর্দশ শতাব্দীর খিড়কি মসজিদ। সম্প্রতি মসজিদটি ঘিরে উত্তাল সেখানকার জনগণ। বাসিন্দাদের একাংশ দাবি তুলেছেন, রাণা প্রতাপের তৈরি কেল্লা দখল করে দিল্লির সুলতানরা মসজিদ তৈরি করেন। তাই একে মসজিদ না বলে খিড়কি ফোর্ট বলতে হবে। তবে চতুর্দশ শতকের সুলতান কী করে ষোড়শ শতকের রাণার কেল্লা দখল করলেন, তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য নেই।
 
মসজিদের প্রধান ফটকে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ-এর বোর্ড। সেখানে খিড়কি মসজিদকে সংরক্ষিত সৌধ বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আছে। অথচ কয়েক মাস ধরে বারবার বোর্ডের ‘মসজিদ’ শব্দটি কারা যেন মুছে দিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে লেখা হচ্ছে। ফের মুছে দেওয়া হচ্ছে।
 
জবাবদিহি চেয়ে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ-কে নোটিস পাঠিয়েছে দিল্লির সংখ্যালঘু কমিশন। ‘চুপিচুপি নয়, আমরাই মুছে দিয়েছি। পাহারাদাররা আবার মসজিদ লিখেছে। আবার মোছা হবে।’ মসজিদের সামনে দাঁড়িয়েই সগর্বে ঘোষণা করলেন স্থানীয় বাসিন্দা দীপঙ্কর চওহান।

১৩৫১ থেকে ১৩৮৮ সালের মধ্যে ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে মসজিদটি তৈরি করান ফিরোজ শাহর প্রধানমন্ত্রী মালিক জুনা শাহ তেলঙ্গানি। রানা প্রতাপের রাজত্বের ২০০ বছর আগে।
কেন করেছেন এমন কাজ? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন , এটা মোটেই মসজিদ নয়। রাণা প্রতাপের তৈরি কেল্লা। সুলতানরা কেল্লা দখল করেছিল বলে কি তা মসজিদ হয়ে যাবে?


১৩৫১ থেকে ১৩৮৮ সালের মধ্যে ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে মসজিদটি তৈরি করান ফিরোজ শাহর প্রধানমন্ত্রী মালিক জুনা শাহ তেলঙ্গানি। রানা প্রতাপের রাজত্বের ২০০ বছর আগে।
 
দীপঙ্করের দাবি যাই হোক না কেন, ইতিহাস অনুসারে,  ১৩৫১ থেকে ১৩৮৮ সালের মধ্যে ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে মসজিদটি তৈরি করান ফিরোজ শাহর প্রধানমন্ত্রী মালিক জুনা শাহ তেলঙ্গানি। মহম্মদ বিন তুঘলকের তৈরি জাহাপনাহ শহরে মোট ৭টি মসজিদ তৈরি করিয়েছিলেন মালিক জুনা ও তাঁর বাবা মালিক মকবুল। রাণা প্রতাপ তখনও জন্ম নেন নি।
 
ইতিহাসবিদ ও দিল্লির স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ রাণা সফভি বলেন, খিড়কি মসজিদ তৈরি হয়েছিল চতুর্দশ শতাব্দীর শেষার্ধে। তার প্রায় ২০০ বছর পরে ষোড়শ শতাব্দীতে মেবারের রাজপুত প্রতাপ সিংহের রাজত্ব। তা হলে রাণা প্রতাপের তৈরি কেল্লা দখল করে ফিরোজ শাহ মসজিদ বানাবেন কী করে?

কিন্তু সে ইতিহাস মানতে রাজি নন স্থানীয়রা ও সাকেতের চওহান, সাইনি পরিবারের লোকেরা। তাদের দাবি, এ পাড়ায় মসজিদ রেখে নমাজের অনুমতি দেওয়া যাবে না।


ইতিহাস মানতে রাজি নন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, পাড়ায় মসজিদ রেখে নমাজের অনুমতি দেওয়া যাবে না
 
রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজের সরকার ইতিহাসের পাঠ্যবই বদলে দিয়ে লিখেছে, হলদিঘাটির যুদ্ধে রাণা প্রতাপ হেরে যাননি। বরং মুঘল সম্রাট আকবরকে যুদ্ধে হারিয়ে দিয়েছিলেন। সেই নতুন করে লেখা ইতিহাসেরই ছায়া এ বার দিল্লিতে।
 
স্থানীয় সূত্রের খবর, এর পিছনে রয়েছেন সঙ্ঘ-পরিবারের স্থানীয় নেতারা। কিন্তু তারা প্রকাশ্যে আসতে রাজি নন।
 
কেল্লা বনাম মসজিদ বিবাদের শুরু কয়েক মাস আগে। খিড়কি মসজিদে নমাজের অনুমতির দাবি জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন আইনজীবী শাহিদ আলি। এপ্রিলে হাইকোর্ট বলে, কেন্দ্রই এই সিদ্ধান্ত নেবে। তার পর থেকেই প্রচার শুরু হয়েছে, ওটি আদতে মসজিদই নয়।

সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা।

পঠিত : ১২২৪ বার

মন্তব্য: ০