Alapon

যে কারণে ফাঁসিতে ঝুলে ১৩ হাজার বিদগ্ধ আলেম

ভারত উপমহাদেশ থেকে ইংরেজ বেনিয়াদের তাড়ানোকে কেন্দ্র করে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যে তুমুল সংগ্রাম ফেনিয়ে ওঠে তার চূড়ান্ত পরিণতি আসে অন্তত ১৩ হাজার আলেমের ফাঁসির মধ্য দিয়ে। তার আগে মোঘলদের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর পরিণত হন রাজনীতির শোপিসে । শাহ ওলীউল্লাহ ও সাইয়েদ আহম শহিদ (রহ)-এর ত্যাগ-তিতিক্ষার যে ইতিহাস এর পূর্বে রচিত হয়েছে, যদিও সেটাই হলো এই ক্ষেত্রে ইংরেজ মূল ভীতির কারণ । কিন্তু ১৮৫৭ সাতান্ন সিপাহি বিদ্রোহের পর একদিকে আলেমগণ এবং অন্যদিকে ইংরেজ উভয়েই খোলাখুলি শত্রুতায় জড়িয়ে পড়েন ।

সিপাহী বিদ্রোহোর সূচনা : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে ইংরেজরা সিপাহী বিদ্রোহ বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। যদিও এটা কেবল সিপাহী বিদ্রোহ ছিলো না, সর্বস্তরের জনগণেরও বিদ্রোহ ছিলো । ভারতে ইংরেজের শাসনের বিরুদ্ধে ধূমায়িত আক্রোশের এটাই ছিলো প্রথম বিস্ফোরণ। এ বিদ্রোহে মুসলমানের সাথে হিন্দু সমাজের বিরাট অংশও যোগ দেয়। কেবল বাংলার হিন্দুরাই একমাত্র ইংরেজের পক্ষালম্বন করে বিশেষ কৃপা পাবার আশায় । সিপাহীদের বিদ্রোহের সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো কার্তুজে শুয়োরের চর্বি ব্যবহার সম্পর্কিত গুজব। কেননা, কার্তুজ তাদের ছিঁড়তে হতো দাঁত দিয়ে । ফলে মুসলমান-হিন্দু সকল সিপাহী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্বাভাবিকভাবে ।

১৮৫৭ সালের ২ জানুয়ারী দমদম থেকে শুরু হয় এবং ফেব্রুয়ারীতে কোলকাতা থেকে ১৬ মাইল দূরে বারাকপুর সেনানিবাসে মংগল পাণ্ডে নামক এক হিন্দু সৈনিক এক ইংরেজ সার্জেন্ট মেজরের ওপর গুলী চালিয়ে এই বিদ্রোহের উদ্বোধন করে। তারপর মিরাঠে অবস্থিত সবচে’ বড় সেনানিবাসে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। বিদ্রোহী সৈন্যরা দিল্লীর দিকে মার্চ করতে শুরু করে, যেখানে ছিলেন ক্ষমতাহীন শেষ মোঘল বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর। [উলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাযী, খ. ৪, পৃ. ২৫০]

দিল্লিতে সিপাহী ও আলেম ঐক্যবদ্ধতা : ১৮৫৭ সালের ১১ মে থেকে বিভিন্ন দিক থেকে ছোট বড় বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে স্বেচ্ছাসেবক, মুজাহিদ ও ইনকিলাবী সেনাদল দিল্লীতে প্রবেশ করে এবং বাদশাহকে স্মারকলিপি পেশ কের ।  বাদশাহও এক পর্যায়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে রাজী হন। সৈন্যরা সারা দেশে ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । যেখানে সেনাছাউনি আছে সেখানে লড়াই চলতে লাগলো। সেনাবাহিনীর ইংরেজ অফিসারদের খতম করতে থাকে । ইংরেজদের বসতি আক্রমণ করে । ইংরেজের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক জ্বালিয়ে দেয়। দিল্লী গেজেটের বিল্ডিংয়ে আক্রমণ করে প্রেস পুড়িয়ে দেয় ।

বিদ্রোহী সৈন্যের সংখ্যা দিল্লীতে পঞ্চাশ হাজারে পৌঁছে গিয়েছিল । চার মাস ধরে তারা বীর বিক্রমে ইংরেজের মোকাবিলা করে । কিন্তু একটা সময় তাদের রসদ ফুরিয়ে আসে। সৈন্যদের বেতন দেবার সামর্থ ছিলো না কর্তৃপক্ষের। দিল্লীর ও আশাপাশের ওলামায়ে কেরাম একজোটে ইংরেজের বিরুদ্ধে জিহাদের ফতোয়া দিয়েছিলেন যার ফলে বাদশাহের কোষাগারে অর্থ ও খাদ্য না থাকলেও শহরের মুসলিম জনসাধারণ ইসলামী চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুজাহিদদের আহার জুগিয়ে আসছিলো । একসময় তাদেরও সামর্থ ফুরিয়ে আসে।

মিরাঠের ভূমিকা : ১০ মে মিরাঠের সশস্ত্র সৈন্যরা দেশ-জাতির প্রতি নিজেদের যেই দায়িত্ব থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করে, মিরাঠ ও তার আশপাশের অঞ্চলের সাধারণ মানুষের সার্বিক সহায়তা তাদের উৎসাহ আরো বাড়িয়ে দেয় । কিছুদিনের মধ্যে সমগ্র মিরাঠ জেলা স্বাধীনতা সংগ্রামের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয় । সেখান থেকেই তা ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী দিল্লীর আশপাশের মুজফফরনগর, সাহারানপুর, বুলন্দশহর, আলীগড় ও রোহিলাখণ্ড ইত্যাদি জেলায় ও শহরে। মিরাঠ থেকেই স্বাধীনতা সৈনিকদের বিশাল বাহিনী দিল্লীতে প্রবেশ করে দিল্লীকে ইংরেজের শাসনমুক্ত করেছিল। জেনারেল বখ্‌ত খান, যিনি বিদ্রোহী সিপীদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তিনি দিল্লীর জামে মসজিদে শহরের শ্রেষ্ঠ ওলামা ও মুফতীগণের সাথে ইংরেজের বিরুদ্ধে জিহাদের ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছিলেন। [১৮৫৭-এর মুজাহিদ, পৃ ১৬৭]

থানভবনে আলেমদের মোর্চা : সেনা বিদ্রোহের কারণে চতুর্দিকে আইন-শৃংখলার চরম অবনতি দেখা দিলে এবং ইংরেজ শাসকরাও ভীতি ও আতংকের মধ্যে অবস্থান করতে তখন সাহারানপুরের ইংরেজ কালেকটর মি. স্প্যাংকির একটি চক্রান্তমূলক পদক্ষেপ নেন। বিনা দোষে তিনি থানাভবনের প্রভাবশালী রইসের ছোট ভাই কাজী আবদুর রহীম ও তাঁর দলবলকে সাজানো মামলায় ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ঘোষণা করে তড়িঘড়ি ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলায়। এ ঘটনায় থানাভবন, নান্নুতা ও চারদিকের থানাগুলোর জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাছাড়া এসব এলাকার সকল প্রতিষ্ঠিত ও মশহুর আলেমের মুরব্বী হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কীর বাসস্থানও ছিল এখানে। শহীদ কাজী আবদুর রহীমের বড় ভাই কাজী ইনায়েত আলী খান এসময় জনগণের বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য ওলামায়ে কেরাম জরুরী বৈঠকে বসেন । কাসেম নানুতবী এলেন নানুতা থেকে এবং মওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব সাহারানপুর থেকে । রহমতুল্লাহ কিরানভীকে দিল্লীর সঠিক অবস্থা জানার জন্য সেখানে পাঠানো হয়েছিল।

তিনি ফিরে এসে বৃদ্ধ বাদশাহ ও তার শাহজাদাদের অনভিজ্ঞতার রিপোর্ট পেশ করেন। প্রথম বৈঠকে সাইয়েদ আহমদ শহীদ প্রবর্তিত এ যাবত যে সংস্কারমূলক ও রাজনৈতিক দলীয় ব্যবস্থাপনা চলে আসছিল তাকে একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার রূপ দেবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ সাহেবকে এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার ‘আমীর’ নির্বাচন করা হলো। মওলানা মুহাম্মদ কাসেম, মওলানা রশীদ আহমদ, হাফেজ যামেন, মওলানা মুহাম্মদ মুনীরের ন্যায় নেতৃবৃন্দকে সেনাবাহিনী, প্রতিরক্ষা, আইন-শৃংখলা ও বিচার বিভাগ ইত্যাদি পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়।৩ এই সংগে বাদশাহর একান্ত সহচর নওয়াব শের আলী মুরাদাবাদীকে বাদশাহর কাছে পাঠানো হলো যথাযথভাবে আইন-শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত রাখার এবং তাদের সাথে সহযোগিতা করার বার্তা দিয়ে। [সাওয়ানেহে কাসেমী, খণ্ড ২, পৃ. ১০৫]

মওলানা মানাযির আহসান গীলানী লিখেছেন, ‘বাদশাহকে শামেলীর ওপর আক্রমণ পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য শের আলী সাহেবকে বাদশাহর কাছে পাঠানো হয়েছিল।’ কারণ ইতিপূর্বে বাদশাহর ইনকিলাবী ফৌজকে নেতৃত্ব দান করে শাহী জুলুস সহকারে ১২ মে দিল্লী শহর পরিভ্রমণ করেছিলেন। বড় বড় বাজার খোলার ব্যবস্থা করেছিল এবং জনগনকে শান্তি ও নিরাপত্তা দানের ওয়াদা করেছিলেন। কাজেই শামেলীতে ওলামা গ্রুপ যেভাবে মোর্চা গঠন করে হাজী ইমদাদুল্লাহর নেতৃত্বে স্বাধীনতার ঝাণ্ডা উঁচু করেছিলেন তার ফলে দিল্লী থেকে বাদশাহর নেতৃত্বে ইনকিলাবী ফৌজ এদিকে আক্রমণ পরিচালনা করলে দিল্লী থেকে নিয়ে এই পুরো এলাকাটাই ইংরেজ দখল ও শাসনমুক্ত হয়ে যেতে পারে। [মওলানা মুহাম্দ কাসেমের জীবন কথা, খ. ২, পৃ. ১৩৭]

আলেমেদের দিল্লি যাত্রা : নানা আলোচনা ও পর্যালোচনার পরে হাজী সাহেবের হাতে সকল আলেম জিহাদের বাইআত গ্রহণ করেন। অর্থাৎ প্রথমে হাজী সাহেবকে আমির করা হয়েছিল এলাকার শাসন পরিচালনা করার জন্য। এবার তার হাতে বাইআত করলেন জানমাল কুরবানী করার জন্য। প্রশ্ন ওঠে তাদের গঠিত বাহিনী যাবে কোনদিকে?  দিল্লীর দিকে মার্চ করাই ছিল স্বাভাবিক। কাজেই দীন ও স্বদেশভূমির এই প্রাণ উৎসর্গকারী দল জীবন বাজি রেখে একটি সুসংগঠিত শক্তির সাথে মোকাবিলা করার জন্য নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়েন। প্রথমে তারা শামেলী হয়ে দিল্লী যাবার জন্য এগিয়ে যান। ধ্বনি ওঠে, দিল্লী চলো। [সাওয়ানেহে কাসেমী, খ. ২, পৃ. ১২৯]


শামেলির লড়াই : শামেলী হয়ে যাবার কারণও হলো, শামেলীর হিন্দু জমিদার মাহার সিং ইংরেজের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ঝাণ্ডা বুলন্দ করেছিল, তাকে সাহায্য করার প্রয়োজন। মাহার সিং পত্রের মাধ্যমে দিল্লীর দরবারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। শামেলী সে সময় সাহারানপুর জেলা হেডকোয়ার্টারের সাথে সম্পর্কিত ছিল। জেলা ইংরেজ প্রশাসক স্প্যাংকি (Spankee) সাহেব শামেলীর অবস্থান দৃঢ় করার জন্য সেখানে গুর্খা ফৌজের একটি ব্যাটালিয়ান প্রেরণ করে । কিন্তু একজন বিশ্বস্ত সেনা অধিনায়ক ইবরাহীমের অধীনে সামান্য সংখ্যক সৈন্য রেখে ১৮৫৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নিজে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।

কাজী ইনায়েত আলী সাহেব ও তার সহযোগীরা এই সুযোগে শামেলী আক্রমণ করে বসে । প্রায় একশত তের জন সৈন্য নিহত হবার পর ইবরাহীম অস্ত্র সমর্পণ করলো। এডওয়ার্ড ফিরে এলো কিন্তু ১১৩ জন্য সৈন্য ক্ষয়ের কারণে ক্রোধে ফেটে পড়লো। অন্যদিকে এ সময় মুজফ্‌ফর নগরের অবস্থাও শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। ফলে এডওয়ার্ড সেখানে চলে গেলো। সেখান থেকে ক্যাপ্টেন স্মিথ ও লেফটেন্যান্ট কিউল রুসের নেতৃত্বে শিখ ও গুর্খা বাহিনী থানাভবনে প্রেরণ করে । কিন্তু সৈন্যরা তাদেরকে চরমভাবে পরাস্ত করে ভাগিয়ে দেয় । [১৮৫৭-এর মুজাহিদ, পৃ. ১৬৭]

থানাভবন ধ্বংস : ১৯ সেপ্টেম্বর বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর গ্রেফতার হন। দিল্লী ইংরেজের দখলে চলে যায় । ইংরেজ সেনারা কয়েক দিন পরেই থানাভবনের দিকে আসে। শহরের লোকজন নিশ্চিত পরাজয় জেনেও ইংরেজের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। থানা শহরের চারদিকে উঁচু দেওয়াল ছিলো, গেটগুলো বন্ধ করে দেয়া হলো। ইতিপূর্বে যুদ্ধের শুরুতে ইংরেজদের কাছ থেকে একটি তোপ ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিলো। সেটি বসানো হয় একটি উঁচু স্থানে। ইংরেজের তোপ ছিলো সাতটি। ছিলো প্রচুর রাইফেল ও উন্নত পর্যায়ের যুদ্ধাস্ত্র। মুসলমানদের মাত্র দোনলা বন্দুক আর কয়েকটা গাদা বন্দুক, আর গ্রামীণ হাতিয়ার অর্থাৎ তীর, ধনুক, সড়কি, বল্লম। কাজেই দু’ঘণ্টার নগর প্রাকার গুঁড়িয়ে দেয় ইংরেজরা এবং কেরোসিন ঢেলে বাড়িঘর সব পুড়িয়ে ফেলে । তারপর যাকে সামনে পায় তাকে হত্যা করতে থাকে এবং মূল্যবান মালসামান  লুটপাট শুরু করে দেয় । থানাভব একটি বিধ্বস্ত নগরীতে পরিণত হয় । [মহাবিদ্রোহ ১৮৫৭, বদ্বীপ প্রকাশন]

তেরো হাজার আলেম ফাঁসি : ইংরেজের ভাষায় থানাভবন এই আলেম নেতৃবর্গ ইংরেজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ক্ষেত্রে এমন কোনো অপরাধ নেই যা করেনি। তারা থানাভবনে শের আলীর বাগানে হামলা করে ইংরেজ সেনাদলকে পরাজিত করছে, তাদের কমান্ডারকে হত্যা করছে, তোপ ছিনিয়ে নিয়েছে, তারপর শামেলিতে আক্রমণ করে সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছে, সরকারি ইমারত ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে, নিজেদের স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে ইত্যাদি। সুতরাং ইংরেজরা চাইছিলো আলেমদের হাতির পদতলে পিষে মারতে বা সাগর পাড়ে দেশান্তর করতে ।

যদিও এই সমস্ত বিদ্রোহাত্মক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও কতিপয় আলেমের প্রাণে বেঁচে যাওয়াটা ছিলো অনেকটা অলৌকিক ব্যাপার । অবশ্য পরে তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। সময় তাদের অনুকূল ছিল না। ইংরেজরাও তাদের শত্রুকে চিনতে ভুল করেনি। ফলে সারা দেশে প্রায় তেরো হাজার আলেমকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হয়। এডওয়ার্ড টমাস দিল্লী শহরের হৃদয়বিদারক ঘটনাবলীর বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে লিখেছেন, একমাত্র দিল্লী শহরে পাঁচশো শ্রেষ্ঠ আলেমকে শুলবিদ্ধ করা হয়েছিল। জল্লাদদের বাধ্য করা হতো যাতে তারা বেশি সময় পর্যন্ত লাশ শূলের ওপর টাঙিয়ে রাখে। ময়দানে প্রতিষ্ঠিত শূলদণ্ডগুলো থেকে বারবার লাশ নামানো হচ্ছিল। আর তা দেখে সাম্রাজ্যবাদী শাসক ইংরেজদের কলিজা ঠাণ্ডা হচ্ছিলো। [সাওয়ানেহে উমরী, মওলানা মুহাম্মদ কাসেম, লেখক মওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব]

সন্দেহ নেই সিপাহী বিদ্রোহ ছিলো একটি উপলক্ষ মাত্র। আসলে শাহ ওলীউল্লাহর নতুন ও বিপ্লবী ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সমগ্র উপমহাদেশে ইসলামী পুনরুজ্জীবনের যে কার্যক্রম শুরু হয় এবং যাতে নেতৃত্ব দেন তার সুযোগ্য পুত্র শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলবী। তারই সূত্র ধরে সারা ভারতে আলেম সমাজের মধ্যে ইসলামী জ্ঞান চর্চা বৃদ্ধি পায়। ইসলামকে তারা উনিশ শতকের ভারতবর্ষের জাতি-বর্ণ নির্বিশেষ সকল মানুষের জন্য রাজতন্ত্রের পরিবর্তে একটি পরামর্শভিত্তিক যথার্থ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইনসাফপূর্ণ নিয়ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এইখানেই তাদের সফলতা ।

পঠিত : ১৫৬০ বার

মন্তব্য: ০