Alapon

দক্ষতার অহংকার

কিসের এত অহংকার আমার? আমি অনেকের চেয়ে ভালো লিখতে পারি বলে? সেতো অনেকেই পারে! অনেকের তো বইও প্রকাশিত হয়ে গেছে এতদিনে! তাহলে কিসের অহংকার আমার? মানুষের মন বুঝে ফেলতে পারি বলে? সেও তো অনেকেই পারে! হাজার হাজার মনস্তত্ত্ববিদ আছে দুনিয়াতে, তাদেরও তো ডিপ্রেশনে ভুগতে দেখেছি! আমি অন্য অনেকের চাইতে অধিক ধর্মীয় জ্ঞান রাখি- তা ভেবেই বুঝি এত অহংকার আমার? এরচে হাজার গুণ বেশি জ্ঞান রেখেও তো ইবলিশ পথভ্রষ্ট হয়েছিলো!


হৃদয়ের গভীরে লুকানো অহংকার তাহলে আমাকে কিভাবে গৌরবান্বিত করতে পারে? আমি ভালো কবিতা লিখতে পারি? এরচে হাজারগুণ ভালো কবিতা লিখতে পারতো আরব কবি উমাইয়া ইবন আবিসসালত, যার কবিতা সয়ং রাসুলুল্লাহ (স) শুনতে চেয়েছিলেন! এই উমাইয়া ইবন আবিসসালত ইসলামের দাওয়াত পেয়েও কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলো! তাহলে কিসে আমার জাগতিক অর্জন যার জন্য আমি অহংকার করতে পারি?


নিয়্যতের পর্যায়ে যখন কোন কিছু করার উদ্দেশ্য থাকে দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান, খ্যাতি কিম্বা ক্ষমতা অর্জন- তা মাঝেমধ্যে এই জাগতিক জীবনে অর্জিত হয় বৈকি, কিন্তু সেসব অর্জন কালের গ্রাসে মৃত্যুর সাথে-সাথেই বিলীন হয়ে যেতে শুরু করে! এমন অনেক রথী মহারথীরা হারিয়ে গেছেন কালের করাল গ্রাসে- যারা দুনিয়াবি জীবনের স্বার্থেই বেঁচে ছিলেন! অহংকারী নমরুদ কিম্বা ফিরাউনের নাম পর্যন্ত আমাদের সঠিক জানা নেই। আমরা কেবল অনুমানই করতে পারি।


জাগতিক জীবনের একটু অপূর্ণতা, একটু অপ্রাপ্তিতেই আমি দিশেহারা হয়ে পড়ছি; আল্লাহর দরবারে অশ্রুসিক্ত নেত্রে না দাঁড়িয়ে বরং তাঁকেই অভিযুক্ত করছি আমার অপ্রাপ্তি আর অপূর্ণতার জন্য! এই যে আমার এমন অকৃতজ্ঞতা, এর জন্ম কোথা থেকে হয়েছিলো? শ্বাইতানের পথভ্রষ্টতার মূলে লুকিয়েছিলো আল্লাহর প্রতি হতাশা থেকে তৈরি হওয়া যে অহংকার- তা কি আমাকেও একটু একটু করে পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে না?


আমার কিম্বা আমাদের ভেতরকার মুনাফিকি কেবল আমরাই জানি, আমরাই উপলব্ধি করতে পারি! তাই আমি যেভাবে হুট করেই অন্যদের যুক্তিসংগত ভাবে বাইনারি দৃষ্টিকোণ দিয়ে মূল্যায়ন করে ফেলতে পারি- তা নিজেদের ক্ষেত্রে সেভাবে পারি না। নিজেদের ক্ষেত্রে এসে কোন না কোন ভাবে আবেগ আর পক্ষপাত জড়িয়ে যায়! তা-ই আমার কাতরতা যেমন আর দশজন বুঝবে না- আমিও সেভাবে অন্যদের কাতরতা বুঝতে পারবো না -এটাই স্বাভাবিক। আত্মকেন্দ্রিকতার যুগে ইমোশনাল এম্প্যাথির প্রত্যাশা তাই হরহামেশাই হতাশায় রূপায়িত হতে পারে!


আল্লাহই একমাত্র প্রকৃত অভিভাবক; একথা আমার জন্য যেমন সত্য- যাকে আমি জাগতিক স্বার্থে অপছন্দ করি তার জন্যও সত্য! হয়তো আমি আপাত দৃষ্টিতে যাকে অপছন্দ করি সে-ই আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়! কেউ যদি তাঁর সৎকজের দরুন আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হয়ে যায়- এতে আমার হিংসায় লিপ্ত হয়ে, কিম্বা হতাশাগ্রস্থ হয়ে- অহংকারে মত্ত হওয়ার কিছুই নেই! আমি তো কিছুই ছিলাম না, আমি আল্লাহর বিশালতার কাছে এখনো কিছুই না, আল্লাহ চাইলেই আমাকে অস্তিত্বহীন করে দিতে পারেন।


আসল কথা তো এই- "আমরা আল্লাহর জন্য, এবং সবশেষে তাঁর কাছেই ফিরে যাবো!"

পঠিত : ১৯৬০ বার

মন্তব্য: ০