Alapon

বাংলার ১ম বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প

বাংলাদেশের ১ম বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি? তড়িৎ গতিতে হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বলে ফেলবো। কিন্তু আসলে কি তাই? আসুন শুনি বাংলার ১ম বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প। 

মাওলানা শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা রঃ। নামটা কি আপনাদের পরিচিত? আমার মনে হয় তেমন পরিচিত না। বেশিরভাগ বাংলাদেশীই জানেন না তাঁকে। অথচ এই বাংলাকে সমৃদ্ধ করার কাজ করেছিলেন তিনি।  

তিনি ছিলেন বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামি আইনবিদ। রসায়ন, ভৌতবিজ্ঞান ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে তিনি ছিলেন পারদর্শী। স্বাধীন সুলতানি আমলে বাংলায় আসেন তিনি। সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবনের শাসনকালে (১২৬৬-৮৭) তিনি দিল্লিতে পৌঁছেন এবং সেখান থেকে বাংলায় আসেন।

জ্ঞানতাপস মাওলানা শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামার নেতৃত্বে সেসময়ের বাংলার রাজধানী সোনারগাঁ ইসলামি শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়। সোনারগাঁয়ে আবু তাওয়ামা তাঁর খানকাহ ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে ইসলামী ধর্মতত্ত্ব ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষাদান করা হতো। অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই জ্ঞানতাপস মাওলানা শরফুদ্দিনের নিষ্ঠায় এর খ্যাতি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। 

সেসময় কায়রো আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এর তুলনা করা হতো। এ মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষার সব শাখায় এবং লৌকিক বিজ্ঞানের ওপর শিক্ষাদান ও অধ্যয়নের ব্যবস্থা ছিল। শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা তাছাওয়াফ বিষয়ে মাকামাত নামে একটি গ্রন্থ সংকলন করেন। 

ফারসি ভাষায় নাম-ই-হক শীর্ষক ফিকাহ শাস্ত্রীয় তাঁর একটি গ্রন্থ রয়েছে। এতে ১৮০টি কবিতা রয়েছে। গ্রন্থটি ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই এবং ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে কানপুর থেকে প্রকাশিত হয়। সমসাময়িক লেখক শাহ শুয়াইব তাঁর মানাক্কিবুল আসফিয়া নামক গ্রন্থে আবু তওয়ামার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভারতীয় উপমহাদেশ, আরব, ইরানসহ মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল।

সমগ্র উপমহাদেশে এ বিশ্ববিদ্যালয় তথা মাদ্রাসার বহুল সুখ্যাতি ছিল এবং দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষা লাভের জন্য সমবেত হতো। বিহারের বিখ্যাত ধর্মশাস্ত্রবিদ শরফুদ্দীন ইয়াহিয়া মুনিরি (রহ.) এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষা লাভ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ইলমে হাদিসের অধ্যয়ন শুরু হয় তৎকালীন বাংলার রাজধানী ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ে।

ইংরেজরা এদেশের মুসলিমদের পঙ্গু করার উদ্দেশ্যে প্রথমেই আঘাত হানে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায়। এদেশের শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এরকম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন পুরান ঢাকার খান মুহাম্মদ মৃধা মসজিদে পরিণত হয়েছে তা নিয়ে আগেই লিখেছি। 

শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামাকে এই জাতি মনে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর একজন গুণগ্রাহী ছিলেন ভারত তথা উপমহাদেশের শীর্ষ পন্ডিত মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.)। 

তাঁর নির্দেশে ১৯৯৯ সালে সোনারগাঁয়ে হজরত শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা (রঃ) এর নামে মাদ্রাসাতুশ শরফ আল-ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠা হয়। দেওবন্দি সিস্টেমে প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসা অবশ্য কোনদিনই শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা রঃ এর উদ্দেশ্য হাসিলে সক্ষম হবে না। 

মোগরাপাড়ার বর্তমান দরগাহবাড়িতে অবস্থিত ছিল আবু তাওয়ামার সেই জ্ঞানচর্চাকেন্দ্র। ১৩০০ খ্রিস্টাব্দে সোনারগাঁয়ে আবু তাওয়ামার মৃত্যু হয়। মোগরাপাড়ায় দরগাহবাড়ি প্রাঙ্গণে খানকাহ ও মাদ্রাসাস্থলের সন্নিকটস্থ গোরস্থানে তাঁর সমাধি রয়েছে।

ইমাম বোখারির দেশ সুদূর রাশিয়ার (বর্তমান তাজিকিস্তান) বোখারা থেকে মাওলানা শরফুদ্দীন আমাদের দেশে এসেছিলেন আমাদের আলোকিত করতে। অথচ আমরা এতই অন্ধকারে আমরা তাঁর নামই মনে রাখতে পারিনি।

পঠিত : ১১৯৮ বার

মন্তব্য: ০