Alapon

হাদিসের আলোকে ঈদুল আযহা

ইসলামের অন্যসব ইবাদতের মতো ঈদ ও কোরবানির মতো ইবাদতগুলোও আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে নির্দেশিত। উম্মতকে এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। কোরবানির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে প্রচুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
ইসলামের অন্যসব ইবাদতের মতো ঈদ ও কোরবানির মতো ইবাদতগুলোও আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে নির্দেশিত। উম্মতকে এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। কোরবানির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে প্রচুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো-
ঈদুল আজহা সম্পর্কে
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমাকে কোরবানির দিবসে ঈদ (উদযাপনের) আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ তা এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি ‘মানিহা’ থাকে আমি কি তা কোরবানি করতে পারি? নবী করিম (সা.) বললেন, না। তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে।’ -সুনানে আবু দাউদ: ২/৩৮৫
‘মানিহা’ বলা হয়, যে পশু কাউকে দুধ পান করার জন্য বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়। 
হজরত নবী করিম (সা.)-এর কোরবানি
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দু’টি সাদা-কালো বর্ণের (বড় শিং বিশিষ্ট) নর দুম্বা কোরবানি করেছেন। আমি দেখেছি, তিনি দুম্বা দু’টির গর্দানে পা রেখে বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার বললেন। অতঃপর নিজ হাতে জবেহ করলেন। -সহিহ বোখারি: ২/৮৩৪
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) ঈদগাহে জবেহ করতেন এবং নহর করতেন। -সহিহ বোখারি: ২/৮৩৩
নিয়ম হলো- গরু, ছাগল, দুম্বা জবেহ করা হবে এবং উট নহর করা হবে। নবী করিম (সা.) এমনই করেছেন। 
কোরবানির পশু জবাই প্রসঙ্গে
হজরত শাদ্দাদ ইবনে আওছ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা সব কিছুর ওপর অনুগ্রহকে অপরিহার্য করেছেন। অতএব যখন তোমরা জবাই করবে- তো উত্তম পদ্ধতিতে জবাই করো। প্রত্যেকে তার ছুরিতে শান দেবে এবং তার পশুকে শান্তি দেবে। -সহিহ মুসলিম: ২/১৫২
স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর কোরবানি
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার স্ত্রীদের পক্ষ হতে গরু দ্বারা কোরবানি করেছেন। -সহিহ বোখারি: ২/৮৩৪
গরু ও উটে শরিকানা প্রসঙ্গে 
হজরত জাবির (রা.) বলেন, আমরা হজের ইহরাম বেঁধে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে আদেশ করলেন যেন আমরা প্রতিটি উট ও গরুতে সাতজন করে শরিক হয়ে কোরবানি করি। -সহিহ মুসলিম: ১/৪২৪
অন্য বর্ণনায় আছে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, একটি গরু সাত জনের পক্ষ হতে এবং একটি উট সাত জনের পক্ষ হতে (কোরবানি করা যায়)। -সুনানে আবু দাউদ: ২/৩৮৮ 
কোরবানির পশুর বয়স
হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা (কোরবানিতে) ‘মুছিন্না’ ছাড়া জবেহ করবে না। তবে সংকটের অবস্থায় ছ’মাস বয়সী ভেড়া-দুম্বা জবেহ করতে পারবে।’-সহিহ মুসলিম: ২/১৫৫
কোরবানির উট অন্তত পাঁচ বছর বয়সী হতে হবে। গরু, মহিষ দুই বছর এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা এক বছর হতে হবে। ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে উপরোক্ত হাদিস থেকে জানা গেল যে, তা ছয় মাসের হলেও চলবে।
যে ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি হয় না
হজরত বারা ইবনে আযিব (রা.) কোরবানির পশু সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত দিয়ে ইশারা করেছেন এবং বলেছেন, চার ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি করা যায় না। সেগুলো হলো- যে পশুর এক চোখের দৃষ্টিহীনতা স্পষ্ট, যে পশু অতিশয় রুগ্ন, যে পশু সম্পূর্ণ খোড়া এবং যে পশু এত শীর্ণ যে- তার হাড়ে মজ্জা নেই। লোকেরা বলল, আমরা তো দাঁত, কান ও লেজে ত্রুটিযুক্ত প্রাণী (দ্বারা কোরবানি করা)ও অপছন্দ করি? তিনি বললেন, যা ইচ্ছা অপছন্দ করতে পারো। তবে তা অন্যের জন্য হারাম করো না। -সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৯১৯
হজরত আলী ইবনে আবী তালিব (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের আদেশ করেছেন, আমরা যেন (কোরবানির পশুর) চোখ ও কান ভালোভাবে লক্ষ করি এবং ওই পশু দ্বারা কোরবানি না করি, যার কানের অগ্রভাগ বা পশ্চাদভাগ কর্তিত। তদ্রূপ যে পশুর কান ফাড়া বা কানে গোলাকার ছিদ্রযুক্ত। -সুনানে আবু দাউদ: ২/৩৮৮
হজরত আলী ইবনে আবী তালিব (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিং-ভাঙা বা কান-কাটা পশু দ্বারা কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ: ২২৭
কোরবানির সময়
হজরত বারা ইবনে আযীব (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, আমাদের এই দিবসে প্রথম কাজ নামাজ আদায় করা, এরপর কোরবানি করা। সুতরাং যে এভাবে করবে তার কাজ আমাদের তরিকা (পদ্ধতি) মতো হবে। আর যে আগেই জবেহ করেছে (তার কাজ তরিকা মতো হয়নি) অতএব তা পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত গোশত, (আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত) কোরবানি নয়। -সহিহ বোখারি: ২/৮৩২
অন্য হাদিসে আছে কোনো কোনো সাহাবি ভুলক্রমে ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করেছিলেন। নবী করিম (সা.) তাদেরকে পুনরায় কোরবানি করার আদেশ করেন। -সহিহ বোখারি: ২/৮২৭
কোরবানির পশুর গোশত
হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) তিন রাত পর কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। এরপর (অবকাশ দিয়ে) বলেন, ‘খাও, পাথেয় হিসাবে সঙ্গে নাও এবং সংরক্ষণ করে রাখ।’ -সহিহ মুসলিম: ২/১৫৮
উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.)-এর এক বর্ণনায় আছে যে, ‘খাও, সংরক্ষণ কর এবং সদকা কর।’ -সহিহ মুসলিম: ২/১৫৮
কোরবানির পশুর গোশত-চামড়া বিক্রি করা যায় না
হজরত আলী ইবনে আবী তালিব (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) আমাকে তার (কোরবানির উটের) আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে বলেছিলেন। তিনি কোরবানির পশুর গোশত, চামড়া ও আচ্ছাদনের কাপড় সদকা করতে আদেশ করেন এবং এর কোনো অংশ কসাইকে দিতে নিষেধ করেন। তিনি বলেছেন, আমরা তাকে (তার পারিশ্রমিক) নিজের পক্ষ থেকে দিব। -সহিহ বোখারি:  ১/২৩২

পঠিত : ৬১৯ বার

মন্তব্য: ০