Alapon

কোরবানী আসলে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

কোরবানী ঈদ এলে কোরবানী সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন আসে। আমরা হয়তো কোরবানী সম্পর্কে অনেক কিছু জানি। কিন্তু এর মধ্যেও অনেক কিছুই আবার অজানাও রয়েছে।

কোরবানী সম্পর্কে একেকজন একেকরকম জবাব দেন। কেও বলেন, কোরবানী ত্যাগের মানসিকতা গড়ে তোলার শিক্ষা দেয়। আবার কেও বলেন নিজের মনের পশুকে কোরবানী দেওয়ার শিক্ষা। কিন্তু সত্যিকারভাবে কোরবানীর শিক্ষাটা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। অথবা ভালো বোঝার চেষ্টাও করি না।

কোরবানীর ইতিহাস আসলে কি বলে?
ইব্রাহীম (আ) এর কাছে আল্লাহ আসলে কি চেয়েছিলেন? আল্লাহ কি তাঁর পুত্র ইসমাঈলের প্রাণ চেযেছিলেন? নিশ্চয়ই নয়। ঠিক একইভাবে আমরা যে গরু-ছাগল কোরবানী দিই, এসব পশুর প্রাণও আল্লাহ আমাদের কাছে চাননি।

তাহলে কি চেয়েছেন মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের কাছ থেকে? ইব্রাহীম যখন পুত্র ইসমাঈলকে বললেন, আল্লাহ্‌র ইচ্ছার কথা, ইসমাঈল জবাব দিলেন-‘হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা নিঃসঙ্কোচে কার্যকর করুন। ইনশাআল্লাহ- আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’

বলতে গেলে ইসলামাঈলের এই জবাবটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে কোরবানীর সত্যিকারের তাৎপর্য। আল্লাহ ইব্রাহীমের কাছে চেয়েছেন তাঁর আল্লাহভীতির অকাট্য পরিচয়। তিনি দেখতে চেয়েছেন শুধুমাত্র আল্লাহ্‌রই জন্য নিজের প্রাণপ্রিয় পুত্রকে কোরবানী দিতে তিনি রাজি থাকেন কি-না। আর তিনি ইসমাঈলের কাছে চেয়েছেন নিজের জীবনকে কেবল আল্লাহরই জন্য উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকেন কি না তা দেখতে।

বস্তুত কোরবানীর মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্‌র কাছে একটা প্রতিশ্রুতি দেই যে- ‘হে আমার প্রতিপালক! কেবল তোমারই সন্তুষ্টির জন্য তোমার এই সৃষ্টির প্রাণ যেভাবে তোমারই জন্য কোরবানী দিলাম, ঠিক তেমনিভাবে প্রয়োজনে তোমারই জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও কখনও কুণ্ঠাবোধ করব না, যেমন কুণ্ঠাবোধ করেননি ইসমাঈল (আ)।’

মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের কাছে ঠিক এই জিনিসটিই চান। তিনি সব সময় চান তাঁর প্রিয়তম মাখলুক মানুষ কেবল তাঁরই জন্য বাঁচবে ও তাঁরই জন্য মরবে। কোরবানীর পশুর মত আল্লাহ্‌র জন্য নিজের শরীরের রক্তও প্রবাহিত করতে প্রস্তুত থাকবে- প্রকৃতপক্ষে এটাই হচ্ছে কোরবানীর শিক্ষা।

আপনি একটু ভালো মতো চিন্তা করে দেখুন। প্রত্যেক মানুষের কাছে তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস হলো নিজের জীবন। সেই জীবনকে যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকে, তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অবশ্যই আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি তা কখনও করছি? 

কোরবানী তো সবাই করি, কিন্তু আল্লাহ্‌র জন্য সর্বস্ব উজাড় করার মানসিকতা কি আমরা কখনও অর্জন করতে পেরেছি? যদি না পারি তাহলে কি কোরবানীর প্রকৃত অর্থ বাস্তবায়ন করা হবে?

মুল কারণ হলো মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের কোরবানী দিয়ে বলেছেন, শুধুই খালস নিয়তে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। কোরবানীর পর গরু বা ছাগলের মাংস কিন্তু আল্লাহকে দেওয়া লাগবে না। মাংস আমরাই খাবো। তাহলে সৎভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে খালস নিয়তে কেনো আমরা কোরবানী করবো না?

আমাদের মাঝে কোরবানী এসেছে। এখন এই জিনিসগুলোই উপলব্ধি করতে হবে। নিজেকে বোঝাতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্যেই কোরবানী করতে হবে। তা নাহলে গরুর মাংস খেয়ে ভুড়ি মোটা হবে কিন্তু কোরবানীর কোনো ফজিলত আমরা পাবো না। তাই আসুন কোরবানীর প্রকৃত অর্থ বুঝি, কোরবানী কি শিক্ষা দিয়েছে সেটি অনুধাবন করি এবং তা বাস্তবায়ন করি। আসুন, কোরবানীর প্রকৃত শিক্ষা আমরা সারা জীবনের জন্য অন্তরে ধারণ করি।

পঠিত : ১৪৩৩ বার

মন্তব্য: ০