Alapon

আমাদের ধর্ম-কর্ম

মানুষ তার ইমিডিয়েট নীডস(needs) কে পূরণ করার চেষ্টা করে। এক চোরের পেটে যখন খিদে, তার বাচ্চারা যখন না খেয়ে আছে; তখন চুরি করা পাপ জেনেও সে চুরি করে। চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। অনেক বাঙালি আর পাকিস্তানি ভারতীয়দের দিনরাত গালাগালি দিয়েও সিনেমা দেখার বেলায় তাদের দ্বারস্থ হয়। আপনি জানেন বাদ্যযন্ত্রকে আপনার ধর্মের ম্যক্সিমাম স্কলাররা হারাম বলেছেন- তারপরও আপনি শালিন কথাওয়ালা গানে সফট মিউজিককে হালাল করার পক্ষপাতী, কারণ এটা আপনার সাংস্কৃতিক চাহিদা। আপনি জানেন- প্রেমের প্রচলিত গানগুলো হারাম, এই নিয়ে আপনি ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে অনেক আর্টিকেল পড়েছেন, হয়তো দু'একটা নিজেও লিখেছেন; কিন্তু আপনি ঠিকই গান শুনে গেছেন, নিজের ব্যাপারে যুক্তিবোধের তোয়াক্কা না করেই। মনেমনে ভেবেছেন- মিউজিক কি এতটাই খারাপ?


মানুষের প্রকৃতি আর গড়ে তোলা ধর্মতত্ত্বে অনেক ফারাক। আপনার মনটাও মাঝেমাঝে বিদ্রোহ করতে চায়, আবার অজানা অদেখা ভয়ে মন কুঁকড়ে যায়। আপনি সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রতিনিয়ত জৈবিক তাড়নায় তাড়িত হন! আধ্যাত্মিকতার চাহিদা খুব উঁচু স্তরের ব্যাপার। আপনি যদিও ফেসবুকে নামাযের ফজিলত নিয়ে বিস্তর লেখালেখি করেন- কিন্তু যাপিত জীবনে আপনার অনেক নামাযই কাজা হয়ে যায়, যদিও তিনবেলা খেতে না পেলে আপনি অস্থির হয়ে ওঠেন।


মানুষ ইন-জেনারেল মোটেও যুক্তিবাদী প্রাণী নয়। অনেকে মনে করেন শিক্ষিত হলে মানুষ যুক্তিবাদী হয়ে ওঠে। আসল ব্যাপার হল যারা স্মোকার তারা ধুমপানে ক্যান্সার হয় জেনেও ধুমপান করে, সে যদি ডাক্তারও হয়। যে সুদ খায়- সে জানে সুদ খাওয়া হারাম। ঘুসখোর ঘুস খাওয়া নীতিবিরুদ্ধ জেনেও সহনীয় মাত্রায় ঘুস খাওয়ার পক্ষে সাফাই গায়। কলেজ পড়ুয়া ছেলেটি প্রতিদিন তওবা করার পরেও পরদিন রাতেই আবার পর্ন ভিডিও দেখে। আমাদের বাবা চাচাদের সময়ে যখন পর্ন দেখার সুযোগ ছিলো না- তারা কল্পনার ডানায় চড়ে ইচ্ছেঘুড়ি ওড়াতো, এসব হারাম জেনেও।


জেলে যখন মাছ ধরার জন্য নামে- আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করে, যাতে বেশি মাছ পায়। দোকানিরা বিসমিল্লাহ বলে দিন শুরু করে। কিন্তু রমরমা ব্যবসার মুহুর্তে নামাযের আযান পড়লে জেলের বা দোকানির কি এসে যায়? তারা হয়তো ভাবে পরে নামায পড়ে নেবে। কিন্তু পড়া আর হয়ে ওঠে না। আমরা পাঁচ ইন্দ্রিয় দিয়ে এই বর্তমান, এই জীবনকে উপলব্ধি করি। এই জীবনের সুখ দুঃখ দিয়ে আমরা খুব বেশি তাড়িত হই। বেকারত্বের অভিশাপে প্রচণ্ড হতাশায় আক্রান্ত হয়ে ঝিনাইদহের দুই যুবক যখন আত্মহত্যা করেছিলো- তারা কি জানতো না যে আত্মহনন মহাপাপ?


কেউ যখন ধর্ম অবমাননা করে কথা বলে- আমরা গালির উপর গালি দিয়ে তার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলি। অথচ আমাদের যাপিত জীবনে ধর্মীয় নৈতিকতা মেনে চলার বালাই নেই। এই স্বজাতি প্রীতি বরং আমাদের নফসের তাড়নারই একটা অংশ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিনিয়ত নিজের প্রকৃতিগত খায়েশগুলো যখন আপনার বিশ্বাসকে পরাজিত করে চলে- আপনি এই ভেবে নিজেকে শান্তনা দেন- 'আল্লাহ যেহেতু দয়ালু, তিনি সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন'। এরপর আবার নফসের খায়েশ পূরণেই আমরা নেমে পড়ি।


আখেরাত অনেক পরের ব্যাপার। আমাদের পাঁচ ইন্দ্রিয়ের কাছে এর কোন প্রমান নেই। তাই ইমিডিয়েট চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য আমরা ব্যতিব্যস্ত থাকি। আর ভাবি- 'পরে তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয়া যাবে'।

পঠিত : ১৯৯৭ বার

মন্তব্য: ০