Alapon

ইতিহাস পড়তে হবে কেন...?

গতকাল নতুন একজন মানুষের সাথে পরিচয় হল। আমি সাধারণত নতুন মানুষের সাথে তেমন একটা মিশতে পারি না। হয়তো কিছুটা লজ্জা কিংবা সংকোচ কাজ করে।

বাদাম খেতে খেতে সে জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনার পছন্দের সাবজেক্ট কী?’
জবাবে বললাম, ‘ইতিহাস!’
সে কিছুটা অবাক হয়ে বলল, ‘ইতিহাস আমাকে একদমই টানে না! এসব ইতিহাস পড়ে কী লাভ! খামোখা সময় নষ্ট।’

তার একথা শুনে আর চুপ থাকতে পারলাম না। খানিকটা গায়ে পড়েই জ্ঞান ফলানো শুরু করলাম। তাকে বললাম, ‘এই যে আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক, এই দেশের ইতিহাস জানা উচিত। কেন জানা উচিত জানেন, এই দেশের অস্তিত্বের স্বার্থেই ইতিহাস জানা উচিত। এই দেশটা টিকে থাকার জন্যই ইতিহাস জানা উচিত। এই ইতিহাস আমরা যতোদিন মনে রাখব, ততদিন বাংলাদেশ টিকে থাকবে। যখন থেকে আমরা ইতিহাস ভুলে যাবো, তখন থেকেই বাংলাদেশও হারিয়ে যেতে শুরু করবে।’

তাকে আরও বললাম, ‘বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। অথচ আমাদের পাশ্ববর্তি রাষ্ট্রের মুভিতে ১৯৭১ সালের যুদ্ধটাকে প্রায়ই পাক-ভারত যুদ্ধ বলে দাবি করা হয়। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানানো হয় না। এই যে আমাদের অস্তিত্বকে নিয়ে বলিউড টানাটানি করছে, কিন্তু কেন করছে, এই প্রশ্ন কি আপনার মনে কখনো আসে না? সরকারী ভাবে এর তিব্র প্রতিবাদ করা হয় না কেন, এই প্রশ্ন কি আপনার মনে আসে না?
এই প্রশ্নগুলো আমাদের মনে আসা উচিত। তাহলে ইতিহাস জানার আগ্রহ হবে!’

তখন সেই মানুষটি বললেন, ‘সত্য ইতিহাস জানার উপায় কোথায় বলেন! সবাই যে যার মত করে ইতিহাস রচনা করেছে। এসব নিয়ে ভাবলেই প্যারা! ছোটবেলায় পড়েছি স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বড় হয়ে ইতিহাসের পাতায় জিয়াউর রহমানের কোনো নাম গন্ধই পাই না। উল্টা মাঝে মাঝে শুনি জিয়াউর রহমান নাকি পাকিস্তানের চর ছিল! এইসব কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ার আগ্রহ পাই না!’

তখন তাকে বললাম, ‘আসল মজাতো এখানেই। রাজনীতিবিদরা ইতিহাসকে তাদের দলের স্বার্থে ব্যবহার করছে। কিন্তু আপনি নিজের প্রয়োজনে এবং আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থেই ইতিহাস জানবেন। ইতিহাস পড়তে হয় তিনটা মাধ্যম থেকে। প্রথম মাধ্যম হলো বিজয়ীদের রচিত ইতিহাস। দ্বিতীয়ত, পরাজিতদের লিখিত ইতিহাস। এবং সর্বশেষ হলো তৃতীয়পক্ষ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সাংবাদিক বা বিশেষজ্ঞ স্কলারদের লিখিত ইতিহাস। এই তিনটি পক্ষ থেকে যদি ইতিহাস জানার চেষ্টা করেন, আশা করছি ৮০% নির্ভূল ইতিহাস জানতে পারবেন।’

তিনি তখন বললেন, ‘ভাই এতো কষ্ট করতে হতো না! ১৪ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানিরা আমাদের বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে যাওয়ার কারণেই আমরা সত্য ইতিহাস থেকে বঞ্জিত হয়েছি। যার কারণেই না, যুদ্ধের সময় খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা জাফর ইকবালের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হচ্ছে!’

তাকে বললাম, ‘ভালো পয়েন্ট ধরেছেন। আচ্ছা একটা বিষয় বলুনতো, ১৪ ফেব্রুয়ারী যেসব বুদ্ধিজীবি মারা গেছে তারা যুদ্ধের পুরোটা সময় কোথায় ছিল? মুক্তিযুদ্ধের তাদের ভূমিকা কী ছিল? বা দেশ স্বাধীন হবার পর জহির রায়হানকে কারা গুম করলো? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কি জানতে ইচ্ছে করে না?’

আমাদের কৌতূহল থাকা উচিত। আমাদের এই দেশের অস্বিত্বের স্বার্থেই কৌতূহলী হওয়া উচিত। সত্য ইতিহাস জানার জন্য আমাদের কৌতূহলী হওয়া উচিত! শুধু একটা বই লেখার কারণে ‘এ কে খন্দকার কেন আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কৃত হল, তা আমাদের জানতে চাওয়া উচিত!

এই প্রশ্নগুলো মনের ভিতরে যখন ঘুরপাক থেকে থাকবে, ঠিক তখনই আমাদের ইতিহাস জানার আগ্রহ জন্মাবে। ইতিহাস পড়তে ইচ্ছে করবে। সত্য ইতিহাস প্রকাশ করার ইচ্ছে জাগবে। ছোটবেলা থেকেই আমরা সত্য ইতিহাস জানা থেকে বঞ্জিত হওয়ার কারণেও, আমাদের জাতির মধ্যে এতো দ্বিধা, হীনমন্যতা এবং বিভক্তি! সত্য ইতিহাস প্রকাশিত হলে দেশে সার্বিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর এ কারণেই আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, বিবিএ, ফিলোসফি পাশ করার পর, ঠিক অনরূপভাবে পাঠ্যসূচির ন্যায় নিয়ম করে ইতিহাস অধ্যায়ন করা উচিত।

পঠিত : ৭৫৬ বার

মন্তব্য: ০