Alapon

মুয়াম্মার গাদ্দাফিঃ আরব বসন্তে ভেসে যাওয়া আফ্রিকান লৌহ মানব


গণতন্ত্রের পালে হাওয়া দিতে ২০১১ সালের দিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এক বিপ্লব ছড়িয়ে পড়েছিলো যা আরব বসন্ত নামে পরিচিত। সেই বিপ্লবে নিশ্চিহ্ন হয়ে নায়ক থেকে খলনায়কে পরিণত হওয়া এক লৌহমানবের নাম মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি। পশ্চিমা বেনিয়া গোষ্ঠীর বিরুদ্ধাচারন করায় পৃথিবী দেখেছে হিটলার, মুসোলিনী, ওমর তেরিজো, সাদ্দাম হুসেনদের পরাজয় বরণের গল্প!

একুশ শতকে এসে তেমনি এক গল্পের খলনায়ক বনে যান মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি। যদিও এ সকল স্বৈরশাসকদের নায়ক বা খলনায়ক বলা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ঐতিহাসিকদের কলামে মুয়াম্মার আল গাদ্দাফিকে নিয়েও বিতর্ক লক্ষ্য করা গিয়েছে। মূলত পশ্চিমাশক্তির ইন্ধনেই অবসান ঘটেছিলো গাদ্দাফি অধ্যায়ের।

গাদ্দাফির প্রথম জীবনঃ


ছবিঃ গাদ্দাফি

 ১৯৪২ সালের ৭ই জুন লিবিয়ার সির্ত শহরের উপকূলে গাদ্দাফির জন্ম হয়। তার পরিবার ছিল যাযাবর বেদুঈন গোত্রের অন্তর্গত। অন্যান্য লিবীয় শিশুদের ন্যায় ছোটবেলায় তিনিও মাদ্রাসায় ঐতিহ্যগত ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। যার ফলে শৈশব কাল থেকেই ইসলামী ভাবধারার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন গাদ্দাফি। ধর্মীয় শিক্ষা শেষ করে ফেজানের সাবহা প্রিপারেটরি স্কুলে ভর্তি হন গাদ্দাফি। স্কুলে থাকাকালীন সময়েই তিনি আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হন।

সে সময়ই বন্ধুদের সাথে মিলে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১৯৬১ সালে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর ফলে গাদ্দাফির প্রাথমিক পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে তিনি লিবিয়ার বেনগাজী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল শাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হন। দু বছরের মাথায় ১৯৬৩ সালে তিনি বেনগাজীর সামরিক পরিষদে যোগদান করেন। যার ফলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি।

গাদ্দাফির উত্থানঃ


ছবিঃ গাদ্দাফি

গাদ্দাফি যখন সেনাবাহিনীতে চাকুরীরত তখন লিবিয়ায় পশ্চিমাপন্থী সেনুসি রাজতন্ত্রের শাসন চলছিল। তৎকালীন সময়ে লিবিয়ার শাসক ছিল রাজা ইদ্রিস। ১৯৫১ সালে ইতালির কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই লিবিয়া শাসন করে আসছিলেন রাজা ইদ্রিস আল সেনুসি। গাদ্দাফি পশ্চিমাপন্থী এই সেনুসি রাজতন্ত্রের পতনের জন্য গোপনে এক সামরিক বাহিনী গড়ে তোলেন।

১৯৬৫ সালে সেনাবাহিনীর উচ্চ প্রশিক্ষণ লাভ করার জন্য তিনি ব্রিটেনে যান। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে গাদ্দাফি কমিশন প্রাপ্ত অফিসারদের তালিকাভুক্ত হন এবং ১৯৬৬ সালে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরেই তিনি রাজা ইদ্রিসকে উৎখাত করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এসময় ১৯৬৯ সালের দিকে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ইদ্রিস। ঐ বছরের পহেলা সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য তুরস্ক সফরে যান ইদ্রিস। আর এভাবেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের সুযোগ পেয়ে যান গাদ্দাফি।

১৯৬৯ সালে গাদ্দাফি তার মিত্রদের নিয়ে গড়া গোপন বাহিনী নিয়ে রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান। রাজা ইদ্রিসের প্রশাসনকে উৎখাত করে লিবিয়ার শাসন ক্ষমতায় আরোহণ করেন গাদ্দাফি। পরবর্তীতে রাজা ইদ্রিসকে মিশরে নির্বাসিত করে দেওয়া হয় এবং তিনি ১৯৮৩ সালে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

ক্ষমতায় আরোহণের পর দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে গাদ্দাফির। তবে সকল বাঁধা-বিপত্তি দুর করে গাদ্দাফি লিবিয়াতে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন। তিনি ইসলামী ভাবধারা মিশ্রিত একটি প্যান আরব সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দর্শন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।  গাদ্দাফি ১৯৭৭ সালে লিবিয়াকে  “গ্রেট সোশালিস্ট পপুলার লিবিয়ান জামাহিরিয়া” তথা জনতার রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করেছিলেন। যদিও তিনি তা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হন। কেননা স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে গাদ্দাফিকে তার নীতির বরখেলাফ করতে হয়েছিলো।

তিনি ছিলেন মিশরের নেতা জামাল আবদেল নাসেরের অনুগত এবং নাসেরের আরব সমাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের একজন প্রশংসক ও অনুসারী। তার শাসন ক্ষমতায় বসার পিছনে নাসেরের বিশাল ভূমিকা ছিল।


ছবিঃ আফ্রিকান রাষ্ট্রনায়কদের মাঝে গাদ্দাফি

গাদ্দাফির রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করে তার নিম্নোক্ত বিতর্কিত কার্যাবলী ও অভিযোগসমূহ পরিলক্ষিত হয়-
১. সত্তরের দশকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য অধিকারের দাবীতে ত্রিপোলি ও বেনগাজীতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলো। গাদ্দাফি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে ফাঁসিতে ঝুলাতেন বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ ছিল।
 
২. লিবিয়ার আবু সালেম কারাগারে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২শ বিদ্রোহী বন্দীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

৩. কলম্বিয়ার গেরিলা গোষ্ঠী “রেভুলেশনারি আর্মড ফোর্সেস  অব কলম্বিয়া” (ফার্ক) ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের “আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি” (আইআরএ) বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে । যার কারণে পশ্চিমা গোষ্ঠী তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছিলো।

৪. ১৯৮৬ সালে বার্লিনের নাইটক্লাবে বোমা হামলা হয়। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই সেনা সদস্য নিহত হয়েছিলো। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এই হামলার জন্য লিবিয়াকে দায়ী করেন এবং গাদ্দাফিকে মধ্যপ্রাচ্যের “পাগলা কুত্তা” বলে গালি দিয়েছিলেন। অভিযোগ অস্বীকার করার কারণে লিবিয়াকে জাতিসংঘের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো।


ছবিঃ ১৯৮৬ সালে বার্লিনের নাইটক্লাবে বোমা হামলা 

অবশেষে ২০০৩ সালে গাদ্দাফি প্রশাসন এই বোমা হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছিলো। এ হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১ কোটি ডলার করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় এবং গাদ্দাফি হামলায় ব্যবহৃত বিধ্বংসী অস্ত্রসমূহ ধ্বংস করার ঘোষণা দিয়েছিলো। তবে ২০০৯ সালে উক্ত  হামলায় অভিযুক্ত লিবীয় গোয়েন্দা কারামুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলে গাদ্দাফি তাকে সংবর্ধনা প্রদান করেন। যার ফলে পশ্চিমা গোষ্ঠীর রোষানলে পড়তে হয়েছিলো গাদ্দাফিকে।

৫. ১৯৮৮ সালে স্কটল্যান্ডের লাকারবির আকাশে প্যানাম এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমানে হামলার জন্য গাদ্দাফিকে দায়ী করা হয়। উক্ত হামলায় ২৮৯ জন আরোহী নিহত হয়েছিলো

৬. জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন গাদ্দাফি। বক্তব্য দেওয়ার জন্য ১৫ মিনিট সময় বরাদ্দ দিলেও একটানা দেড় ঘণ্টা বক্তব্য দেন তিনি। পুরো বক্তব্যে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর সমালোচনা করেন গাদ্দাফি। আফ্রিকাতে চালানো ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনের জন্য সাত লাখ সত্তর হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবী করেন। জাতিসংঘ প্রদত্ত নীতিমালার অনুলিপি ছিঁড়ে ফেলেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদার সাথে তুলনা করেন গাদ্দাফি।

৭. গোলান মালভূমি নিয়ে সিরিয়া ও মিশরের মধ্যে বিরোধের মীমাংসাস্বরূপ ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে একটি শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির একটি ধারার কারণে ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। যার বিরোধিতা করে আরব দেশগুলোর বিরাগভাজন হন গাদ্দাফি।

৮. ২০১০ সালে সম্পর্কন্নোয়নের জন্য ইতালি সফরে গিয়ে দুইশত নারীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে বিতর্কিত হন গাদ্দাফি।


ছবিঃ গাদ্দাফি

গাদ্দাফিতে বদলে যাওয়া লিবিয়াঃ
৪২ বছরের শাসনামলে লিবিয়াতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন গাদ্দাফি। তার সময়কালে লিবিয়ায় নিম্নোক্ত নাগরিক সুবিধাবলী লক্ষণীয় ছিল।

 প্রত্যেক লিবীয় নাগরিককে বাড়ী বরাদ্দ দিত গাদ্দাফি প্রশাসন। এটিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করা হত।
গাদ্দাফি শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা সম্পূর্ণ ফ্রি করে দেন। উচ্চশিক্ষা ও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবার জন্য বাইরের দেশে প্রেরণের খরচাদি সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হত।

গাদ্দাফি লিবিয়াতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প স্থাপন করেন। তিনি এটিকে পৃথিবীর অষ্টমাশ্চর্য বলে বর্ণনা দেন। ব্যবসায়ের জন্য নাগরিককে সরকারের পক্ষ থেকে খামার, গবাদিপশু ও বীজ সরবরাহের ব্যবস্থা করেন গাদ্দাফি । নবজাতক জন্ম নিলে মা ও শিশুর জন্য পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিত গাদ্দাফি প্রশাসন। গাদ্দাফির সময়ে বিদ্যুতের জন্য নাগরিকদের কোন অর্থ পরিশোধ করতে হত না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে শূন্য শতাংশ হারে নাগরিকদের ঋণ সুবিধা দিতো গাদ্দাফি প্রশাসন।


ছবিঃ গাদ্দাফি

গাদ্দাফির পতন এবং মৃত্যুঃ  
গাদ্দাফির পতনের মূলে ছিল পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্ররোচনায় সূচিত হওয়া আরব বসন্ত। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে আরব বিশ্বে যে যুগান্তকারী গন অভ্যুত্থানের শুরু হয়েছিলো তাই আরব বসন্ত নামে পরিচিত। এই গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল আরব বিশ্ব থেকে হুসনি মোবারকের ন্যায় গণতন্ত্রবিরোধী স্বৈরশাসকদের চিরতরে অপসারণ করা। উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ায় সর্বপ্রথম আরব বসন্তের সূচনা ঘটে। পশ্চিমা শক্তির প্ররোচনায় একসময় লিবিয়াতেও অভ্যুত্থান শুরু হতে থাকে। যা নয় মাস ব্যাপী লিবিয়াতে অব্যাহত ছিল।

২০১১ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি লিবিয়ার বেনগাজী শহরের একটি থানার সামনে সর্বপ্রথম গাদ্দাফিবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীর সংঘর্ষ হলে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। ঐদিনটিকে বিক্ষোভকারীরা “দ্যা ডে অব রিভোল্ট” বলে ঘোষণা করে। ধীরে ধীরে এই বিপ্লব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমা শক্তি বিদ্রোহকারীদের সমর্থন প্রদান করে। ১৯শে মার্চ ন্যাটো জোটের মাধ্যমে লিবিয়ায় বোমা হামলা চালায় তারা। যা নিয়ে জাতিসংঘে বাক-বিতন্ডের সৃষ্টি হয়েছিলো।

বিপ্লব অব্যাহত রাখতে বিদ্রোহীরা ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এনটিসি) গড়ে তুলেছিল যা পরবর্তীতে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছিলো। এই সংগঠনের নেতৃত্বে বিপ্লব চলতে থাকে। একে একে তারা বেনগাজী, ব্রেঘা, জায়িয়াহ, বিন জাওয়াদ শহর দখল করে নেয়।

১৫ই আগস্ট বিদ্রোহীরা নাপোলিতে ঢুকে পড়ে এবং গ্রিন স্কয়ারে পৌঁছে যায়। দুদিন পরই তারা গাদ্দাফির বাসস্থান “বাব আল আজিজিয়ায়” আক্রমণ করে। তবে এর আগেই গাদ্দাফি তার পরিবার নিয়ে পলায়ন করে আত্মগোপনে চলে যান।


ছবিঃ গাদ্দাফি

১৭ ই অক্টোবর গাদ্দাফির শক্তিশালী ঘাঁটি “বনি ওয়ালিদ” করায়ত্ত করে নেয় বিদ্রোহীরা। পলায়ন করতে গিয়ে ২০ অক্টোবর সির্ত শহরের বিশাল এক পাইপের ভিতর অবস্থানকালীন সময়ে গাদ্দাফি বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়েন। পাইপের ভেতরে রেখেই তাকে গুলি করা হয়।

পরবর্তীতে পাইপ থেকে বের করে জনসম্মুখে নিয়ে আসলে গাদ্দাফির গলায় ছুরিকাঘাত করা হয়। সেসময় গাদ্দাফির উপর জনরোষ উপচে পড়েছিলো। যার ফলে কিছুক্ষণ পরই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি। মৃত্যু পূর্ববর্তী অসিয়ত অনুযায়ী তাকে তার জন্মস্থান সির্তের কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

গাদ্দাফি তার রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে লিখেছিলেন “কিতাবুল আখদার” নামে একটি বই যা “গ্রিন বুক” নামেও পরিচিত। এটি তিন খণ্ডে ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে তিনি লিবিয়ার সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনায় নিজের মতাদর্শ তুলে ধরেন। বলতে গেলে এই গ্রন্থটিকে লিবিয়ার সংবিধান হিসেবে গণ্য করা হয়।

৪২ বছর শাসন করে লিবিয়ার অবস্থা বদলে দিয়েছিলেন গাদ্দাফি। তার শাসনামলে লিবিয়ায় বাক স্বাধীনতা না থাকলেও সুখ সমৃদ্ধির কমতি ছিলোনা। যদিও বাক স্বাধীনতাহীন সুখ লিবিয়ার মানুষ শেষ পর্যন্ত মেনে নেয়নি। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে লিবিয়ার মানুষ গাদ্দাফিকে নিঃশেষ করেছিল তা পূরণ হয়নি আজো। গাদ্দাফি পরবর্তী  গত সাত বছর লিবিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শঙ্কার মধ্য দিয়েই অতিবাহিত হয়েছে।


ছবিঃ আরব বসন্ত

যে আরব বসন্ত গণতন্ত্রের বার্তা নিয়ে এসেছিল তা এখনও লিবিয়ার মানুষকে মুক্তি দিতে পারেনি। দিনশেষে কিছু প্রশ্ন থেকেই গেল। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর প্ররোচিত আরব বসন্ত কি প্রকৃতপক্ষে লিবিয়াতে শান্তি ফিরিয়ে আনবে? লিবিয়া কি পারবে পুনরায় গাদ্দাফির মতো নেতা জন্ম দিতে? ইতোমধ্যেই গাদ্দাফির লিবিয়া ও গাদ্দাফি পরবর্তী লিবিয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক পরিলক্ষিত হয়ে গেছে।
যাই হোক, অচিরেই লিবিয়া তার পূর্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মর্যাদা ফিরে পাবে সেই কামনাই রইল।

পঠিত : ১৩৪৭ বার

মন্তব্য: ০