Alapon

ফ্যাসিবাদ ও আজকের বাংলাদেশ

'ভি ফর ভ্যানডেট্টা' মুভী যারা দেখেছেন- ইউকে'র ফ্যাসিবাদি সরকার এক টিভি কমেডিয়ানকে রাতের বেলায় রাষ্ট্রীয় পেটোয়া বাহিনী পাঠিয়ে তুলে নিয়ে যায় শুধুমাত্র তাদের সরকার প্রধানকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা এক কমেডি শো উপস্থাপনের অভিযোগে। নন্দিত ফটো সাংবাদিক শহীদুল আলমকে বাংলাদেশি রাষ্ট্রীয় পেটোয়া বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা যেন উক্ত মুভীটির গল্পের অনুকরণ। বাংলাদেশের অনেক ঘটনাই এখন সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়। যা নিতান্তই দুঃখজনক।

এদেশে পুলিশের সাথে কিছু অস্ত্রধারী সিভিলিয়ান হেলমেট পরিহিত অবস্থা রাস্তায় নেমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরে যে ফ্যাসিবাদি হামলা চালায়- এমন ঘটনা হিটলারের জার্মানি, ইসরাইল আর পাশের দেশ মিয়ানমার ছাড়া বর্তমান সভ্য কোন দেশে নজিরবিহীন। বাংলাদেশের খ্যাতিমান রাজনীতিক তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে 'সোহেল তাজ' এক ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে বর্তমান তরুন প্রজন্মকে জানিয়েছেন- একটি দেশের ফ্যাসিস্ট সরকারের আচরণ কেমন হয়; যার সবক'টা আচরণই বর্তমান আওয়ামী সরকারের বৈশিষ্ট্যে বিদ্যমান। 

আশার দিক হলো বর্তমান যুবসমাজ বাঙালির মুক্তির নায়ক বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামীলীগের দলীয় মালিকানা থেকে আলাদা করতে শিখেছে। তাই বঙ্গবন্ধু তরুণ-মানসে বারবার হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রীয় নিপিড়নের বিপরীতে মুক্তি আর সংগ্রামের প্রতীক। বর্তমান যুবসমাজ তাই বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে রাস্তায় নামে কোটা সংস্কার কিম্বা নিরাপদ সড়ক প্রাপ্তির আন্দোলনে। এদেশের স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররা দেখিয়ে দিয়েছে- এদেশের মানুষ আজও বৈষম্য, নিপিড়ন আর রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে ভুলে যায় নি।

ফটো সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম আল জাজিয়ায় সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে যথার্থই বলেছেন- এত বিশাল আন্দোলন জন-মানসে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে আছে বহুদিনের জমে থাকা পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। এ সংগ্রামের প্রেক্ষাপট শুধুমাত্র একটা সড়ক দুর্ঘটনাই নয়, বরং রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বহুদিনের যে পচন- তা-ই তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করেছে এমন সাবলীল আন্দোলনে অংশ নিতে।

কিন্তু ফ্যাসিবাদি সরকার ইতোমধ্যেই তার হিংস্র আচরণ প্রকাশ করে দিয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের উপরে পুলিশের লাঠিচার্জ, ছাত্রদের উপরে হেলমেট পরে ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগের অতর্কিত হামলাই প্রমান করে আওয়ামী-সরকার আন্দোলনকে কতটা ভয় পায়। 

ছাত্ররা যে সম্মানের যায়গা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে 'মাদার অব এডুকেশন' উপাধি দিয়েছিল- সে সম্মানটুকু তিনি রাখতে পারেন নি। তাই তো সেই ছাত্রসমাজই অবশেষে মশাল মিছিলের স্লোগানে চিৎকার করে বলেছিল- "ছিঃ ছিঃ ছিঃ হাসিনা, লজ্জায় বাঁচি না।" একটি দেশের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এধরনের স্লোগান কতটা লজ্জাজনক- তা আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভেবে দেখবেন। 

এখনই সময় এসেছে রাষ্ট্রীয় অন্য সকল দুর্নীতি আর অপব্যবস্থার বিরুদ্ধে গোটা ছাত্র সমাজের আওয়াজ তোলার। দুর্নীতিগ্রস্থ দলীয় মেরুকরণ থেকে ছাত্ররা যেভাবে বেরিয়ে আসছে, তা নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতার পরিচায়ক। বাংলার ছাত্ররাই এখন জনতার আশা ভরসার স্থল। সরকারি সকল প্রকার অপব্যবস্থার প্রতিবাদ সবার আগে এই ছাত্র সমাজেরই করা উচিৎ, যেমনটা তারা করেছিল- বায়ান্ন, ঊনসত্তর আর নব্বইয়ের দশকে। এই দ্রোহকে তাই আমাদের জিইয়ে রাখতেই হবে; দেশের তরে, মানুষের তরে।

--- ০৮/০৮/১৮

পঠিত : ১৭৭৮ বার

মন্তব্য: ০