Alapon

জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিনের আমল

আজ জিলক্বদ মাসের ২৮ তারিখ। আর একদিন/দুইদিন পর পবিত্র জিলহজ্ব মাস শুরু হবে। এই মাসের কিছু আমল রয়েছে যা আল্লাহর নৈকট্য লাভে আমাদের সাহায্য করবে।  

১-   প্রথম দশদিনে নফল রোযা ও রাতে ইবাদত করা

জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত যত দিন সম্ভব নফল রোযা রাখা আর রাতের বেলা বেশী বেশী ইবাদত করা যথা নফল নামায,কুরআন তিলাওয়াত,তাসবীহ-তাহলীল,তাওবা-ইস্তিগফার ও রোনাজারী ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটানো।

ফযীলত
 হযরত আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদত তুলনায় বেশী প্রিয়,প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায় ।

{তিরমিজী শরীফ,হাদীস নং-৭৫৮,সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩৭৫৭,কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১২০৮৮}

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-এই দশ দিনের আমল অপেক্ষা অন্য দিনের আমল প্রিয় নয়।{বুখারী শরীফ,হাদীস নং-৯২৬}

২-   যারা কুরবানী করার ইচ্ছে পোষণ করছেন, তারা জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে হাত পায়ের নখ, মাথার চুল ও অবাঞ্ছিত চুল ইত্যাদি কাটবে না, যদি ৪০ দিন না হয়ে থাকে এগুলো না কাটার মেয়াদ। যদি ৪০ দিনের বেশি হয়ে থাকে, তাহলে এসব কেটে ফেলা আবশ্যক। নতুবা ১০দিন পর কুরবানীর পর পরিস্কার করবে। এ কাজটি সুন্নাত।

হযরত উম্মে সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃইরশাদ করেছেন যে, যখন [জিলহজ্বের প্রথম] ১০ দিনের সূচনা হয়,আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছে করে,সে যেন চুল-নখ ইত্যাদি না কাটে। {সুনানে নাসায়ীকুবরা, হাদীস নং-৪৪৫৪, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীসনং-৩১৪৯, সুনানে বায়হাকী, হাদীস নং-১৮৮০৬, মুসনাদুলহুমায়দী, হাদীস নং-২৯৩, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীসনং-৭৭৮৭, মুসনাদুশ শাফেয়ী, হাদীস নং-৮৪৬, মাশকিলুল আসার,হাদীস নং-৪৮১১}

৩-   যারা হজ্বে যায়নি, তাদের জন্য জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখ রোযা রাখা সুন্নাত এবং আরাফার দিনের একটি বিশেষ দুয়া

ফযীলত

হযরত আবু কাতাদা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোযা তার পূর্বের ও পরের বৎসরের গোনাহ মুছে ফেলবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭৪০}

তবে যারা হজ্বে গিয়েছেন, তাদের জন্য এদিন রোযা না রাখা উচিত।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৪২,সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৮১৭২,কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআল,হাদীস নং-২৩৯২৩, আল মুজামুল আওসাত, হাদীসনং-২৫৫৬}

হযরত উম্মুল ফযল রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-লোকেরা আরাফার দিন নবী কারীম সাঃ রোযা রেখেছেন কি না? তা নিয়ে সন্দেহে পতিত হলে আমি রাসূল সাঃ এর পানীয় প্রেরণ করলাম, আর নবীজী সাঃ তা পান করলেন। [ফলে সবাই নিশ্চিত হলেন যে, রাসূল সাঃ রোযা রাখেন নি। {সহীহমুসলিম, হাদীস নং-২৬৫১}

নোটঃ উলামাদের মত হল এই রোজার দিন হল যার যার দেশের ৯ই জিলহজ যখন আসে তখন অর্থাৎ সৌদি আরবের ৯ই জিলহজের সাথে মিলিয়ে নয়।  
আরাফার দিনের দুয়াঃ 

ইখলাছ ও বিশ্বাসের সাথে এ দিনে নিম্নোক্ত কালিমাটি বেশী বেশী পড়া উচিত। নবীজী আরাফার দিন এ কালিমাটি খুব বেশী পড়তেন। (মুসনাদে আহমাদঃ ৬৯২২ )

لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلٰى كُلَّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ


বাংলা উচ্চারণঃ  লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মূলকু ওয়া লাহুলহামদু বিয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্কদির।

৪-   তাকবীরে তাশরীক বলা।
যিলহজ্ব মাসের ৯তারিখের ফজর থেকে তের তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব।পুরুষের জন্য আওয়াজ করে,আর মহিলাদের জন্য নীরবে।

তাকবীরে তাশরীক হচ্ছে :

الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبرو الله اكبر ولله الحمد

উচ্চারণঃ  "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।"

নামায জামাতের সাথে হোক বা একাকি, পুরুষ মহিলা সবার জন্য প্রতি ফরয নামাযের পর এ তাকবীরটি একবার বলা ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চস্বরে বলবে আর মহিলারা অনুচ্চস্বরে। নামায কাযা হয়ে গেলে তা আদায়ের পরও তাকবীর বলবে। কাযা নামাযের পর তাকবীর বলতে ভুলে গেলে পরে তা কাযা করার কোন বিধান নাই।

প্রমাণ-
ফাতওয়া শামী-তৃতীয়খন্ড,৬১ পৃষ্ঠা,সালাত অধ্যায়,ঈদ পরিচ্ছেদ,
ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরাতুত তাশরীক পরিচ্ছেদ, ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা}

ফযীলত

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ আরাফার দিন তথা ৯ ই জিলহজ্বের ফজর থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষদিন পর্যন্ত পর্যন্ত তথা ১৩ ই জিলহজ্ব [আসর নামায] পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পড়তেন। {সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৬০৭১,মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং-৫৬৮১}

৫-   ঈদের দিনের সবচেয়ে বড় আমল হল ঈদের নামায শেষে কুরবানী করা।

১০, ১১ম ১২ যিলহজ্বের যে কোন একদিন,কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজন অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, {বর্তমান বাজার মূল্যে যা ৮৪,০০০/= প্রায়} তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান প্রযোজ্য।
প্রমাণ-ফাতওয়াশামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭
ফাতওয়া আলমগীরী-৫/২৯২

ফযীলত

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কুরবানীর দিনে বনী আদম এমন কোন কাজ করতে পারে না, যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করা তথা কুরবানী করার চেয়ে বেশি প্রিয়। কুরবানীর পশু সকল শিং, তাদের পশম ও তাদের খুরসহ কেয়ামতের দিন [কুরবানীদাতার পাল্লায়]এসে হাজির হবে। আর কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছে যায়। সুতরাং তোমরা প্রফুল্লচিত্তে কুরবানী করবে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৯৩,মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীসনং-৭৫২৩, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১২১৫৩}

যায়েদ বিন আরকাম রাঃ বলেন-রাসূল সা. এর সাহাবাগণ বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! এ সকল কুরবানীর ফযীলত কি? উত্তরে তিনি বললেন-তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। তারা পুনরায় আবার বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন-কুরবানীর পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। তারা আবারো প্রশ্ন করলেন-হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়ার লোমের কি হুকুম? [এটাতো গণনা করা সম্ভব নয়] তিনি বললেন-ভেড়ার লোমের প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। {সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদীস নং-৩১২৭}

মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে ইবাদাত করে আখিরাতের সম্বল হাসিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 

পঠিত : ১৯৩২ বার

মন্তব্য: ০