Alapon

সালমান শাহ'র বিশেষত্ব কী ছিল? কেন তিনি এতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন?

মাত্র চার বছরের সিনেমা ক্যারিয়ারে সালমান শাহ বাংলা সিনেমার অভিনয় জগতে নিজের এমন একটি স্থানটি করে নিয়েছিলেন যে তাঁর অভাব এখনো অনুভব করেন দর্শক, পরিচালক, প্রযোজক, দর্শক সবাই। এখনো প্রতি বছর সালমান শাহ'র মৃত্যু দিবসে তাঁর অনেক ভক্ত তাঁকে স্মরণ করেন ভালোবাসার সঙ্গে। কিন্তু কেন? কিন্তু সালমান শাহ'র বিশেষত্ব কী ছিল? কেন তিনি এতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন?

চলুন আজ তাহলে তার বিশেষত্বগুলো খতিয়ে দেখি।
- টি শার্ট, সামনের দিকে ইন করে রাখলেও, পিছনের দিকে একটু খুলে রাখতেন তিনি। দাঁত দিয়ে নখ কাঁটা ছিলো তার অভ্যাস। চারকোণা সানগ্লাসের ট্রেন্ড ভেঙ্গে, গোল বা ওভাল সানগ্লাস পরতে শুরু করার ট্রেন্ডও তিনিই চালু করেছিলেন। মিলাদে বা জানাজায় পকেটে টুপি থাকা সত্ত্বেও রুমাল গিট্টু মেরে মাথায় পরার অভিনব ইচ্ছা ছিলো তার। স্নিকারস বা ক্যানভাস সু... (যদিও আমাদের সময় আমরা সব ব্র্যান্ডকেই কেডস নামে ডাকতাম)... এই কেডস পরে ফিতা না বেঁধে হাঁটা’, কালো জুতার সাথে সাদা মজা পরতেন।

-প্যান্টের বেল্টের ফুঁটা থেকে দ্বিগুণ তিনগুন সাইজে বড় গলার মেডেলের মত বড় বাকেলসেরওয়ালা বেল্ট পরা (নিউ মার্কেটে পাওয়া যেত... এখন অবশ্য WWFওয়ালারা এটা পরে), ডান হাতে ঘড়ি পরা, একটু পর পর চশমায় হাত দেয়াসহ তার এরকম হাজারটা স্টাইল আছে... বলে শেষ করা যাবে না।

আজ হয়ত কেউ স্বীকার করবে না কিন্তু এক সময়, আমরা উঠতি অনেকেই উনাকে ফলো করতাম। দিন গুনতে গুনতে আজ ২২ বছর হয়ে গেছে উনি নেই। আজকের ২০/২২ বছরের এক ছেলে জানে না, “কাউকে ফলো করার মানে কি”
তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়-দক্ষতা - সবকিছু মিলিয়ে দর্শকের মনে স্থান করে নিতে সময় লাগেনি এ নায়কের।  "তিনি যাই করতেন, সেটাই ভালো লেগে যেত। অল্প সময়ের মধ্যে এ মানুষটা চলচ্চিত্রমোদীদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল।"

মানুষ তাকে কেমন ফলো করতো, কেমন ভালোবাসতো তা তো কয়েকটা খবর থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। সালমানের মৃত্যু সংবাদ শুনে সেদিন সকালেই ২১জন বাংলাদেশী তরুনী আত্মহত্যা করেছিলেন। প্রচুরর ছেলে শকড হয়েছিলেন। পরের কয়েকমাস এলিফেন্ট রোডের কেডস, জিন্স, টিশার্টের বাজারে ধ্বস নামে। এলাকার ছেলেরা একা একা বাউন্ডারি ওয়ালের উপর পা ঝুলিয়ে বসে থাকত বিকালে। কি জানি একটা নাই নাই। দেশের এক বিরাট স্টাইল আইকন নাই হয়ে যাওয়ায় সমাজে যে এভাবে প্রভাব পড়তে পারে, তা আজ ভাবাই যায় না। পুরো একটা জেনারেশানের, একজনকে পাগলের মতো ফলো করা কিন্তু সহজ ব্যাপার না, চাট্টিখানি কথা না এটা।

চাট্টিখানি ব্যাপার হয়ে থাকলে আজকে, এই ২২ বছরেও আমরা একজন স্টাইল আইকন কেন পেলাম না? এমন কাউকে কেন পেলাম না; যার কাপড় পরার স্টাইল ... তার কথা বলার ভঙ্গি ... হাঁটার ভঙ্গি... চা খাবার সময় তার কাপ ধরার ভঙ্গি... চুলের সিঁথি করার ভঙ্গি, একটা জেনারেশান চোখ বুঝে ফলো করবে। আক্ষরিক অর্থে; মন থেকে ফলো করার মতো একজনকেও পেলাম না। মন থেকেই মানি; উনি আজ বেঁচে থাকলে, আজকের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কতটা আগাতো, তা জানি নাহ... কিন্তু পিছিয়ে অন্তত পরত না।

মন থেকেই স্বীকার করি; উনি আজ বেঁচে থাকলে, বাংলাদেশ কমিউনিটিতে অনলাইন এবং অফলাইনে, সবচেয়ে বেশী মেচিউরড ফলোয়ার, উনারই থাকত।

প্রিয় সালমান শাহ হাজারো ভক্তের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ।
১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর, শুক্রবার। আজকের এই দিনে দুনিয়া থেকে গত হয়েছেন।

পঠিত : ৫৪৮ বার

মন্তব্য: ০