Alapon

বাংলাদেশের মুসলিম জাতিসত্ত্বার ভবিষ্যৎ

১৯৪৪ সালের নভেম্বর মাস, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে চলেছে। একপক্ষ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে আর অপরপক্ষ (জার্মানি) কোন রকমে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে।

যুদ্ধের এই পর্যায়ে এসে অ্যামেরিকান সিনেটের সভা আহবায়ন করা হয়। যুদ্ধ শেষ হলে জার্মানির ভবিষ্যৎ কি হবে এটা নিয়ে সিনেটে আলোচনা শুরু হয়। সিনেট সভা চলার সময় কথা বলার জন্য সময় চান ইয়াহুদী বংশোদ্ভুত সিনেটর মরগান টাও।

মরগান টাও সিনেটে প্রস্তাব করে যে, আসুন আমরা জার্মানিদেরকে এমন এক শিক্ষা দেই যেি শিক্ষা দিয়েছিল রোমকরা কারটাজিদেরকে।

অর্থাৎ আসুন এই জার্মানদেরকে জার্মানি থেকে নির্বাসিত করে সমগ্র জার্মানিকে এক শস্যক্ষেত্রে পরিণত করি। যেন পৃথিবীতে আর এমন কোন জাতির জন্ম না হয়। 
তার এই প্রস্তাবনায় সিনেটে এক পিনপতন নিরবতা নেমে আসে।

এর পর অন্য একজন সিনেটর এই নিরবতা ভেঙ্গে কথা বলার সুযোগ চান এবং এক ঐতিহাসিক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন আচ্ছা, ''ঠিক আছে জার্মানদেরকে জার্মানি থেকে নির্বাসনে পাঠালাম, তাদের ভূমিকেও (জার্মানিকেও) শস্যক্ষেত্রে পরিণত করলাম কিন্তু ইমানুয়েল কান্ট, ফ্রেডেরিক নীচে, কার্ল মার্ক্স, মারটিন হেইডেগার, ফ্রেডেরিক হেগেল, আর্থার স্কোফেনহাওয়ের, এডমান্ড হাসসেরল, গটফ্রিয়েড লিবনিজ , স্কিলার, গতে এবং এদের মত শত শত দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদেরকে কি করব?এদেরকে কিভাবে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলব?"

এই ঐতিহাসিক বক্তব্যের পর অ্যামেরিকান সিনেট জার্মানিকে বর্তমান অবস্থায় রাখার পক্ষে সিধান্ত নেয়।

একটি জাতির অস্তিত্ব অন্য কোন কিছুর উপরে নয়, মানব সভ্যতায় অবদানের উপর ভিত্তি করে টিকে থাকে। যে জাতি মানব সভ্যতায় যতবেশী অবদান রেখেছে যে জাতি ইতিহাসের পাতায় ততবেশী অমর। 
একটি জাতির চিন্তাশক্তি কতটুকু সেটা পরিমাপ করা যায় তার ভাষার মাধ্যমে। চিন্তার ক্ষেত্রকে বা সীমানাকে নির্ধারণ করে ভাষা আর ভাষার সীমানাকে নির্ধারণ করে চিন্তা। ভাষা এবং চিন্তা সবসময় এক অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে থাকে।

এখন আসা যাক বাংলাদেশের কথায়, বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আজ আমরা সবাই সন্দিহান। ১৬ কোটি মুসলমানের এই দেশের গন্তব্য কোথায় আজ কেউ জানে না! আমাদের অবস্থা কেন এমন হল এটা কি আমরা ভেবে দেখেছি? আজকি বাংলাদেশের মূল সমস্যা আওয়ামীলীগ আর শেখ হাসিনা? নাকি অন্য কিছু? এর ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ কি আমরা করেছি? ২৩ শে জুন আসলে ব্রিটিশ আর মিরজাফরদের নিন্দা করতে করতে আমাদের মুখে ফেনা উঠে যায়। কেন পলাশী হল এর কি কোন ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়ে সেখান থেকে জাতির জন্য কোন শিক্ষা বের করে আনতে পেরেছি? 
আমার মনে হয় আমাদের অগ্রজগন এই কাজ করতে পারেন নাই।

আজকে আমাদের দেশে কয়জন বিশ্বমানের বিজ্ঞানী রয়েছে? কয়জন আলেম রয়েছে, যারা ইসলামকে পরিপূর্ণ ভাবে জানে? কয়জন চিন্তাবিদ ও দার্শনিক রয়েছে যাদেরকে নিয়ে আমরা বিশ্বদরবারে গর্ব করতে পারি? আমার কাছে মনে হয় একজনও নেই!

না আছে একজন বিশ্বমানের আলেম, অথচ মাদ্রাসার সংখ্যা হাজার হাজার, শিক্ষার্থী সংখ্যা লাখ লাখ!

না আছে একজন বড়মাপের গনিতবিদ অথচ কোটি কোটি শিক্ষার্থী!

আমরা যদি আগামীদিনে আমাদের মুসলিম জাতিসত্ত্বা নিয়ে টিকে থাকতে চাই, বিশ্বসভ্যতায় অবদান রাখতে চাই তাহলে নতুন করে আল-কিন্দী, ইবনে সিনা, কাজী আব্দুল জাব্বার, আল-ফারাবী, ইবনে সিনা, ইমাম গাজ্জালী, ইমাম মাতুরিদী, শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী, মাওলানা আব্দুর রহীমদের গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। আর এই কাজ যদি করতে না পারি তাহলে মুসলিম জাতিসত্ত্বা নিয়ে আর কতদিন টিকে থাকতে পারব সেটা আল্লাহ জানেন!

আর ভাষা সেটার কথা নাই বললাম! তথাকথিত স্মার্টনেসের নামে যে ভাবে ইংরেজি শব্দের আমদানী করা হচ্ছে, ভয় হয় আগামী ৫০ বছর পর বাংলা ভাষায় লেখা বই সমূহ কেউ পড়তে পারবে কিনা? নিজেদেরকে যারা ইসলাম পন্থী বলে পরিচয় দেয় তারাই আজ বাংলা ভাষার বিকৃতি ঘটাচ্ছে বেশী। অথচ তাদের উচিত ছিল ভাষাকে রক্ষা করার জন্য কাজ করা। কারণ ভাষা আল্লাহর দান। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভাষাকে তার নিদর্শন বলে আখ্যায়িত করেছেন।

তাদের ব্যানার ইংরেজিতে, শ্লোগান ইংরেজিতে, বক্তব্যের অর্ধেক ইংরেজী অর্ধেক বাংলা! নতুন নতুন চটকদার ইসলামী বাংলা বইয়ের নাম রাখা হচ্ছে ইংরেজিতে! একটি ভাষাকে হত্যা করার পরিনাম যে কত ভয়াবহ এটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে তারকিশরা! 
তাই আসুন নিজেদের সম্মানকে বৃদ্ধি করতে, নিজেদের চিন্তা ও মানসিক বিকাশের জন্য বাংলা ভাষাকে রক্ষা করি এই ভাষার মান ও সাহিত্যকে উন্নত করি।


পঠিত : ৭৭৫ বার

মন্তব্য: ০