তারিখঃ ৩০ জুলাই, ২০১৮, ১১:০৮
তিনজন কলেজ শিক্ষার্থীর বাসে চাপা পড়ে মৃত্যুর কথা শুনে হেসে উঠলেন। তিনি কিছু মনে করলেন না। বললেন এর চাইতে বেশী মানুষ মরলেও তো এত কথাবার্তা হয় না। এখানে হচ্ছে কেন? আপনারা শুনে হয়তো অবাক হবেন কিন্তু আসলে অবাক হবার কিছু নেই। কারন কি? কারন দেখার জন্য একটু পেছনে ফিরে যাই।
এরও কয়েকদিন আগে ভলভো বাসের দরজায় আটকে ছেচড়ে যাওয়া একটা ছেলের ঘটনা অনেকেই জানেন। ছেলেটার নাম ছিলো পায়েল। বাসের ড্রাইভার, এসিস্টেন্ট এবং কন্ট্রাকটর সবাই মিলে ঝামেলা(!) এড়ানোর জন্য ছেলেটিকে পানিতে ফেলে দেয় তাকে হাসপাতালে পাঠানোর বদলে। পানিতে ফেলার আগে ইট দিয়ে তার মুখ থেতলে দেয় ওরা যেন কেউ চিনতে না পারে। এই ঘটনার ঘটনার সময় ড্রাইভার সাহেব কিন্তু তাড়াহুড়ার মধ্যে বা ওভারটেকের মধ্যে ছিলেন না। ধীরে সুস্হে চিন্তা করে, হয়তোবা একটু বসে বিড়িতে দুই একটা টান দিয়ে তারপর কর্মপদ্ধতি ঠিক করে তিনি এটা করেছিলেন। কিন্তু কিভাবে পারলেন এটা তিনি? এখানেও অবাক হবার কিছু নাই। আর একটু পেছনে ফিরে যাই।
এরও কিছুদিন আগে একটা প্রতিবেদনে দেখেছিলাম। লোকাল বাসের কয়েকজন ড্রাইভারের ইন্টারভিউ। সেখানে উনি স্বীকার করেছিলেন, গাড়ির যারা চালক তাদের মধ্যে শতকরা আশি জন ই মাদকের সাথে জড়িত থাকেন এবং বাংলাদেশে এটা একটা ওপেন সিক্রেট। বাসের মালিক থেকে প্রশাসন সবাই এটা জানেন। কারন এটা না খেলে নাকি রাস্তায় রাজার মতো গাড়ী চালানো যায় না। প্রশ্ন হলো তাহলে এদেরকে নিবৃত করা হচ্ছে না কেন? আসুন আর একটু পেছনে ফিরে যাই।
কয়েক মাস আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স করানোর জন্য গিয়েছিলাম বিআরটিসিতে। দেশে বুঝলাম আমার সাথে সে সকল ছাত্র ভাইয়ের ছিলেন তাদের বেশীর ভাগই ঠিক মতো পড়াশোনাই জানেন না। জীবিকার তাগিদে কিছু একটা করতে হবে সেজন্য লাইসেন্স করতে এসেছেন। আর অথরিটি জেনে বুঝে তাদেরকে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছেন। আবার অনেক লোকাল বাসের ড্রাইভারের ইভেন লাইসেন্সই নাই। আগে কন্ট্রাকটর ছিলেন আর পরে নিজে ড্রাইভারের আসনে বসে গেছেন।
চলেন এবার পেছেন থেকে সামনে আগাই। রাস্তায় একদল স্বল্প শিক্ষিত মানুষ যাদের মধ্যে শিক্ষার আলো বা মুল্যবোধের প্রচুর অভাব তারা গাড়ি চালানো শুরু করেন এবং একসময় নেশার মধ্যে জড়িয়ে পড়েন কনসেন্ট্রেশন ঠিক রাখার জন্য। এরপর তারা রাস্তায় রাজার মতো গাড়ি চালাতে থাকেন এবং আশে পাশে সবাই কে উনাদের প্রজা মনে হয়। যখন কোন প্রজা উনাদের সামনে এসে কনসেন্ট্রেশনের ব্যাঘাত ঘটান তখন হয়তো গায়ের উপর তুলে দেন অথবা ইদ দিয়ে মুখ থেতলে পানিতে ফেলে দেন। বুদ্ধি শুদ্ধি থাকলে একটা সময় শ্রমিক নেতা হয়ে যান এবং কপালে থাকলে একসময় মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন। তারপর যখন প্রজারা রাজার কাছে রাজার বিরুদ্ধে নালিশ করে তখন রাজা সাহেব মিষ্টি করে হেসে দেন। এ আর এমন কি! হতেই পারে। এই ফিলিংস নিয়ে তো একসময় আমিও ছিলাম। প্রজাদের এত কথা বলতে নেই।
এটা আমাদের সিস্টেম বছর বছর ধরে চলে আসছে কিন্তু কিছুই করার নেই। কিন্তু একজন আছেন যিনি এর সাথে জড়িত প্রত্যেকটি ব্যাক্তির কাছ থেকে হিসেব নেবেন। একজন মুসলিম হিসেবে এটা মনে প্রানে বিশ্বাস করে ধৈর্য্য ধরে পড়ে আছি। জানিনা এভাবে পড়ে থাকাটা কতটুকু লজিকাল। আজকে নিহত তিন ছাত্র-ছাত্রীকে আল্লাহ তায়ালা জান্নত নসীব করুন। আমিন।
(সব ড্রাইভার ভাইদেরকে উদ্দেশ্য করে লিখা হয়নি এই লিখাটা। তারপরও যদি দেখেন আপনার ভিতরে জ্বলুনী শুরু হয়ে তাইলে সাবধান হয়ে যান। হয়তো আপনিই সেই কালপ্রিটদের মধ্যে একজন)
পঠিত : ১২০১ বার
মন্তব্য: ০