Alapon

মানুষখেকু সরকারের কাছে সব আন্দোলনই রাজনৈতিক

আপনি আমি যেখানে অরাজনৈতিক আন্দোলন দেখি, আওয়ামী লীগ সেখানে রাজনীতি দেখে, কারন অরাজনৈতিক আন্দোলনের হঠাত করে এত চাঙ্গা হয়ে ওঠার কারন এবং সুনামির ঢেউয়ের মত একের পর এক তা রাজধানী ঢাকার ওপর আছড়ে পড়ার ভেতরের কারন তারা জানে, মানুষ স্রেফ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেছে।

যে ৫৭ ধারা দিয়ে তারা মানুষের কথা বলার স্বর আটকে দিয়েছে, তা ক্রমেই ক্ষোভকে পুঞ্জিভুত করছে, বিস্ফোরনের ছোট দু একটা ধাক্কা হল এই অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। আপনি আমি না বুঝতে পারি, তারা বোঝে।

পুলিশ কোন চ্যাটের বাল মানে বাংলাদেশে কি তা তারা বোঝে। গত দশ বছর ধরে পুলিশের ঘাড়ে করেই তারা চালাচ্ছে, তাদের চ্যাটের বাল বলা মানে প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের দমন-পীড়নক্ষমতাকেই চ্যাটের বাল বলা।এইভাবে কোন রাষ্ট্রের দমন পীড়নকে চ্যালেঞ্জ করে সাধারনত ফিলিস্তিন বা কাশ্মীরের ছেলেমেয়েরা।
এই রোষ আপনি সারা দুনিয়ায় ফিলিস্তিন আর কাশ্মীর ছাড়া কেবল বাংলাদেশেই পাবেন, পৃথিবীর বৃহত্তম জিন্দানে পরিনত হয়েছে একশো সত্তর মিলিয়ন মানুষের এই দেশ।

রাজা আছে নীতি নাই কথাটা কত গভীরে গিয়ে আঘাত হানে, একবার ভেবে দেখেন। কেন এই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ পুলিশ-ছাত্রলীগ শ্রমিক লীগ লেলিয়ে দেবে না??

এখন, কথা হল, আপনারা, আমরা জীবনে যা কল্পনাও করতে পারি নাই, বাচ্চারা তা গত কয়েকদিনে করে দেখিয়েছে। তোফায়েল আহমেদের গাড়ির লাইসেন্স নেই বলে গাড়ি ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে, ডিবির গাড়ী থেকে গাজা উদ্ধার করা হয়েছে, বিজিবির গাড়ী ফেরত দেয়া হয়েছে, পংকজ দেবনাথের মুখের ওপর তাকে ভুয়া এমপি বলা হয়েছে, স্লোগান দেয়া হয়েছে, এমপি কোন চ্যাটের বাল...

এদের কাছ থেকে এর বেশি আর কি চাওয়ার আছে?? কিন্তু, আওয়ামী লীগ এই আন্দোলনের সাথে তাই করতে যাচ্ছে যা তারা অন্যগুলোর সাথে করেছে। আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগের প্রথম অস্ত্র চেতনা এখন আর মানুষ পোছে না, তা তারা বুঝে গেছে, তাই এই দফায় আর বাচ্চাদের কোন সিনিয়র নেতা রাজাকারের বাচ্চা বলে নি।

বরঞ্চ আওয়ামী লীগ চলে গেছে তাদের বেসিকে, ডিভাইড এন্ড রুল। বারবার অরাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে বুঝানো হচ্ছে, বাবারা তোরা সড়ক নিয়া কথা বলিস, সড়ক নিয়াই থাক, সেইফ থাক।

এই ট্যাগের অপর অর্থ হল, রাজনৈতিক বিরোধী যারা আছো, তারা এর মধ্যে নাক গলায়ে পবিত্র এই আন্দোলনকে দুষিত কইরো না। এই মেসেজের অন্তর্নিহিত রাজনীতি হল আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের বাকি সব দল অপবিত্র, তাই তারা কোন অরাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দিলে তা নষ্ট আন্দোলনে পরিনত হয়।

এর মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ যে হেজিমনি কায়েম করতে চায় তা হল, তারা এই দেশ শাসনের একমাত্র বৈধ হকদার, এই ব্যাপারে কোন প্রকার প্রশ্ন তোলা যাবে না, তুললে আন্দোলন সহীহ হবে না। এইভাবে আন্দোলনকারীদের তারা নিজেদের টার্মসে খেলতে বাধ্য করে।

এরপর কি হয় দেখেন। আন্দোলনকারীরা ভাবে, ভালোয় ভালোয় তো চলছেই, কি দরকার বিরোধী দল টেনে এনে পবিত্র এই আন্দোলনকে 'কলুষিত রাজনীতি'র শিকারে পরিনত করার!! নাহ, এখানে আর কারো আসা লাগবে না।

ওদিকে বিরোধী দলগুলো পড়ে দোটানাতে। যোগ দেব কি দেবো না। জামায়ত ও বিএনপির রামছাগল নেতারা বরাবরই ডিসিশন মেইকিং সিনক্রোনাইজ করতে পারে না এবং জনগনের টেম্পার রিড করতে পারে না। তারা ভাবে, আন্দোলন চলছে, চলুক, আমরা কথা না বলি। আন্দোলন সফল হলে তো ভালোই, ঈদের পর আমরা মাঠে নামবো, স্বৈরাচারী সরকারকে উড়িয়ে গুড়িয়ে দেবো। আর আন্দোলন সফল না হলে জনগন সরকারের উপর আরো বিরক্ত হবে, তখন আমরা খুড়িয়ে খুড়িয়ে ইলেকশনের দিকে আগাবো। 
এই রাজনীতির বাইরে নাগরিক অধিকারের রাজনীতির দিকে তারা আগাতে পারে না।

এভাবে জনগন এবং বিরোধী দল পরস্পরের কাছ থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখে, কিন্তু নিরাপদ থাকে না, কারন তিন নম্বর স্টেজে এসে হাজির হয় সরকারী ডগ স্কোয়াড। এদের প্রায়ই নিরীহ ছাত্রদের "বোঝানোর" দায়িত্ব দেয়া হয় এবং এরা হাতুড়ি-চাপাতি যা হাতের কাছে পায় তা দিয়ে বুঝিয়ে চলে আসে।

অর্থাৎ, আন্দোলনে নেমেও সেইফ থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা তা দিনশেষে আন্দোলনকে হত্যা করে।

অমুক আসলে আন্দোলন নষ্ট হয়ে যাবে, তমুক আসলে আন্দোলন গ্রহণযোগ্য হবে না এগুলো হল ফাও বাকোয়াজ, এই বক্তব্যের মধ্যেই আন্দোলনকে থামিয়ে দেয়ার বীজ নিহিত।

একতা নাগরিক অধিকারের আন্দোলনে সবাই আসতে পারে। গাড়িচপা দেয়ার সময় তো ড্রাইভার বিএনপি না আওয়ামী লীগ তা জিজ্ঞেস করে গাড়িচাপা দেয় না, তাহলে বিএনপি এই আন্দোলনে আসতে চাইলে সমস্যা কি?? ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক যদি আসেন, তাকে ছেলেপেলেরা ফিরিয়ে দেবে না, ওবায়দুল কাদের বা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অথবা শিবির(জামায়াত শিবির বা বিএনপি কেউই নিষিদ্ধ কোন সংগঠন নয়, সংবিধানে এমন কিছু নেই) বা ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি যে কেউ প্রোটোকল ছাড়া রাস্তায় চললে গাড়িচাপা পড়তে পারেন। তাই, গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা থামানোর এই আন্দোলনে শরীক হতে নীতিগতভাবে কারো কোন দ্বিধা থাকা উচিত না।

তবে, সমর্থন দিয়ে ঘরে বসে থাকবেন আর ছাত্রলীগ এসে বাচ্চাদের পিটিয়ে চলে যাবে, আর ভাববেন যে জুতার বাড়ি আপনার গালে পড়বে না, এমনটা ভাবার কোন কারন নাই ফখরুল সাহেব।

শেষ কথা, বাংলাদেশে অরাজনৈতিক আন্দোলন তথা নাগরিক অধিকার আন্দোলনে যেভাবে সরকারী ডগ স্কোয়াড হামলা চালাচ্ছে, তার প্রধান কারন জনগন ও বিরোধী দলের নাচতে নেমে ঘোমটা দেয়া স্বভাব।

নাচতে নেমে ঘোমটা দিলে হবে না, ডগ স্কোয়াড ঘোমটা ছিড়ে, কাপড় খুলে কামড় বসাবে।

অতএব, অমুক আসলে আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে এবং দেখি অরা কি করে, ঈদের পর খেলা হবে, এই দুরত্ব ও দ্বিধা ঝেড়ে ফেলতে হবে।

আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও কর্মসুচী পরিষ্কার মানে আন্দোলন পরিষ্কার, সেটা কে করছে তা এখানে দেখার বিষয় না।

পঠিত : ১১৯০ বার

মন্তব্য: ০