Alapon

ভারতে সমকামের বৈধতায় বাংলাদেশে এর প্রভাব কতখানি?

T, B, V হল গে'দের পরিচয়ের সংক্ষিপ্ত রুপ। T মানে হল টপ অর্থাৎ যে সক্রিয় থাকে, B হল বটম যে নিচে থাকে। আর V হল ভার্সাটাইল অর্থাৎ যে টপ-বটম দুটোই। বেশিরভাগ গে বটম বা ভার্সাটাইল হয়। লেসবিয়ানদের ক্ষেত্রে সাধারণত একটিভ প্যাসিভ হয়। একজন পুরুষের রোল প্লে করে, আরেকজন নারীর।

ভারতের সুপ্রিমকোর্ট গতকাল এক রায় দিয়েছে। এই রায়ে ভারতে সমকামীতাকে বৈধতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের যেকোনা সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের দেশেও এসে পরে। চলন্ত বাসে ধর্ষণ ভারতে ব্যাপকভাবে শুরু হওয়ার পরপরই এদেশেও শুরু হয়। 

মূলত সমকাম ও সমপ্রেম দুটো আলাদা জিনিস। সমপ্রেম হল দু'জন সমলিংগের ভালোবাসা, যেখানে সমকাম জিনিসটা সম্পূর্ণ যৌনতা। এটা নিয়ে পরে বলছি।

বছর দুয়েক আগের একটা ঘটনা শেয়ার করছি। 
একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য বসে ছিলাম। তিনজন ইয়াং ছেলে মেয়ে পাশের টেবিলে অপেক্ষা করছিল। কিছুক্ষণ পর দুজন ছেলে আসলো। এসেই একটি ছেলে আরেকটি ছেলেকে লিপ কিস করে বার্থডে উইশ করল! এরপর দুজন দুজন করে চারটি ছেলে এমনভাবে বসল যেন মনে হচ্ছিল তারা কাপল। সবচেয়ে অবাকের বিষয় তারা ছিল টিনেজ!

আমার সাথে ছিল এক বন্ধু, সে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। বহু আসামিসহ বিভিন্ন মানুষ সে দেখেছে, কিন্তু এরকম কিছুর অভিজ্ঞতা কখনো ফেইস করেনি। অবশ্য এরকম অভিজ্ঞতা আমার নতুন ছিল না। এই পর্যন্ত মোট চারজন ছেলের কাছে প্রপোজাল পাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। একজন বাস্তবে, তিনজন ফেসবুকে।

মানুষের গোপন জিনিস গোপনই রাখতে হয়, তাই তাদের পরিচয়ের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু লিখছি না। বছর তিনেক আগে একজন ছেলে মেসেজের পর মেসেজ দিয়েই যেতে লাগল। আমি তাকে বললাম, কি হয়েছে? সে সরাসরি বলেই ফেলল, আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড হবেন? পরে ছেলেটির ফোন নাম্বার নিয়ে কথা বললাম, শুনলাম তার কথা। অনেকটা দুঃখজনকভাবে সে গে হয়ে গেছে।

সমকামীদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আগ্রহ হওয়ায়, সে আমাকে বাংলাদেশী একটা গে গ্রুপে এড করেছিল। সম্পূর্ণ সিক্রেট গ্রুপ ছিল সেটি। সেখানে মেম্বার সংখ্যা দেখে টাস্কি খাওয়ার মত অবস্থা। তখনই ছিল সাড়ে পাঁচ হাজারের মত। ইয়াং থেকে শুরু করে মাঝবয়সী সবাই আছে। ভার্সিটি পড়ুয়া ম্যানলি চেহারা, অথচ গে; পোস্ট দিচ্ছে পার্টনার খোজার জন্য। অনেকে খালি গা হয়ে পিক তুলে মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলছে, আমি B, আজ আমার বাসা বা মেস ফাঁকা। এতো বয়স থেকে এতো বয়সের মধ্যে ছেলেরা আসতে পারো। এমনকি গ্রুপ সেক্সেরও আয়োজন করা হয় এভাবে!

বাংলাদেশের অবস্থা কোনদিকে যাচ্ছে টের পাচ্ছেন? আইসবার্গের মত এসব জিনিসের বেশিরভাগ অংশ এখনো অদৃশ্য রয়ে গেছে। আরেকজনকে যখন প্রপোজ করার কারণ জিজ্ঞেস করলাম, সে বলল, নিজেকে একা বোধ করে। তাই একজন বিশ্বস্ত গোপন পার্টনার চায় যাকে সে ভালোবাসবে। কি রকম ভালোবাসা- জিজ্ঞাসা করতেই বলল, শারীরিক মানসিক- সব রকম ভালোবাসা।

মূলত গে'রা মানসিকভাবে ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হলেও এদের মুল লক্ষ্যই হয় শারীরিক সম্পর্ক। অর্থাৎ এদের আসল উদ্দেশ্য যতটা না ভালোবাসা, তার চেয়ে বেশি সেক্স; যদিও এটা বিকৃত সেক্স। অনেকে বলে গে'র সঙ্গে হরমোনাল চেঞ্জের সম্পর্ক আছে। আসলে Transgender বা হিজড়াদের সাথে হরমোনাল বিষয়যুক্ত। কিন্তু গে জিনিসটা সম্পূর্ণ মানসিক। এটাকে sexual perversion বা বিকৃত যৌনাচার হিসেবে ধরা হয়।

পশ্চিমা দেশগুলোতে গে, লেসবিয়ানদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তাহলে তাদের কি হরমনাল চেঞ্জও দ্রুত হয়ে যাচ্ছে? উত্তর হচ্ছে- না।

বিপরীত লিঙ্গের সাথে তাদের অবাধ ও মাল্টিপল পার্টনারের সাথে সেক্স এতো বেশি হয়ে গেছে যে সেটাতে আর আকর্ষণ নাই। তাই, ভিন্নতা আনতে সমলিঙ্গের প্রতি ঝুঁকছে। এর প্রেক্ষিতে গে লেসবিয়ান বাড়ছে। আর আমাদের দেশে হয়ে গেছে উল্টো।

যে সময় তরুন তরুণীদের যৌন চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে, যেসময় তাদের বলা হয় লেখাপড়া শেষ কর, চাকুরি কর, তারপর বিয়ে কর। ছেলেদের বলে ত্রিশের আগে বিয়ের নাম নেওয়া যাবেনা, মেয়েদের বলা হয় লেখাপড়া শেষ কর তারপর বিয়ে। একদিকে ধর্মীয়, সামাজিক কারণে বিয়ের আগে সেক্স নিষেধ, আবার বিয়েও দেরিতে আয়োজন করা হচ্ছে। ফলে উভমুখী সমস্যা তৈরি হয়েছে।

এখানে বৈধ উপায়ে বিয়ে করে সেক্সকে এতো কঠিন করে তুলেছে যে ছেলেদের চিন্তা ভিন্নভাবে যৌনস্বাদ মেটানোর দিকে চলে যাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে, যৌনতার জন্যই শুধু প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহীদের সংখ্যাও তত বাড়ছে। আর যারা সংগী পাচ্ছেনা তারা কৃত্রিম উপায়ে আর কতদিন চলবে? তাই সহজলভ্য হওয়াতে সমসেক্সের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।

এই সমস্যাটি হয়তো এখনো প্রকাশ্যভাবে চোখে পরছে না আমাদের, কিন্তু এতো বেশি হারে বাড়ছে যে, হঠাৎ একটি বিস্ফোরণ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হবে। আর তাতে তো ঘিয়ের মতো কাজ করছে এখন ভারতে সমকামিতা বৈধতার রায়। নিশ্চিত থাকুন, এর একটা কু-প্রভাব আমাদের দেশেও পড়বে। আর তা খুব শীঘ্রই।

এখনো সময় আছে, আমাদের এই নিয়ে ভাবতে হবে। বিবাহের সহজলভ্যতা, ধর্মীয় জ্ঞান প্রদান, সঠিক কাউন্সিলিং এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে একে নির্মূলের উদ্যোগ নিতে হবে। না হয় আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী গজব অবধারিত।

পঠিত : ২৯১৩ বার

মন্তব্য: ০