Alapon

'শাহজাহান-কাদের কোন্দলে অস্বস্তিতে প্রধানমন্ত্রী'

দীর্ঘদিন ধরে সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর নীরব কোন্দল এখন প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে। চলমান শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের জের ধরে মুখোমুখি অবস্থানে এই দুই মন্ত্রী। আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতু-সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং নৌ মন্ত্রী শাহজাহান খান সড়কে চাঁদা আদায় এবং দলীয় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উদ্যোগ নিয়ে এই বিরোধ মেটাতে গিয়ে ব্যর্থ হন।

আওয়ামীলীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, সড়ক মন্ত্রণালয় এবং বিআরটিএ'র সিদ্ধান্তে যানবাহনের ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে বেকে বসেন নৌ মন্ত্রী শাহজাহান খান এবং মশিউর রহমান সহ পরিবহন নেতারা। বিষয়টি মীমাংসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দেন।

শাহজাহান খান সহ পরিবহণ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে নাকচ করে দিয়ে শ্রমিকদের খেপিয়ে দেন। এরই জের ধরে গাবতলীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পরিবহন শ্রমিকেরা। এই ঘটনায় শ্রমিকদের প্রাণহানির পর শাহজাহান খানের নির্দেশে শ্রমিকরা শান্ত হন।

আওয়ামীলীগের উপদেষ্টামন্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, 'প্রধানমন্ত্রী ঐ ঘটনার পরেই চেয়েছিলো শাহজাহান খানকে মন্ত্রীপরিষদ থেকে সরিয়ে দিতে। কিন্তু পরিবহণ খাতে অস্থিরতা বাড়ার আশংকায় তিনি তখন সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন। কিন্তু এবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হবার পর পরই প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন তাকে এই অজুহাতে পদত্যাগে বাধ্য করতে। কিন্তু ওবায়দুল কাদের সেটা হতে দেয়নি। সে চেয়েছিলো এটা নিয়ে আন্দোলন হোক। বিতর্কিত হয়ে শাহজাহান খানকে নিজ থেকে পদত্যাগ করুক।

যাতে পরিবহণ শ্রমিকরা সরকারের বিরুদ্ধে না দাঁড়ায়। আর সেজন্যই ছাত্রদের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিতে চেয়েছে শাহজাহানকে। একই সাথে কৌশলে নিজের অনুগত মালিক-শ্রমিকদের শাহজাহান খানের ব্যাপারে বিরুপ অবস্থান তৈরি করতে কাজে লাগায় ওবায়দুল কাদের।' অন্যদিকে ছাত্ররা ধীরে ধীরে শাহজাহান খানের পদত্যাগের দাবি তুলতে শুরু করে। যার ফফলস্রুতিতে আন্দোলন বড় পরিসরে রুপ নেয়।

আওয়ামীলীগের জৈষ্ঠ্য এই নেতা আরও জানান, 'রমিজ উদ্দিন কলেজের নিহতদের বাসায় ওবায়দুল কাদেরকে গিয়ে শান্তনা দেবার নির্দেশ দিলেও তিনি অপারগতা জানান। পরবর্তীতে পরস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়ে শাহজাহান খান পরিবার গুলোর সাথে দেখা করে ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করে আসেন। অবাক করা ব্যাপার হলো, যেখানে সামান্য কোন ঘটনায় ওবায়দুল কাদের দলীয় দায়িত্বের কারণে ছুটে যান, সেই তিনি শাহজাহানের সাথে বিরোধের কারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি যেতে অস্বীকৃতি জানান।' এই ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতারাও। সরকারের এমন কঠিন পরিস্থিতিতে দুই নেতার বিরোধ যেনো আরও বিপাকে ফেলে দিয়েছে।

শাহজাহান খানের ঘনিষ্ট এক নেতা অভিযোগ করে বলেন, 'নৌ মন্ত্রী ইতিমধ্যে ক্ষমা চাইলেও ওবায়দুল কাদের সেটাকে বিতর্কিত করেন টিটকিরি মেরেছেন। তিনি গণমাধ্যমের কাছে অবজ্ঞার সুরে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, নৌমন্ত্রীকে কি ক্ষমা করে দেয়া যায় না? এটা দিয়ে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, নৌমন্ত্রী প্রকৃত অর্থে ক্ষমা চায়নি। ছাত্র-ছাত্রীরা এসব কথায় আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।' অন্যদিকে ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ এক সাংসদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, 'কাদের সাহেব একাধারে সড়ক মন্ত্রী এবং দলের সাধারন সম্পাদক।

কিন্তু সড়কে তার কোন নিয়ন্ত্রন নেই। শাহজাহান খান একক ভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে যাচ্ছেন। শুধু সেতু ও সড়ক মন্ত্রী থাকার সময়ের বিষয়টি ভিন্ন ছিলো। কিন্তু দলের সম্পাদক হবার পর এটা ওনার জন্য মানহানিকর৷ একক ব্যক্তির এক চেটিয়া আধিপত্য দলীয় পরিবেশও নষ্ট করে।'

এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, সড়কে চাঁদাবাজি থেকে উঠে আসা অর্থের ভাগ পৌঁছায় গণভবন পর্যন্ত। আর তাই প্রধানমন্ত্রী নিজেও শাহজাহান খান কে সরাতে খুব বেশী আগ্রহী নন। পূর্বের ভুলের জন্য ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন শাহজাহান৷ অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় সড়ক দুর্ঘটনার ইস্যুকে শাহজাহানের মোকাবেলায় ঠান্ডা মাথায় কাজে লাগাতে চান ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শাহজাহান খানকে বিতর্কিত করতে গিয়ে এই ইস্যুটি এতদূর চলে আসবে তা হয়তো ভাবতে পারেনি ওবায়দুল কাদের। দুই নেতার এই বিরোধ মেটাতে না পারলে আরও ভয়াবহ খেসারত দিতে হতে পারে ক্ষমতাসীন দলকে।

পঠিত : ১৭৩৮ বার

মন্তব্য: ০