Alapon

জাবির ইবনে হাইয়ানঃ যে মুসলিম বিজ্ঞানীর হাত ধরে রসায়নের যাত্রা

গোল্ড বা সোনা কখনো গলেনা বলে সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু বিশেষ দুটি এসিডের এক মিশ্রণ ব্যবহার করলে গলে। মিশ্রণটির  নাম একোয়া রিজিয়া। আবিষ্কারকের নাম জাবির ইবন হাইয়ান। রসায়নের জনক। পাশ্চাত্যে তিনি জাবের বা জাবির নামে পরিচিত। তার জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক আছে। কেউ বলে তিনি আরবে আবার কেউ বলেন তিনি পারস্যে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু একটি বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই যে তিনিই  প্রথম পরীক্ষামূলক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন । এই বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই।

জাবিরের পিতার নাম ছিল হাইয়ান। তিনি ফার্মাসিস্ট ছিলেন। উমাইয়া বংশের খলিফাদের তিনি পছন্দ করতেন না। তাই জাবিরের পিতা হাইয়ান কে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে  মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ছোটবেলা থেকেই হাইয়ান ছিলেন তুখোড় মেধাবী । পড়াশোনায় নিমগ্ন থাকতেন সবসময়। স্মৃতিশক্তিও ছিল অসাধারণ । কিন্তু শুধু তাত্ত্বিক পড়াশোনা তিনি পছন্দ করতেন না। ব্যবহারিক অংশের প্রতি তার আগ্রহ বেশী ছিল।  

শিক্ষা লাভ শেষে তিনি চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেসময় তিনি পরিচিত হন সেই সময়ের  বিখ্যাত পণ্ডিত জাফর সাদিকের সাথে। জাবির ছিলেন জাফর সাদিকের প্রিয় ছাত্র। তিনিই জাবিরকে গবেষণায়  আত্মনিয়োগ করতে বলেন। ক্রমে চিকিৎসাবিদ্যা থেকে রসায়নে জাবির আগ্রহী হয়ে উঠেন । গবেষণা পুরোদমে চলতে থাকে। করতে থাকেন একের পর এক আবিষ্কার । যেহেতু তিনি প্রায়োগিক দিকে বেশী আগ্রহী ছিলেন তাই অনেক কিছু আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন।

পাতন, ঊর্ধ্বপাতন , কেলাস, দ্রবণ, সংশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে তিনি বিস্তারিত ধারণা দিয়ে গেছেন। এইসব বিষয় বর্তমানে  কেউ না বুঝে বেশিদূর যেতে পারবেনা রসায়নে। রসায়ন কে এক সময় অনেকে যাদুবিদ্যা মনে করতেন। জাবির ইবন হাইয়ান এই ভুল ভেঙ্গে দেন। রসায়ন কে আবার  কেউ কেউ আধ্যাত্মিক বিদ্যা মনে করত। সেই ধারণাও জাবির ভেঙ্গে দেন। একজন প্রতিভাবান মানুষের প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য থাকে যে তিনি তার সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে থাকেন। জাবির ইবনে হাইয়ান যে তার সময়ের চেয়ে অনেক বেশী এগিয়ে ছিলেন সবাই একবাক্য স্বীকার করে নিয়েছেন।  

তিনি ছিলেন একাধারে রসায়নবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, দার্শনিক, পদার্থবিজ্ঞানী, ঔষধ বিশারদ ও চিকিৎসক। গ্রীক  ভাষা ভাল জানতেন। প্লেটো, সক্রেটিস, পিথাগোরাস, ডেমোক্রিটাস প্রমুখের গ্রন্থের সাথে তিনি পরিচিত ছিলেন। আসলে সে সময় একজন অনেক বিষয়ে জ্ঞান রাখতে পারত। আজ এত শাখা প্রশাখা যে কেউ একসাথে বেশী বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখতে পারবে না। বর্তমানে এত উঁচু মানের গবেষণা হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে একজনের পক্ষে সব বিষয়ে  বেশিদূর যাওয়া সম্ভব নয়। তবু আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর আগে কেউ এতদূর বা এতবেশি এগিয়ে ছিলেন ভাবলে শুধু অবাকই হতে হয়। এই বিস্ময়ের ঘোর কিছুতেই কাটতে চায়না।

জাবির ইবনে হাইয়ান দুই হাজারের বেশী বই রচনা করে গেছেন। সব বই যে রসায়নের উপর তা নয়। বিভিন্ন বিষয়েই তার বই আছে। তবে তিনি একাই রসায়ন বিদ্যাকে অনেক দূর নিয়ে গেছেন। তার বই বিভিন্ন ভাষাতে অনূদিত হয়েছে। তার আবিষ্কার পরবর্তী বিজ্ঞানীদের পথ দেখিয়েছে। তার মৃত্যু সাল নিয়েও কিছু ধুম্রজাল আছে। কেউ বলেন ৮০৩ আবার কেউ বলেন ৮০৪। আরেক জায়গায় আছে ৮১৫। তবে মৃত্যু সাল যাই হোক না কেনো জাবির ইবনে হাইয়ান কে বাদ দিয়ে রসায়ন বিদ্যার আলোচনা বেশিদূর আগাবে বলে মনে হয়না। এই বিরল প্রতিভাবান মানুষের প্রতি রইল অনেক শ্রদ্ধা । তার অবদান কে খাটো করে দেখার কোন সুযোগই নেই। রসায়ন নিয়ে আলোচনা হলে তার কথা বলতেই হবে।   

পঠিত : ১৭৫০ বার

মন্তব্য: ০