Alapon

বহুল আকাঙ্ক্ষিত সড়ক পরিবহন আইন ও একটি পর্যালোচনা

সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু ৩৫ বছর পর আইনটির যে খসড়া চূড়ান্ত হলো, তা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সোমবার (৬ আগস্ট) সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি সাতবছর কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও নতুন আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে হতাহতের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচবছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তবে তদন্তে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে।

এটা তো আগের আইন- কাউকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অথবা ইচ্ছাকৃত হত্যা করলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, নতুন করে সড়ক পরিহবন আইনের সাথে জুড়ে দেয়ার কোন মানে হয় না। কারণ জনগণ চেয়েছিলো বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে দুর্ঘটনার জন্য পৃথক আইন। 

এদিকে, নতুন আইনে প্রত্যাশার চেয়ে সাজা কম রাখা হয়েছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। এর ফলে আইনে জটিলতা বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

একটু খেয়াল করলে দেখবেন, সাজার মেয়াদ বিবেচনায় আইনের খসড়াটি প্রত্যাশা পূরণ করেনি। বরং এই আইনের অধীনে কেউ যদি হত্যাকাণ্ড ঘটায়, সেক্ষেত্রে সে এই আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। কেননা আইনে বলা হয়েছে, 'যদি' ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত হয়, তবেই মৃত্যুদণ্ড হবে। এই ‘যদি’ শব্দের কারণেই আসামিদের সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।’’

একটি মামলায় অনেক রকমের ঘটনা যুক্ত থাকে। তা প্রমাণ না হলে আসামি খালাস পায়। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমে এক ধারায় মামলা হবে আবার তদন্তে অন্য কিছু পেলে তখন ধারা পরিবর্তন করে আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, যা আইন সমর্থন করে না। এর ফলে বিষয়টি চ্যালেঞ্জ (রিট মামলা) করলে আসামি সহজেই খালাস পেয়ে যাবে। এতে আরও আইনি জটিলতা বাড়বে। তাই শুরুতেই হত্যা বা দুর্ঘটনার মামলা করার বিধান পৃথকভাবে থাকতে হবে।’

শুধু তাই নয় এই খসড়া পড়ে বুঝা গেলো সাজা কমেছে, বাড়েনি। ২০১৪ সালে হাইকোর্ট একটি রায়ে তিন বছরের সাজা বাতিল করে দেয়ায় আগের সাত বছরের সাজা বহাল রয়েছে। সেক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন আইনে পাঁচ বছরের যে সাজার বিধান রাখা হয়েছে তাতে হাইকোর্টের রায় অনুসরণ করা হয়নি। সকলের প্রত্যাশা ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ক্ষেত্রে সাজা বাড়বে। কিন্তু সাজা কমানো হয়েছে। এটি অপ্রত্যাশিত।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে সাত বছরের সাজার বিধান থাকলেও ১৯৮৫ সালে তা সংশোধন করে তিন বছর করা হয়। পরে এটিকে চ্যালেঞ্জ করে এইচআরপিবি’র পক্ষ থেকে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। ২০১৪ সালে হাইকোর্ট একটি রায়ের মাধ্যমে তিন বছরের সাজা বেআইনি ঘোষণা করে তা বাতিল করে দেয়।

যেহেতু হাইকোর্টের রায়ে তিন বছরের সাজার বিষয়টি বাতিল হয়ে গেছে, তাই, সেই রায় অনুযায়ী সাত বছরের সাজা প্রচলিত ও বহাল রয়েছে। এখন সাজা কমানো অপ্রত্যাশিত। হাইকোর্টের ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে ছিল যে, সাত বছরের সাজাও বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপর্যাপ্ত।

যেহেতু প্রচলিত সাজা সাত বছরও কম- এ রকম একটি পর্যবেক্ষণ আদালত আগেই দিয়েছিলো। এখানে আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়নি। সাত বছরের সাজা কমতেও পারে, বাড়তেও পারে। পার্লামেন্টের সেই ক্ষমতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সাজা কমানোটা মানুষের প্রত্যাশা ছিল না। প্রত্যাশা ছিল সাজা বাড়ানোর। সেই দিক থেকে আমি বলবো যে আইনটি করা হচ্ছে তা প্রত্যাশিত হয়নি।

সড়ক পরিবহন আইনে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন সংক্রান্ত অর্থদন্ড বর্তমান প্রেক্ষাপটে পর্যাপ্ত নয় বলেও মনে করি। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের অপরাধের ক্ষেত্রে বর্তমানে টাকার যে মূল্যমান সে তুলনায় অনেক ক্ষেত্রেই অর্থদন্ড যথেষ্ট নয়। ২শ’ টাকা জরিমানা করার পর এরা (পরিবহন শ্রমিকরা) অপরাধ করতেই থাকে। সেক্ষত্রে ৫ হাজার, ১০ হাজার, ২০ হাজার টাকা জরিমানা যদি ধার্য্য করা হতো তাহলে এটি তাদের জন্য কঠিন হতো এবং আইনও তারা মানতে বাধ্য হতো। 

তবে ‘এটি এখনও খসড়া। সংসদে আইনটি পাস হবে।  তবে সবার দাবি অনুযায়ী সাজা না বাড়ালে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে না। এ কারণেই সংসদ সদস্যরা সাজার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আশা করছি।’

ফেসবুক থেকে সংগৃহিত

পঠিত : ১১৩১ বার

মন্তব্য: ০