Alapon

গ্রাহক না থাকলে এতো ঝুঁকি নিয়ে দূর্নীতিবাজরা প্রশ্ন ফাঁস করবে কেনো?

আমার ছোটবেলার একটা ঘটনা, প্রায়ই মনে পড়ে। তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গণিত পরীক্ষা শেষে আব্বা জিজ্ঞেস করলেন, ‘পরীক্ষা কেমন হলো?’
জবাবে বললাম, ‘আলহামদুলিল্লাহ, বেশ ভালো হয়েছে।’

তারপর আব্বা প্রশ্ন দেখছিলেন, আর কোন অংকের কী উত্তর হয়েছে তা জিজ্ঞেস করছিলেন!
একটা অংকে এসে আমি উত্তর দিতে পারলাম না। আব্বা চোখগুলো বড় বড় করে বললেন, ‘এই অংক পারো নাই?’
বললাম, ‘পারছি। তবে শেষের দিকে এসে কেনো জানি মিলাতে পারছিলাম না!’
এ কথা শুনে আব্বার চোখগুলো গোল গোল হতে শুরু করলো। তারপর ঠান্ডা স্বরে বলল, ‘তারপর কী করছো?’
বললাম, ‘বন্ধুর দেখে দিছি! ওকে তিনটা অংক দেখাইছি আর আমি একটা দেখছি। এতে তো দোষের কিছু নাই!’
আব্বা গড়া ঝাড়ি দিয়ে বললেন, ‘গর্ধব! বন্ধুর দেখে অংক করে এখন বলতেছে, পরীক্ষা ভালো হয়েছে! এত্তো বড় গাধা কেউ হয়!’

এখানেই শেষ নয়! এরপর শুরু হলো আম্মার পর্ব! আম্মা খাতা নিয়ে এসে বললেন, ‘মুখে মুখে উত্তর তো ভালোই দিছো! সেগুলোও যে কারও দেখে দাও নাই, তার কী প্রমাণ আছে। এখন প্রশ্নে থাকা অংকগুলো আবার করো। তারপর তোমার ছুটি!’

শৈশবের এমন ঘটনা শুধু আমার একার নয়! দিন কয়েক আগে দাদাকে এই ঘটনা বললাম। দাদা হেসে বললেন, ‘নাকীব রে, আমার জীবনেও এমন ঘটনা আছে। ক্লাস ফাইভে থাকতে আমাকেও স্কুলে পরীক্ষা দিয়ে আসার পর, বাড়িতে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে হতো! সব লিখতে পারলে বুঝতো আমি কারও দেখে লিখিনি!’

যে বাবা-মায়েরা অন্যের দেখে লেখাকেই ‘সর্বনাশ’ বলে গণ্য করতো, আজ সেই বাবা-মায়েরাই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কিনা, সেই সংবাদ পাওয়ার জন্য ছাতক পাখির মত চেয়ে আছে!

এস.এস.সি পরীক্ষা শুরুর আগের দিন বাসার লিফট দিয়ে নামছিলাম। লিফটে মুরুব্বী গোছের আরও কয়েকজন ছিলেন। সেখানে একজন অপরজনকে জিজ্ঞেস করছে, ‘ভাই কোনো খবর আছে নাকি?’
অপরজন বললেন, ‘সরকার এবার খুবই কঠোর! পাওয়া যাবে কিনা বলা যাচ্ছে না। তবে টাকা পয়সা রেডি রাখেন! সংবাদ পাওয়া মাত্রই জানাবো। রাত পর্যন্ত পাওয়া গেলে টাকা খরচ করে নেওয়া যায়। সকালে টাকা দিয়ে নেওয়ার কোনো মানেই হয় না।’

কেয়ারটেকারের কাছে খবর নিয়ে জানলাম, তাদের দুজনের সন্তানই পরীক্ষার্থী!

হায়। আমাদের অভিভাবকদের একি দশা!
ছোটবেলায় মনে হতো, একটা দুইটা অংক না হয় বন্ধুরই দেখছি! তাতে আব্বা আম্মা এত্তো রাগ করে কেন! খামোখা রাগ করে।

আজ মনে হচ্ছে, সেই ‘খামোখা রাগ’টাই সঠিক ছিলো। শুধু বাবা-মায়েরা যদি আবার সেই ‘খামোখা রাগ’টাকে ফিরিয়ে আনতো তাহলে প্রশ্ন ফাঁস সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব হতো।
কারণ, গ্রাহক না থাকলে এতো ঝুঁকি নিয়ে দূর্নীতিবাজরা প্রশ্ন ফাঁস করবে কেনো?

পঠিত : ১৩৬৬ বার

মন্তব্য: ০